
জাতীয় নাগরিক পার্টির যুগ্ম আহ্বায়ক সারোয়ার তুষার সম্প্রতি একটি বেসরকারি টিভি চ্যানেলের আয়োজিত টক শোতে বলেন, “শেখ হাসিনার ডিজাইনটা ছিল যে তিনি বেগম খালেদা জিয়াকে তিলতিল করে মেরে ফেলবেন এবং তিনি থাকবেন ৪১ সাল পর্যন্ত। ডিভাইন জাস্টিসটাই হচ্ছে আসলে গণঅভ্যুত্থান যে ঠিক উল্টোটা ঘটেছে।”
উপস্থাপক সারোয়ার তুষারকে প্রশ্ন করেন, “শেখ হাসিনা যে দানব হয়ে উঠেছিল বিএনপির চ্যালেঞ্জের কারণে শেষ পর্যন্ত, আপনি কীভাবে দেখেন? বেগম জিয়ার যে স্যাক্রিফাইস, সেটাকে আপনার মূল্যায়নটাও শুনতে চাই।”
জবাবে সারোয়ার তুষার বলেন, “প্রথমত বলি যে আজকের দিনটা ঐতিহাসিক। ঐতিহাসিক এই কারণে যে আমাদের এই গণঅভ্যুত্থানের পরে বেগম খালেদা জিয়ার চিকিৎসার স্বার্থে দেশের বাইরে যাওয়া এবং ফেরত আসা, এটার সাথে কিন্তু গণঅভ্যুত্থানের ইতিহাসটা জড়িয়ে আছে। কারণ শেখ হাসিনার ডিজাইনটা ছিল যে তিনি বেগম খালেদা জিয়াকে তিলতিল করে মেরে ফেলবেন এবং তিনি থাকবেন ৪১ সাল পর্যন্ত। এখন ডিভাইন জাস্টিসটা হচ্ছে এই এবং এই ডিভাইন জাস্টিসটাই হচ্ছে আসলে গণঅভ্যুত্থান,যে ঠিক উল্টোটা ঘটেছে। আজকে শেখ হাসিনার রাজনীতি থেকে তার আর ফেরত আসার কোনো সম্ভাবনা নাই এবং একটা কলঙ্ক নিয়ে তিনি আসলে বিদায় নিয়েছেন।”
তিনি আরও বলেন, “অন্যদিকে বেগম খালেদা জিয়া কিন্তু এখন বিয়ন্ড পলিটিক্স। মানে তিনি যেমন আমার পক্ষে খুব কষ্ট, মানে কঠিন হবে তার বিরুদ্ধে দুই একটা সমালোচনা করা, বা যারা তার বিরোধী রাজনীতি করে তারাও তাকে ভালো না বেসে পারবে না, শ্রদ্ধা না করে পারবে না। তার যে ইতিহাস, মানে ঐতিহাসিকভাবে তিনি যা যা করেছেন বাংলাদেশের রাজনীতির জন্য, গত ১৫ বছর শুধু উনার উপর যে ধরনের নির্যাতন শেখ হাসিনা করেছেন, যেভাবে তাকে অপমান করা হয়েছে, যেভাবে তার ক্যারেক্টার অ্যাসাসিনেশন করা হয়েছে, এগুলোর পরেও উনার টিকে থাকাটা, উনার অস্তিত্বটাই কিন্তু ফ্যাসিবাদের বিরুদ্ধে একটা রেজিলিয়েন্স ছিল। একটা রেজিস্টেন্স ছিল যে উনি আছেন এবং এটাই তার কর্মীদেরকে একটা মনোবল দিয়েছে যে বেগম খালেদা জিয়া আছেন।”
তিনি বলেন, “সেইখান থেকেই হচ্ছে আপনার এই জায়গাটাকে দেখতে হবে যে তিনি যে এখন যখন এসেছেন দেশে, এটা ডেফিনেটলি বিএনপিকে অবশ্যই, মানে একটা চাঙ্গা তো করবেই, তার সাংগঠনিক শক্তি বৃদ্ধি করবে, কিংবা কর্মীদের মনোবল চাঙ্গা করবে। এটা ছাড়াও আমাদের এখন যে ন্যাশনাল পলিটিক্সের জায়গা থেকে চিন্তা করলে, তার মধ্যে একজন বর্শিয়ান, মানে