
সম্পাদকীয়
বাংলাদেশে গণতন্ত্রের নামে ’৭১-এর মহান মুক্তিযুদ্ধ ও স্বাধীনতাবিরোধী অপশক্তি অবাধে রাজনীতি করার সুযোগ পাচ্ছে। মূলত বিদেশী শক্তি বিশেষ করে যুক্তরাষ্ট্রের সহায়তা ও মদদে বিএনপি-জামায়াত রাজনীতি করতে পারছে বাংলাদেশে। এ প্রসঙ্গে বিশিষ্ট ইতিহাসবিদ অধ্যাপক মুনতাসীর মামুন মহান যুক্তিযুদ্ধে গণহত্যা, ৩০ লাখ শহীদ এবং ৩ লাখ মা-বোনের সম্ভ্রমহানির কথা জাতিকে স্মরণ করিয়ে দেন। স্বাধীনতা ও দেশবিরোধী অপশক্তি কখনোই তা মেনে নিতে পারেনি, এমনকি স্বীকারও করে না। এজন্যই বিএনপির প্রতিষ্ঠাতা জেনারেল জিয়া তার শাসনামলে কখনই পাকিস্তানি সেনাবাহিনী কর্তৃক গণহত্যা, নারী নির্যাতন ইত্যাদির কথা বলতে দেওয়া হতো না। তখন পাকবাহিনী না বলে বলা হতো হানাদার বাহিনী।
যাবতীয় পাঠ্যপুস্তক ও ইতিহাস থেকে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধুর নাম মুছে ফেলার অপচেষ্টা করা হয়েছিল। গণমাধ্যমে প্রচারও ছিল নিষিদ্ধ। সর্বোপরি যুদ্ধাপরাধী- মানবতাবিরোধীদের বিচারকাজ বন্ধ করে দিয়ে জামায়াতসহ স্বাধীনতাবিরোধীদের পুনর্বাসিত করেছিল রাজনীতিতে, যা বর্তমানে পরিণত হয়েছে বাংলাদেশবিরোধী বিষবৃক্ষে। আর সে কারণেই আমাদের সবাইকে বারবার ’৭১-এর গণহত্যার কথা বলতে হবে। স্মরণ করিয়ে দিতে হবে নতুন প্রজন্মকে। আন্তর্র্জাতিক স্বীকৃতিও আদায় করতে হবে বাংলাদেশে সংঘটিত গণহত্যার। ‘বাংলাদেশে গণহত্যা স্মরণ ও মুক্তিযুদ্ধ; বহুমাত্রিকতার খোঁজে’ শীর্ষক দুই দিনব্যাপী ইতিহাসবিদদের এক আন্তর্জাতিক সম্মেলনে উদ্বোধনী পর্বে বক্তব্য রাখতে গিয়ে অধ্যাপক মুনতাসীর মামুন এ কথা বলেন।
ইতোপূর্বে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাও বলেছেন, আগামী বছর জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে সামনে রেখে ইতোমধ্যে শুরু হয়েছে দেশীয় ও আন্তর্জাতিক অপতৎপরতা, ষড়যন্ত্র ও অপপ্রচার। অতি বাম ও ডানপন্থিরা এবং কিছু ভাড়াটে বিভ্রান্ত বুদ্ধিজীবী-বিবৃতিজীবী একযোগে মেতে উঠেছে সরকারের বিরুদ্ধে। তারা জাতীয় নির্বাচনকে বাধাগ্রস্ত ও ব্যাহত করতে চায় যে কোনো মূল্যে। সাংবিধানিক পন্থায় নির্বাচন ও ক্ষমতা হস্তান্তরে তাদের তীব্র অনীহা। কেননা, তারা ভালো করেই জানে যে, তাদের কোনো জনভিত্তি নেই। নির্বাচনে তাদের ভরাডুবি এবং জামানত বাজেয়াপ্ত হবে। সে অবস্থায় পেছনের দরজা দিয়ে ক্ষমতা দখলই তাদের লক্ষ্য। এই অপশক্তির মোকাবিলায় সদা সর্বদা সতর্ক ও সাবধান থাকতে হবে দেশবাসীসহ আওয়ামী লীগ নেতাকর্মীদের।
কেউ যাতে আন্দোলন-সংগ্রাম-সমাবেশের নামে অরাজকতা, নাশকতা ও অগ্নিসন্ত্রাস সৃষ্টি করতে না পারে, সেদিকে সজাগ দৃষ্টি রাখতে হবে দেশবাসীকে। সংবিধান অনুযায়ী যথাসময়ে অনুষ্ঠিত হবে জাতীয় সংসদ নির্বাচন। সরকার আইনের মাধ্যমে একটি স্বাধীন নির্বাচন কমিশন গঠন করে দিয়েছে। দেশে একটি অবাধ, সুষ্ঠু, নিরপেক্ষ নির্বাচন অনুষ্ঠানে সরকার সব রকম সহায়তা দেবে নির্বাচন কমিশনকে। সেখানে কোনো হস্তক্ষেপ করবে না সরকার। এক্ষেত্রে দেশী-বিদেশী কোনো ষড়যন্ত্র কিংবা হস্তক্ষেপ মোটেও কাম্য নয়।
ফেসবুক, টুইটার, ইন্টারনেট এমনকি বিদেশী টেলিভিশন চ্যানেলেও বাংলাদেশকে ঘিরে ইদানীং নানা মিথ্যা, বানোয়াট, ভুয়া, অসত্য খবর তথা গুজব ছড়ানো হচ্ছে। তারা অনবরত মিথ্যাচার করেই চলেছে, যার সঙ্গে রয়েছে বাংলাদেশবিরোধী যুদ্ধাপরাধী দল জামায়াতে ইসলামী, কিছু বাম ও অন্যরা। আমরা যদি আমাদের স্বাধীনতাকে অর্থবহ করে তুলতে চাই, সমৃদ্ধির অগ্রযাত্রায় অব্যাহত রেখে বিশ্বে সম্মানজনক অবস্থান অর্জন করতে চাই, তাহলে অন্ধকারের অপশক্তিকে পরাস্ত করতেই হবে। সে জন্য চিহ্নিত ও স্বঘোষিত অপশক্তির বিরুদ্ধে সর্বদা সতর্ক ও সাবধান থাকতে হবে সবাইকে।