ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২৭ জুলাই ২০২৪, ১২ শ্রাবণ ১৪৩১

পতেঙ্গা কন্টেনার টার্মিনাল

প্রকাশিত: ২০:৫১, ৮ ডিসেম্বর ২০২৩

পতেঙ্গা কন্টেনার টার্মিনাল

.

চট্টগ্রামের পতেঙ্গা কন্টেনার টার্মিনাল পরিচালনায় সৌদি আরবের রেড সি গেটওয়ে টার্মিনাল কর্তৃপক্ষের সঙ্গে ২২ বছরের চুক্তি হয়েছে, যা সৌদি আরবের সঙ্গে টেকসই অংশীদারিত্বের দৃষ্টান্ত হয়ে থাকবে বলে আশা করছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। এটিই চট্টগ্রাম বন্দরের প্রথম টার্মিনাল, যা কোনো বিদেশী অপারেটর পরিচালনা করবে। উল্লেখ্য, ২০০৭ সালে কাজ শুরু হওয়া কন্টেনার টার্মিনালে চারটি জেটি রয়েছে। এর তিনটি কন্টেনার জেটি এবং অপরটি ডলফিন জেটি। নতুন টার্মিনাল অপারেশনাল কার্যক্রমে এলে বছরে প্রায় পাঁচ লাখ টিইইউ কন্টেনার হ্যান্ডলিং সম্ভব।

চুক্তির স্বাক্ষর অনুষ্ঠানে প্রধানমন্ত্রী বলেন, পতেঙ্গা কন্টেনার টার্মিনাল প্রকল্পটি বাংলাদেশের অর্থনৈতিক উন্নয়নে আশার বাতিঘর। প্রকল্পটি বাংলাদেশ-সৌদি আরবের শক্তিশালী টেকসই অংশীদারিত্বের দৃষ্টান্ত হয়ে থাকবে। এই কনসেশন চুক্তি অর্থনৈতিক সহযোগিতা সমৃদ্ধির জন্য দুই দেশের যৌথ দৃষ্টিভঙ্গি এবং অটল অঙ্গীকারের অনন্য উদাহরণও। এটি দ্বিপক্ষীয় সম্পর্ক, বিশেষ করে ব্যবসা-বাণিজ্যের ক্ষেত্র আরও জোরদার এবং বন্দরের সক্ষমতা বৃদ্ধি করবে। বিশ্বের সঙ্গে নিরবচ্ছিন্ন বাণিজ্যের পথ সুগম করার পাশাপাশি কর্মসংস্থান নতুন উদ্যোক্তা সৃষ্টিতেও রাখবে সহায়ক ভূমিকা। সৌদি সরকার কর্তৃক মনোনীত স্বনামধন্য গ্লোবাল টার্মিনাল অপারেটর আরএসজিটিআই যে সুনামের সঙ্গে জেদ্দা পোর্ট টার্মিনালসহ অন্যান্য টার্মিনাল পরিচালনা করছে, সেই দক্ষতা প্রযুক্তিজ্ঞান কাজে লাগিয়েই পতেঙ্গা কন্টেনার টার্মিনাল পরিচালনা করবে বলে প্রত্যাশা। ফলে, চট্টগ্রাম বন্দরের কার্যক্রম পরিচালনার দক্ষতা আন্তর্জাতিক মান বৃদ্ধি পাবে। আমদানি-রপ্তানি ব্যয় হ্রাসের মাধ্যমে লাভবান হবে দেশের অর্থনীতি। ভারত, ভুটান এবং নেপাল টার্মিনালটি ব্যবহার করতে পারবে বিধায় এটি সহায়তা করবে আঞ্চলিক অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি উন্নয়নেও।

দক্ষিণ এশিয়ার মুসলিম অধ্যুষিত দেশ বাংলাদেশ। অন্যদিকে মধ্যপ্রাচ্যের অন্যতম মুসলিম প্রভাবশালী দেশ সৌদি আরব। হজকে কেন্দ্র করে দুদেশের মধ্যে কূটনৈতিক সম্পর্ক দিন দিন গভীর হয় এবং ধীরে ধীরে দেশটি স্বাধীন বাংলাদেশের ঘনিষ্ঠ মিত্রে পরিণত হয়। ভ্রাতৃপ্রতিম এই দুই দেশের মধ্যে ভৌগোলিক দূরত্ব যথেষ্ট হলেও স্বাধীনতার পর থেকে বাংলাদেশের মানুষের নানা সংকটে পাশে দাঁড়িয়েছে সৌদি সরকার। বাংলাদেশের উন্নয়নে সৌদি আরব বিভিন্ন প্রকল্পে অর্থ সাহায্য ঋণ মঞ্জুর এবং শ্রমিক আমদানি করে থাকে। অর্থনৈতিক সাহায্য-সহযোগিতার পাশাপাশি বাংলাদেশের সঙ্গে সৌদি আরবের বাণিজ্যিক সম্পর্কও রয়েছে। তবে সৌদি আরবের বাজারে বাংলাদেশের উৎপাদিত পণ্যের চাহিদা কম।

স্বাধীনতার পর বাংলাদেশের সব সরকারের শাসনামলেই দেশটির সঙ্গে সম্পর্ক ছিল। বর্তমান সরকারের আমলে তা আরও ঘনিষ্ঠ হয়েছে। ২০০৮ সালের দিকে সৌদি আরব নানা কারণে বাংলাদেশ থেকে শ্রমিক নেওয়ার ওপর নিষেধাজ্ঞা আরোপ করেছিল। ইতোমধ্যে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার কূটনৈতিক দক্ষতা প্রজ্ঞায় সেই নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহার হয়েছে। তাছাড়া সম্প্রতি পতেঙ্গা কন্টেনার টার্মিনাল পরিচালনায় বন্ধুপ্রতিম দেশ সৌদি কর্তৃপক্ষের গৃহীত উদ্যোগ নিঃসন্দেহে বাংলাদেশের চলমান উন্নয়ন অর্থনৈতিক সম্ভাবনার স্বীকৃতি। টার্মিনালটিতে সৌদি আরবের বিনিয়োগ বৈশ্বিক মঞ্চে বাংলাদেশের ভাবমূর্তি উজ্জ্বল করবে বলেই প্রত্যাশা।

×