ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ০৯ মে ২০২৫, ২৬ বৈশাখ ১৪৩২

ঢাকার দিনরাত

মারুফ রায়হান

প্রকাশিত: ২০:৩২, ২ অক্টোবর ২০২৩

ঢাকার দিনরাত

যানের আধিক্য সম্পন্ন একটি ঘনবসতিপূর্ণ মহানগরীতে যানজট

যানের আধিক্য সম্পন্ন একটি ঘনবসতিপূর্ণ মহানগরীতে যানজট এড়ানোর সহজ উপায় নেই। তবু কিছু কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণ করা হয়েছে, চালু হয়েছে মেট্রোরেল, এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে এবং বেশ কিছু উড়াল সড়ক। ফলে দৃশ্যত ঢাকার রূপবদল ঘটেছে, বহুকাল পরে দেশে ফেরা দেশের মানুষদের উন্নত শহরের মতো ঢাকা শহরের অধুনা চেহারা চমকিতই করে। ঢাকার যান চলাচলের ধীরগতির নেপথ্যে অনেক ফ্যাক্টর কাজ করে থাকে। প্রশাসনিক ও অর্থনৈতিক বিকেন্দ্রীকরণ না ঘটায় দশকের পর দশক ধরে বাড়তে বাড়তে ঢাকার জনসংখ্যা দেড় কোটি ছাড়িয়ে গেছে। ফলে সড়কের ওপর চাপও বাড়ছে

ভ্রমণপ্রিয় ঢাকাবাসীর সামনে আবারও একটা সুযোগ এসেছিল টানা তিনদিনের ছুটিতে ঢাকার বাইরে বেড়ানোর। কেননা বৃহস্পতিবার ছিল ঈদে মিলাদুন্নবীর ছুটি। শুক্র-শনি সাপ্তাহিক ছুটি। এই টানা ছুটিকে বহু মানুষ কাজে লাগিয়েছেন, বেরিয়ে পড়েছিলেন শহরের বাইরে।  

গতি বাড়ানোয় চাই গতিময় পদক্ষেপ
বলা হচ্ছে বিশ্বের সবচেয়ে ধীরগতির শহর হলো ঢাকা। ১৫২টি দেশের ১ হাজার ২০০-এরও বেশি শহরের মোটরযানের গড় গতি নিয়ে করা এক গবেষণায় উঠে এসেছে এমন তথ্য। গবেষণাটি পরিচালনা করেছে যুক্তরাষ্ট্রের ম্যাসাচুসেটসের ন্যাশনাল ব্যুরো অব ইকোনমিক রিসার্চ (এনবিইআর)। ধীরগতির শহরের তালিকায় শীর্ষ ২০-এ ময়মনসিংহ ও চট্টগ্রামও রয়েছে। আছে প্রতিবেশি দেশের দুটি শহর কোলকাতা ও মুম্বাইও। বিপরীতে বিশ্বের সবচেয়ে দ্রুতগতির শহরের তালিকায় শীর্ষস্থানে রয়েছে যুক্তরাষ্ট্রের মিশিগান অঙ্গরাজ্যের শহর ফ্লিন্ট। 
২০১৭ সালে ঢাকার যানজট পরিস্থিতি নিয়ে বিশ্বব্যাংকের বিশ্লেষণে বলা হয়েছিল, ঢাকায় যানবাহনের গতিবেগ ঘণ্টায় সাত কিলোমিটারে নেমে এসেছে। কয়েক বছরের মধ্যে তা মানুষের হাঁটার গতির চেয়েও নিচে নেমে আসবে। পরিবহন বিশেষজ্ঞরা বলছেন, ঢাকায় যানবাহনের গড় গতি মানুষের হাঁটার গতির চেয়েও কমে এসেছে। এ প্রবণতা এখনো প্রকটভাবে চলমান বলে জানিয়েছেন তারা। সম্প্রতি প্রকাশিত সিপিডির গবেষণায় দেখা যাচ্ছে প্রতিদিন ঢাকার নাগরিকদের সড়কে প্রতি ঘণ্টায় ২৩ মিনিট যানজটে আটকা থাকতে হয়। 
যানের আধিক্য সম্পন্ন একটি ঘনবসতিপূর্ণ মহানগরীতে যানজট এড়ানোর সহজ উপায় নেই। তবু কিছু কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণ করা হয়েছে, চালু হয়েছে মেট্রোরেল, এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে এবং বেশ কিছু উড়াল সড়ক। ফলে দৃশ্যত ঢাকার রূপবদল ঘটেছে, বহুকাল পরে দেশে ফেরা দেশের মানুষদের উন্নত শহরের মতো অধুনা ঢাকা শহরের চেহারা চমকিতই করে। গর্বে বুক ভরে ওঠে। তবে ঢাকার যান চলাচলের ধীরগতির নেপথ্যে অনেক ফ্যাক্টর কাজ করে থাকে সেটি বিবেচনায় না নিয়ে একতরফাভাবে উন্নয়ন পরিকল্পনাকে অকার্যকর বলার মানসিকতা উদ্দেশ্যপূর্ণ।

