কোরবানির পশুর জোগান
গৃহপালিত পশুর দাম বাড়ছে। বাড়ছে মাংসের দাম। ২০১৫ সালের এপ্রিল মাসে প্রতিকেজি মাংসের দাম ছিল ২৮০ টাকা থেকে ৩০০ টাকা। ওই বছরের আগস্ট মাসে কোরবানির আগে তা বেড়ে গিয়ে দাঁড়ায় ৪০০ টাকায়। সেই সঙ্গে বেড়ে যায় ছাগল ও ভেড়ার প্রতিকেজি মাংসের দাম। ভারত থেকে গরু আমদানি হ্রাস এর প্রধান কারণ। গত বছর প্রতিকেজি গরুর মাংস বিক্রি হয়েছে ৬০০ টাকায়। এখন তা বেড়ে হয়েছে ৭০০ টাকা। গত ১ বছরে মূল্যবৃদ্ধি ঘটেছে ১৬ শতাংশ। পৃথিবীর অন্যান্য দেশের তুলনায় আমাদের দেশে গরুর মাংসের দাম বেশি। তাতে গরু মোটাতাজাকরণ খামার গড়ার ক্ষেত্রে আগ্রহ জেগেছে দেশের কৃষকদের।
তাছাড়াও বেকার থাকা অনেক শিক্ষিত যুবক, আধুনিক কৃষক ও বিদেশ ফেরত বেকার যুবকরা গবাদিপশু হৃষ্টপুষ্টকরণ বিষয়ে প্রশিক্ষণ নিয়ে গরুর খামার গড়ে তুলছেন। অনেকে ঋণ নিয়েও বিনিয়োগ করছেন এ খাতে। তাতে বেশ আয় হচ্ছে তাদের। বেকার সমস্যা হ্রাস পাচ্ছে। দারিদ্র্য বিমোচনেও তা হচ্ছে সহায়ক। এখন থেকে ১০ বছর আগেও দেশে মাংসের ঘাটতি ছিল প্রচুর। এখন সে ঘাটতি আর প্রায় নেই। ২০১৪ সাল পর্যন্ত কোরবানির সময় বাংলাদেশে গরুর আমদানি হতো ১০ থেকে ১২ লাখ। সারা বছর তার পরিমাণ ছিল ২০ থেকে ২৫ লাখ। গত তিন বছর ধরে তা এক লাখও হয় না। গবাদি পশুর মূল্য এবং মাংসের দাম বৃদ্ধির কারণে এখন গরু হৃষ্টপুষ্টকরণে খামারিদের আগ্রহ বেড়েছে।
এখন থেকে ৫ বছর আগে ২০১৭ সালে মোটাতাজাকরণকৃত গরুর সংখ্যা ছিল প্রায় ৩৩ লাখ। এখন তা বৃদ্ধি পেয়েছে ৪১ লাখে দাঁড়িয়েছে। দেশের মাংসের চাহিদা পূরণে তা যথেষ্ট। কিন্তু তারপরও মাংসের দাম বৃদ্ধি পাচ্ছে। এবার কোরবানির সময় গরুর দাম ১৫ থেকে ২০ শতাংশ বৃদ্ধি পেতে পারে বলে মনে করছেন অনেকে। খামারিরা বলছেন, গরুর খাদ্য খরচ বেড়েছে প্রায় ৫০ শতাংশ। গরু মোটাতাজাকরণে খাদ্য খরচই প্রায় ৬৬ শতাংশ। বাকি ৩৪ শতাংশ খরচ হয় শ্রমিক, ওষুধ ও অন্যান্য খাতে।
ফলে পশুর দাম বৃদ্ধি ছাড়া খামারিরা ক্ষতিগ্রস্ত হবেন। তাছাড়াও সাম্প্রতিক মূল্যস্ফীতি, বন্যাজনিত ক্ষতি এবং করোনার উর্ধমুখী সংক্রমণের কারণে পশুর মূল্য আরও বৃদ্ধি পাওয়াই স্বাভাবিক। তবে তাতে চাহিদা হ্রাস পেতে পারে কোরবানির পশুর। ফলে অবিক্রীতই থেকে যেতে পারে অনেক পশু। তাতে আয় কমে যেতে পারে খামারিদের। এ কারণে খামারিদের উচিত হবে অল্প লাভে গরু বিক্রি করে দেয়া। প্রতি ইউনিট উৎপাদন খরচ কমিয়ে লাভ নিশ্চিত করা। গরু মোটাতাজাকরণে দক্ষতা অর্জন করা। তাতে ভোক্তারা অপেক্ষাকৃত কম দামে মাংস কিনতে পারবেন। মাংসের মোট বিক্রি বৃদ্ধি পাবে। ব্যবসাও হবে চাঙ্গা।
