ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৪ অক্টোবর ২০২৪, ৯ কার্তিক ১৪৩১

টেকসই উন্নয়ন অভীষ্ট অর্জনে বাংলাদেশ

ড. মো. মোরশেদুল আলম

প্রকাশিত: ২০:৩৮, ১০ জুলাই ২০২৪

টেকসই উন্নয়ন অভীষ্ট অর্জনে বাংলাদেশ

উন্নয়নমূলক কর্মকাণ্ডের মাধ্যমে বর্তমান প্রজন্মের চাহিদা

উন্নয়নমূলক কর্মকাণ্ডের মাধ্যমে বর্তমান প্রজন্মের চাহিদা মেটানোর পাশাপাশি সেসব উন্নয়ন কর্মকাণ্ড যাতে ভবিষ্যৎ প্রজন্মের চাহিদা মেটানোর ক্ষেত্রে ঘাটতি বা বাধার কোনো কারণ হয়ে না দাঁড়ায়, সেদিকে বিশেষভাবে লক্ষ্য রেখে পরিকল্পিত উন্নয়নই হলো টেকসই উন্নয়ন। এটি মূলত ভবিষ্যৎ প্রজন্মের কথা চিন্তা করে গৃহীত একটি উন্নয়ন পরিকল্পনা। উন্নয়নমূলক কার্যক্রমের ফলে যেন প্রাকৃতিক ক্ষয়ক্ষতি সাধিত না হয়, সেদিকে লক্ষ্য রেখে উন্নয়ন কর্মকা- সম্পাদন করা।

টেকসই উন্নয়ন কেবল পরিবেশ সংরক্ষণ এবং অর্থনৈতিক উন্নয়নই নয়, বরং সামাজিক ও মানবিক উন্নয়নও এর আওতাভুক্ত। এসডিজিতে অন্যতম প্রধান বিষয় হচ্ছে আর্থিক অন্তর্ভুক্তিমূলক উন্নয়ন, দারিদ্র্য ও বৈষম্য কমানো। যেমনÑ মানসম্মত শিক্ষার মাধ্যমে দারিদ্র্য বিমোচন। নারী-পুরুষ একে অপরকে সহযোগিতার মাধ্যমে সমাজ থেকে জেন্ডার বৈষম্য দূর করা প্রভৃতি। পরিবেশগত ও উন্নয়নমূলক সমস্যা চিহ্নিত করা এবং সেসব সমস্যার সমাধান খুঁজে বের করার জন্য ১৯৮৩ সালে জাতিসংঘ নরওয়ের প্রধানমন্ত্রী গ্রো হারলেম ব্রুন্ডল্যান্ডকে প্রধান করে একটি স্বাধীন সংস্থা হিসেবে ‘Brundtland Commission’ গঠন করে।

যা আনুষ্ঠানিকভাবে ‘World Commission on Environment and Development’ নামে পরিচিত। এই কমিশনের মূল লক্ষ্য ছিল টেকসই উন্নয়নের বিষয়ে বিশে^র সব স্বাধীন দেশকে একত্রিত করা। ১৯৮৭ সালে এই কমিশন ‘Our Common Future’ শিরোনামে একটি প্রতিবেদন প্রকাশ করে। যেখানে সর্বপ্রথম ‘Sustainable Development’ বা ‘টেকসই উন্নয়ন’ সম্পর্কে ধারণা দেওয়া হয়। ভবিষ্যৎ প্রজন্মের নিজস্ব চাহিদা পূরণের সম্ভাবনা বা সক্ষমতার সঙ্গে কোনো ধরনের আপোস না করে বর্তমান প্রজন্মের চাহিদা পূরণ করাকে টেকসই উন্নয়ন বলা হয়। ‘Brundtland Commission’ c«`Ë ÔOur Common Future’ প্রতিবেদনে টেকসই উন্নয়নমূলক প্রত্যাশিত লক্ষ্যে পৌঁছানোর জন্য বিশে^র সকল দেশের দ্বারা উন্নয়নমূলক পরিকল্পনা বা কৌশল গঠনের ওপর জোর দেয়।