প্রশাসনিক ও অর্থনৈতিক বিকেন্দ্রীকরণ না ঘটায় দশকের পর দশক ধরে বাড়তে বাড়তে ঢাকার জনসংখ্যা দেড় কোটি ছাড়িয়ে গেছে। কর্মস্থলে যাতায়াত ও অন্যান্য কারণে তাদের বড় অংশই সড়কে আসছেন। ফলে সড়কের ওপর চাপও বাড়ছে। যানবাহনের গতি নানা কারণেই কমতে পারে। প্রথমে অতিরিক্ত ব্যক্তিগত গাড়ির কথা বলতেই হবে। গণপরিবহন ব্যবস্থার যথযথ উন্নতি সাধন ঘটলে ব্যক্তিগত গাড়ি কমে আসতো। ফলে সড়ক উপচে পড়ত না ছোট ছোট গাড়িতে। রাজনৈতিক কর্মসূচি যেদিন থাকে সেদিন ঢাকার ট্রাফিকের কী দশা হয়, সেটি সবাই জানেন।

সেদিন গাড়ির গতি রেকর্ড পরিমাণ কমে আসতে বাধ্য। বলা ভালো গোটা শহরই যেন স্থবির হয়ে পড়ে। আবার যখন ঢাকায় ভিআইপি মুভমেন্ট হয় তখনও গাড়ির গতি কমে। ঢাকায় বৃষ্টি হলে জলাবদ্ধতা দেখা দিলে সব ধরনের গাড়ির গতি কি কমে না? বছরভরই রাস্তায় খোঁড়াখুঁড়ি চলে, নির্মাণ কাজ হয় বিভিন্ন অঞ্চলে। ফলে স্বাভাবিকভাবেই সেসব স্থানেও গাড়ির গতি কমে আসে। ধীর গতির জন্য এসব কিছুই কি দায়ী নয়?     
বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বুয়েট) দুর্ঘটনা গবেষণা ইনস্টিটিউটের সাবেক পরিচালক অধ্যাপক ড. হাদিউজ্জামান বলছেন, ‘ঢাকার যানজট মূল সড়ক ছাপিয়ে শাখা সড়কগুলোয়ও ছড়িয়ে পড়েছে।’ গণমাধ্যমকে তিনি বলেন, ‘ম্যাসাচুসেটসের ন্যাশনাল ব্যুরো অব ইকোনমিক রিসার্চের গবেষণাটি করা হয়েছে অত্যাধুনিক প্রযুক্তি ব্যবহার করে। একটি শহরের সব সড়কের চিত্র বিশ্লেষণ করা হয়েছে। বলা হয়, ঢাকায় প্রায় ২০০ কিলোমিটার প্রাইমারি সড়ক রয়েছে। কিন্তু প্রাইমারি সড়কের যেসব বৈশিষ্ট্য তার বেশিরভাগই এসব সড়কে অনুপস্থিত। অবকাঠামোগত ও ব্যবস্থাপনাগত দুর্বলতার কারণে সড়কগুলো ভীষণ রকমের বিশৃঙ্খল। যানবাহন চলছে সক্ষমতার চেয়ে বেশি। ফলে যানজট মূল সড়ক ছাড়িয়ে শাখা সড়কগুলোয়ও চলে যাচ্ছে। এ প্রবণতা ঢাকার জন্য বেশ অ্যালার্মিং।’ 
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, যানজট যখন থাকে না, তখনো ঢাকায় যানবাহনের গড় গতি বিশ্বের অন্য শহরগুলোর চেয়ে কম। অপরিকল্পিতভাবে গড়ে ওঠা এ শহরের সড়কগুলোর সক্ষমতা বাড়ানোর সুযোগও কমে এসেছে। তবে যান চলাচলে নিয়ন্ত্রণ আরোপ এবং সঠিক যুগোপযোগী ব্যবস্থাপনার মাধ্যমে পরিস্থিতির উন্নতি ঘটানো অবশ্যই সম্ভব। রাজধানীর গতি বাড়াতে হলে গতিময় পদক্ষেপ নিতে হবে। 