এবার কোরবানির জন্য দেশে প্রস্তুত রয়েছে ১ কোটি ২১ লাখ ২৪ হাজার ৩৮৯টি পশু। এর মধ্যে রয়েছে ৪৪ লাখ ৩৭ হাজার ৮৭৯টি গরু, ১ লাখ ৭৩ হাজার ৫০৪টি মহিষ, ৬৫ লাখ ৭৩ হাজার ৯১৫টি ছাগল, ৯ লাখ ৩৭ হাজার ৬৩২টি ভেড়া এবং ১ হাজার ৪০৯টি দুম্বা, উট ও অন্যান্য প্রাণী। গত বছর (২০২১ সালে) কোরবানি হয়েছিল প্রায় ৯০ লাখ ৯৩ হাজার পশু।
এর মধ্যে ছিল গরু-মহিষ ৪০ লাখ ৫৩ হাজার, ছাগল-ভেড়া ৫০ লাখ ৩৮ হাজার এবং ২ হাজার অন্যান্য প্রাণী। এর আগের বছর অর্থাৎ ২০২০ সালে কোরবানি হয়েছিল মোট ৯৪ লাখ ৫০ হাজার পশু। তার মধ্যে ছিল ৫০ লাখ ৫২ হাজার গরু-মহিষ, ৪৩ লাখ ৯৭ হাজার ছাগল-ভেড়া এবং ১ হাজার অন্যান্য প্রাণী। এর আগের বছর ২০১৯ সালে কোরবানি হয়েছিল ১ কোটি ৬ লাখ ১৪ হাজার পশু। অর্থাৎ গত দুই বছর কোরবানিকৃত পশুর সংখ্যা ক্রমান্বয়ে হ্রাস পেয়েছে। বড় পশু গরুর সংখ্যা কমেছে। বেড়েছে ছোট পশু ছাগল-ভেড়ার সংখ্যা। এর প্রধান কারণ করোনা মহামারীর অভিঘাত। ফলে অনেকের আয় কমে গিয়েছিল। চাকরিচ্যুত হয়েছিলেন অনেকে। তাদের হাতে নগদ টাকার পরিমাণও কমে গিয়েছিল। ফলে কোরবানির পশুর চাহিদা হ্রাস পেয়েছিল। গরুর বিক্রি কমে গিয়ে বেড়ে গিয়েছিল ছাগল ও ভেড়ার বিক্রি।
এবার অবস্থার কিছুটা উন্নতি হয়েছে। মানুষের আয় বেড়েছে। পদ্মা সেতুর কারণে মানুষের চলাচল বৃদ্ধি পেয়েছে। ঈদের সময় নাড়ির টানে মানুষ ফিরে যাবে গ্রামে। কোরবানি করবে পশু। ফলে কোরবানির পশুর চাহিদা বৃদ্ধি পাবে। গত বছরের তুলনায় এবার প্রায় ১০ শতাংশ চাহিদা বৃদ্ধি ধরে নিয়ে আসন্ন কোরবানিতে পশুর চাহিদা হতে পারে কমবেশি এক কোটি। ২০১৮ এবং ২০১৯ সালে গড়ে ওই চাহিদা ছিল প্রায় ১ কোটি ৬ লাখ। সেই পুরনো লক্ষ্যমাত্রা ছুঁতে হয়তো আরও ১/২ বছর সময় লাগবে।
তবে এ বছরের সম্ভাব্য চাহিদা থেকে মোট পশুর জোগান প্রায় ২১ লাখ বেশি আছে বলে ধরে নেয়া যায়। এবার কোরবানির জন্য প্রস্তুত মোট গরুর মধ্যে ৯৩ শতাংশই ব্যবসায়িক খামারে গড়ে উঠেছে। বাকি ৭ শতাংশ কৃষক পর্যায়ে তৈরি। ছাগল-ভেড়ার ক্ষেত্রে খামারে হৃষ্টপুষ্টকরণকৃত পশুর সংখ্যা ৫৫ শতাংশ। বাকি ৪৫ শতাংশ পারিবারিক পর্যায়ে লালিত-পালিত।
