অধিকার অর্জনের লক্ষ্যে সম্মিলিত আন্দোলন
কোনো গোষ্ঠী যখন সব ধরনের চেষ্টা-প্রচেষ্টা সত্ত্বেও তার ন্যায্য অধিকার থেকে বঞ্চিত হয় তখনই শুরু হয় অধিকার অর্জনের লক্ষ্যে সম্মিলিত আন্দোলন। সম্প্রতি যেসব আন্দোলন হচ্ছে তা অধিকাংশ ক্ষেত্রেই যুক্তিযুক্ত নয়। মূলত অধিকার আদায়ের জন্য আলাপ-আলোচনা, সুধী সমাজের সঙ্গে কথা বলা, সংবাদপত্রের মাধ্যমে নিজেদের দাবি-দাওয়া সংক্রান্ত বিষয়গুলো তুলে ধরা এবং এর যুক্তিসংগত কারণগুলো উপস্থাপন করা, সরকারের উচ্চপর্যায়ে এ বিষয়ে সমাধানের জন্য সাহায্য চাওয়া ইত্যাদি। এসব কাজ করার পরও যদি যথেষ্ট সাড়া পাওয়া না যায় এবং দাবি আদায় যৌক্তিক বলে মনে হয় তবে আন্দোলনে নামা যেতে পারে।
বর্তমান সময়ে আন্দোলনের নেতারা এর কোনো কিছুই মানছে না। যারা যেভাবে পারছে যে কোনো বিষয়ে আন্দোলনের জন্য রাজপথে নামছে। মনে হয় এ যেন এক ছেলে খেলা। অসময়ে অযৌক্তিক আন্দোলন ছেলেখেলা হলেও জীবনটা ছেলেখেলা নয়। সম্প্রতি এইচএসসি পরীক্ষার্থীরা অটোপাশের জন্য আন্দোলন করেছে। তারা একবারও ভেবে দেখেছে, এই অটোপাশ সার্টিফিকেট দিয়ে দেশের বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে বা সংস্থায় উচ্চপর্যায়ে তারা কাজ করার সুযোগ পাবে? আশ্চর্যের বিষয় হচ্ছে মেধাবী শিক্ষার্থীরাও মাঠে নামেনি অটোপাশের বিরুদ্ধে? তবে কি অধিকাংশ মেধাবী শিক্ষার্থী জিপিএ-৫ টাকার বিনিময়ে কিনে নিত? আর অন্তর্বর্তী সরকার ক্ষমতায় থাকার কারণে জিপিএ-৫ কিনে নিতে অসুবিধা হচ্ছে, তাই তারা অটোপাশের পক্ষে? হতেই পারে, বিগত পরীক্ষা ব্যবস্থা ছিল জিপিএ-৫ এর প্রতিযোগিতা।
প্রকৃত অর্থে মেধা বা যোগ্যতার পরীক্ষা নয়। রিক্সা শ্রমিকরা আন্দোলনে নেমেছে। গৃহকর্মীরা আন্দোলনে নেমেছে। বিসিএস পরীক্ষার বয়সসীমা ৩৫ করার জন্য আন্দোলনে নেমেছে। এ সবই অযৌক্তিক। এসব আন্দোলনের পেছনে এমন লোকেরা নেতৃত্ব দিচ্ছে যারা সরকারের কর্মকা-ে ব্যাঘাত ঘটাতে চায়। তারা চায় দেশে অশান্তি বিরাজ করুক। আর যাবতীয় অশান্তির মাঝেই তারা শান্তিতে থাকতে চায় কারণ তারা অপরাধী। নিজেদের অপরাধ ঢাকতে এবং বিভিন্ন গ্রেপ্তারি পরোয়ানা থেকে বাঁচতেই তারা দেশে সর্বদা আন্দোলনের ইন্ধন জোগাচ্ছে। আর এসব কারণেই দুর্ভোগে পড়েছে জনজীবন, বেড়ে যাচ্ছে মানুষের যাতায়াত খরচ। যানজটে অ্যাম্বুলেন্স আটকা পড়ে হয়রানির শিকার হচ্ছে রোগীর স্বজনরা। স্কুলগামী শিশুরা স্কুল যেতে পারছে না। যথাসময়ে কর্মস্থলে যোগ দিতে ও ফিরতে পারছে না অফিস কর্মকর্তা ও কর্মচারীরা।
এসব আন্দোলন কমাতে বা ব্যাহত করতে আবার অতিরিক্ত পুলিশ মোতায়েন করতে হচ্ছে। শহরাঞ্চলের শ্রমিকরা কাজ করতে পারছে না। যাতায়াত ব্যবস্থা বিঘ্নিত হওয়ার কারণে দ্রব্যসামগ্রী এক বাজার থেকে আরেক বাজারে দ্রুত স্থানান্তর সম্ভব হচ্ছে না। মানুষ নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছে এবং আস্থাহীন হয়ে পড়ছে দেশের শাসকগোষ্ঠীর প্রতি। তাই এসব অবস্থা নিরসনের জন্য দ্রুত কঠোর আইন বাস্তবায়ন করতে হবে। আইন করতে হবে, আন্দোলন যদি করতেই হয় রাজপথে নয়, পথে-ঘাটে নয়, মাঠে-ময়দানে আন্দোলন করতে হবে। দেশের শান্তিশৃঙ্খলা ভঙ্গ হয় এমন আন্দোলনকারীদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নিতে হবে তবেই জনজীবন নিরাপদ হবে।
ব্রাহ্মণবাড়িয়া থেকে