ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৪ জানুয়ারি ২০২৫, ১১ মাঘ ১৪৩১

মাধ্যমিক থেকেই চালু হোক কর্মমুখী শিক্ষা

মো. ইলিয়াস

প্রকাশিত: ২০:২৬, ৬ ডিসেম্বর ২০২৪

মাধ্যমিক থেকেই চালু হোক কর্মমুখী শিক্ষা

শিক্ষা জাতির মেরুদÐ আর সেই মেরুদÐ তিলে তিলে ক্ষয় করছে সার্টিফিকেট নির্ভর শিক্ষা শিক্ষা ছাড়া মানব জীবন অপূর্ণ কথায় আছে যে জাতি যত বেশি শিক্ষিত সেই জাতি তত বেশি উন্নত কিন্তু যে শিক্ষা বাস্তব জীবনে কাজে লাগেনা, সে শিক্ষা অর্থহীন এধরনের শিক্ষায় পরিবার, সমাজ রাষ্ট্রের বোঝা বাড়তে থাকে জীবন ভিত্তিক কর্মমুখী শিক্ষাই প্রকৃত শিক্ষা কর্মমুখী বা বৃত্তিমূলক শিক্ষাকে বলা হয় সেই শিক্ষা, যা জীবনের বাস্তব কর্মের সাথে প্রায়োগিকভাবে সম্পৃক্ত এটি কর্মসংস্থানমুখী শিক্ষা, যা দেশের বাস্তব সমস্যা সমাধানের উপযোগী করে তৈরি করা হয় কর্মমুখী শিক্ষার মাধ্যমে ছাত্রছাত্রীরা বিভিন্ন পেশায় নিজেকে দক্ষ করে তুলতে পারে

বর্তমান সময়ে আমাদের দেশে যে শিক্ষা ব্যবস্থা প্রচলিত তা প্রায় এক যুগ ধরে অনেকের কাছেই প্রশ্নবিদ্ধ কি দিচ্ছে এই শিক্ষা ? কি লাভ হচ্ছে এই শিক্ষা নিয়ে ? যেখানে একজন ছাত্র ১৭-১৮ বছর ধরে মাষ্টার্স শেষ করার পর চাকরির পরিক্ষায়, ভাইভাতে তাকে জিজ্ঞেস করা হচ্ছে অভিজ্ঞতা আছে কি ? কম্পিউটার জানা আছে ? তাহলে ১৭-১৮ বছর ধরে যে মাষ্টার্স শেষ করলো ক্লাস বাই ক্লাস সর্বোচ্চ রেজেল্ট করলো তার কি কোনো মূল্য নেই ? বাস্তবে দেশের বর্তমান প্রেক্ষাপট বিবেচনায় নিলে এসবের কোনো মূল্যায়ন করা হচ্ছেনা ? দেশের সরকারি অফিস থেকে শুরু করে শীর্ষ স্থানীয় বেসরকারী অফিস গুলোতেও দেখা হয় অভিজ্ঞতা, প্রাধান্য দেওয়া হয় কম্পিউটার শিক্ষাকে বিবিএসের হিসাবে আগষ্ট ২০২৪ পর্যন্ত বাংলাদেশে শিক্ষিত বেকারের সংখ্যা প্রায় ২৬ লাখ তার অন্যতম প্রধান কারণ হচ্ছে এই কর্মমুখী শিক্ষা এখনো পর্যন্ত অবাস্তবায়ন দেশের সরকারি, বেসরকারী অফিসের শূণ্য পদের থেকেও দেশে শিক্ষিতের হার বেড়ে চলেছে ফলে চাকরির বজার এখন সংকটকের মুখে, দিশেহারা হয়ে থাকতে হচ্ছে বেকার নেই কর্মসংস্থান এভাবেই প্রতিবছর লাখ লাখ বেকার সংখ্যা বাড়ছে

বাংলাদেশের প্রচলিত শিক্ষাব্যবস্থা এখনও অনেকাংশে কর্মমুখী শিক্ষার সাথে অসংগতিপূর্ণ এটি প্রায়োগিক বিজ্ঞানসম্মত না হওয়ায় শিক্ষার্থীদের মধ্যে কেরানিগিরির প্রবণতা বৃদ্ধি পেয়েছে ফলে অনেক শিক্ষার্থী উচ্চশিক্ষা শেষে বেকার থাকে শুধু ডিগ্রির পেছনে ছুটে প্রকৃত দক্ষতা অর্জনে ব্যর্থ হওয়ায় বেকারত্বের অভিশাপ ঘিরে ধরছে শিক্ষার্থীদের ফলে দেশের অর্থনৈতিক উন্নয়নেও তারা তেমন কোনো অবদান রাখতে পারছে না সমস্যা থেকে মুক্তির জন্য কর্মমুখী শিক্ষা খুবই জরুরী বাংলাদেশের শিক্ষাব্যবস্থায় মূলত মুখস্থ বিদ্যার উপর নির্ভরশীলতা দেখা যায় শিক্ষার্থীরা পরীক্ষায় পাস করার জন্য যা মুখস্থ করে, তা বাস্তব জীবনে খুব একটা কাজে আসে না পুঁথিগত শিক্ষা জীবনের সাথে সম্পৃক্ত নয় বলে অনেক ক্ষেত্রে এটি শিক্ষার্থীদের পঙ্গুত্ব বয়ে আনে ফলে দক্ষ পেশাজীবী, কারিগর, বিজ্ঞানী তৈরির প্রয়োজনীয়তা পূরণে শিক্ষাব্যবস্থা ব্যর্থ ঔপনিবেশিক শাসনামলের প্রচলিত শিক্ষাপদ্ধতির কারণে শিক্ষার্থীরা কেরানি হওয়ার দিকেই বেশি ঝুঁকে থাকে