এখন থেকে ২৫/৩০ বছর আগে গ্রামের প্রতিটি পরিবারে গরু পালন করা হতো। তখন চাষাবাদ হতো লাঙ্গল দিয়ে। এখন এসেছে কলের লাঙ্গল। গরু দিয়ে হালচাষ ও শস্য মাড়াই প্রায় উঠেই গেছে বলা চলে। আগে যেখানে শতকরা ৯৫ ভাগ হালচাষ হতো লাঙ্গল দিয়ে, এখন সে পরিমাণ হালচাষ হয় ট্রাক্টর ও টিলার দিয়ে। বাকি শতকরা মাত্র ৫ ভাগ চাষাবাদ হয় পশু ও মানবশক্তির মাধ্যমে। হালচাষের গরুর ব্যবহার হ্রাস পাওয়ার সঙ্গে গ্রামের কৃষকদের অনেকেই গরু পালন প্রায় বন্ধ করে দিয়েছেন।
যারা এখনও গরু পালেন তারা তা করেন মূলত দুধ এবং মাংসের জন্য। দুগ্ধ খামার গড়ার জন্য বর্তমানে পশু ক্রয়ে স্বল্পসুদে প্রাতিষ্ঠানিক ঋণ দেয়া হচ্ছে। মাত্র ৫ শতাংশ সুদে ঋণ পাচ্ছেন দুগ্ধ খামারের মালিকরা। গরু মোটাতাজাকরণের জন্য প্রাতিষ্ঠানিক ও বেসরকারী প্রতিষ্ঠানের ঋণ পাওয়া যাচ্ছে। ফলে সারা বছর ধরেই চলছে গরু মোটাতাজাকরণের কাজ। বিশেষ করে কোরবানির ঈদের আগে গরু হৃষ্টপুষ্টকরণের আগ্রহ দেখা যায় বেশি। তখন গরুর চাহিদা থাকে বেশি। লাভও বেশি। খামারে মোটাতাজার জন্য বাছাইকৃত ও ক্রয়কৃত গরুর অধিকাংশের বয়স ২ থেকে ৪ বছর। এগুলো মূলত উন্নত জাতের ষাঁড়।
এসব প্রতিপালন করা যায় নিবিড় পরিচর্যায়। প্রথমে এগুলোকে কৃমিমুক্ত করা হয়। তাতে খাদ্যনালীতে ক্ষতিকর পরজীবীর বসবাস হ্রাস পায়। এরপর নিয়মিত খাওয়ানো হয় ইউরিয়া-চিটাগুড় সংমিশ্রণে খড়, কিছু দানাদার মিশ্রণ ও কাঁচা ঘাস। এভাবে গরুগুলোকে পরিচর্যা করা হয় ৩ থেকে ৬ মাস। মাঠপর্যায়ের সমীক্ষা থেকে প্রতীয়মান হয় যে, মোটাতাজাকরণের মাধ্যমে প্রতিদিন একটি উন্নত জাতের গরুর ওজন ৭০০ থেকে ১০০০ গ্রাম এবং দেশী গরুর ওজন ১০০ থেকে ৪৫০ গ্রাম পর্যন্ত বৃদ্ধি পায়। অনেকের ধারণা, মোটাতাজাকরণে জনস্বাস্থ্যের জন্য ক্ষতিকর স্টেরয়েড, এ্যান্টিবায়োটিক ও রাসায়নিক ব্যবহার করা হয়। কিন্তু এখন তা আর প্রায় চোখে পড়ে না।
গো-খাদ্যের জন্য এসব ক্ষতিকর উপকরণ মেশানো প্রতিরোধে এখন ভেটেরিনারি মেডিক্যাল টিম পরিবীক্ষণ করছে। এসব নিষিদ্ধ উপকরণ গো-খাদ্যে মেশানোর প্রমাণ পেলে আইন ও বিধি অনুযায়ী ব্যবস্থা নেয়া হয়। ফলে গরু মোটাতাজাকরণে ক্ষতিকর রাসায়নিকের ব্যবহার এখন আর তেমন দৃষ্টিগোচর হয় না। এবার কোরবানির পশুর হাটেও ভেটেরিনারি তদারকি থাকবে মেডিক্যাল টিমের।
