ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২৭ জুলাই ২০২৪, ১২ শ্রাবণ ১৪৩১

বই পড়া আন্দোলন

-

প্রকাশিত: ২০:৩২, ২ ফেব্রুয়ারি ২০২৩

বই পড়া আন্দোলন

সম্পাদকীয়

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বুধবার বাংলা একাডেমি প্রাঙ্গণে মাসব্যাপী মহান একুশে বইমেলার আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন করেন। উল্লেখ করা আবশ্যক, বাংলা একাডেমি বইমেলা হলো বিশ্বের দীর্ঘ সময় প্রায় মাসব্যাপী চলা মেলা। এই মেলার সূত্রপাত ঘটে ঐতিহাসিক ভাষা আন্দোলনের দীর্ঘ সংগ্রামসহ ভাষা শহীদদের আত্মদানের মাধ্যমে। সেক্ষেত্রে বইমেলার সঙ্গে আপামর বাঙালীর আবেগঘন ও হৃদয়মথিত উষ্ণ সম্প্রীতির নিবিড় বন্ধনের বিষয়টি সহজেই অনুমেয়।

প্রধান অতিথির বক্তব্য রাখতে গিয়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা স্বভাবতই ভাষা শহীদ, ভাষা আন্দোলন, সুমহান স্বাধীনতা আন্দোলন, সশস্ত্র মুক্তিযুদ্ধ, জাতির পিতা বঙ্গবন্ধুর অবদান ও আত্মত্যাগ শ্রদ্ধার সঙ্গে স্মরণ করে বলেন, বাঙালির জীবন ও মননে বইমেলার গুরুত্ব ও মর্যাদা অন্তহীন। সেক্ষেত্রে বাংলা ভাষার মর্যাদা রক্ষাসহ এর আরও ব্যাপক উন্নয়ন ও সমৃদ্ধিতে প্রত্যেককে নিজ নিজ অবস্থান থেকে আরও মনোযোগী ও উদ্যোগী হতে হবে। আধুনিক জ্ঞান বিজ্ঞান, তথ্যপ্রযুক্তি সম্পর্কে সম্যক জানতে ও বুঝতে হবে। আর এর জন্য মাতৃভাষা চর্চার বিকল্প নেই। আরও বেশি করে বিভিন্ন বিষয়ে জ্ঞানভিত্তিক পুস্তক রচনা ও প্রকাশ করতে হবে।

আর এর জন্য বইমেলা হতে পারে অন্যতম একটি প্রাণকেন্দ্র, যেখানে মনন ও সৃজনশীলতার অফুরন্ত বিকাশের সম্ভাবনা রয়েছে। সর্বোপরি বই পড়াকে রূপ দিতে হবে সামাজিক আন্দোলনে। শহর নগরে পাড়ায় পাড়ায় মহল্লায় গ্রামগঞ্জে প্রতিষ্ঠা করতে হবে পাঠাগার। যেখানে আগ্রহী পাঠক সহজে বই পড়ার সুযোগ পেতে পারে। বইমেলা শুধু রাজধানী কেন্দ্রিক না করে ছড়িয়ে দিতে হবে সারাদেশে জেলায় জেলায়। এই কাজটি করতে পারে বাংলা একাডেমি ও জাতীয় গ্রন্থ কেন্দ্র। এটি আরও ব্যাপক সমৃদ্ধ ও সম্প্রসারিত করতে হবে।
তরুণ প্রজন্ম আজকাল সহজে বই পড়তে চায় না। তারা মোবাইল ইন্টারনেট ফেসবুকে আসক্ত। কেউ কেউ ঝুঁকে পড়ছে মাদকসহ অন্যকোনো নেশা কিংবা জঙ্গিবাদে। তাদের সুপথে আনতে হলে মুদ্রিত পুস্তকের পাশাপাশি জোর দিতে হবে ডিজিটাল পুস্তক প্রকাশ ও সাহিত্যচর্চার ওপর। চলতে ফিরতে কেউ যাতে খুব সহজেই বই পড়তে পারে সে জন্য বইয়ের ডিজিটাল ভার্সন করা খুব জরুরি। এর পাশাপাশি অনলাইন লাইব্রেরির সুযোগ-সুবিধা সম্প্রসারিত করা আবশ্যক। স্মার্ট বাংলাদেশ গড়তে হলে এর বিকল্প নেই।

সরকার এসব বিষয়ে প্রয়োজনীয় অর্থ বরাদ্দসহ সর্বাত্মক সহযোগিতা করতে প্রস্তুত। করোনা অতিমারির কারণে গত কয়েক বছর ধরে অমর একুশে বইমেলা যথাযথভাবে হতে পারেনি। এবারও বিশেষ করে হোয়াইট-প্রিন্ট বা সাদা কাগজের দাম ও দুষ্প্রাপ্যতা নিয়ে সৃজনশীল প্রকাশকরা পড়েছেন চরম অনিশ্চয়তা ও ঝুঁকিতে। ক্রমাগত কাগজের দাম বৃদ্ধি এবং একইসঙ্গে মুদ্রণ শিল্পের সংকটে এবারে বই কম প্রকাশিত হতে পারে। বইয়ের দামও হবে বেশি। যা হওয়াই স্বাভাবিক। সে অবস্থায় ডিজিটাল বই প্রকাশে আগ্রহ বাড়তে পারে পুস্তক প্রকাশকদের মধ্যে, যা আকৃষ্ট করবে তরুণ প্রজন্মকে।

×