
২৪ ডিসেম্বর ১৯ গাজীপুরের ছায়াবীথিতে ড. জামিলুর রেজা চৌধুরী কর্র্তৃক উদ্বোধন করা আনন্দ মাল্টিমিডিয়া স্কুলের দুই দশক পূর্ণ হয়েছে। এবার ২০ সালের ১ জানুয়ারি সেই স্কুল চালু করার বিশ বছর পূর্ণ হলো। দুঃখজনক যে এই সময়টাতে স্কুলটি চালু করার উদ্যোক্তা অধ্যাপক মুজিবুর আর এই দুনিয়াতে নেই। এমনকি স্কুলের উদ্বোধক জামিলুর রেজা স্যারও এই পৃথিবীতে আর নেই। সেসব স্মৃতিকে স্মরণে রেখে আমরা শিক্ষার ডিজিটাল রূপান্তর নিয়ে কিছু কথা বলতে পারি। বাংলাদেশের মতো একটি অতি জনবহুল দেশের জন্য ডিজিটাল রূপান্তর ও জ্ঞানভিত্তিক রূপান্তরের প্রধানতম কৌশল হতে হবে এর মানবসম্পদকে সবার আগে ডিজিটাল দক্ষতাসম্পন্ন করা। এদেশের মানবসম্পদের বৈশিষ্ট্য হচ্ছে যে, জনসংখ্যার প্রায় অর্ধেকের বেশি তিরিশের নিচের বয়সী। এই জনসংখ্যারও বিরাট অংশ এখন প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষা গ্রহণ করে কেরানি হবার দক্ষতা অর্জনে নিয়োজিত। ওদের দক্ষতা এমনকি দ্বিতীয় বা তৃতীয় শিল্পযুগের উপযোগীও নয়। তবে এই জনগোষ্ঠী প্রাতিষ্ঠানিক-অপ্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষা শেষ করে ডিজিটাল দক্ষতার প্রশিক্ষণ গ্রহণে সক্ষম। শিক্ষারতদের দক্ষ জ্ঞানকর্মী বানাতে হলে প্রথমে প্রচলিত শিক্ষার ধারাকে বদলাতে হবে। পাঠক্রম ও পাঠদান এবং পাঠদানকারীদের দক্ষতা বদলাতে না পারলে প্রচলিত শিক্ষাব্যবস্থা থেকে আর যাই হোক ডিজিটাল যুগের মানবসম্পদ পাওয়া যাবে না। এ জন্য আমরা আমাদের শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলোতে কায়িক শ্রমিক গড়ে তোলার লক্ষ্যটিকে জ্ঞানকর্মী তৈরি করার লক্ষ্যে পরিবর্তন করতে পারি। আমাদের নিজের দেশে বা বাইরের দুনিয়াতে কায়িক শ্রমিক হিসেবে যাদেরকে কাজে লাগানো যাবে তাদেরকেও ডিজিটাল যুগের উপযোগী করে গড়ে তোলা যায়। সৌভাগ্যবশত ডিজিটাল প্রযুক্তি কৃষি-শিল্প ও বাণিজ্য থেকে শুরু করে জীবনধারার সকল খাতেই ডিজিটাল প্রযুক্তির প্রয়োগ করা সম্ভব এবং ডিজিটাল যুগের উপযোগী মানবসম্পদ তৈরি করতে পারি।
বস্তুত প্রচলিত ধারার পুরো জনগোষ্ঠীকে ডিজিটাল প্রযুক্তি ব্যবহারে সক্ষম জ্ঞানকর্মীতে রূপান্তর করতে হবে। আগামীতে প্রচলিত ধারার কায়িক শ্রমশক্তি গড়ে তোলার বাড়তি কোন প্রয়োজনীয়তা হয়তো আমাদের থাকবে না। কারণ যে তিরিশোর্ধ জনগোষ্ঠী রয়েছে, বা যারা ইতোমধ্যেই প্রচলিত ধারার প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষা পেয়েছে তাদের প্রচলিত কাজ করার দক্ষতা রয়েছে এবং তারাই এই খাতের চাহিদা মিটিয়ে ফেলতে পারবে। প্রয়োজনমতো তাদেরকে ডিজিটাল দক্ষতা সাময়িক প্রশিক্ষণ প্রদান করা যেতে পারে। এজন্য প্রশিক্ষণ কেন্দ্র, অফলাইন বা অনলাইন প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করা যেতে পারে। তবে প্রধানত নতুন প্রজন্মকে ডিজিটাল শিক্ষাব্যবস্থার সহায়তায় জ্ঞানকর্মী বানানোর কাজটাই আমাদের করতে হবে। এর হিসাবটি একেবারেই সহজ। বিদ্যমান শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলোকে অবিলম্বে জ্ঞানকর্মী সৃষ্টির কারখানা হিসেবে গড়ে তুলতে হবে। এটি বস্তুত একটি আমূল রূপান্তর। প্রচলিত দালানকোঠা, চেয়ার- টেবিল, বেঞ্চি বহাল রেখেও এর শিক্ষাদান পদ্ধতি এবং শিক্ষার বিষয়বস্তু পরিবর্তন করে যাত্রা শুরু করা যায়।
