ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২৭ জুলাই ২০২৪, ১২ শ্রাবণ ১৪৩১

প্রসঙ্গ নিষেধাজ্ঞা

-

প্রকাশিত: ২০:৫১, ৯ ডিসেম্বর ২০২৩

প্রসঙ্গ নিষেধাজ্ঞা

সম্পাদকীয়

বৃহস্পতিবার বাংলাদেশ তুলা দিবস উপলক্ষে আয়োজিত এক অনুষ্ঠানে ঢাকায় নিযুক্ত যুক্তরাষ্ট্রের রাষ্ট্রদূত পিটার হাস মার্কিন শ্রমনীতির বিষয়টি আবারও সামনে এনেছেন। তিনি বলেন, শক্ত শ্রম আইন এবং এর বাস্তবায়ন দ্বিপাক্ষিক সম্পর্কের জন্য গুরুত্বপূর্ণ। দ্বিপক্ষীয় সম্পর্ক, টেকসই ও অন্তর্ভুক্তিমূলক উন্নয়ন এবং বাংলাদেশে পরিচালিত মার্কিন কোম্পানিগুলোর জন্য একটি স্থিতিশীল ও প্রত্যাশিত পরিচালনার পরিবেশের জন্য শক্তিশালী শ্রম আইন ও তাদের বাস্তবায়ন অত্যাবশ্যক।
অবস্থাদৃষ্টে মনে হচ্ছে, সংসদ নির্বাচনের আগে শ্রম অধিকার প্রসঙ্গটি নতুন ইস্যু হয়ে উঠতে পারে। কিছুদিন আগে শ্রম অধিকার ইস্যুতে যুক্তরাষ্ট্রের সাম্প্রতিক পদক্ষেপের পেছনে রাজনীতি রয়েছে বলে চিঠি দিয়ে জানিয়েছিল যুক্তরাষ্ট্রে ওয়াশিংটনের বাংলাদেশ দূতাবাস। ব্যবসায়ী মহলেও কিছুটা শঙ্কা জেগেছিল যে, যুক্তরাষ্ট্র নানাভাবে এটি রাজনৈতিক অভিপ্রায়ে ব্যবহার করতে পারে। শ্রম ইস্যুতে যুক্তরাষ্ট্রের বাণিজ্য জরিমানা ও ভিসা বিধিনিষেধের মুখে পড়তে পারে বাংলাদেশ। এ কারণে বিষয়টি অগ্রাধিকার দিয়ে পরবর্তী করণীয় নির্ধারণে তাগিদ দেওয়া হয় চিঠিতে। উদ্বেগ থাকলেও বাণিজ্যমন্ত্রী স্পষ্টত বলেছিলেন, রাজনীতি ও ব্যবসা আলাদা জিনিস। ইউরোপ-আমেরিকা এমন কিছু করবে না, যার প্রভাব বাংলাদেশের পোশাকশিল্পে পড়ে। বাংলাদেশ সবচেয়ে কম মূল্যে সারাবিশ্বে ভালোমানের পোশাক রপ্তানি করছে, যা অন্য কোনো দেশ পারবে না।  
একক দেশ হিসেবে দীর্ঘদিন ধরেই দেশের পোশাক রপ্তানির বৃহত্তম বাজার যুক্তরাষ্ট্র। গত মাসে যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট শ্রমিকদের ক্ষমতায়ন, শ্রম অধিকার ও শ্রমিকদের মানসম্মত জীবনযাপন নিশ্চিত করার লক্ষ্যে একটি স্মারকে (প্রেসিডেনশিয়াল মেমোরেন্ডাম) সই করেছেন। যার প্রেক্ষিতে মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেছেন, যারা শ্রমিকদের অধিকারের বিরুদ্ধে যাবেন, শ্রমিকদের হুমকি দেবেন, ভয় দেখাবেন, তাদের ওপর প্রয়োজনে নিষেধাজ্ঞা আরোপ করা হবে। ওই নীতি সব দেশের ক্ষেত্রে প্রযোজ্য হলেও বাংলাদেশের ব্যবসায়ীদের বক্তব্যে বিষয়টি নিয়ে বাড়তি দুশ্চিন্তাই প্রকাশ পেয়েছে।
বাংলাদেশের বিপক্ষে যে কোনো নিষেধাজ্ঞার বিরুদ্ধে রাশিয়া শক্ত অবস্থান নেবে বলে জানিয়েছেন ঢাকায় নিযুক্ত দেশটির রাষ্ট্রদূত আলেক্সান্ডার মান্টিটস্কি। তিনি বলেন, রাশিয়ার বিরুদ্ধে পশ্চিমারা অবৈধ নিষেধাজ্ঞা দিচ্ছে। এসব নিষেধাজ্ঞা আমলে নেয় না রাশিয়া। রাশিয়া শুধু জাতিসংঘের নিরাপত্তা পরিষদের দেওয়া নিষেধাজ্ঞা আমলে নেয়। বাংলাদেশেও যে কোনো নিষেধাজ্ঞার বিরুদ্ধে অবস্থান নেবে রাশিয়া। ঢাকায় প্রদত্ত যুক্তরাষ্ট্র ও রাশিয়াÑ উভয় দেশের দুই রাষ্ট্রদূতের পাল্টাপাল্টি বক্তব্য কৌতূহল-উদ্দীপক।
অন্যদিকে শুক্রবার ঢাকায় এক সংবাদ সম্মেলনে দেশের তৈরি পোশাক খাত নিয়ে নানা ষড়যন্ত্র চলছে বলে অভিযোগ করেন ওবায়দুল কাদের। তিনি বলেন, নিষেধাজ্ঞা নিয়ে কোনো উদ্বেগ নেই। গার্মেন্টস সেক্টরের শ্রমিকদের নিজেদের বাণিজ্যিক স্বার্থে ব্যবহার করার একটা পাঁয়তারা আছে। এটা দেশেও আছে, বিদেশ থেকেও আছে। তিনি অবশ্য পরবর্তী সময়ে সরকারে আসতে পারলে শ্রম আইনের আরও উন্নয়নে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে বলে প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন। যুক্তরাষ্ট্রের নতুন নীতির কারণে যদি দেশে শ্রম অধিকার প্রতিষ্ঠায় আরও অগ্রগতি হয়, তাহলে দেশের জন্য তা মঙ্গলজনকই হবে- এতে কোনো সন্দেহ নেই।

×