ফুটপাত দখলমুক্ত ও রাস্তা যানজটমুক্ত হোক
ফুটপাত তুমি কার? এ প্রশ্নের উত্তরে গোড়ায় যে গলদ আছে, সেখান থেকে আমি লেখা শুরু করব। গত দুই বছরে দেশে মূল্যস্ফীতি হয়েছে ১০ শতাংশের ওপরে। মূল্যস্ফীতির কারণে নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের দাম বেড়েছে ৫০-৬০ শতাংশ আর মানুষের আয় বাড়েনি ৫ শতাংশের বেশি । সাধারণ মানুষকে বেঁচে থাকার তাগিদে সঞ্চয় ভেঙে খেতে হচ্ছে। সে কারণে বেঁচে থাকার তাগিদে স্বল্প মূল্যে ফুটপাতের অস্থায়ী বাজারই সাধারণ মানুষের কাছে প্রিয়। টিসিবির প্রদানকৃত ন্যায্য মূল্যের খাদ্যদ্রব্য ক্রয়ে ব্যর্থ হয় যে ব্যক্তি, রাজনৈতিক ভাবে সুবিধাবাদী কিছু লোকের অসাধুতার কারণে ফুটপাতের বাজার তো তারই পছন্দের তালিকায় প্রথমে থাকে।
অফিস থেকে ফেরার পথে ফুটপাতে বাজার করে বাড়ি ফেরে ঘুষখোর বাদে বাকি সকল শ্রমজীবী মানুষ। কম টাকায় নিজেদের পছন্দমতো জিনিস ক্রয় করতে পারে হকার্স মার্কেট থেকে। বিদ্যুৎ বিল পরিশোধ করতে হয় না বলে পণ্যের মূল্যের ওপর তার প্রভাব পড়ে না। ফলে, এ উচ্চমূল্যের বাজারেও নিম্নমধ্যবিত্তরা কেনাকাটার জন্য হকারদের ওপর নির্ভরশীল।
অন্যদিকে যে ক্ষুদ্র ব্যবসায়ী তিন শত টাকা কেজিতে কাঁচা মরিচ, আর মোটা চাল প্রতিকেজি ৫৫ টাকা দাম হাঁকার অপরাধে ক্রেতার হাতে কিল ঘুষি খায়; সেই ব্যক্তিরই তো ফুটপাতে বাজার বসানোর অধিকার । সে শখ করে বেছে নেয়নি এই হকারি পেশা। সে নিজেও তার পরিবারের সদস্যদের অন্নের সংস্থান করতে মুশকিলে পড়ে যায়। সে চুরি-ডাকাতিও করেন না। আমার মতে ফুটপাতের ওপর বাজার বসানোর পূর্ণ অধিকার আছে এই হকারেরই।
স্থানীয় পাতি নেতা, মস্তান, পুলিশও এই ফুটপাতের বাজারের ওপর দখল রাখে আর এদের মোটা টাকা ভাড়া বা চাঁদা দিয়ে তীব্র তাপপ্রবাহে বা মুশল ধারায় বৃষ্টির মাঝে সব রকমের ঝুঁকি নিয়ে পণ্যের পসার সাজিয়ে যে ব্যক্তি ফুটপাতে বসে; ফুটপাত তো তারই।
এসব তো গেল আবেগের কথা। এবার আসি যুক্তিসঙ্গত কথায়।
রাস্তা-ফুটপাত হকারদের দখলে চলে যাওয়ায় এর চরম মূল্য দিতে হয় নগরবাসীকে। রাস্তায় বাজার বসার কারণে যানজটের সৃষ্টি হয়। এমন উদাহরণও আছে যে যানজটের কবলে পড়ে অ্যাম্বুলেন্সে রোগী মৃত্যুর ঘটনাও ঘটছে। শিক্ষার্থীরা যথাসময়ে স্কুলে যেতে পারে না। চাকরিজীবীরা যথাসময়ে কর্মস্থলে পৌঁছাতে পারেন না। আর ফুটপাতে স্বাভাবিক হেঁটে চলার তো কোনো উপায়ই নেই। এতে যেমন ব্যাহত হয় যোগাযোগ ব্যবস্থা, তেমনি মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয় মার্কেট ব্যবসায়ীরাও।
ফুটপাত দখলমুক্ত ও রাস্তা যানজটমুক্ত হোক, এটা সবারই কাম্য। কিন্তু যারা হকারি করছে, তারাও এদেশের নাগরিক, তারাও কিন্তু দেশের অর্থনীতির চাকা ঘোরায়।
তাই এই ক্ষুদ্র ভ্রাম্যমাণ ব্যবসায়ীদের জন্য সরকারের পক্ষ থেকে স্থায়ীভাবে পুনর্বাসনের উদ্যোগ নিতে হবে । তাদের উচ্ছেদের পরিকল্পনা নিলে সিটি করপোরেশনের উচিত হবে আগে তাদের পুনর্বাসনের ব্যবস্থা করা। তাদের পুনর্বাসন না করে উচ্ছেদ করার পরিকল্পনা হবে অমানবিক এবং আত্মঘাতী সিদ্ধান্ত।
উত্তর খুলশী, চট্টগ্রাম থেকে