আমাদের বড় চ্যালেঞ্জ হলো পুরো শিক্ষাব্যবস্থার অন্তর্গত পরিবর্তন করা। বিরাজমান শিক্ষাকে একটি ডিজিটাল শিক্ষাব্যবস্থায় রূপান্তর করার মধ্য দিয়েই কেবল এই লক্ষ্য অর্জন করা যেতে পারে। পাঠক্রম, পাঠদান পদ্ধতি, মূল্যায়ন সকল কিছুকে ডিজিটাল করেই এই লক্ষ্য অর্জন করা সম্ভব। এ জন্য জাতিগতভাবে কাজ আমরা শুরু করেছি। একটি বড় উদ্যোগ হলো বাধ্যতামূলক তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি শিক্ষা। ২০১১ থেকে ২০১৫ সালের মাঝেই আমাদের স্কুলের ষষ্ঠ-সপ্তম-অষ্টম-নবম-দশম, একাদশ-দ্বাদশ শ্রেণীতে তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি বিষয়টি সকলের জন্য বাধ্যতামূলক করা হয়েছে। পরিকল্পনা আছে একে প্রাথমিক স্তরেও বাধ্যতামূলক করার। আমরা এরই মাঝে সরকারীভাবে ২৩,৫০০ ডিজিটাল ক্লাসরুম তৈরি করেছি। ১০ হাজারের বেশি শিক্ষককে প্রশিক্ষণ দিয়েছি। আমরা শিক্ষার জন্য আলাদাভাবে নেটওয়ার্ক ব্যবস্থা গড়ে তুলছি। স্থাপন করছি ডিজিটাল বিশ্ববিদ্যালয়। শিক্ষা বাতায়ন, টেন মিনিটস স্কুল, ব্র্যাকের আনন্দ বিদ্যালয় বা জাগো ফাউন্ডেশন দিয়ে শিক্ষার ডিজিটাল রূপান্তরের প্রয়াস চলছে। তবে ডিজিটাল শিক্ষার মনোরম চিত্রটি এসব প্রচেষ্টার মধ্য দিয়ে প্রকাশিত হয়নি। এমনকি বাধ্যতামূলক কম্পিউটার শিক্ষাও নানাবিধ সঙ্কট কাটিয়ে উঠতে পারছে না। এবার করোনাকালে প্রাথমিক ও মাধ্যমিক স্তরে টিভির মাধ্যমে পাঠদান শুরু হলেও সেটিকে কোনভাবেই ডিজিটাল শিক্ষা বলে চিহ্নিত করা ঠিক হবে না। এক্ষেত্রে কেবলমাত্র ক্লাসরুমে শিক্ষকের কর্মকান্ডের কেবল পাঠদান অংশটির ভিডিও প্রচারিত হচ্ছে। কোন ধরনের ডিজিটাল কনটেন্ট এই পাঠদানে দৃশ্যমান নয়। দুর্ভাগ্যজনকভাবে উচ্চ শিক্ষায় এমনকি টিভিতে পাঠদানের ব্যবস্থাটিও গড়ে তোলা হয়নি। কোন কোন বিশ্ববিদ্যালয় এরকম উদ্যোগ নিয়ে বাধার মুখে পিছু হটতে বাধ্য হয়েছেন। প্রাথমিক স্তরে শিক্ষাকে ডিজিটাল করার উপকরণ থাকার পরও করোনাকালে তার ব্যবহার করা হয়নি। এই অবহেলার মাঝেও ২০০৯ সাল থেকে আমরা তৈরি করে আসছি ডিজিটাল কনটেন্ট। আমার নিজের হাতেই রয়েছে নার্সারি, কেজি, প্রথম, দ্বিতীয়, তৃতীয়, চতুর্থ ও পঞ্চম শ্রেণীর ডিজিটাল শিক্ষার জন্য সফটওয়্যার। দেশজুড়ে গড়ে তোলা আনন্দ মাল্টিমিডিয়া ও ডিজিটাল স্কুল ছাড়াও হাজার হাজার স্কুল ও লাখো শিক্ষার্থী এসব ইন্টারএ্যাকটিভ মাল্টিমিডিয়া সফটওয়্যার দিয়ে পড়াশোনা করছে। স্কুল ব্যবস্থা বা ক্লাসরুম ব্যবস্থাপনার জন্যও সফটওয়্যারের ব্যবহার ব্যাপকভাবে বেড়েছে। এমনকি হাজিরাও ডিজিটাল হচ্ছে।
