ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ০৯ মে ২০২৫, ২৬ বৈশাখ ১৪৩২

কালিন্দী ইউনিয়নের যাতায়াতের একমাত্র পথ বাঁশের সাঁকো

নিজস্ব সংবাদদাতা

প্রকাশিত: ১৫:১৪, ৯ মে ২০২৫

কালিন্দী ইউনিয়নের যাতায়াতের একমাত্র পথ বাঁশের সাঁকো

ছবি: দৈনিক জনকন্ঠ

স্বাধীনতার অর্ধশত বছর পেড়োলেও হাটা-চলার স্বাধীনতা পায়নি পাঁচ গ্রামের প্রায় অর্ধ লক্ষাধিক মানুষ। দৈনিক কাজে বা যে কোন প্রয়োজনে ঘর থেকে বেড়োলেই বাধা বাড়ির পাশের ছোট্র খাল, আর খালে সারাবছর পানি থাকায় খাল পারাপারে গ্রামবাসীর এক মাত্র অবলম্বন ভাঙাচোরা বাশের সাঁকো। গ্রামের একমাত্র সরকারি কাঁচা রাস্তাটি দেখলে মনে হবে এটি কোন অজপাড়া গ্রাম কিন্তু বাস্তবে এটি রাজধানীরই অংশ।

আজ (৯ মে) শুক্রবার সকালে সরেজমিনে গিয়ে দেখা গেছে, রাজধানীর জিরো পয়েন্ট থেকে মাত্র ৫/৭ কিলোমিটারের মধ্যে পুরান ঢাকা ও বুড়িগঙ্গা ঘেঁষা কেরানীগঞ্জের কালিন্দী ইউনিয়নের অবস্থা। ভৌগোলিক দিক দিয়ে শহর ঘেঁষা হলেও উন্নয়নের ছোঁয়া লাগেনি এই ইউনিয়নের অনেক অঞ্চলে, বিশেষ করে দুই ইউনিয়নের সীমানা ঘেঁষা দেওশুর, মক্কা নগর, মদীনা নগর, জিয়ানগর, ধুপাশুরসহ কয়েকটি গ্রামের হাজার হাজার মানুষ উন্নয়ন ও নাগরিক সেবা বঞ্চিত। 

এ এলাকার জায়গা জমির দাম বাড়লেও বাড়েনি জীবনযাত্রার মান। গ্রামগুলিতে নেই ভালো কোন রাস্তা, দেওশুর গ্রামের ভেতর দিয়ে প্রায় ২০ ফুটের একটি সরকারি রাস্তা থাকলে দীর্ঘদিন সংস্কার না হওয়ায় এতে চলেনা কোন যানবাহন এমনকি রিকশাও। তাছাড়া খাগাইল খালের উপর পাকা কোনো ব্রিজ না থাকায় নিজেদের অর্থায়নে নির্মিত বাঁশের সাঁকোই তাদের শেষ ভরসা।

ভুক্তভোগী গ্রামবাসীরা জানান, স্বাধীনতার পঞ্চাশ বছর হয়ে গেলেও চলাচলের রাস্তা পায়নি গ্রামবাসী। সরকারি রাস্তা না থাকায় অন্যের ব্যক্তিগত রাস্তা দিয়ে চলাচল করে পাঁচ গ্রামের প্রায় পঞ্চাশ হাজার মানুষ। এছাড়া গ্রামের ভেতর দিয়ে বয়ে চলা খালের উপর স্থায়ী কোন ব্রিজ না থাকায় জীবনের ঝুঁকি নিয়ে ভাঙাচোরা বাঁশ ও কাঠের সাঁকো দিয়ে পারাপার হতে হয়।  দৈনন্দিন যে কোনো কাজে বেড় হলেই পড়তে হয় বিরম্বনায়। সাঁকো পার হতে গিয়ে প্রায় প্রতিনিয়তই ঘটছে ছোট-বড় দুর্ঘটনা। বিশেষ করে স্কুলগামী শিশু, বৃদ্ধা আর রোগীরা পড়ছেন বেশ বিপাকে। সাঁকোর বাঁশ বা কাঠ ভেঙে মাঝে মাঝেই আহত হন অনেকে। পানিতে পড়ে নষ্ট হচ্ছে মূল্যবান সম্পদ।  

স্থানীয় যুবক শান্ত বলেন, “নির্বাচন এলেই জনপ্রতিনিধিরা বিভিন্ন আশ্বাস দেন কিন্তু কোন আশ্বাসই আলোর মুখ দেখেনি গত ৫০ বছরে। সর্বশেষ জিয়ানগর-দেওশুর দিয়ে একটি পাঁকা ব্রিজ নির্মাণের কাজ শুরু হওয়ার কথা থাকলেও বাস্তবে তা দেখা যায়নি।” 

স্থানীয় বাসিন্দা মো: তাজু জানান, “২০ বছর যাবৎ এখানে (ব্রিজের পাশে) বসবাস করি। এটি একটি পায়ে হাঁটার রাস্তা কিন্তু প্রতিদিন হাজার হাজার মানুষ চলাচল করে এই রাস্তা ও সাকু দিয়ে। বিগত দিনে অনেক নেতা আশ্বাস দিলেও ব্রিজ করে দেয়নি কেউ। মাঝে মধ্যেই বাসের সাঁকো থেকে পড়ে অনেকে আহত হয়, ব্রিজটি করে দিলে সকলের উপকার হতো।

দেওশুর গ্রামের বাসেরুন বেগম জানান, “পঞ্চাশ বছর ধরে দেখছি রাস্তার এ অবস্থা। সরকার আসে সরকার যায় কিন্তু রাস্তার উন্নতি হয়না। কেউ অসুস্থ হলে রিকশায় করে হাসপাতালে নেওয়ার ব্যবস্থাও নেই এই গ্রামের মানুষের। কিছু চাওয়ার নেই, কারণ চাইতে চাইতে আমরা ক্লান্ত।” বাকি জীবন কোন মতে কাটিয়ে যেতে চান এই ৭০ বছর বয়সী এই নারী।

গ্রামের বাসিন্দা প্রদীপ বলেন, “এলাকাটিতে বড় মাপের কোন লোক না থাকা, সংখ্যালঘু অধ্যুষিত ও বহিরাগত লোকজন বেশি হওয়া এবং রাস্তার পাশে বড় বড় আবাসিক প্রকল্প গড়ে উঠায় ভেতরের গ্রামগুলোতে কারো নজরে পড়েনা। ব্যক্তিগত রাস্তাটি বন্ধ করে দিলে তাদের চলাচলের কোন পথ থাকবেনা বলেও জানান তিনি।" দ্রুত সময়ের মধ্যে সরকারি রাস্তাটি মেরামত এবং খাগাইল খালের উপর পাকা ব্রিজ নির্মাণের দাবি এলাকাবাসীর। 

এ বিষয়ে জানতে চাইলে কেরানীগঞ্জ উপজেলা প্রকৌশলী মো: আরিফুর রহমান মোটু ফোনে জানান, বিষয়টি আমার জানা নেই আপনার মাধ্যমে শুনলাম, দেওসুর এলাকাটি দ্রুত পরিদর্শন করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের চেষ্টা করবো।

মিরাজ খান

×