
সম্পাদকীয়
জাতিসংঘের সহায়ক সংস্থা ইউনেস্কো। বিশ্বে শিক্ষা, বিজ্ঞান ও সংস্কৃতির প্রসার ঘটানো এবং উন্নয়নের মাধ্যমে মানুষের জীবন মানের উন্নয়ন ঘটিয়ে আসছে ১৯৪৬ সাল থেকে। এটি সংশ্লিষ্ট বিষয়সমূহকে স্বীকৃতি প্রদানের মাধ্যমে তাদের সংরক্ষণ, সংস্করণ এবং সম্প্রসারণের জন্য উদ্দীপনা ও প্রণোদনা প্রদান করে। তাদের কাজের পরিধির একটি হলো শিল্প-সংস্কৃতি। পৃথিবীর বিভিন্ন দেশে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা ইনটেনজিবল কালচার হেরিটেজ বা নির্বস্তুক সংস্কৃতি ঐতিহ্য নিয়ে কাজ করে ইউনেস্কো।
কোনো দেশের ঐতিহ্য সংস্কৃতির নির্বস্তুক উপাদানকে স্বীকৃতি প্রদান করতে হলে সংশ্লিষ্ট দেশের সরকারের আবেদনের প্রেক্ষিতে ইউনেস্কো এসব উপাদানের আন্তর্জাতিক স্বীকৃতি প্রদান করে থাকে। পাশাপাশি তারা এসব ঐতিহ্য সংরক্ষণে উৎসাহিতও করে। কাজটি প্রথম শুরু হয় ২০০১ সালে। ঐ বছরের ১৮ মে বিভিন্ন দেশের ১৯টি গুরুত্বপূর্ণ নির্বস্তুক সাংস্কৃতিক ঐতিহ্যকে মাস্টারপিস অব দ্য ওরাল অ্যান্ড ইনটেনজিবল হেরিটেজ অব হিউম্যানিটি হিসেবে ঘোষণা করে।
এরই ধারাবাহিকতায় ২০০৩ সালের ১৭ অক্টোবর বাংলাদেশসহ মোট ১৭৮টি রাষ্ট্র নির্বস্তুক ঐতিহ্য রক্ষা এবং এসব ইনটেনজিবল কালচারাল হেরিটেজকে প্রাতিষ্ঠানিক স্বীকৃতি দেওয়ার লক্ষ্যে একটি কনভেনশন স্বাক্ষর করে। স্বাক্ষরকৃত দেশগুলোতে থাকা নির্বস্তুক উপাদানগুলোর মধ্যে প্রতিবছর একটি করে নির্ধারিত করে ইউনেস্কোর কাছে স্বীকৃতি চেয়ে আবেদন করতে পারে। ইউনেস্কো যাচাই-বাছাই করার মাধ্যমে সেগুলোকে বিশ্ব ঐতিহ্য হিসেবে তুলে ধরে। সেসব সংরক্ষণের জন্য ইউনেস্কো অর্থও প্রদান করে থাকে। বাংলাদেশের সংস্কৃতির নির্বস্তুক উপাদান ইউনেস্কোতে প্রথম স্বীকৃতি পেয়েছে ২০০৯ সালে বাউল গানের হাত ধরে। এরপর থেকে আমাদের সংস্কৃতিকে সমৃদ্ধ করেছে এমন আরও অনেক উপাদান ইউনেস্কোর তালিকাভুক্ত হয়েছে। সেগুলোর মধ্যে রয়েছে জামদানি (২০১৩), মঙ্গল শোভাযাত্রা (২০১৬), শীতলপাটি (২০১৭)। এসবের স্বীকৃতি বাংলাদেশের ঐতিহ্য রক্ষায় যেমন উদ্দীপনাদায়ক, তেমনি বিশ্বব্যাপী আমাদের সংস্কৃতিকে তুলে ধরার একটি সুবর্ণ সুযোগ।
তবে স্বাক্ষরিত দেশগুলোর যেসব ইনটেনজিবল হেরিটেজ স্বীকৃতির জন্য ইউনেস্কোতে পাঠানো হবে, সেগুলো অবশ্যই দেশের সরকারি নির্বস্তুক সাংস্কৃতিক ঐতিহ্যের তালিকায় থাকতে হবে। কিন্তু সরকারিভাবে প্রস্তুতকৃত কোনো তালিকা বাংলাদেশের ছিল না। ইউনেস্কোর বৈঠকে তারা শীঘ্রই তালিকা তৈরি করার প্রতিশ্রুতি দিয়ে এলেও এখন পর্যন্ত তা হয়নি। তালিকাহীনভাবে ২০১৭ সালের শীতলপাটি পর্যন্ত তারা সফল হলেও এরপর আর কোনো স্বীকৃতি পাওয়া যায়নি। এরই পদক্ষেপস্বরূপ শনিবার ৩০ সেপ্টেম্বর প্রথমবারের মতো ১০৯টি নির্বস্তুক সাংস্কৃতিক ঐতিহ্যের নাম সংবলিত তালিকা প্রকাশ করেছে বাংলাদেশ। ইনভেন্টরিটি তৈরির কাজে নেতৃত্ব দিচ্ছে জাতীয় জাদুঘর কর্তৃপক্ষ। আশা করা যায়, এবার ইউনেস্কোর শর্তসমূহ পূরণপূর্বক ইনটেনজিবল কালচারাল হেরিটেজ সম্পর্কিত আরও স্বীকৃতি বাংলাদেশ পাবে।