কমিশনের প্রতিবেদন অনুসারে, স্থিতিশীল উন্নয়ন অর্জন করতে কতক বিষয়ের প্রতি বিশেষ গুরুত্ব দিতে হবে। সেগুলো হচ্ছেÑ ১) স্থিতিশীল পরিবেশ, ২) স্থিতিশীল পৃথিবী, ৩) স্থিতিশীল মানব উন্নয়ন, ৪) স্থায়ী শান্তি ও বিকাশ, ৫) স্বল্প অপচয় এবং ৬) টেকসই প্রযুক্ত।  ‘Rio Earth Summit, ১৯৯২’-এ সমাজ, পরিবেশ এবং অর্থনীতি- এই ৩টি বিষয়কে টেকসই উন্নয়নের ভিত্তি হিসেবে গৃহীত হলেও পরবর্তী সময়ে ২০১০ সালে মেক্সিকো সম্মেলনে বিশ^নেতারা ৪র্থ স্তম্ভ হিসেবে সংস্কৃতিকে অন্তর্ভুক্তির প্রস্তাব পেশ করেন। যা পরবর্তী সময়ে United Cities and Local Governments (2010) এর ঘোষণাপত্রে অনুমোদিত হয়।

সমাজ, পরিবেশ, সংস্কৃতি ও অর্থনীতি একে অপরের থেকে আলাদা নয়, বরং আন্তঃসম্পর্কিত। টেকসই হলো ভবিষ্যৎ সম্পর্কে চিন্তাশীল এমন একটি দৃষ্টান্ত স্থাপন করা, যেখানে একটি উন্নতমানের জীবনযাপনের জন্য পরিবেশগত, সামাজিক, সাংস্কৃতিক এবং অর্থনৈতিক বিবেচনাগুলো একটি ভারসাম্য অবস্থায় বিদ্যমান থাকে। এজন্য সামাজিকভাবে ন্যায়সঙ্গত, পরিবেশগতভাবে টেকসই, সুরক্ষিত সাংস্কৃতিক বৈচিত্র্য এবং অর্থনৈতিকভাবে দক্ষ করে ভবিষ্যতের জন্য দীর্ঘমেয়াদি উন্নয়ন করাই হলো টেকসই উন্নয়ন। যেমনÑ একটি সমৃদ্ধ সমাজ তার নাগরিকদের জন্য প্রয়োজনীয় খাদ্য ও সম্পদ, নিরাপদ পানীয় এবং বিশুদ্ধ বায়ু সরবরাহের জন্য একটি স্বাস্থ্যকর পরিবেশের ওপর নির্ভর করে। 
২০১৫ সালের ১৫ সেপ্টেম্বর জাতিসংঘের সাধারণ পরিষদের ৭০তম অধিবেশনে টেকসই উন্নয়ন অভীষ্ট ‘২০৩০ এজেন্ডা’ গৃহীত হয়। সমগ্র বিশে^র মানুষের শান্তি, সমৃদ্ধি ও টেকসই উন্নয়ন নিশ্চিতকরণে ‘২০৩০ এজেন্ডা’ এমন একটি কর্মপরিকল্পনা; যা বিশ^ শান্তি জোরদার করবে এবং ক্ষুধা ও দারিদ্র্যসহ সকল বৈষম্যের অবসান ঘটাবে। বিশে^র সকল দেশ অভীষ্টগুলো বাস্তবায়নে কাজ করবে। যার মধ্য দিয়ে অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি অর্জনের মাধ্যমে জনগণের সকল ধরনের দারিদ্যের অবসান ঘটানো সম্ভব হবে।

