প্রতিটি ফোঁটাই মূল্যবান
আমার অপচয় করা পানি হয়তো কারও জীবন বাঁচাতে কাজে লাগতো। প্রোজেক্ট ওয়ার্ল্ড ইমপ্যাক্টের তথ্যানুসারে বিশ্বে প্রায় ৬৬৩ মিলিয়ন মানুষ বিশুদ্ধ পানির অ্যাক্সেস পায় না এবং প্রায় ২.৭ বিলিয়ন মানুষ প্রতি বছরের প্রায় মাসখানেক সময় পানির সংকটে ভোগে। এবং এভিডেন্স অ্যাকশনের তথ্যানুসারে বিশ্বে ২ বিলিয়ন মানুষ বিশুদ্ধ পানির অ্যাক্সেস পায় না এবং যেখানে প্রায় ১ মিলিয়ন মানুষের মৃত্যু ঘটে প্রতি বছর বিশুদ্ধ পানির অভাবে। প্রাকৃতিকভাবে সৃষ্ট বেশিরভাগ বিশুদ্ধ পানির উৎস হিমবাহে রয়েছে যা আসলে ব্যবহার করা যায় না। অন্যদিকে জনসংখ্যা বৃদ্ধির চেয়ে দ্বিগুণ হারে বেড়ে চলেছে বিশুদ্ধ পানির চাহিদা।
আর এভাবে চলতে থাকলে ২০২৫ সালের মধ্যে বিশ্বের প্রায় দুই-তৃতীয়াংশ মানুষ পানি সংকটে পড়বে বলে ধারণা করা যায়। অন্যদিকে জয়েন্ট মনিটরিং প্রোগ্রাম (জেএমপি) এর ২০২০ সালের রিপোর্ট অনুসারে বাংলাদেশে প্রায় ৪১.৫% মানুষ বিশুদ্ধ পানির ব্যবস্থা করতে ব্যর্থ। বাংলাদেশের মতো ঘনবসতিপূর্ণ দেশে বিশুদ্ধ পানির ব্যবস্থা সবচেয়ে কঠিন কাজগুলোর মধ্যে অন্যতম। দিনে দিনে এটির ব্যবস্থাপনা যেন আরও জটিল ও কঠিন হয়ে পড়ছে এর পিছনে মূল কারণ হিসেবে বলা যায় জনসংখ্যা বৃদ্ধি কিংবা পানির চাহিদা বৃদ্ধি। একদিকে যেমন আমাদের পানির চাহিদা দিনের পর দিন বৃদ্ধি পেয়ে চলেছে অন্যদিকে তেমন আমাদের পানির অপচয় দিনের পর দিন সমান তালে বেড়েই চলেছে।
অথচ আমরা জেনে অবাক হব যে, ছিদ্রযুক্ত কল দিয়ে প্রতি সেকেন্ডে একটি করে পানির ফোঁটা পড়লে প্রতি বছর দুই হাজার সাত শ’ গ্যালন পানির অপচয় হয়। জাতিসংঘের শিক্ষা, বিজ্ঞান ও সংস্কৃতি সংস্থা ইউনেস্কোর ২০১৮ সালের পানি উন্নয়ন প্রতিবেদনে এ কথা বলা হয়েছে যে, প্রতি বছর পানি ব্যবহারের হার ১ শতাংশ হারে বাড়ছে। পানির চাহিদা বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে বাড়ছে পানি সংকটে পড়া মানুষের সংখ্যা ও। অথচ আমরা এক মুহূর্তের জন্যও পানি অপচয় করতে এসব নিয়ে চিন্তাভাবনা করি না। আমরা অযথাই কল খুলে রাখি, দরকারের চেয়ে অধিক পরিমাণ পানি ব্যবহার করি, অনেক সময় লিকেজ থেকে পানি অপচয় হতেই থাকে আমরা এ ব্যাপারে কোনো ভ্রুক্ষেপও করি না, দরকারের চেয়ে অধিক পারিমাণ পানি গাছে দেই কিংবা গ্লাসে ঢেলে কিছু পরিমাণ পানি খাই বাকিটা ফেলে দেই।
অথচ আমরা দেশ কিংবা বিশ্বব্যাপী পানি সংকটের কথা একবার ও ভাবতে রাজি নই। আমাদের প্রত্যেকের মানবিকতা কিংবা মনুষ্যত্বের দিক থেকে হলেও এ বিষয়ে সবার চিন্তা করা উচিত। আমার কাছে বিশুদ্ধ পানির উৎস আছে বলেই যে আমি অপচয় করব এই ধ্যান-ধারণা থেকে আমাদের বেরিয়ে আসতে হবে। সবার মাঝে পানির গুরুত্ব এবং পানির অপচয় রোধ সম্পর্কে সবাইকে সচেতন করতে হবে। স্কুল প্রতিষ্ঠানে শিক্ষার্থীদের ক্লাস লেকচারের পাশাপাশি এ ব্যাপারে জানানো যেতে পারে। পাশাপাশি গ্রামের মানুষদের মধ্যে সচেতনতা বাড়াতে মিটিংয়ের আয়োজন কিংবা লিফলেট বিতরণ করা যেতে পারে।
প্রকৃতপক্ষে আমরা যে যেখানে আছি সেখান থেকে তার আশপাশের মানুষদের সচেতন করতে হবে। পরিবারের বড়দের উচিত ছোটদের এ বিষয়ে, ছোট থেকেই বুঝানো এবং শেখানো কোন কোন ক্ষেত্রে আমরা নিজেদের অজান্তেই পানির অপচয় করে ফেলি, বিশুদ্ধ পানির গুরুত্ব এবং পানি অপচয়ের ভয়াবহতা সম্পর্কে। আমাদের প্রত্যেকের নিজ নিজ জায়গা থেকে এ বিষয়ে গুরুত্বপূর্ণ ও অগ্রণী ভূমিকা পালন করতে হবে, তবেই একদিন এই দেশ, এই পৃথিবী বিশুদ্ধ পানির সংকট থেকে মুক্তি পাবে।
রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় থেকে