ঢাকা, বাংলাদেশ   বুধবার ২৪ এপ্রিল ২০২৪, ১১ বৈশাখ ১৪৩১

চারুকলার উৎসব

-

প্রকাশিত: ২১:০৭, ৩০ মে ২০২৩

চারুকলার উৎসব

সম্পাদকীয়

দেশের চারুশিল্পীদের সবচেয়ে বড় উৎসব শুরু হয়েছে রাজধানীতে। এটি হলো জাতীয় চারুকলা উৎসব। সারাদেশের আড়াইশ’র বেশি শিল্পীর শিল্পকর্ম দেখার এক দারুণ সুযোগ এসেছে শিল্পপ্রেমীদের। শিল্পকর্মের সংখ্যা ৩০১। এটিকে শিল্পকলার বিপুল সমাহার বললেও অত্যুক্তি হবে না। এ বছর হচ্ছে ২৫তম আয়োজন। সেদিক দিয়ে বিশেষ সময়-স্মারকই বটে। চারুশিল্পী আত্মীয়ের হাত  ধরে শিশুবয়সে যে ছেলে বা মেয়েটি প্রথম জাতীয় উৎসবে এসে হতবাক হয়ে গিয়েছিল শিল্পদর্শনে, আজ তারাই পূর্ণাঙ্গ যুবাবয়সী। এখন তারা ছবির রসাস্বাদনে সক্ষম।

শিল্পকলা যে অনুভূতি-অনুভবের অনুরণন তোলে, আজ তার ধ্বনি-প্রতিধ্বনি পৌঁছে যাচ্ছে তার হৃদয়েও। আবার এমনও হওয়া বিচিত্র নয় যে, সেদিনের সেই শিশুর চিত্রকর্ম এই উৎসবে প্রদর্শিত হচ্ছে। হতেই পারে। নীতিমালা অনুযায়ী, যার বয়স ২১ বছরের ঊর্ধ্বে, সেও এই প্রতিযোগিতায় অংশ নিতে পেরেছে। সারাদেশ থেকে ১ হাজার ১৩৮ শিল্পীর ২ হাজার ৯১৪টি শিল্পকর্মের আবেদন জমা পড়ে। পর্যালোচনা শেষে নির্বাচকমণ্ডলী বিভিন্ন বিভাগ  থেকে ২৬১ জন শিল্পীর ৩০১টি শিল্পকর্ম নির্বাচন করে ফল ঘোষণা করেন। নির্বাচিত শিল্পকর্মের মধ্যে রয়েছে চিত্রকলা ৯৬টি, ছাপচিত্র ৩৯টি, আলোকচিত্র ২২টি, ভাস্কর্য ৬০টি এবং অন্যান্য মাধ্যমের শিল্পকর্ম। উল্লেখ্য, মাধ্যমভিত্তিক প্রতিটি শ্রেষ্ঠ পুরস্কারের জন্য এক লাখ টাকা এবং সব মাধ্যমে শ্রেষ্ঠ পুরস্কারের জন্য দুই লাখ টাকা এবং গোল্ড মেডেল, ক্রেস্ট ও সনদ দেওয়া হয়। এ ছাড়াও পাঁচটি সম্মানসূচক পুরস্কার দেওয়া হয়, যার প্রতিটির মূল্যমান ৫০ হাজার টাকা এবং সঙ্গে স্পন্সরশিপ। 
শিল্পে জীবনেরই প্রতিফলন ঘটে শিল্পিতভাবে। তবে রং তুলির সৃজন এখনো অনেকের কাছেই দুর্বোধ্য বলে মনে হয়। বোধগম্যতার জন্য নিজেকে যে প্রস্তুত ও শিক্ষিত করে তোলা চাই, সেটি আমরা বুঝতে অপারগ। বিমূর্ত শিল্পকলা দর্শকের হৃদয় ও মননে অভিঘাত তৈরি করে, জীবনবাস্তবতার গূঢ় দিক তার কাছে কিছুটা হলেও স্বচ্ছ হয়ে ধরা দেয়। সবচেয়ে বড় কথা, শিল্প তার ভেতরে গভীরতর এক আনন্দবোধের জন্ম দেয়। মানুষ হিসেবে এই পরম প্রাপ্তিকে আমরা কিভাবে উপেক্ষা করব!
একথা বলতেই হবে, প্রদর্শিত নান্দনিক শিল্পকর্মগুলো একদিকে যেমন দেশের শিল্পীদের সর্বশেষ শিল্পভাবনার দৃষ্টান্ত, তেমনি নবীন শিল্পীর সঙ্গে প্রতিষ্ঠিত শিল্পীদের শিল্পমত বিনিময়েরও অভাবিত এক সুযোগ। এ ধরনের আয়োজনের ভেতর দিয়ে শুধু শিল্পী নয়, শিল্পপ্রেমী ও শিল্পশিক্ষার্থীদের ভেতরেও ব্যাপক আগ্রহ-উদ্দীপনা তৈরি হয়। শিল্পের ভেতর দিয়ে জীবন ও সময়কে নবতর আঙ্গিক ও ভাবনায় স্পর্শ করার মাধ্যমে শিল্পদর্শক আরও সংবেদনশীল ও মানবিক হয়ে ওঠেন। সব শিল্পকর্ম সব মানুষকে সমানভাবে আনন্দ দেয় না বা আলোড়িত করে না। তবে মানসম্পন্ন যে কোনোকিছুই দর্শকহৃদয় ছুঁয়ে যায়, এটি নিঃসন্দেহে বলা চলে। দেড় মাসব্যাপী এই প্রদর্শনী থেকে অনুপ্রাণিত হয়ে শিল্পীরা আগামী দিনগুলোয় আরও অভিনব সৃজনশীলশিল্প আমাদের উপহার দেবেন, প্রদর্শনী দেখার মধ্য দিয়ে নতুন আগ্রহী দর্শক সৃষ্টি হবে, এটিই প্রত্যাশা।

×