এই অবস্থাতেই আলোচনা করে দেখছি কেমন করে আমরা শিক্ষার ডিজিটাল রূপান্তর করতে পারি।
ক. প্রথমত তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি বিষয়টি শিশুশ্রেণী থেকে বাধ্যতামূলকভাবে পাঠ্য করতে হবে। প্রাথমিক স্তরে ৫০ নাম্বার হলেও মাধ্যমিক স্তরে বিষয়টির মান হতে হবে ১০০। উচ্চ মাধ্যমিক স্তরে এর মান হতে হবে ২০০। স্নাতক ও স্নাতকোত্তর স্তরে সকল বিষয়ের ছাত্র-ছাত্রীর জন্যও বাধ্যতামূলক তথ্যপ্রযুক্তি শিক্ষার ব্যবস্থা করতে হবে। স্কুল-কলেজ-মাদ্রাসা, ইংরেজী-বাংলা-আরবি নির্বিশেষে সকল মাধ্যমের শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের জন্য এটি অবশ্যপাঠ্য হতে হবে। প্রাথমিক বিদ্যালয়ে প্রোগ্রামিং ভাষা হিসেবে স্ক্র্যাচ জুনিয়র ও স্ক্র্যাচ এবং মাধ্যমিক স্তরে পাইথন ও উচ্চ মাধ্যমিক স্তরে সি++ পাঠ্য করা যেতে পারে। একই সঙ্গে প্রাথমিক স্তর থেকেই রোবোটিক্স, কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা, বিগডাটা, ব্লক চেইন, আইওটি ইত্যাদি বিষয়ে ধারণা দিতে হবে। মাধ্যমিক বা উচ্চ মাধ্যমিক স্তরে ধীরে ধীরে গুরুত্ব বাড়াতে হবে। উচ্চ শিক্ষার সকল স্তরে মৌলিক তথ্যপ্রযুক্তি বিষয়াদি পাঠ্য করতে হবে। এমনকি সেটি মাদ্রাসার উচ্চস্তরেও করতে হবে।
খ. দ্বিতীয়ত প্রতিটি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে প্রতি ২০ জন ছাত্রের জন্য একটি করে কম্পিউটার হিসেবে কম্পিউটার ল্যাব গড়ে তুলতে হবে। এই কম্পিউটারগুলো শিক্ষার্থীদের হাতে কলমে ডিজিটাল যন্ত্র ব্যবহার করতে শেখাবে। একই সঙ্গে শিক্ষার্থীরা যাতে সহজে নিজেরা এমন যন্ত্রের স্বত্বাধিকারী হতে পারে রাষ্ট্রকে সেই ব্যবস্থা করতে হবে। পাশাপাশি শিক্ষায় ইন্টারনেট ব্যবহারকে শিক্ষার্থী-শিক্ষক-শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের আয়ত্তের মাঝে আনতে হবে। প্রয়োজনে শিক্ষার্থী ও শিক্ষা প্রতিষ্ঠানসমূহকে স্বল্পমূল্যে বা বিনামূল্যে ইন্টারনেট ব্যবহার করতে দিতে হবে। শিক্ষার্থীদের ইন্টারনেট দেয়া রাষ্ট্রের বিনিয়োগ হিসেবে বিবেচনা করা যেতে পারে। সরকার এখন যে পাঁচ শতাধিক সরকারী শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে ইন্টারনেট সংযোগ দিচ্ছে তা প্রাথমিক স্তর থেকে সকল স্তরে প্রসারিত করতে হবে।
গ. তৃতীয়ত প্রতিটি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের প্রতিটি ক্লাসরুমকে ডিজিটাল ক্লাসরুম বানাতে হবে। প্রচলিত চক, ডাস্টার, খাতা কলম বইকে কম্পিউটার, ট্যাবলেট পিসি, স্মার্ট ফোন, বড় পর্দার মনিটর/টিভি বা প্রজেক্টর দিয়ে স্থলাভিষিক্ত করতে হবে। আমি নিজে খুব স্বল্প খরচে ডিজিটাল ক্লাসরুম গড়ে তোলার পদ্ধতি নিচে বর্ণনা করব। এসব ক্লাসে শিক্ষার্থীরা অনলাইনেও যোগ দিতে পারবে সেই ব্যবস্থা করতে হবে।