দেশের প্রত্েযকটা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে শুরু করে স্কুল কলেজ এমনকি অনেক মাদ্রাসায় রয়েছে কম্পিউটার ল্যাব কিন্তু সেখানে পুরো বছর জুড়ে শেখানো হয় কম্পিউটার কিভাবে অন- অফ করতে হবে, শেখানো হয় কিভাবে মাউস ধরতে হবে যুগের সাথে সাথে আমাদের শিক্ষাব্যবস্থার তেমন কোনো পরিবর্তন হয়নি যদিও শিক্ষাব্যবস্থাকে গুরুত্ব দিয়ে বিভিন্ন সময়ে বিভিন্ন শিক্ষানীতি গ্রহণ করা হয় কিন্তু প্রকৃতপক্ষে তেমন কোনো অগ্রগতি সাধিত হয়নি বলা যায় তাই দেশে বাড়ছে বেকারত্ব বর্তমান শিক্ষাব্যবস্থা আমাদেরকে শুধু ডিগ্রী দেয় সিজিপিএর সার্টিফিকেট দেয়, কোনো কর্মের সুযোগ তৈরিই করে দেয়না, দেয়না চাকরি বা কোনো কাজ, পাওয়া যায়না কর্মসংস্থান

বিশ্বের উন্নত দেশের শিক্ষাব্যবস্থার দিকে তাকালে তাদের পরিকল্পিত এবং কর্মমুখী শিক্ষার বাস্তব কর্মকাÐ লক্ষ্য করা যায় উন্নত দেশের শিক্ষা ব্যবস্থায় কেরানি হওয়ার সুযোগ নেই আছে বিজ্ঞানী হওয়ার এবং কর্মের মন্ত্রে দীক্ষা নেওয়ার সুযোগ ব্রিটেন, আমেরিকা, জাপান, ফ্রান্স, জার্মানি, সুইজারল্যান্ড এসব দেশ কর্মমুখী বা পাদন মুখী শিক্ষাব্যবস্থা চালু করে নিজেদের ভাগ্যকে প্রসন্ন করেছে বিজ্ঞানভিত্তিক কর্মমুখী শিক্ষা চালু করে তারা আজ উন্নতির চরম শিখরে আরোহণ করছে অথচ তাদের দিকে তাকালে খুব সহজেই বোঝা যায় এই সময়ে এসেও আমারা তাদের থেকে কয়েক যুগ পিছিয়ে আছি

দেশের এই অর্থনৈতিক দুরবস্থায় যে শিক্ষার মধ্েয শিক্ষার্থীরা নির্ভরতা খুজে পাবে, যে শিক্ষা অর্জনের মাধ্যমে শিক্ষার্থীরা নিজেরা নিজেদের কর্মসংস্থান তৈরি করতে পারবে এমন শিক্ষাব্যবস্থা খুবই জরুরী সময়ের স্রোতে বিশ্ব ক্রমশ পরিবর্তিত হচ্ছে, আর সেই সঙ্গে শিক্ষার রূপরেখাও যে জীবনে শিক্ষা নেই, তা কেবলই নিরর্থক অথচ, যে শিক্ষায় বাস্তব জীবনের প্রয়োগ নেই, সেটাও পূর্ণাঙ্গ শিক্ষা হতে পারে না প্রচলিত শিক্ষাব্যবস্থা দীর্ঘদিন ধরে আমাদের দৈনন্দিন জীবনধারার সাথে সংগতিহীন ছিল এর ফলে জীবনধারণের সাথে সামঞ্জস্যহীন শিক্ষা, বেকারত্ব দারিদ্র্যের এক বিশাল চক্রে আবদ্ধ হয়ে পড়েছে এই অবস্থায়, কর্মমুখী বা বৃত্তিমূলক শিক্ষা খুবই জরুরী

বাংলাদেশ একটি উন্নয়নশীল দেশ দেশের জনসংখ্যা বৃদ্ধির সাথে সাথে কর্মসংস্থানের সুযোগ সৃষ্টি করা একটি বড় চ্যালেঞ্জ কর্মমুখী শিক্ষার মাধ্যমে এই চ্যালেঞ্জ মোকাবেলা করা সম্ভব দেশের জনসংখ্যা বৃদ্ধির ফলে কর্মসংস্থানের চাপ বাড়ছে এতে করে কর্মসংস্থানহীন যুব শক্তির সংখ্যাও বাড়ছে এই যুব শক্তিকে কর্মমুখী শিক্ষার মাধ্যমে দক্ষ করে তুলতে পারলে আর্থিক সংকট থেকে উত্তরণ সম্ভব সেজন্য দেশের পাঠ্যপুস্তক গুলো থেকে সিরাজউদ্দৌলা, ইখতিয়ার উদ্দিন মোহাম্মদ বখতিয়ার খলজি, শায়েস্তা খান এরকম নবাব, সম্রাট, মহানায়কদের পুরনো দিনের ইতিহাস সরিয়ে গঠনমূলক বাস্তবমুখী, পাদনমুখী কর্মমুখী শিক্ষাব্যবস্থার পাঠক্রম চালু করে, প্রাতিষ্ঠানিক ভাবে কর্মমূখী শিক্ষাব্যবস্থা চালু করা ছাড়া বিকল্প কোনো পথ নেই

শিক্ষার্থী, রুপসা কলেজ, খুলনা

×