ইংরেজি মাধ্যম স্কুলের প্রতিষ্ঠাতাদের সম্মাননা 

প্রথার বাইরে যারা কাজ করেন, নতুন ধরনের কিছু দেশকে উপহার দেন, সেসব গুণীজনদের কেউ সম্মাননা জানালে ভালো লাগে। এ থেকে সামাজিক একটা দায়িত্বও সম্পন্ন হয়। স্বাধীনতার পর দেশে ইংরেজি মাধ্যম স্কুল প্রতিষ্ঠা করা খুব সহজ ছিল না। নাগরিকদের প্রথাগত মনোভাব পরিবর্তন করতে সক্ষম হতে সময় লেগেছে স্কুলগুলোর। মানসম্মত শিক্ষা ও উন্নত পরিবেশ সৃষ্টির কারণে একসময়ের সমালোচকরাই নিজেদের সন্তানদের ইংরেজি মাধ্যমের শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে ভর্তি করিয়েছেন। এখন ইংরেজি মাধ্যম স্কুলগুলোর গ্রহণযোগ্যতা অনেক বেড়েছে। 

শনিবার বনানীর একটি রেস্টুরেন্টে চার স্কুরের প্রতিষ্ঠাতা অধ্যক্ষকে সম্মাননা প্রদান করে স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন উইংস। অনুষ্ঠানে স্কলাসটিকার প্রতিষ্ঠাতা চেয়ারপারসন ইয়াসমিন মোর্শেদ, সানিডেইল স্কুলের অধ্যক্ষ তাজিন আহমেদ, বাংলাদেশ ইন্টারন্যাশনাল টিউটরিয়াল (বিআইটি) স্কুলের প্রতিষ্ঠাতা প্রিন্সিপাল লুবনা চৌধুরী ও সাউথ ব্রিজ স্কুলের অধ্যক্ষ জিনাত চৌধুরীকে সম্মাননা প্রদান করা হয়।
দেশে ইংরেজি মাধ্যমে আধুনিক ও সময়োপযোগী শিক্ষার বিস্তারে ভূমিকা রাখায় এই চার পথিকৃৎকে সম্মাননা প্রদান করা হয়। অধ্যক্ষদের উত্তরীয় পরানোর মধ্য দিয়ে অনুষ্ঠানের সূচনা হয়। এ সময় ক্রেস্ট, বই ও অন্যান্য উপহার তুলে দেওয়া হয় তাঁদের হাতে। পরে অধ্যক্ষরা গত শতকের সত্তর ও আশির দশকে ঢাকায় স্কুল প্রতিষ্ঠায় নিজেদের অভিজ্ঞতা বর্ণনা করেন। 
উইংসের প্রেসিডেন্ট টুটলি রহমান স্বাগত বক্তব্যে বলেন, একাত্তরের পর যুদ্ধবিধ্বস্ত একটি দেশে তাঁরা ইংরেজি মাধ্যমের বিদ্যালয় স্থাপন করেছেন। ভবিষ্যৎ প্রজন্মের জন্য শত প্রতিকূলতা ডিঙিয়ে আজকের দিন পর্যন্ত এই মাধ্যমকে নিয়ে এসেছেন। এখন এ দেশে ইংরেজি মাধ্যম স্কুলগুলো ব্যাপক জনপ্রিয়।
স্কলাসটিকার প্রতিষ্ঠাতা চেয়ারপারসন ইয়াসমিন মোর্শেদ তাঁর বক্তব্যে জানান, স্বাধীনতার আগেও দেশে ভালো ইংরেজি মাধ্যম স্কুল ছিল। ভিকারুননিসা নূন স্কুলের মতো বেসরকারি স্কুল দারুণ ভূমিকা রেখেছে সে সময়। তিনি বলেন, ‘ ইংরেজি শুধু একটি ভাষা, আন্তর্জাতিক ভাষা। স্বাধীনতার পর ইংরেজি মাধ্যম স্কুলগুলো বন্ধ হয়ে গেল, বলা হলো শুধু বাংলা মাধ্যমে পড়ানোর জন্য। বাংলা মাধ্যমের সঙ্গে সমন্বয় করতে শিশুদের তখন বেশ বেগ পেতে হয়েছে। অনেক অভিভাবক তখন বিদেশে শিক্ষা নিতে পাঠিয়েছেন সন্তানদের। অনেকেই ভারতের দিকে ঝুঁকেছিলেন।’ 
সানিডেইল স্কুলের অধ্যক্ষ তাজিন আহমেদ বলেন, বাংলা সংস্কৃতিকে অত্যন্ত গুরুত্বের সঙ্গে বুকের ভেতর রেখেই তাঁরা সানিডেইল শুরু করেছিলেন। দেশে-বিদেশে মানসম্মত উচ্চশিক্ষার পথ তৈরি করে দেওয়াই ছিল তাঁদের চাওয়া। শুরুতে বাংলা মাধ্যমের স্কুলই প্রতিষ্ঠা করা হয়েছিল। কয়েক বছর পর একই স্কুলে ইংরেজি মাধ্যম চালু করা হয়।
বাংলাদেশ ইন্টারন্যাশনাল টিউটরিয়াল (বিআইটি) স্কুলের প্রতিষ্ঠাতা প্রিন্সিপাল লুবনা চৌধুরী বলেন, তখন ইংরেজি মাধ্যমের অনেক শিক্ষকই ছিলেন বাংলা মাধ্যম থেকে আসা। সাউথ ব্রিজ স্কুলের অধ্যক্ষ জিনাত চৌধুরী বলেন, ‘আমি কোনো ধরনের প্রতিবন্ধকতার মুখোমুখি হইনি। তবে হ্যাঁ, একটি ভালো স্কুল প্রতিষ্ঠার জন্য কিছু উৎসর্গ করতে হয়। সেটা আমাকেও করতে হয়েছে।’