সকল ধরনের বৈষম্যের অবসান ও অসমতা হ্রাসের গুরু দায়িত্ব পালন করাসহ জলবায়ু পরিবর্তনজনিত ঝুঁকি মোকাবিলার কাজ এগিয়ে নেওয়া যাবে। আর এসব কর্মকা-ের মূলমন্ত্র হবে ‘কাউকে পশ্চাতে রেখে নয়’ নীতি অনুসরণ। এসডিজি’র ১৭টি অভীষ্ট, ১৬৯টি লক্ষ্যমাত্রা এবং ১৩৩টি নির্ধারক। যা ২০৩০ সালের মধ্যে বাস্তবায়ন করার জন্য বিশে^র প্রায় সকল দেশ জাতিসংঘের এক সাধারণ সভায় একমত হয়েছে। জাতিসংঘ প্রদত্ত টেকসই উন্নয়নের ১৭টি অভীষ্ট হলো- ১) সর্বত্র সব ধরনের দারিদ্র্যের অবসান, ২) ক্ষুধার অবসান, খাদ্য নিরাপত্তা ও উন্নত পুষ্টিমান অর্জন এবং টেকসই কৃষির প্রসার, ৩) সকল বয়সী সকল মানুষের জন্য সুস্বাস্থ্য ও কল্যাণ নিশ্চিতকরণ, ৪) সকলের জন্য অন্তর্ভুক্তিমূলক ও সমতাভিত্তিক গুণগত শিক্ষা নিশ্চিতকরণ এবং জীবনব্যাপী শিক্ষালাভের সুযোগ সৃষ্টি, ৫) জেন্ডার সমতা অর্জন এবং সকল নারী ও মেয়েদের ক্ষমতায়ন, ৬) সকলের জন্য পানি ও পয়ঃনিষ্কাশনের টেকসই ব্যবস্থাপনা ও প্রাপ্যতা নিশ্চিত করা, ৭) সকলের জন্য সাশ্রয়ী, নির্ভরযোগ্য, টেকসই ও আধুনিক জ¦ালানি সহজলভ্য করা, ৮) সকলের জন্য পূর্ণাঙ্গ ও উৎপাদনশীল কর্মসংস্থান এবং শোভন কর্মসুযোগ সৃষ্টি এবং স্থিতিশীলতা, অন্তর্ভুক্তিমূলক ও টেকসই অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি অর্জন, ৯) অভিঘাত সহনশীল অবকাঠামো নির্মাণ, অন্তর্ভুক্তিমূলক ও টেকসই শিল্পায়নের প্রবর্ধন এবং উদ্ভাবনার প্রসারণ, ১০) আন্তঃ-আন্তঃদেশীয় অসমতা কমিয়ে আনা, ১১) অন্তর্ভুক্তিমূলক, নিরাপদ, অভিঘাত সহনশীল এবং টেকসই নগর ও জনবসতি গড়ে তোলা, ১২) পরিমিত ভোগ ও টেকসই উৎপাদন ধরন নিশ্চিত করা, ১৩) জলবায়ু পরিবর্তন ও এর প্রভাব মোকাবিলায় জরুরি কর্মব্যবস্থা গ্রহণ, ১৪) টেকসই উন্নয়নের জন্য সাগর, মহাসাগর ও সামুদ্রিক সম্পদের সংরক্ষণ ও টেকসই ব্যবহার, ১৫) স্থলজ বাস্তুতন্ত্রের পুনরুদ্ধার ও সুরক্ষা প্রদান এবং টেকসই ব্যবহারে পৃষ্ঠপোষণা, টেকসই বন ব্যবস্থাপনা, মরুকরণ প্রক্রিয়ার মোকাবিলা, ভূমির অবক্ষয় রোধ ও ভূমি সৃষ্টি প্রক্রিয়ার পুনরুজ্জীবন এবং জীববৈচিত্র্য হ্রাস প্রতিরোধ, ১৬) টেকসই উন্নয়নের জন্য শান্তিপূর্ণ ও অন্তর্ভুক্তিমূলক সমাজব্যবস্থার প্রচলন, সকলের জন্য ন্যায়বিচার প্রাপ্তির পথ সুগম করা এবং সকল স্তরে কার্যকর, জবাবদিহিপূর্ণ ও অন্তর্ভুক্তিমূলক প্রতিষ্ঠান বিনির্মাণ এবং ১৭) টেকসই উন্নয়নের জন্য বৈশি^ক অংশীদারিত্ব উজ্জীবিতকরণ ও বাস্তবায়নের উপায়সমূহ শক্তিশালী করা। 
টেকসই উন্নয়নের জন্য ৬টি স্বতন্ত্র সক্ষমতা থাকা প্রয়োজন। এগুলো হচ্ছেÑ টেকসই উন্নয়নের অগ্রগতি পরিমাপ করার ক্ষমতা থাকা, প্রজন্মগুলোর মধ্যে ন্যায্যতা প্রচার, আকস্মিকতা এবং অভিঘাতের সঙ্গে অভিযোজন, সিস্টেমগুলো আরও টেকসই উন্নয়নে রূপান্তর করা, টেকসইয়ের জন্য জ্ঞানের সঙ্গে কাজের সংযোগ তৈরি করা, শাসন ব্যবস্থাকে এমনভাবে প্রতিষ্ঠিত করা, যাতে জনগণ সমন্বিতভাবে একত্রে কাজ করে অর্থাৎ অন্তর্ভুক্তিমূলক সুশাসন নিশ্চিত করা।

হারমান ডালি ১৯৯০ সালে টেকসই উন্নয়নে প্রায়োগিক কিছু মূলনীতির কথা বলেছেন। এগুলো হলোÑ নবায়নযোগ্য সম্পদের টেকসই উৎপাদন, অনবায়নযোগ্য সম্পদের সঙ্গে বিকল্প নবায়নযোগ্য সম্পদ থাকতে হবে। বর্জ্য উৎপাদন পরিবেশের আত্তীকরণের ক্ষমতাকে অতিক্রম না করা। টেকসই উন্নয়ন নিশ্চিত করতে এ মূলনীতিগুলো ধারণ ও বাস্তবায়ন প্রয়োজন। জাতিসংঘের টেকসই উন্নয়ন অভীষ্ট অর্জনে বিশে^র এগিয়ে থাকা তিনটি দেশের মধ্যে বাংলাদেশ স্থান করে নিয়েছে।

