সম্পাদকীয়
বৃহস্পতিবার সচিবালয়ে তথ্য ও সম্প্রচার মন্ত্রণালয়ের সভাকক্ষে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে তথ্য ও সম্প্রচার উপদেষ্টা নাহিদ ইসলাম রাখঢাক না করে বাস্তবতা তুলে ধরেছেন। প্রশাসনে স্থবিরতা রয়েছে, এটি সত্য। বিভিন্ন জায়গা থেকে অসহযোগিতা পাওয়ার কথাও জানিয়েছেন তথ্য উপদেষ্টা। প্রজাতন্ত্রের কর্মচারীদের এই আচরণ অনভিপ্রেত, এতে কোনো বিতর্ক থাকতে পারে না। তবে গণঅভ্যুত্থান পরবর্তী সমাজে কিছু শৃঙ্খলাজনিত সমস্যা থাকা বিচিত্র নয়। নিয়মের ব্যতিক্রমও হতে পারে।
যদিও সবকিছুই সাময়িক, সেটি দীর্ঘস্থায়ী হলেই সমস্যা। বাস্তব পরিস্থিতি স্বীকার করে নেওয়া বিচক্ষণতা। সেই পরিস্থিতিকে অতিক্রম করাটাই হলো দৃঢ়তা। সেটি অন্তর্বর্তী সরকারে তারুণ্যের প্রতিনিধি তথ্য উপদেষ্টার বক্তব্যে অনেকটাই স্পষ্ট হয়ে উঠেছে। এখানেই জাতির ভরসার জায়গা। তিনি দৃঢ়তার সঙ্গেই বলেছেন, প্রশাসনে চলমান স্থবিরতা দ্রুতই কেটে যাবে। সচিবালয়ে ক্যু হওয়া বা এ ধরনের কোনো সম্ভাবনার বিষয়টি নাকচ করে দিয়ে তিনি প্রশাসনকে ঢেলে সাজানোর পরিকল্পনার কথা তুলে ধরেছেন।
আশার কথা হলো, সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়ের আগামী ১০০ দিনের কর্মপরিকল্পনা ঘোষণা করা হয়েছে। পরিকল্পনার মধ্যে সাংবাদিকদের বেতন কাঠামোর যৌক্তিক সংস্কারে উদ্যোগ নেওয়াসহ অনলাইন নিউজ পোর্টালের লাইসেন্স দেওয়ার নীতিমালা যুগোপযোগী করার উদ্যোগ গ্রহণও রয়েছে। তথ্য উপদেষ্টা সত্যপ্রকাশের অসাধারণ দায়বোধ থেকে খোলাখুলি তার বক্তব্য তুলে ধরেছেন, যেটি সর্বমহলের প্রশংসাযোগ্য।
তিনি বলেন, ‘যেহেতু অভ্যুত্থান-পরবর্তী পরিস্থিতি আমাদের মোকাবিলা করতে হচ্ছে, তাই আমরা কোনো নিয়মতান্ত্রিক পরিস্থিতিতে নেই। ফলে আমাদের নানা দিক থেকে নানা সমস্যা আসছে।’ তাঁর কথায় দেশের অভূতপূর্ব এক পরিস্থিতিরই ইঙ্গিত রয়েছে। একইসঙ্গে বাধা সরিয়ে সম্মুখযাত্রার বলিষ্ঠতারও সংকেত রয়েছে।
বলা দরকার, স্বাধীন গণমাধ্যম কমিশন গঠনের উদ্যোগ গ্রহণের কথা বলেছেন তথ্য উপদেষ্টা।। গণমাধ্যমকর্মী (চাকরির শর্ত) আইন প্রণয়নের উদ্যোগ গ্রহণ করা হবে বলেও জানিয়েছেন। সম্প্রচার আইন প্রণয়নের উদ্যোগ নেওয়া হবে। গণমাধ্যমের স্বাধীনতার জন্য আইন, বিধি ও নীতিমালার প্রয়োজনীয় সংস্কার যে দরকার, এ বিষয়ে দ্বিমতের অবকাশ নেই।
আলোচিত তথ্য অধিকার আইন ২০০৯ এর কতিপয় ধারা সংশোধন করে যুগোপযোগী করার বিষয়টিও গুরুত্ববহ। শিক্ষক-অভিভাবকদের জন্য পরম স্বস্তিকর বিষয় হলো ইতোমধ্যে এক হাজার ৬৬৭ পর্নো ও ৫৬০ জুয়ার সাইট বন্ধ করা হয়েছে। সমাজের নৈতিক উন্নয়নের জন্য এসব পদক্ষেপ ইতিবাচক। ইন্টারনেটের কুফল সম্পর্কে আমাদের আরও সতর্ক ও সচেতন হওয়ার প্রয়োজন রয়েছে। সরকারেরও দ্রুত কিছু পদক্ষেপ নেওয়া চাই।
তরুণ সমাজকে সামজিক অবক্ষয় থেকে রক্ষা করতে এবং সুস্থ মানস গঠনের প্রয়োজনে ক্ষতিকর ওয়েবসাইট বন্ধ করা জরুরি। একইসঙ্গে অনলাইন জুয়াসহ ক্ষতিকর গেম সাইটও বন্ধ করা দরকার। তথ্য ও সম্প্রচার উপদেষ্টা ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানের অন্যতম সমন্বয়ক বলেই দেশবাসীর প্রত্যাশা তাঁর কাছে বেশি। তাঁর সকল শুভ উদ্যোগ গণমানুষের সমর্থন পাবে বলেই আমাদের বিশ্বাস।