
বর্তমান বাংলাদেশ সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতির উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত
বর্তমান সরকারের অধীনে বাংলাদেশে সংখ্যালঘুদের নির্যাতনের বিষয়ে আন্তর্জাতিক গণমাধ্যমে প্রচারিত সাম্প্রতিক ভুল তথ্যের ওপরও জোর দেওয়া হয়। উল্লেখ্য, অবাধ তথ্য প্রবাহের কারণে অনলাইন মাধ্যমে পরিচয় গোপন করে ভুল তথ্য পরিবেশন করে অনেকেই বিভিন্ন জায়গায় প্রোপাগান্ডা আকারে সাম্প্রদায়িকতার বিষবাষ্প ছড়িয়ে দেয়। অসাধু একটি চক্র রয়েছে যাদের কাজই হচ্ছে বাংলাদেশের মানবাধিকার পরিস্থিতি নিয়ে মিথ্যা তথ্য ছড়িয়ে রাজনৈতিকভাবে সুবিধা গ্রহণের ধান্দার পথ অবলম্বন করা। বিদেশেও চক্রটি সক্রিয় থেকে বাংলাদেশের দুর্নাম করার ক্ষেত্রে থাকে অগ্রসর। এর পেছনে দুষ্কৃতকারীদের মোটা অঙ্কের অর্থ লগ্নি থাকে। ফলে বিদেশে দেশের ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ণ হওয়ার শঙ্কা দেখা যায়। এদেরকে শক্ত হস্তে দমনের উদ্যোগ গ্রহণ করতে হবে
সম্প্রতি জাতীয় মানবাধিকার কমিশনের সাবেক চেয়ারম্যান ও এমপাওয়ারমেন্ট থ্রু ল অব দ্য কমন পিপলের (এলকপ) চেয়ারম্যান অধ্যাপক ড. মিজানুর রহমান আন্তর্জাতিক একটি সেমিনারে বলেছেন, বর্তমান বাংলাদেশ সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতির উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত। সেমিনারে যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য, ইউরোপীয় ইউনিয়ন, ভারত, নেপাল, ভুটান, মিয়ানমারসহ বিভিন্ন দেশের প্রতিনিধি ও বিশিষ্ট শিক্ষাবিদরা উপস্থিত ছিলেন। গবেষণাপত্রে বাংলাদেশের সংখ্যালঘু জনগোষ্ঠীর ঐতিহাসিক প্রেক্ষাপট তুলে ধরা হয়। এমন একটা সময়ে সেমিনারটি অনুষ্ঠিত হয়েছে, যখন পশ্চিমা বিশ্ব বাংলাদেশের মানবাধিকার পরিস্থিতি নিয়ে তাদের নেতিবাচক অবস্থান তুলে ধরছে। সেক্ষেত্রে আয়োজকদের আয়োজনের সময়টি যথার্থ হয়েছে এবং সেমিনারে বিভিন্ন দেশের আন্তর্জাতিক প্রতিনিধি উপস্থিত থাকায় বাংলাদেশের প্রকৃত মানবাধিকার পরিস্থিতি নিয়ে অন্যদেরও জানতে-বুঝতে সুবিধা হয়েছে। সেমিনারে উত্থাপিত প্রবন্ধটি গবেষণাসমৃদ্ধ এবং পেপারটি স্কলারদের রিভিউ ও মতামত সাপেক্ষে উপস্থাপন করা হয়েছে।
