
চলাচলের জন্য সবচেয়ে সহজলভ্য যান হচ্ছে রিক্সা। রিক্সা একটি জাপানিজ শব্দ। ১৮৬৯ সালে জোনাথোন স্কোবি রিক্সা উদ্ভাবন করেন। বাংলাদেশে ১৯৪১ সাল থেকে রিক্সা চলা শুরু হয়। রিক্সা একটি তিন চাক্কার পেডেল যুক্ত ছাউনিওয়ালা যান। এটিতে দুজন থেকে চারজন পর্যন্ত চড়তে পারে। এক জায়গা থেকে অন্য জায়গায় যাওয়ার জন্য অতি সহজে আমরা রিক্সা বেছে নেই। ঢাকা শহরে সবচেয়ে বেশি রিক্সা ব্যবহৃত হয়। পার্কে যাওয়ার জন্য, স্কুলে যাতায়াতের জন্য, অফিস-আদালতে তাড়াতাড়ি পৌঁছানোর জন্য রিক্সা ব্যবহার করে থাকি। তাই ঢাকাকে রিক্সার নগরী বলা হয়। প্রথমে রিক্সাকে টেনে টেনে যাত্রী পরিবহন করা হতো, এর পর পায়ে চালিয়ে, বর্তমানে ব্যাটারিচালিত রিক্সার বহুল প্রচলন। রিক্সার মাধ্যমে জীবিকা নির্বাহও সহজলভ্য হয়েছে।
জরিপ অনুযায়ী, ঢাকা শহরে প্রায় ১০ লাখ রিক্সা রয়েছে। এই দশ লাখ রিক্সার পিছনে চালক রয়েছে ১৫ লাখ। তবে পায়েচালিত রিক্সার চেয়ে ব্যাটারিচালিত রিক্সার সংখ্যা দিন দিন বেড়ে যাচ্ছে। শুধু বাড়ছে না, তাদের বেপরোয়া গতিতে রিক্সা চালানোর ফলে দুর্ঘটনা হচ্ছে। ছোট থেকে বয়োজ্যেষ্ঠ ভয়ে ব্যাটারিচালিত রিক্সায় উঠতে চায় না। রিক্সার সর্বোচ্চ গতি ১৫কি.মি. কিন্তু তারা এর চেয়ে অনেক বেশি গতিতে রিক্সা চালিয়ে বেড়ায়। যা কিনা পরবর্তীতে বিপদের সম্মুখীন হতে হয়। পায়ে রিক্সা চালালে দুর্ঘটনা হওয়ার সম্ভাবনা কম থাকে। তাছাড়া বেশিরভাগ রিক্সা চালকদের লাইসেন্সও করা থাকে না। যাত্রীর সংখ্যার চেয়ে দেশে রিক্সার সংখ্যা বেশি। অগণিত রিক্সার কারণে জ্যামের পরিধিও অধিক। যার কারণে ট্রাফিক পুলিশের রিক্সা নিয়ন্ত্রণে হিমশিম পোহাতে হয়। এরা ট্রাফিক সিগন্যাল না মেনে যত্রতত্র রিক্সা ব্রেক বা থামিয়ে থাকে। তাছাড়া তারা সড়ক ছেড়ে মহাসড়কেও দূরপাল্লার বাসের সঙ্গে টক্কর দিয়ে থাকে। কিছুদিন পর পর মোবাইল কোর্টের মাধ্যমে এদের ধরা হলে, জরিমানা করলেও সেই পূর্বের মতো হয়ে যায়। আমরা জানি একটি দুর্ঘটনা সারা জীবনের কান্না, তাই আমাদের সচেতনতা তৈরি করতে হবে। রিক্সা নয়, ব্যাটারিচালিত রিক্সা চলাচল বন্ধ করতে হবে। যততত্র রিক্সার গ্যারেজ তৈরি বন্ধ করতে হবে। গ্রামগঞ্জ থেকে শুরু করে শহর সব জায়গায় যে যেভাবে পারে গ্যারেজ করে থাকে কোনো লাইসেন্স ছাড়াই। এসব গ্যারেজ বন্ধ করতে হবে। ন্যূনতম ড্রাইভিং প্রশিক্ষণ দিতে হবে। জরিপ করে অদক্ষ চালক পরিবর্তন করতে হবে। চাঁদাবাজি দিয়ে ব্যাটারিচালিত রিক্সা চলার অনুমতি বন্ধ করতে হবে। আমরা চাই না খেটে-খাওয়া মানুষ না খেয়ে থাকুক। রিক্সা চলবে কিন্তু পায়ে চালিয়ে। যাতে দুর্ঘটনার মোকাবিলা থেকে সকলে রক্ষা পায়। ‘জ্যাম নিরসন হোক, পায়েচালিত রিক্সা চলুক’ এই প্রতিপাদনে ব্যাটারিচালিত রিক্সা বন্ধ
করা প্রয়োজন।
সরকারি তোলারাম কলেজ, নারায়ণগঞ্জ থেকে
প্যানেল