অস্বাস্থ্যকর ও রোগগ্রস্ত পশু হাটে বিক্রি করতে দেয়া হবে না। গবাদিপশু কোরবানির উপযোগী কিনা এবং তাদের শরীরে দূষিত পদার্থ প্রবেশ করানো হয়েছে কিনা, তাও পরীক্ষা-নিরীক্ষা করা হবে। এমনটিই জানিয়েছেন মৎস্য ও প্রাণিসম্পদমন্ত্রী শ ম রেজাউল করিম।
গত ২ বছর ধরে অনলাইন প্ল্যাটফর্মে প্রচুর গবাদিপশু বিক্রি হচ্ছে। করোনা সংক্রমণের ভয়ে অনেকেই এ প্ল্যাটফর্ম ব্যবহার করছেন গরু-ছাগল কেনার জন্য। এবারও এ পদ্ধতি অব্যাহত থাকবে। তবে এ প্রক্রিয়ায় কোন কোন ক্ষেত্রে ক্রেতাগণ প্রতারিত হয়ে থাকেন। গত বছর সরকারের একজন মন্ত্রীও এমন অভিযোগ উত্থাপন করেছিলেন।
এবার তাতে কড়াকড়ি আরোপ করার কথা শোনা যাচ্ছে। অনলাইনে ক্রয়কৃত পশু পছন্দ না হলে টাকা ফেরত নেয়ার ব্যবস্থাও এবার সংযোজন করা হচ্ছে, যাতে ক্রেতারা কোনভাবেই প্রতারিত না হন। কেজি দরে গরু কেনা-বেচার কথাও শোনা যাচ্ছে।
কোরবানির পশুর একটি গুরুত্বপূর্ণ উপাজাত হচ্ছে চামড়া। রফতানি বাণিজ্যে চামড়ার অবস্থান কখনও দ্বিতীয়। কখনও তৃতীয় স্থানে। এ শিল্পের অধীনে আছে ২২০টি ট্যানারি। আছে অসংখ্য জুতা, ব্যাগ, বেল্ট ও সুদর্শন সরঞ্জমাদি তৈরির কারখানা। তাতে সরাসরিভাবে নিয়োজিত রয়েছেন প্রায় ১ লাখ ৮০ হাজার শ্রমিক-কর্মচারী। রফতানি আয়ে এ খাতের অবদান প্রায় ৩.৩২ শতাংশ। বাংলাদেশ রফতানি উন্নয়ন ব্যুরোর তথ্য অনুসারে ২০১২-১৩ সালে দেশের চামড়া রফতানির আয় ছিল ৬৯২.০৬ মিলিয়ন মার্কিন ডলার। ২০২০-২১ অর্থবছরে তা ১,২৮৫ মিলিয়ন মার্কিন ডলারে বৃদ্ধি পায়। এ সময় চামড়াজাত পণ্য ও পাদুকা রফতানির আয় বেড়েছে। চামড়া শিল্পে এসেছে বৈচিত্র্য ও বহুমাত্রিকতা।
বিদেশে সম্প্রসারিত হয়েছে দেশের চামড়ার বাজার। তাতে লাভবান হয়েছেন চামড়া শিল্পের মালিকগণ ও রফতানির সঙ্গ্ েজড়িত ব্যবসায়ীরা। কিন্তু কাঁচা চামড়ার উৎপাদনকারীগণ এবং এর বিক্রয়লব্ধ অর্থের অংশীদারগণ ঠকেছেন। তাদের চামড়ার ইউনিট মূল্য কমেছে। গত ১০ বছর ধরে ক্রমাগত হ্রাস পাচ্ছে কাঁচা চামড়ার সংগ্রহ মূল্য। ২০১৩ সালে ঢাকায় প্রতি বর্গফুট গরুর চামড়ার দাম ছিল ৮৫ থেকে ৯০ টাকা ও খাসির চামড়ার দাম ছিল প্রতি বর্গফুট ৫০ থেকে ৫৫ টাকা। ২০১৫ সালে এর ইউনিট মূল্য হ্রাস পেয়ে গরুর চামড়ার প্রতি বর্গফুট মূল্য ৫০ থেকে ৫৫ টাকা এবং খাসির চামড়া ২০ থেকে ২২ টাকায় এসে দাঁড়ায়। ২০২০ সালে তা আরও হ্রাস পেয়ে গরুর চামড়া প্রতি বর্গফুট ৩৫ থেকে ৪০ টাকা এবং খাসির চামড়া প্রতি বর্গফুট ১৩ থেকে ১৫ টাকায় নেমে আসে।