সম্প্রতি প্রকাশিত সাসটেইনেবল ডেভেলপমেন্ট সল্যুশন নেটওয়ার্ক (এসডিএসএন)-এর এসডিজির বৈশি^ক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, এসডিজির ২০২৩ সালের মূল্যায়ন সূচকে ২০২২ সালের তুলনায় ১৬৬ দেশের মধ্যে তিন ধাপ এগিয়ে বাংলাদেশের অবস্থান এখন ১০১। তালিকায় ভারত ও পাকিস্তানের অবস্থান যথাক্রমে ১১২ ও ১২৮তম। এসডিজি সূচকে বাংলাদেশের অভীষ্ট অর্জনের সার্বিক স্কোর ১০০ এর মধ্যে ৬৫.৯। বাংলাদেশ এসডিজির এই সাফল্যকে আরও এগিয়ে নিতে চায়। টানা চতুর্থ বারের মতো ক্ষমতায় এসে  প্রধানমন্ত্রী স্মার্ট বাংলাদেশ গড়ার লক্ষ্যে উন্নয়ন প্রকল্পগুলোকে দ্রুত সমাপ্ত করার নির্দেশ দিয়েছেন।

সরকারের মেগা প্রকল্প এবং আওয়ামী লীগের নির্বাচনী ইশতেহার বাস্তবায়নের মাধ্যমে এসডিজির অভীষ্ট অর্জন সম্ভব। এসডিএসএন-এর এসডিজির মূল্যায়ন প্রতিবেদন ২০২৩ বিশ্লেষণ করলে পরিলক্ষিত হয়, গুণগত শিক্ষা ও টেকসই উৎপাদন অভীষ্ট অর্জনে বাংলাদেশ সঠিক পথেই রয়েছে। এছাড়া দারিদ্র্য বিলোপ, ক্ষুধামুক্তি, সুস্বাস্থ্য ও কল্যাণ, নিরাপদ পানি ও স্যানিটেশন, সাশ্রয়ী ও দূষণমুক্ত জ¦ালানি এবং শিল্প, উৎপাদন ও অবকাঠামো অভীষ্ট অর্জনে বাংলাদেশ পরিমিতরূপে উন্নতি করেছে।

নারীর ক্ষমতায়ন, স্বাস্থ্য খাত, কৃষি ও শিক্ষা খাতে বাংলাদেশের সাফল্য প্রশংসনীয়। ওয়ার্ল্ড ইকোনমিক ফোরাম প্রণীত বৈশি^ক জেন্ডার গ্যাপ সূচকে বাংলাদেশ ২০২২ সালে ৭১তম ছিল; যা দক্ষিণ এশিয়ার মধ্যে সর্বোচ্চ। এক্ষেত্রে ভারতের অবস্থান ১৩৫ এবং পাকিস্তানের ১৪৫তম।  জেন্ডার সমতায় সবচেয়ে বেশি অগ্রগতি হয়েছে রাজনৈতিক ক্ষমতায়নে। বাংলাদেশ এক্ষেত্রে বিশে^ ৯ম। ভারতের অবস্থান ৪৮তম এবং পাকিস্তানের অবস্থান ৯৫তম। শ্রমশক্তি জরিপ ২০২২ অনুসারে, নারীদের শ্রমশক্তিতে অংশ নেওয়ার হার ৪৩ শতাংশের কাছাকাছি।

