ঢাকা, বাংলাদেশ   রোববার ২৬ জানুয়ারি ২০২৫, ১৩ মাঘ ১৪৩১

প্রেসিডেন্ট আসাদের বিদায়

প্রকাশিত: ২০:১৫, ১০ ডিসেম্বর ২০২৪; আপডেট: ২০:১৬, ১০ ডিসেম্বর ২০২৪

প্রেসিডেন্ট আসাদের বিদায়

.

সিরিয়ার প্রেসিডেন্ট বাশার আল আসাদ সরকারের পতন ঘটেছে। দেশটি দীর্ঘদিন থেকে ছিল গৃহযুদ্ধকবলিত। আর এর জন্য মূলত প্রেসিডেন্ট আসাদ নিজেই দায়ী। একদিকে কুর্দি উপজাতি অধ্যুষিত অঞ্চলগুলোতে আসাদের দমন-নিপীড়ন তো ছিলই। অন্যদিকে বহুল আলোচিত-সমালোচিত কর্তৃত্ব¡বাদী শাসক প্রেসিডেন্ট আসাদ কখনোই শান্তিপূর্ণ কোনো আলাপ-আলোচনার পথে না গিয়ে তার সরকারের বিরুদ্ধে গজিয়ে ওঠা বিভিন্ন বিদ্রোহী গোষ্ঠীকে মোকাবিলা করেছে কঠোরভাবে। অনেক ক্ষেত্রেই তার সরকারের সহিংসতার মাত্রা ছাড়িয়ে গেছে। ফলে গৃহযুদ্ধকবলিত দেশটিতে ইতোমধ্যে নিহত হয়েছে ৬ লাখের বেশি মানুষ। বাস্তুচ্যুত হয়েছে ৮০ লাখ। তদুপরি সিরিয়া অচিরেই ভঙ্গুর অনিশ্চিত অর্থনৈতিক দুরবস্থায় নিপতিত হয়েছে। এ ক্ষেত্রে বিদ্রোহীদের সহিংস পন্থায় দমন-নিপীড়নে প্রেসিডেন্ট আসাদকে সর্বতোভাবে সহায়তা করে রাশিয়া ও প্রতিবেশী দেশ ইরান। তবে শেষ রক্ষা হয়নি। বিদ্রোহী সশস্ত্র গোষ্ঠীগুলোর মাত্র ১২দিনের পরিকল্পিত অভিযানে দামেস্কের পতন ঘটে ৮ ডিসেম্বর ২০২৪। রাজধানীতে বিদ্রোহীদের সাঁড়াশি অভিযানের মুখে টিকতে না পেরে শেষ মুহূর্তে প্রেসিডেন্ট আসাদ ব্যক্তিগত বিমানে সপরিবারে দেশ ছেড়ে পালিয়েছেন রাশিয়ায়। মস্কো মানবিক কারণে ক্ষমতাচ্যুত প্রেসিডেন্টকে আশ্রয় দিয়েছে সেখানে। 
প্রেসিডেন্ট আসাদের বিদায়ের মধ্য দিয়ে সিরিয়ায় সুদীর্ঘ ৫৩ বছরের কর্তৃত্ববাদী শাসনের অবসান ঘটল। উল্লেখ্য, ১৯৭১ সাল থেকে ২০০০ সাল পর্যন্ত সিরিয়ায় ক্ষমতায় ছিলেন আসাদের বাবা হাফিজ আল আসাদ। বাবার মৃত্যুর পর ক্ষমতার মসনদে বসেন বাশার আল আসাদ। প্রথমে সংস্কারের পথ ধরে এগোলেও অচিরেই তিনি পিতার পদাঙ্ক অনুসরণ করে পরিণত হন একজন কর্তৃত্ববাদী স্বৈরাচারী শাসকে। দীর্ঘ দুই যুগ একটানা ২৪ বছর সিরিয়া শাসন করেন। ২০০০ সাল থেকে ২০২৪ সাল পর্যন্ত প্রেসিডেন্ট আসাদের শাসনকাল কখনোই মসৃণ, সহজ ও শান্তিপূর্ণ ছিল না। ব্যাপক মানবাধিকার লঙ্ঘন, বিরোধী দল ও মতসহ সরকার বিরোধীদের কঠোর হস্তে দমনসহ নানা অভিযোগে আরব বসন্তের প্রাক্কালে ২০১১ সালে শুরু হয় বাশারবিরোধী সহিংস বিক্ষোভ। অচিরেই তা রূপ নেয় রক্ষক্ষয়ী গৃহযুদ্ধে। 
সিরিয়ার বাশার আল আসাদ সরকারের পতনের ঝটিকা অভিযানে নেতৃত্ব দিয়েছে দেশটির সশস্ত্র বিদ্রোহী গোষ্ঠী হায়াত তাহরির আল শাম, আবু মোহাম্মদ আল জোলানি যার হোতা। ২০০৩ সালে তিনি সিরিয়া থেকে ইরাকে এসে যোগ দেন জঙ্গি সংগঠন আল কায়দায়। কিছুদিন কাজ করেন ইরাকে ইসলামিক  স্টেটের (আইএস) প্রতিষ্ঠাতা আবু বকর আল বাগদাদির সঙ্গেও। গঠন করেন আল নুসরা ফ্রন্ট। সিরিয়ার সীমান্তের  ভেতরে নিজের সশস্ত্র গোষ্ঠীর তৎপরতা বৃদ্ধি করেন তিনি। নেতৃত্ব দিয়েছেন বাশার আল আসাদবিরোধী সশস্ত্র লড়াইয়ে। 
ক্ষমতার পালাবদল হলেও সিরিয়ার অন্তর্বর্তী সরকারের দায়িত্ব পালন করছেন বাশার সরকারের প্রধানমন্ত্রী মোহাম্মদ আল জালালি। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে বলেছেন, জনগণের বেছে নেওয়া যে কোনো  নেতৃত্বকে সহায়তা করতে তিনি প্রস্তুত। সশস্ত্র বিদ্রোহী গোষ্ঠীর প্রধান জোলানি তার প্রতি আস্থা রেখেছেন। দামেস্কে ব্যাপক লুটপাট ও ভাঙচুরের পর জারি করা হয়েছে কার্ফু। বিজয়ীর বেশে রাজধানীতে প্রবেশ করে জোলানি বলেছেন, নিজেদের প্রদত্ত ‘ইসলামি আইনের’ ব্যাখ্যা অনুযায়ী এখন থেকে পরিচালিত হবে সিরিয়া। সীমান্ত অতিক্রম করে ইতোমধ্যে ইসরাইলি বাহিনী ঢুকে পড়েছে সিরিয়ায়। সহায়তা করছে যুক্তরাষ্ট্র। সব মিলিয়ে মধ্যপ্রাচ্য পরিস্থিতি আগামীতে আরও সংকটে নিপতিত হবে বলেই প্রতীয়মান হয়। 

জোবায়ের আহমেদ

×