ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০

বিপাকে বস্ত্রকল

-

প্রকাশিত: ২০:৩১, ১ জুন ২০২৩

বিপাকে বস্ত্রকল

সম্পাদকীয়

দেশীয় বস্ত্রকলগুলো সমূহ বিপাকে পড়েছে। করোনা অতিমারি চলাকালীন লকডাউনে অন্যান্য শিল্প-কারখানার মতো বস্ত্রকলগুলোও ছিল বন্ধ। সেই ক্ষতির রেশ কাটতে না কাটতেই শুরু হয়েছে রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ, যা চলমান। সারাবিশ্বে জ্বালানি, কাঁচামালÑ যার মধ্যে রয়েছে তুলাও, ডলারের দাম ইত্যাদির স্বাভাবিক বাণিজ্য ও সরবরাহ বন্ধ অথবা প্রায় বন্ধ রয়েছে। কিছু ক্ষেত্রে চললেও চাহিদার তুলনায় পর্যাপ্ত নয়। ফলে পরিস্থিতি স্বাভাবিক হতে শুরু করলেও তা হতে পারছে না পর্যাপ্ত কাঁচামাল ও জ্বালানি সংকটে। দেশীয় টেক্সটাইল খাতের বিরাজমান সমস্যা ও উত্তরণসংশ্লিষ্ট এক সংবাদ সম্মেলনে বাংলাদেশ টেক্সটাইল মিলস অ্যাসোসিয়েশনের (বিটিএমএ) পক্ষ থেকে এ খাতের নানা সমস্যা-সংকট সম্পর্কে বিস্তারিত তুলে ধরা হয়েছে, যা রীতিমতো উদ্বেগজনক ও হতাশাব্যঞ্জক। 
দেশে চলমান গ্যাস ও বিদ্যুৎ সংকটের বিষয়টি সুবিদিত। ফলে সরকারকে বাধ্য হয়ে করতে হচ্ছে লোডশেডিং। এর জন্য প্রধানত দায়ী অভ্যন্তরীণ গ্যাসের মজুদ হ্রাস, কয়লা আমদানি কম বা বন্ধ হওয়া, জ্বালানির দাম বৃদ্ধি ইত্যাদি। ফলে আবাসিক বিদ্যুৎ-গ্যাস সংযোগসহ শিল্প-কারখানাগুলোতে চাহিদামতো বিদ্যুৎ ও গ্যাস সরবরাহ করা যাচ্ছে না। অন্যদিকে দফায় দফায় দামও বাড়ানো হয়েছে। চলমান গ্যাস-বিদ্যুৎ সংকট ও লোডশেডিংয়ের কারণে বস্ত্রখাতের উৎপাদন ক্ষমতা কমে গেছে ৩০-৪০ শতাংশ। ডলারের বিপরীতে টাকার বড় ধরনের অবমূল্যায়ন এ খাতের সংকট আরও বাড়িয়ে তুলেছে। সর্বোপরি আন্তর্জাতিক বাজারে তুলার দাম বেড়েছে বহুলাংশে।

ফলে অনেক কারখানা বন্ধ হওয়ার ঝুঁকিতে রয়েছে। ইতোমধ্যে বন্ধ হয়ে গেছে কয়েকটি। এর পাশাপাশি রীতিমতো অসম প্রতিযোগিতা করতে হচ্ছে রপ্তানিমুখী তৈরি পোশাক শিল্পের জন্য বন্ডেড ওয়্যারহাউসের সুবিধার আওতায় আনা কাপড়, সুতা ও পোশাকের সঙ্গে। এর পাশাপাশি চোরাই পথে পাকিস্তান, ভারত ও চীন থেকে সুতা, কাপড়সহ বিভিন্ন ড্রেস মেটেরিয়াল প্রায় অবাধে দেশীয় বাজারে প্রবেশ ও বিক্রির কারণেও। 
বস্ত্রকল মালিকদের সংগঠনের পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, দেশীয় টেক্সটাইল খাতে এক লাখ ৬০ হাজার কোটি টাকার বেশি বিনিয়োগ রয়েছে। অব্যাহত গ্যাস-বিদ্যুৎ সংকটের কারণে গত ১৫ মাসে স্পিনিং মিলগুলোর আর্থিক ক্ষতি হয়েছে ৪৫ হাজার কোটি টাকা। বর্ধিত ট্যারিফ বিল দিয়েও চাহিদামাফিক গ্যাস পাচ্ছেন না তারা। ফলে বিভিন্ন ব্যাংকের ঋণও সময়মতো পরিশোধ করতে পারছেন না। এ খাতে বিভিন্ন ব্যাংকের বিনিয়োগের পরিমাণ এক লাখ ২০ হাজার কোটি টাকা। ফলে ঋণখেলাপি হতে হচ্ছে অনেক শিল্প মালিককে।

পরিস্থিতি উত্তরণে তারা সরকারের কাছে কতিপয় দাবি তুলে ধরেছেন। যেগুলোর মধ্যে রয়েছে বন্ডেড সুবিধার আওতায় আমদানিকৃত সুতা, কাপড় ও পোশাকের অবৈধ বিক্রি বন্ধ করা দেশের বিভিন্ন বাজারে। রপ্তানি উন্নয়ন বিলের ঋণ সুবিধা অব্যাহত রাখা, নিরবচ্ছিন্ন গ্যাস সরবরাহ নিশ্চিত করা এবং ব্যাংক ঋণের কিস্তি ও সুদ আগামী বছরের জুন পর্যন্ত স্থগিত রাখা। পাশাপাশি পরবর্তীতে সহজ কিস্তিতে ঋণ পরিশোধের সুবিধা। তদুপরি সুরক্ষা নীতির আওতায় তৈরি পোশাক শিল্পের কাপড় তৈরির জন্য ব্যাক টু ব্যাক ঋণপত্রের মাধ্যমে সুতির সুতা সংগ্রহের একটি অংশ দেশীয় বস্ত্রকল থেকে ক্রয় নিশ্চিত করা। তাহলে ডলার সংকটের এই দুঃসময়ে বৈদেশিক মুদ্রার কিছুটা সাশ্রয় হতে পারে।

×