নিউইয়র্কে বন্যা 
ঢাকার ভাবনা

বাংলাদেশি অভিবাসীদের মধ্যে সবচেয়ে বেশি বাস করেন নিউইয়র্ক শহরে। এ সংখ্যা বহু আগেই লাখ ছাড়িয়ে গেছে। আমেরিকার অন্যান্য শহরে বসবাস করা বাংলাদেশি অভিবাসী তুলনায় যা অনেক বেশি। বাংলাদেশিদের এই নিউইয়র্ক প্রীতির কারণ অনেকটাই রহস্য। অন্যান্য দেশের অভিবাসীদের সঙ্গে পাল্লা দিয়ে নিউইয়র্ক শহরে বসবাস করা বাংলাদেশির সংখ্যা বেড়েই চলছে। তাই ওই দূরের শহরটিতে কোনো অঘটন ঘটলে, প্রাকৃতিক দুর্যোগ হলে দেশে বসবাসকারী তাদের বিপুল সংখ্যক স্বজনের মধ্যে উদ্বেগ-উৎকণ্ঠা বাড়ে। যেমন বেড়েছে শহরটিতে আকস্মিক বন্যা হওয়ায়। এটিই স্বাভাবিক। 
এ মাসে নিউইয়র্ক শহরে আনুমানিক ১৪ ইঞ্চি বৃষ্টিপাত হয়েছে, ১৮৮২ সালের পর যা রেকর্ড! ভারি বর্ষণের ফলে শুক্রবার মধ্যরাত থেকে বিকেল পর্যন্ত প্রতি ঘণ্টায় দুই ইঞ্চি পর্যন্ত বৃষ্টিপাত রেকর্ড করে আবহাওয়া অফিস। শহরের সেন্ট্রাল পার্কে পাঁচ ইঞ্চির বেশি এবং জন এফ কেনেডি আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে আট ইঞ্চির বেশি পানি জমে যায়। জানা যাচ্ছে, দৈনিক হিসাবের ভিত্তিতে এই পরিমাণ বৃষ্টিপাত একটি ‘রেকর্ড’। 
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, তাপমাত্রা বৃদ্ধি এবং তা থেকে অতিবৃষ্টি ও বন্যা ক্রমবর্ধমান হারে বৃদ্ধি পাবে আগামী দিনগুলোতে। সাগর-মহাসাগর, হ্রদ থেকে বাষ্পীভবনের হার বাড়বে। ফলস্বরূপ, ঘূর্ণিঝড় ও আকস্মিক বন্যার মতো প্রাকৃতিক দুর্যোগের করাল গ্রাসের শিকার হবে বিশ্ববাসী। শক্তিশালী ঝড়ের প্রভাবে অতিবৃষ্টি এবং সেখান থেকে সৃষ্টি হওয়া আকস্মিক বন্যার কারণে নিউইয়র্ক শহরে জরুরি অবস্থা জারি করা হয়। শহরের কয়েকটি সাবওয়ে সিস্টেম, রাস্তা ও হাইওয়েতে পানি উঠে যায়। অতিরিক্ত পানির কারণে শুক্রবার লা গার্ডিয়ান বিমানবন্দরের অন্তত একটি টার্মিনাল বন্ধ করে দেওয়া হয়।
জরুরি অবস্থা জারি করার নিউইয়র্ক শহরের মেয়র এরিক অ্যাডামস শহরের মানুষকে সতর্ক থাকার পরামর্শ দিয়েছেন। ঘটনাস্থলের ছবি আর ভিডিওতে দেখা যায়, তুমুল বর্ষণের মধ্যে হাঁটু পানিতে হাঁটছে মানুষ। সোশ্যাল মিডিয়া পোস্ট করা অনেক ভিডিওতে দেখা যায় যে সাবওয়ে স্টেশনের দেয়াল ও ছাদ থেকে পানি চুঁয়ে পড়ছে। এমন একটি ভিডিও আমার মেসেঞ্জার ইনবক্সে পাঠান নিউইয়র্কে বসবাসকারী এক বন্ধু। ভিডিওটি দেখলে কিছুটা দুর্ভাবনা হয় বটে।