গত বছর অর্থাৎ ২০২১ সালে গরুর চামড়া প্রতি বর্গফুট ৫ টাকা ও খাসির চামড়া প্রতি বর্গফুট ২ টাকা বাড়িয়ে গরুর চামড়ার প্রতি বর্গফুট মূল্য ৪০-৪৫ টাকা এবং খাসির চামড়ার মূল্য ১৫-১৭ টাকায় নির্ধারণ করা হয়। নির্ধারিত দামে প্রতিটি বড় গরুর চামড়ার মূল্য দাঁড়ায় ২ থেকে আড়াই হাজার টাকা এবং ছোট গরুর চামড়ার মূল্য দাঁড়ায় ১২০০ থেকে ১৫০০ টাকা। কিন্তু গত বছর কোরবানির দিনে ও তারপরে তৃণমূল পর্যায়ের চামড়া উৎপাদনকারীগণ এক-তৃতীয়াংশ দামও পাননি। বর্গফুটের পরিমাপে চামড়া বিক্রি হয়নি কোথাও। প্রতি পিস হিসাবে গরুর চামড়া বিক্রি হয়েছে ১০০ থেকে ৩০০ টাকায়।
খাসির চামড়া বিক্রি হয়েছে ২০ থেকে ২৫ টাকায়। অনেকে চামড়ার উপযুক্ত দাম না পেয়ে পুঁতে ফেলেছেন মাটির নিচে। কিংবা ছুড়ে ফেলেছেন নদীতে বা খালে। তাতে প্রায় এক-চতুর্থাংশ চামড়া বিনষ্ট হয়েছে। ফলে হতাশ হয়েছে চামড়া উৎপাদনকারী কৃষক। ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন চামড়া থেকে প্রাপ্ত অর্থের ভাগীদার হতদরিদ্র মানুষ, এতিম ও মিসকিন। কাঁচা চামড়ার সরবরাহ বৃদ্ধি পায় কোরবানির ঈদের সময়। তখন এর দাম কমে যায়। চামড়া পচনশীল বিধায় তা গ্রাম-গ্রামান্তরে ধরে রাখা যায় না। এ সময় খুব তৎপর থাকেন বড় ব্যবসায়ী, আড়তদার ও ট্যানারির মালিকদের সিন্ডিকেট। বিভিন্ন অজুহাতে তারা চামড়ার দাম কমায়।
এ সময় চামড়া উৎপাদনকারীদের দর কষাকষির তেমন সুযোগ থাকে না। যেটুকু মূল্য পায় তাতেই বিক্রি করে দেয় কাঁচা চামড়া। এর বিক্রয়লব্ধ অর্থের মালিক দরিদ্রজন, এতিম ও মিসকিন। চামড়ার দরপতনে সমূহ ক্ষতি হয় তাদের। আর্থিকভাবে বঞ্চিত হন তারা। এই বঞ্চনার প্রতিকার হওয়া উচিত। ন্যায়সঙ্গতভাবে কাঁচা চামড়ার ক্রয়মূল্য নির্ধারণ করা আবশ্যক। নির্ধারিত মূল্যে যাতে কৃষকদের কাছ থেকে চামড়া ক্রয় করা হয়, তাও নিশ্চিত করা উচিত।
লেখক : কৃষি অর্থনীতিবিদ, গবেষক, শিক্ষাবিদ ও বীর মুক্তিযোদ্ধা, গবেষণায় একুশে পদকপ্রাপ্ত