
.
প্রতিটি গ্রামে আধুনিক নগরের সুবিধা সম্প্রসারণে বর্তমান সরকার ‘আমার গ্রাম-আমার শহর’ কর্মপরিকল্পনা বাস্তবায়নের উদ্যোগ নিয়েছে। গ্রামের উন্নয়ন ছাড়া দেশের সামগ্রিক উন্নয়ন সম্ভব নয়। আমার গ্রাম, আমার শহর বাস্তবায়নের মাধ্যমে গ্রামগুলোতে বিদ্যুৎ যাবে, সুপেয় পানির ব্যবস্থা থাকবে, আধুনিক পয়ঃনিষ্কাশন ব্যবস্থা থাকবে। শিক্ষাব্যবস্থা, স্বাস্থ্যব্যবস্থা ও যোগাযোগ ব্যবস্থার উন্নতি হবে। সরকারের ২০টি মন্ত্রণালয়ের ২৬টি সংস্থা এই কর্মপরিকল্পনা বাস্তবায়নের সঙ্গে সম্পৃক্ত। এসব মন্ত্রণালয় ‘আমার গ্রাম-আমার শহর’ কর্মপরিকল্পনার অধীন ২৪৫টি প্রকল্প বাস্তবায়ন করছে। সমন্বয়কারী হিসেবে আছে স্থানীয় সরকার বিভাগ। কর্মসূচি বাস্তবায়নে আগামী ৫ বছরে দেড় থেকে দুই লাখ কোটি টাকা বরাদ্দ হয়েছে, যার ১৭ শতাংশ বিদেশী দাতা সংস্থার কাছ থেকে পাওয়া যাবে।
ইতোমধ্যে কারিগরি সহায়তা প্রকল্পের মাধ্যমে ১৫টি গ্রামকে পাইলট গ্রাম হিসেবে নির্বাচিত করা হয়েছে। এতে প্রতিটি গ্রামে আধুনিক নগর সুবিধা সম্প্রসারণের লক্ষ্যে কর্মপরিকল্পনা বাস্তবায়নে জোর দেওয়া হয়েছে। ২০২৩-’২৪ অর্থবছরে গ্রামমুখী আরও কিছু নতুন প্রকল্প গ্রহণ করা হবে। এর মাধ্যমে গ্রামাঞ্চলে বিনিয়োগ ও কর্মসংস্থান বাড়বে বলে আশা করা যায়। নগর স্বাস্থ্য জরিপ ২০২১-এর প্রতিবেদন অনুযায়ী, গ্রাম থেকে শহরে মানুষ কম আসছে এখন। এটি যথেষ্ট ইতিবাচক সংবাদ। মানুষ এতটাই শহরমুখী ছিল যে, ঢাকা এখন বসবাসের প্রায় অনুপযোগী। প্রতিদিনের যানজটে বহু কর্মঘণ্টা ব্যয় হওয়াসহ ধুলোবালির রাজধানী শহরে বসবাসরত অধিকাংশ মানুষই রয়েছে কর্মহীন। ঈদের মতো বড় বড় উৎসবের ছুটিতে দেখা যায় ঢাকা প্রায় জনশূন্য হয়ে পড়ে। গ্রামের যথার্থ উন্নয়ন হলে এই বিশাল জনগোষ্ঠীর একাংশ হয়ত গ্রামেই স্থায়ী বসবাস করবে। সেক্ষেত্রে গ্রামের উন্নয়নের সঙ্গে সঙ্গে অন্যান্য বিভাগীয় শহর ও উপজেলাগুলোতে রাজধানী থেকে শিল্পকলকারখানা ও ব্যবসায়িক প্রতিষ্ঠানগুলো স্থানান্তরিত করতে হবে। একই সঙ্গে খেয়াল রাখতে হবে কোনোভাবেই যেন আবাদি জমি নষ্ট না হয়। যুদ্ধোত্তর বাংলাদেশে জনসংখ্যা ছিল সাত কোটি। বর্তমানে ১৭ কোটির বেশি। বাংলাদেশ খাদ্য পণ্য উৎপাদনে স্বয়ংসম্পন্ন বিধায় এই বিপুল জনসংখ্যার খাদ্য চাহিদা মেটানো সম্ভব হচ্ছে। তাই যে কোনো প্রকল্প বা উন্নয়নমুখী কাজের জন্য কৃষি জমি অক্ষুণ্ন রাখা একান্ত প্রয়োজন।
এখনো দেশের ৮০ ভাগ মানুষ জীবিকা নির্বাহ করে কৃষি জমি থেকে। বহু শিক্ষিত ছেলেমেয়ে বৈজ্ঞানিক পদ্ধতিতে আধুনিক কৃষিতে নিজেদের স্বাবলম্বী করছেন। এর মাধ্যমে কর্মসংস্থানেরও ব্যবস্থা হচ্ছে। ডিজিটাল কৃষি সেবাসহ নানা সেক্টরে হয়েছে দেশের উন্নয়ন। বর্তমানে মোবাইল ফোন ব্যবহার করছে ১২ কোটির বেশি মানুষ। তাই ‘আমার গ্রাম-আমার শহর’ কর্মপরিকল্পনার যেমন সফল বাস্তবায়ন প্রয়োজন, তেমনি আবাদি জমির পরিমাণ কিভাবে বাড়ানো যায়, সে বিষয়ে নজরদারি বাড়াতে হবে। যে কোনো উন্নয়ন পরিকল্পনা বাস্তবায়নের মাধ্যমে কৃষি উৎপাদন যেন ক্ষতিগ্রস্ত না হয়, সেটাই প্রত্যাশা।