চুরির চাকরি!

বিচিত্র পেশার শহর হিসেবে বিশেষ পরিচিতি রয়েছে ঢাকার। সমীক্ষা করা হলে হয়তো বা বিশে^র বিচিত্রধর্মী পেশাজীবীদের শহর হিসেবে তালিকায় শীর্ষে উঠে আসবে ঢাকার নাম। চলতি পথে নিজের মোবাইল ফোন ছিনিয়ে নেয়ার অভিজ্ঞতা আছে বহু ঢাকাবাসীর, আবার এমন অঘটনের প্রত্যক্ষদর্শীও অনেকে। অবাক করা হলেও সত্যি, রাজধানীতে মোবাইল ফোন ছিনতাইকারী হিসেবে চাকরি মেলে। বেতন নির্ভর করে ছিনতাই করা ফোনের সংখ্যার ওপর। শর্ত একটাই ছিনতাই করা মোবাইল জমা দিতে হবে চাকরিদাতার হাতে। এমনকি পুলিশের হাতে ধরা পড়লে মামলা চালানো ও জামিনের ব্যবস্থা করে চাকরিদাতারা। ছিনতাই চক্রের এমন একটি দলের ১১ সদস্যকে সম্প্রতি গ্রেপ্তার করেছে গোয়েন্দারা।
রাজধানীর বিভিন্ন এলাকায় অভিযান চালিয়ে তাদের গ্রেপ্তার করেছে গোয়েন্দা পুলিশের সাইবার অ্যান্ড স্পেশাল ক্রাইম বিভাগ। ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের (ডিএমপি) গোয়েন্দা শাখার (ডিবি) প্রধান হারুন অর রশিদ জানান, গ্রেপ্তারদের কেউ মোবাইল চোর, কেউবা ছিনতাইকারী। কেউ ছিনতাই বা চুরি করা মোবাইলের ফোনের পাইকারি ক্রেতা। আবার কেউ চুরি করা ফোনের আইএমইআই নাম্বার পরিবর্তনে দক্ষ। তিনি জানান, গ্রেপ্তারদের এদের মধ্যে দীপু এবং লাল ইসলাম নামের দুজন মাসিক বেতন দিয়ে ছিনতাইকারী লালন করে। তবে শর্ত একটাই- চুরি বা ছিনতাই করা মোবাইল জমা দিতে হবে তাদের কাছে। এরপর চোরাই মোবাইলগুলো তারা তুলে দেয় আরেকটি গ্রুপের হাতে। বিশেষ অ্যাপস ব্যবহার করে ফোনের আইএমইআই নাম্বার পাল্টায় সেই গ্রুপটি। 
চতুর্থ ধাপে এসব মোবাইল ফোন চলে যায় গুলিস্তানের পাতাল মার্কেটসহ বিভিন্ন মার্কেটে। তাদের কাছ থেকে এমন ৮০টি চোরাই মোবাইল উদ্ধারের পর থানায় সাধারণ ডায়েরি করা হলেও পুলিশ মোবাইল ফোন উদ্ধার করতে পারেনি কেবল আইএমইআই পরিবর্তনের কারণে। রাজধানীতে চোরাই ফোন বেচাকেনা সিন্ডিকেটের এমন একাধিক চক্রের সন্ধান পেয়েছে গোয়েন্দা পুলিশ।

০১ অক্টোবর, ২০২৩

[email protected]

×