দেশের গণমাধ্যমে বিভিন্ন সময়ে প্রকাশিত খবরে দেখা যায়, সংখ্যালঘুরা সামান্য বিষয়কে উপজীব্য করে ক্ষতিগ্রস্ত হয়ে থাকে। এমনকি ধর্মীয় উপাসনালয় বিনষ্ট করে ফেলে দুষ্কৃতকারীরা। বিশেষ করে নির্বাচনকালীন ও নির্বাচন পরবর্তী সময়ে সংখ্যালঘুরা একটি শ্রেণির নিকট নির্যাতনের শিকার হয়ে থাকেন। ওই গ্রুপটি বিশেষ বিশেষ সময়ে পরিকল্পিতভাবে সংখ্যালঘুদের ওপর নির্যাতনের খড়গ নিয়ে নামে সাধারণত যে সময়টাতে বাকি বিশ্বের নজর থাকে বাংলাদেশের ওপর। এমন মোক্ষম সময়কে কাজে লাগিয়ে তারা দেখাতে চায় বাংলাদেশে সংখ্যালঘুরা নির্যাতিত এবং প্রকারান্তরে তারা বাংলাদেশের ক্ষতিসাধন করে থাকে।
সেমিনারে ড. মিজানুর রহমান বলেন, এখন আর এখানে সংখ্যালঘুদের কোনো নির্যাতন বা হয়রানি করা হয় না। দেশের সরকার ও আইনশৃঙ্খলা বাহিনী এ বিষয়ে অনেক কঠোর ও সোচ্চার। দেশের মানুষও অনেক সহনশীল। তিনি বলেন, বাংলাদেশে বসবাসরত সব সম্প্রদায়ের মানুষ সমমর্যাদার সঙ্গে বসবাস করছেন। এখানে আমাদের ধর্ম, কৃষ্টি-কালচারের ভিন্নতা রয়েছে, কিন্তু পারস্পরিক সম্পর্ক ও শ্রদ্ধাবোধের কোনো ভিন্নতা নেই। এখন সমাজের সব ক্ষেত্রে সব ধর্মের মানুষের যথাযথ অংশগ্রহণ রয়েছে। প্রকৃত অর্থে পারস্পরিক সৌহার্দ্য ও সম্প্রীতির যে বাঁধন বাঙালিরা স্থাপন করেছে, তা সত্যিকার অর্থেই অন্য সম্প্রদায় ও রাষ্ট্রের জন্য অনুসরণীয় ও অনুকরণীয় হয়ে উঠতে পারে।
সেমিনারের আলোচকরা বাংলাদেশের সংখ্যালঘুদের বর্তমান অবস্থার ওপর গুরুত্বারোপ করেন। বর্তমান সরকারের অধীনে বাংলাদেশে সংখ্যালঘুদের নির্যাতনের বিষয়ে আন্তর্জাতিক গণমাধ্যমে প্রচারিত সাম্প্রতিক ভুল তথ্যের ওপরও জোর দেওয়া হয়। উল্লেখ্য, অবাধ তথ্য প্রবাহের কারণে অনলাইন মাধ্যমে পরিচয় গোপন করে ভুল তথ্য পরিবেশন করে অনেকেই বিভিন্ন জায়গায় প্রোপাগান্ডা আকারে সাম্প্রদায়িকতার বিষবাষ্প ছড়িয়ে দেয়। অসাধু একটি চক্র রয়েছে যাদের কাজই হচ্ছে- বাংলাদেশের মানবাধিকার পরিস্থিতি নিয়ে মিথ্যা তথ্য ছড়িয়ে রাজনৈতিকভাবে সুবিধা গ্রহণের ধান্দার পথ অবলম্বন করা। বিদেশেও চক্রটি সক্রিয় থেকে বাংলাদেশের দুর্নাম করার ক্ষেত্রে থাকে অগ্রসর। এর পেছনে দুষ্কৃতকারীদের মোটা অঙ্কের অর্থ লগ্নি থাকে। ফলে বিদেশে দেশের ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ণ হওয়ার শঙ্কা দেখা যায়। এদেরকে শক্ত হস্তে দমনের উদ্যোগ গ্রহণ করতে হবে।