বৈদেশিক মুদ্রার অন্যতম উৎস তৈরি পোশাক খাতে নিয়োজিত ৪০ লাখের বেশি শ্রমিকের ৮০ শতাংশ নারী। বাংলাদেশ সরকার উচ্চশিক্ষার জন্য কৌশলগত পরিকল্পনা ২০১৭-৩১ গ্রহণ করেছে। খাদ্যনিরাপত্তা নিশ্চিতকরণ, প্রাথমিক ও মাধ্যমিক পর্যায়ে জেন্ডার সমতা, শিশু ও মাতৃমৃত্যুর হার কমানো, টিকার পরিধি বাড়ানো প্রভৃতি ক্ষেত্রে ব্যাপক সাফল্য অর্জন করেছে বাংলাদেশ। লন্ডনভিত্তিক গবেষণা প্রতিষ্ঠান ‘সেন্টার ফর ইকোনমিকস অ্যান্ড বিজনেস রিসার্চ’-এর ২০২৩ সালের প্রতিবেদন অনুযায়ী, চলতি মূল্যে ২০৩৭ সালে বাংলাদেশের জিডিপির আকার হবে ১,৬২৮ বিলিয়ন ডলার। অর্থাৎ ২০২২ সালের ৩৪তম অবস্থান থেকে বাংলাদেশ ১৪ ধাপ এগিয়ে ২০৩৭ সালে ২০তম বৃহত্তম অর্থনীতি হবে। 
কোভিড পরবর্তী রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ, ফিলিস্তিনে ইসরাইলি আগ্রাসন, মধ্যপ্রাচ্য সংকট, বৈশি^ক অর্থনৈতিক মন্দা এসডিজির অগ্রগতিকে শ্লথ করেছে। তবু এসডিজি বাস্তবায়নের দিক থেকে বাংলাদেশ ভালো অবস্থানে রয়েছে। তবে এ সাফল্যের জন্য বৃহত্তর ও সমতাভিত্তিক অংশীদারিত্ব প্রয়োজন। কাক্সিক্ষত লক্ষ্য অর্জন করতে হলে পিছিয়ে থাকা সূচকগুলোয় বিশেষ নজর দিতে হবে। এ ছাড়া লক্ষ্য বাস্তবায়নে উন্নত দেশগুলোর অঙ্গীকার ও সহযোগিতা গুরুত্বপূর্ণ। ২০১৫ সালের সেপ্টেম্বর মাসে বিশ^নেতাদের উপস্থিতিতে নতুন করে বৈশি^ক টেকসই উন্নয়ন অভীষ্ট গৃহীত হয়।

যে লক্ষ্যমাত্রা অর্জনে ২০৩০ সাল পর্যন্ত সময় নির্ধারণ করা হয়। এটিই জাতিসংঘ কর্তৃক পরিচালিত এবং বৈশি^কভাবে সর্বজনীন পরামর্শের ভিত্তিতে নেওয়া সর্বাপেক্ষা বড় কোনো সিদ্ধান্ত। টেকসই উন্নয়ন অভীষ্ট অনুযায়ী গৃহীত লক্ষ্যগুলো সর্বজনীন। উন্নত, উন্নয়নশীল, স্বল্পোন্নত ও অনুন্নত সকল দেশের জন্যই প্রযোজ্য। সুশাসন, জবাবদিহি এবং প্রকৃতি ও পরিবেশের ওপর দায়িত্ববোধ টেকসই উন্নয়নের পূর্বশর্ত। এই লক্ষ্যমাত্রার অন্যতম প্রধান অর্থই হলো ২০৩০ সালের মধ্যে অভীষ্ট অর্জনের জন্য রাষ্ট্র, প্রতিষ্ঠান, বেসরকারি কোম্পানি, আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়, সুশীল সমাজসহ সকলকেই দায়িত্ব গ্রহণ করতে হবে এবং সেই লক্ষ্যে কাজ করতে হবে।

জাতিসংঘ মহাসচিব সমাজের সব অংশকে একত্র হওয়া এবং তিনটি স্তরে একটি ‘ডিকেড অব অ্যাকশন’ বা ‘কর্ম দশক’-এ কাজ করার আহ্বান জানিয়েছেন। এ কর্মস্তরগুলোর মধ্যে রয়েছে টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রার জন্য বৃহত্তর নেতৃত্ব সুরক্ষিতকরণ, অধিক সম্পদ সংস্থান এবং চৌকস সমাধানের জন্য বিশ^ব্যাপী পদক্ষেপ গ্রহণ। সরকার কর্তৃক নগর, স্থানীয় কর্তৃপক্ষের নীতি, বাজেট, প্রতিষ্ঠান এবং নিয়ন্ত্রণ কাঠামোয় প্রয়োজনীয় পরিবর্তনগুলো দৃঢ়ভাবে সংযুক্ত করে স্থানীয় পদক্ষেপ গ্রহণ। প্রয়োজনীয় পরিবর্তনের জন্য যুব, সুশীল সমাজ, মিডিয়া, বেসরকারি সেক্টর, ইউনিয়ন, একাডেমিয়া এবং অন্যান্য স্টেকহোল্ডারসহ জনগণকে নিয়ে একটি অপ্রতিরোধ্য আন্দোলন গড়ে তুলতে হবে।
লেখক : অধ্যাপক, চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়

×