ঢাকা, বাংলাদেশ   বুধবার ২৪ এপ্রিল ২০২৪, ১১ বৈশাখ ১৪৩১

মূল্যস্ফীতিতে জনদুর্ভোগ

-

প্রকাশিত: ২০:৫৫, ৭ জুন ২০২৩

মূল্যস্ফীতিতে জনদুর্ভোগ

সম্পাদকীয়

গত ১১ বছরের মধ্যে সর্বোচ্চ মূল্যস্ফীতির কবলে পড়েছে দেশবাসী। বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরো (বিবিএস) সোমবার মে মাসের মূল্যস্ফীতির হালনাগাদ তথ্য প্রকাশ করেছে। তাতে দেখা যায়, দেশের সার্বিক মূল্যস্ফীতি ঘটেছে ৯ দশমিক ৯৪ শতাংশ। এর আগে ২০১১ সালের মে মাসে মূল্যস্ফীতি ছিল ১০ দশমিক ২ শতাংশ, দেশে যা ছিল সর্বোচ্চ। গ্রামের তুলনায় শহরে মূল্যস্ফীতির চাপ বেশি। কেননা, নাগরিক জীবনে নিত্যপণ্যের ঊর্ধ্বগতির পাশাপাশি সেবা খাতের ব্যয়ও পড়ে বেশি। তবে বিবিএসের মূল্যস্ফীতির তথ্য-পরিসংখ্যান নিয়ে প্রশ্ন আছে অর্থনীতিবিদদের। তাদের মতে, বাস্তবে বাজারের পণ্যমূল্যের সঙ্গে বিবিএসের তথ্যের মিল খুঁজে পাওয়া যায় না।

গত কয়েক মাস ধরে জিনিসপত্রের দাম বাড়ছেই। পণ্যমূল্যের দাম নিয়ন্ত্রণে সরকারি সংস্থাগুলোর এমন উদ্যোগও দৃশ্যমান নয়। ফলে, নি¤œ আয়ের মানুষ তো বটেই, এমনকি মধ্যবিত্তদের হাঁসফাঁস অবস্থা। অনেক ক্ষেত্রে বিলাস দ্রব্য তো দূরের কথা, দৈনন্দিন খাদ্য তালিকার ব্যয়েও কাটছাঁট তথা পরিমিত করতে বাধ্য হয়েছে মানুষ।

পরিকল্পনামন্ত্রী বলেছেন, বর্তমান মূল্যস্ফীতি বহিরাগত, যা আন্তর্জাতিক পরিম-ল থেকে এসেছে। বলা হচ্ছে, করোনা অতিমারি, রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ, বৈশ্বিক মন্দাবস্থা, জ্বালানি তেল-গ্যাস-কয়লার দামের ঊর্ধ্বগতি, বিশ্ববাজারে পণ্যমূল্য বৃদ্ধি ইত্যাদি। এসব স্বীকার করেও বলতে হয় যে, সরকার অনেক ক্ষেত্রে যথাসময়ে যথাযথ পদক্ষেপ গ্রহণ না করায়ও কিছু ক্ষেত্রে মূল্যস্ফীতি ঘটেছে। যেমনটি দেখা গেছে চিনি ও পেঁয়াজের ক্ষেত্রে। সম্প্রতি রামপাল ও পায়রা কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎ কেন্দ্র দুটি প্রায় বন্ধ অথবা উৎপাদন কমে যাওয়ায় লোডশেডিংয়ের উপদ্রব বেড়েছে। এর চাপ গিয়ে পড়েছে শিল্প-কারখানার উৎপাদনে। তদুপরি গ্যাস উত্তোলনে আরও আগে থেকে উদ্যোগ গ্রহণ না করা, নিত্যপণ্যের সিন্ডিকেটকে নিয়ন্ত্রণ করতে না পারা ইত্যাদি। 
পরিস্থিতি বিবেচনায় মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণকে চ্যালেঞ্জ হিসেবে নিয়েছে সরকার। এ বিষয়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাও নির্দেশ দিয়েছেন ইতোমধ্যে। তবে সদ্যঘোষিত বাজেটে মূল্যস্ফীতি ৬ শতাংশের মধ্যে নামিয়ে আনার আশ্বাস দেওয়া হলেও এ বিষয়ে সুনির্দিষ্ট কোনো দিকনির্দেশনা নেই। অর্থমন্ত্রী স্বীকার করেছেন, মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণ সরকারেরও মাথাব্যথার কারণ। বর্তমানে আন্তর্জাতিক বাজারে জ্বালানি তেলের দাম কমছে- নেমে এসেছে ব্যারেল প্রতি ৭০-৭৫ ডলারে। কিছু নিত্যপণ্যের দামও কমতির দিকে। এর সুযোগ নিয়ে সরকার এর সুফল কিভাবে ঘরে তুলতে পারে, তা নিয়ে অগ্রসর হতে হবে।

পরিস্থিতি সামাল দিতে সরকার এককভাবে ডলারের ওপর নির্ভরশীল না থেকে বিকল্প মুদ্রায় ভারত, চীন, রাশিয়া ও অন্যান্য দেশের সঙ্গে যৌথভাবে ব্যবসা-বাণিজ্যের উদ্যোগ গ্রহণ করতে পারে। এর পাশাপাশি প্রবাসী বাংলাদেশী শ্রমজীবীদের হুন্ডির পরিবর্তে বৈধপথে ব্যাংকিং চ্যানেলে আরও বেশি প্রণোদনা দিয়ে দেশে টাকা পাঠাতে উদ্বুদ্ধ করতে পরে। 
গত কয়েক মাস ধরে নিত্যপণ্যের দাম ক্রমাগত বৃদ্ধির প্রেক্ষাপটে সরকার ইতোমধ্যে চালু করেছে ‘খাদ্যবান্ধব কর্মসূচি’। হতদরিদ্রদের মধ্যে মাত্র ১৫ টাকা কেজি ধরে চাল বিতরণ তথা বিক্রি করা হচ্ছে। এর মাধ্যমে মোট ৫০ লাখ হতদরিদ্র পরিবার স্বল্পমূল্যে প্রতিমাসে ৩০ কেজি চাল পাচ্ছেন। এর পাশাপাশি দেশের সকল সিটি করপোরেশন ও পৌর এলাকায় ৭৩৭ ডিলারের মাধ্যমে ওএমএস কর্মসূচির আওতায় ন্যায্যমূল্যে বিক্রি করা হচ্ছে কয়েকটি নিত্যপণ্য, যা থেকে প্রতিদিন উপকৃত হচ্ছেন লাখ লাখ মানুষ। আশা করা যায় যে, সরকার মূল্যস্ফীতির লাগাম টেনে ধরতে আন্তরিক ও সচেষ্ট থাকবে সর্বদাই।

×