
ছবি: সংগৃহীত
বাংলাদেশের দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের প্রবেশদ্বার খুলনার নিকটস্থ পশুর নদীর তীরে ১৯৫০ সালে প্রতিষ্ঠিত মংলা বন্দর এখন দেশের দ্বিতীয় বৃহত্তম সমুদ্রবন্দর হিসেবে পরিচিত। বন্দরে পাঁচটি জেটি এবং ২২টি নোঙর পয়েন্টে বর্তমানে সর্বোচ্চ ৪৭টি জাহাজ একযোগে নোঙর করতে সক্ষম। তবে কালের পরিক্রমায় আঞ্চলিক বাণিজ্যের প্রসারে এবং বৈশ্বিক লজিস্টিক্স প্রতিযোগিতায় আরও সক্ষমতা অর্জনের লক্ষ্যে বাংলাদেশ সরকার বন্দরের আধুনিকায়নে এক বৃহৎ মেগা প্রকল্প হাতে নিয়েছে।
সাম্প্রতিক সময়ে এই উন্নয়ন পরিকল্পনার অংশ হিসেবে চীনের সঙ্গে একটি বড় চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়েছে। মংলা বন্দরের সম্প্রসারণ ও আধুনিকায়ন শীর্ষক এই প্রকল্পটি বাস্তবায়ন হলে, বন্দরটি দক্ষিণ এশিয়ার অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ বাণিজ্যিক কেন্দ্রে রূপ নিতে পারে বলে আশাবাদ ব্যক্ত করেছেন সংশ্লিষ্ট বিশেষজ্ঞ, ব্যবহারকারী ও অংশীজনরা।
মংলা বন্দর কর্তৃপক্ষের (MPA) উপপরিচালক মো. মাকরুজ্জামান জানিয়েছেন, ২০২৫ সালের ২৫ মার্চ চীনের রাষ্ট্রায়ত্ত প্রতিষ্ঠান চায়না সিভিল ইঞ্জিনিয়ারিং কনস্ট্রাকশন কর্পোরেশনের (CCECC) সঙ্গে মংলা বন্দর কর্তৃপক্ষ একটি সরকারি-থেকে-সরকারি (G2G) ভিত্তিতে চুক্তি স্বাক্ষর করে। এর আগেই, ২ ফেব্রুয়ারি জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটি (একনেক) প্রকল্পটি অনুমোদন দেয়।
প্রকল্পটির মোট ব্যয় ধরা হয়েছে ৪ হাজার ৬৮ কোটি ২২ লাখ টাকা। এর মধ্যে বাংলাদেশ সরকার সরবরাহ করবে ৪৭৫ কোটি ৩২ লাখ টাকা এবং বাকি ৩ হাজার ৫৯২ কোটি ৯০ লাখ টাকা চীনের ঋণ সহায়তা হিসেবে আসবে। চুক্তির আওতায় বন্দরের অবকাঠামো উন্নয়ন, জেটি সম্প্রসারণ, ড্রেজিং কার্যক্রম এবং আধুনিক কনটেইনার হ্যান্ডলিং সিস্টেম স্থাপন অন্তর্ভুক্ত থাকবে।
প্রকল্পের কাজ শেষ হলে মংলা বন্দরের বার্ষিক পণ্য পরিবহণ ক্ষমতা ১৫ মিলিয়ন মেট্রিক টনে উন্নীত হবে। এছাড়া, কনটেইনার হ্যান্ডলিং সক্ষমতা ১.৫ লাখ থেকে বেড়ে ৪ লাখ টিইউ হবে।
এদিকে মোংলা বন্দর কর্তৃপক্ষের চেয়ারম্যান রিয়ার অ্যাডমিরাল শাহীন রহমান বলেন, ‘প্রকল্প সম্পন্ন হলে মোংলা পূর্ণাঙ্গ স্বয়ংক্রিয় বন্দরে রূপান্তরিত হবে। বর্তমানে বন্দরের কাঠামো ও সক্ষমতা দুটোই বেড়েছে। এখন বন্দটির কার্যকারিতাও আগের চেয়ে বেশি উন্নত।’
স্থানীয় উন্নয়ন ও জনসম্পৃক্ততার দিকটি সামনে রেখে খুলনা সিভিক সোসাইটির সদস্য সচিব অ্যাডভোকেট বাবুল হাওলাদার বলেন, ‘চীনের সঙ্গে এই চুক্তি নিঃসন্দেহে দেশের জন্য ইতিবাচক। তবে সরকারকে নিশ্চিত করতে হবে যাতে স্থানীয় জনগণ প্রকল্পে সরাসরি অংশগ্রহণ ও উপকারভোগিতা নিশ্চিত করতে পারে।’
এই উন্নয়নের মাধ্যমে শুধু বন্দর নয়, বরং খুলনাসহ দক্ষিণাঞ্চলের সার্বিক অর্থনীতিতে নতুন গতি আসবে বলে মনে করা হচ্ছে। বন্দর ও আশপাশের শিল্পাঞ্চল, যোগাযোগ অবকাঠামো, পর্যটন ও কর্মসংস্থানের ক্ষেত্রেও এর দীর্ঘমেয়াদি ইতিবাচক প্রভাব পড়বে বলে বিশ্লেষকদের মত।
রাকিব