যার একটা বর্ণাঢ্য রাজনৈতিক ক্যারিয়ার আছে, সংগ্রামী রাজনৈতিক ক্যারিয়ার আছে, তাঁর দেশে উপস্থিতি কিন্তু যে সমস্ত বিষয়ে টেনশন আছে রাজনীতিতে, এটা কিন্তু একটা, মানে লাস্ট রিসোর্ট অনেক ক্ষেত্রে। যেখানে যেখানে ধরা যাক বিএনপিও অনমনীয়, সেখানে হয়তো তিনি যদি শেষ কথাটা বলেন, তখন তো বিএনপি সেখান থেকে কিছুটা সরে আসবে।
কিংবা হয়তো আমরাও অনেক ক্ষেত্রে তিনি আছেন এটা বিবেচনা করে অনেক সিদ্ধান্ত নেব। তো ফলে উনার রাজনীতিতে ফিরে আসাটা এবং মানে বাংলাদেশে ফিরে আসাটা, এটা খুবই একটা ঐতিহাসিক ঘটনা, এই গণঅভ্যুত্থানের মধ্য দিয়ে ঘটেছে। এবং তিনি আসলে আমাদের এখন রাজনীতির ঊর্ধ্বে একজন ঐতিহাসিক ব্যক্তিত্ব।”
সারোয়ার তুষার বলেন, “যেমন ৮৬ সালের নির্বাচনে, তখন তো আওয়ামী লীগ বা শেখ হাসিনা বলে আসলেন, যে যারা নির্বাচনে অংশগ্রহণ করবে তারা বেইমান, জাতীয় বেইমান। পরে তিনি নিজে অংশগ্রহণ করলেন। কিন্তু বেগম খালেদা জিয়া কিন্তু এই ধরনের কোনো ডিজাইনে কখনোই অংশ নেন নাই। তার প্রতি অনেক টোপ ছিল।”
তিনি আরও বলেন, “এটা হলো একটা হিস্টোরিক্যাল মোমেন্ট, যখন তিনি আপোষ করেন নাই। দ্বিতীয় আরেকটা ঐতিহাসিক মোমেন্ট আমার বিবেচনায় হচ্ছে ২০০৭ সালে, যখন ওয়ান ইলেভেনের গভার্মেন্ট। যেটাকে শেখ হাসিনা বললেন যে এটা তাদের আন্দোলনের ফসল। কিন্তু এই মাইনাস পলিটিক্সে কিন্তু বেগম খালেদা জিয়া এবং তিনি কিন্তু তখন এক অর্থে শেখ হাসিনাকেও সেভ করেছেন।
মাইনাস টু যেটা পরিকল্পনা চলছিল, তখন কিন্তু তিনি চাইলে পারতেন যে শেখ হাসিনাকে ওই সরকারের সাথে একটা ডিল করে তিনি রাজনীতিতে থেকে যান এবং শেখ হাসিনাকে রাজনীতি থেকে বিদায় করেন। কিন্তু তিনি সেটা না করে, তিনি তার প্রজ্ঞা দিয়ে বুঝতে পেরেছেন যে আওয়ামী লীগকে, মানে রাজনীতিটা থাকতে হবে। বিরোধিতা হবে কিন্তু রাজনীতি থাকতে হবে। কিন্তু আওয়ামী লীগের রাজনীতির ওই সকল যে আদব, এটাকে ভেঙে দেয়ার কারণেই আওয়ামী লীগের আজকে এই পরিণতি।”
সারোয়ার তুষার বলেন, “বেগম খালেদা জিয়া এসেছেন এবং আমি জানিনা কতটুকু তিনি রাজনীতিতে আবার সক্রিয় হতে পারবেন। কারণ তার কিন্তু, তার এই যে আসাটা, এভাবে, এখন তার যাই হোক, তার যেহেতু বয়স হয়েছে, বার্ধক্যজনিত কারণেই হয়তো কোনো একদিন আমরা তাকে আর পাবো না। কিন্তু তিনি যে এসেছেন, এটা একটা বিরাট রিওয়ার্ড। এটা তার নিজের জন্যও একটা বড় এচিভমেন্ট এবং আমরাও এটাতে অনেক আনন্দিত।”
সূত্র:https://tinyurl.com/y4ykxua2
আফরোজা