ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২৭ জুলাই ২০২৪, ১২ শ্রাবণ ১৪৩১

চরাঞ্চলের কৃষি

-

প্রকাশিত: ২০:৪০, ৭ ডিসেম্বর ২০২৩

চরাঞ্চলের কৃষি

সম্পাদকীয়

চর হচ্ছে মূলত নদীবেষ্টিত এলাকা, যেখানে সবচেয়ে গরিব মানুষের বসবাস এবং নানা সুযোগ-সুবিধা থেকে বঞ্চিত। চরাঞ্চলের প্রায় ৮০ শতাংশ মানুষ দারিদ্র্যসীমার নিচে বাস করে। চরাঞ্চলে প্রায় ১০ মিলিয়ন লোকের বাস, যারা মূলত কৃষির ওপর নির্ভরশীল। বাংলাদেশের প্রধান প্রধান চর মেঘনা, পদ্মা ও যমুনা নদীর অববাহিকায় গঠিত। অকালবন্যা ও নদীভাঙন তাদের নিত্যসঙ্গী। প্রতিটি চর এলাকাই প্রায় অস্থায়ী। প্রতি বছর নদীভাঙন এবং বন্যায় অনেক চর ডুবে যায়। কখনো কখনো নতুন চর জেগে ওঠে। চর এলাকার শস্যবিন্যাস মূলত মাটির গঠন, বৃষ্টিপাত, সেচের ব্যবস্থা, পরিবহন ও বাজার ব্যবস্থার ওপর নির্ভরশীল। চরে ফসল উৎপাদনে যেসব ঝুঁকি রয়েছে, তা মোকাবিলা করার জন্য শস্যের বহুমুখীকরণ খুব গুরুত্বপূর্ণ। তাই চর এলাকায় যে সীমিত সম্পদ রয়েছে তার সুষ্ঠু ব্যবহার জরুরি।   
চর এলাকার অন্যতম শস্যবিন্যাস হচ্ছে ভুট্টা-পাট-রোপা আমন, মরিচ-পাট-পতিত, সরিষা-বোরো-রোপা আমন, বোরো-পতিত-রোপা আমন, বাদাম-পতিত-পতিত, গম-পাট-রোপা আমন, আলু-বাদাম-রোপা আমন ইত্যাদি। যদিও অনেক শস্যবিন্যাস বিদ্যমান কিন্তু মূল সমস্যা হচ্ছে অকালবন্যা ও নদীভাঙন। তাই সব শস্যবিন্যাস অস্থায়ী এবং বন্যা ও নদীভাঙনের ওপর নির্ভরশীল। চরের শস্যবিন্যাসে যেসব ফসল রয়েছে তাদের মধ্যে স্থানীয় জাতগুলোই বেশি ব্যবহার করা হয়। কৃষকরা উচ্চফলনশীল জাত সম্পর্কে কম অবগত।

পাশাপাশি তারা উন্নত জাতের ফসলের চাষাবাদ প্রক্রিয়া সম্পর্কে অবগত নয়। ফসল সংগ্রহোত্তর ব্যবস্থাপনাও তাদের কাছে প্রায় অজ্ঞাত। চরাঞ্চলে অন্যতম প্রধান সমস্যা হচ্ছে ভালো এবং গুণগত মানসম্পন্ন বীজের অভাব। কিভাবে বীজ সংরক্ষণ করতে হয়, সে সম্পর্কে তাদের কোনো ধারণা নেই। তারা গতানুগতিক প্রক্রিয়ায় বীজ সংরক্ষণ করে। ফলে বীজের গুণগতমান ঠিক থাকে না, অঙ্কুরোদগম ক্ষমতা কমে যায় এবং সর্বোপরি ফসলের ফলন ক্ষতিগ্রস্ত হয়। 
২০১২ সালে বাংলাদেশ সরকার এবং সুইজারল্যান্ড সরকারের মধ্যে এক চুক্তিতে চর উন্নয়ন প্রকল্প গ্রহণ করা হয়। যার সুফল ফলতে শুরু করেছে। প্রকল্প ব্যয় ধরা হয় ৬০ কোটি টাকা।

প্রকল্পের আওতায় দেশের নদী অববাহিকার ১০ জেলার মধ্যে উত্তরের নীলফামারী, রংপুর, দিনাজপুর, গাইবান্ধা, বগুড়া এবং সিরাজগঞ্জের চরাঞ্চলের ২৫ লাখ মানুষের জীবনমান উন্নয়ন ও ফসলি জমির উৎপাদন বাড়াতে আধুনিক প্রযুক্তি ব্যবহার করে ফসল উৎপাদনে বৈচিত্র্য আনা হয়েছে। আশার কথা, প্রযুক্তির ছোঁয়ায় ফসলি জমির উৎপাদন বেড়েছে, জমির পরিমাণও বেড়েছে। হাতে-কলমে প্রশিক্ষণ এবং উন্নতজাতের বীজ সরবরাহ নিশ্চিত করায় উত্তরাঞ্চলের ১০ জেলার তিস্তা, ব্রহ্মপুত্র ও যমুনার চরের  প্রধান ফসল ধান, পাট, ভুট্টা ও মরিচ উৎপাদন গত ১০ বছরের তুলনায় বেড়েছে তিনগুণ। 
আমরা আশা করব, চরের কৃষি উন্নয়নে অনুরূপ পদক্ষেপ আরও নেওয়া হবে। নদীভাঙনের শিকার যেসব মানুষের জমি ছিল চরাঞ্চলে, তাদের জীবনমান উন্নয়নের কথাও ভাবতে হবে। নানা দুর্যোগে প্রকৃতির সঙ্গে যুদ্ধ করে বেঁচে থাকে চরের মানুষ। অতি বন্যা, ভাঙন আর রোদের খরতাপে চরের মানুষের জীবন দুর্বিষহ হয়ে ওঠে। তবে চরের মানুষ কখনো পিছু পা হটে না। সে অবস্থায় তাদের বঞ্চিত করে চরের উন্নয়ন হলে সেটি প্রকৃত উন্নয়ন হবে না।

×