রাষ্ট্রের নাগরিকের মানবাধিকার বাস্তবায়নে সরকারকে যথেষ্ট চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা করতে হয়। কেননা, রাষ্ট্রের প্রতিটি নাগরিকের মানবাধিকার নিশ্চিত করা কোনোভাবেই সহজকর্ম নয়। আবার সেখানে যদি প্রতিপক্ষ দাঁড়িয়ে যায়, তাহলে তো কথায় নেই। এখানে বাংলাদেশের প্রতিপক্ষ ষড়যন্ত্রকারীদের সঙ্গে সবসময়ই বিদেশী চক্রও জড়িয়ে পড়ে। যদি খেয়াল করেন তাহলে দেখবেন বিভিন্ন গণমাধ্যমে সহজলভ্যতার কারণেই সত্য-মিথ্যা দুধরনের নিউজই ভাইরাল হয়ে পড়ে। তবে মিথ্যা সংবাদ ভাইরাল হওয়ার নজির অহরহ চোখে পড়ছে দেশে। মিথ্যা প্রোপাগান্ডা নিয়ে পরিবেশিত সংবাদ ভাইরাল হয়ে যায় অতি সহজেই। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে কতিপয় গ্রুপ রয়েছে, যারা রাষ্ট্রবিরোধী অপপ্রচারে সম্পৃক্ত সর্বদাই। এদের একটি শক্তিশালী গ্রুপ সরকারবিরোধী অপপ্রচারে জড়িয়ে রয়েছে। এর সঙ্গে বিদেশী চক্রও জড়িত। বাংলাদেশে মানবাধিকার লঙ্ঘনের কোনোরূপ ঘটনা ঘটলেই আন্তর্জাতিক মিডিয়ায় ফলাও করে প্রচার করা হয়। যদিও বিষয়টা তেমন গুরুত্ব বহন করে না, তথাপি তিলকে তাল বানিয়ে মিডিয়াতে প্রচার করে বাংলাদেশের সুনামকে খাটো করার অপপ্রয়াস প্রায় সময়ই লক্ষ্য করা যায়।
মানবাধিকার প্রত্যয়টি অত্যন্ত স্পর্শকাতর। পান থেকে চুন খসলেই কিন্তু মানবাধিকার লঙ্ঘিত হয়। বাংলাদেশ সরকারের প্রাণান্তকর প্রচেষ্টায় নাগরিকের মানবাধিকার নিশ্চিতে দায়িত্বশীল ভূমিকা রাখার পাশাপাশি ব্যাপক উদ্যোগ গ্রহণ করেছে। সেমিনারে একটি তুলনামূলক বিশ্লেষণে দেখানো হয়, বর্তমান সরকার সংখ্যালঘুদের বিরুদ্ধে দমন-পীড়নের হার নিয়ন্ত্রণে ব্যবস্থা নিচ্ছে, যা ২০০১ সালে ছিল অনুপস্থিত। সংখ্যালঘু নির্যাতনের ঘটনা প্রায় শূন্যের কোটায় নেমে এসেছে। তবে মাঝে মধ্যে একটি পক্ষ মিথ্যা গুজব ছড়িয়ে সাম্প্রদায়িক সংঘাত সৃষ্টির পাঁয়তারা করা থেকে থেমে নেই; তথাপি সরকারসহ দায়িত্বশীল নাগরিকদের অগ্রণী ভূমিকা পালনের কারণে সংঘাত-সহিংসতা কমে এসেছে অনেকাংশে। বিশেষ করে সংখ্যালঘু নির্যাতনের ঘটনা প্রায় নেই।
গুজব সৃষ্টিকারীদের একটি চক্রকে মোকাবিলা করে নাগরিকদের মানবাধিকার নিশ্চিতে সরকারকে কাজ করতে হয়। যে সময়কালের কথা সেমিনারে তুলে আনা হয়েছে সে সময়ে গুম, হত্যাকা-, বিচারবহির্ভূত হত্যাকা-, পুলিশি হেফাজতে মৃত্যুর মতো ঘটনা ঘটেছে। বর্তমানে এ ধরনের নির্যাতনের ঘটনার সংবাদ প্রায় অনুপস্থিত। সঙ্গত কারণেই উল্লেখ করা যায়, সরকার সাধারণ মানুষের মানবাধিকার নিশ্চিতে কাজ করে যাচ্ছে।
সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতির নজির সৃষ্টি করেছে বাংলাদেশ। বিদেশী বন্ধুরা বিভিন্ন জায়গায় বাংলাদেশের সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতির ভূয়সী প্রশংসা করে বক্তব্য প্রদান করেছেন। নির্ভয়ে, নিঃসঙ্কোচে বিভিন্ন ধর্মের অনুসারীরা এদেশে তাদের ধর্মীয় অনুশাসন পালন করছে। ধর্ম যার যার উৎসব সবার-এ স্লোগানে উজ্জীবিত হয়ে ধর্মীয় সম্প্রীতি সৃষ্টি হয়েছে দেশব্যাপী। মুক্তিযুদ্ধের চেতনার বাস্তবায়নের মাধ্যমে অসাম্প্রদায়িক চেতনায় বাংলাদেশ গড়ার লক্ষ্যে কাজ করছে সরকার। ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠীসহ প্রান্তিক মানুষের মানবাধিকার নিশ্চিতে সরকারের গৃহীত পদক্ষেপ বিশ্বব্যাপী সুনাম অর্জন করেছে। সাধারণ মানুষের মানবাধিকারও নিশ্চিত হয়েছে। উদাহরণস্বরূপ, সরকারের আশ্রয়ণ প্রকল্পের গুরুত্বপূর্ণ সংযোজন মানুষের জমিসহ বাড়ি নিশ্চিত করেছে।
স্থানীয় সরকার পর্যায়ে সরকারের জনমুখী উদ্যোগের কারণে প্রান্তিক মানুষের মানবাধিকার নিশ্চিত হয়েছে। করোনার টিকা বিনামূল্যে সরবরাহ করেছে সরকার। প্রাকৃতিক দুর্যোগের সময়ে ক্ষতিগ্রস্ত মানুষের পাশে দাঁড়িয়ে মানবাধিকার নিশ্চিতের পাশাপাশি সাধারণ ক্ষতিগ্রস্ত জনতাকে উঠে দাঁড়াতে সহযোগিতা করছে। বাংলাদেশ সরকার বন্ধুপ্রতিম রাষ্ট্রসমূহের বিপদেও সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দিচ্ছে।
সাংবাদিক ভাইদের নিকট আবেদন থাকবে, দেশের স্বার্থ বিবেচনায় হলুদ সাংবাদিকতা থেকে বিরত থাকবেন। হলুদ সাংবাদিকতা থেকে আপনি সাময়িক সময়ের জন্য সুবিধাপ্রাপ্ত হলেও দীর্ঘমেয়াদি ভিত্তিতে দেশের ক্ষতি হয়ে থাকে। একজন বিবেকবান মানুষ কখনোই নিজের স্বল্প সময়ের স্বার্থের কাছে দেশের স্বার্থকে জলাঞ্জলি দিতে পারে না। শুধু টিআরপি বাড়ানোর উদ্দেশ্যে হলুদ সাংবাদিকতার অপপ্রয়াস থেকে বের হয়ে আসতে হবে। মিথের ওপর ভিত্তি করে সংবাদের ভাইরাল হওয়ার অসংখ্য উদাহরণ আমাদের চোখের সামনে আছে।
তবে ভালো সাংবাদিকতারও অসংখ্য নজির এদেশে রয়েছে। সাংবাদিকদের দায়িত্বশীলতার কারণেই দেশ ব্যাপকভাবে উপকৃত হয়। কাজেই সাংবাদিকদের দায়িত্বশীল ও নিষ্ঠাবান হয়ে সংবাদ পরিবেশন করতে হবে। দেশের স্বার্থকে প্রাধান্য দিয়ে দেশের ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ণ হয়, এমন সংবাদ পরিবেশনে সতর্ক হতে হবে সর্বদাই।
লেখক : চেয়ারম্যান, ক্রিমিনোলজি এ্যান্ড পুলিশ সায়েন্স বিভাগ, চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়