ঘ. চতুর্থত সকল স্তরের সকল পাঠ্য বিষয়কে ডিজিটাল যুগের জ্ঞানকর্মী হিসেবে গড়ে তোলার জন্য উপযোগী পাঠক্রম ও বিষয় নির্ধারণ করে সেইসব কনটেন্টকে ডিজিটাল কনটেন্টে পরিণত করতে হবে। পরীক্ষা পদ্ধতি বা মূল্যায়নকেও ডিজিটাল করতে হবে। অবশ্যই বিদ্যমান পাঠক্রম হুবহু অনুসরণ করা যাবে না এবং ডিজিটাল ক্লাসরুমে কাগজের বই দিয়ে শিক্ষা দান করা যাবে না। কনটেন্ট যদি ডিজিটাল না হয় তবে ডিজিটাল ক্লাসরুম অচল হয়ে যাবে। এসব কনটেন্টকে ডিজিটাল, মাল্টিমিডিয়া ও ইন্টারএ্যাকটিভ হতে হবে।
ঙ. পঞ্চমত: সকল শিক্ষককে ডিজিটাল পদ্ধতিতে পাঠদানের প্রশিক্ষণ দিতে হবে। সকল আয়োজন বিফলে যাবে যদি শিক্ষকগণ ডিজিটাল কনটেন্ট, ডিজিটাল ক্লাসরুম ব্যবহার করতে না পারেন বা ডিজিটাল পদ্ধতিতে মূল্যায়ন করতে না জানেন। তারা নিজেরা যাতে মূল কনটেন্টের সহযোগী কনটেন্ট তৈরি করতে পারেন ও পেশাদার কনটেন্ট দিয়ে শিক্ষা দিতে পারেন তারও প্রশিক্ষণ তাদেরকে দিতে হবে।
চ. সকল শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে ইন্টারনেট সংযোগ থাকতে হবে ও শিক্ষার্থীদের তাদের হাতের ডিজিটাল ডিভাইস দিয়ে ইন্টারনেটে যুক্ত থাকতে হবে।
উল্লিখিত ধারার বিস্তারিত কাজগুলোতে আরও এমন কিছু থাকবে যা আমরা এখানে উল্লেখই করিনি। সেসব কাজসহ ডিজিটাল শিক্ষাব্যবস্থার সকল কাজ ২০২৩ সালের মাঝে সম্পন্ন করতে হবে।
উপরোক্ত প্রস্তাবনাটি সম্পর্কে আমি অত্যন্ত স্পষ্টভাবে বলতে চাই যে, ডিজিটাল বাংলাদেশ গড়ে তোলা কেবল সরকারের কাজ নয়। বিশেষ করে বাংলাদেশের শিক্ষাব্যবস্থার বহুলাংশ বেসরকারী খাত দিয়ে পরিচালিত। আমরা এটি প্রত্যাশা করতে পারি না যে, সরকার সকল স্কুল ডিজিটাল করবে বা সরকারের কাছ থেকে কম্পিউটার পাবার পর কম্পিউটার ল্যাব ও ডিজিটাল ক্লাসরুম তৈরি হবে। বরং আমি মনে করি, আমাদের সকলেরই দায়িত্ব হচ্ছে শিক্ষার ডিজিটাল রূপান্তরে যুক্ত হওয়া। নিজেদের অবদান যদি নিজেরা না রাখি তবে নিজের বিবেকের কাছে কি আমরা স্পষ্ট থাকতে পারব?
এটি সুখের বিষয় যে, শিক্ষার ডিজিটাল রূপান্তর বা প্রযুক্তির ব্যবহারের বিষয়ে আমাদের সচেতনতা অনেক বেড়েছে। এরই মাঝে দেশজুড়ে অনেক ডিজিটাল স্কুল হয়েছে। ডিজিটাল স্কুল নিয়ে আলোচনাও জোরদার হয়েছে।
কেমন করে ডিজিটাল স্কুল করবেন : ৯৯ সালে জন্ম নেয়া আনন্দ মাল্টিমিডিয়া স্কুলের ধারণা অনুসরণ করে একটি প্রাথমিক/ মাধ্যমিক স্কুল যে কেউ এখনই প্রতিষ্ঠা করতে পারেন এমনকি বিদ্যমান স্কুলকে মাল্টিমিডিয়া/ডিজিটাল স্কুলে রূপান্তর করতে পারেন। ডিজিটাল বা মাল্টিমিডিয়া স্কুল সাধারণ স্কুলই হবে। স্কুল গড়ে তোলার সকল অবকাঠামো নিজেকেই করতে হবে। এতে বিনিয়োগ হবে উদ্যোক্তার। সঙ্গতকারণেই এর স্বত্বও থাকবে উদ্যোক্তার। উদ্যোক্তা নিজেই এটি পরিচালনা করবেন। লাভ লোকসান বা আয়ব্যয় সবই উদ্যোক্তার। কেবল বিজয় ডিজিটাল স্কুল বা আনন্দ মাল্টিমিডিয়া স্কুল নামে স্কুল করতে হলে ফ্রান্সাইসি চুক্তি করতে হবে। কারণ এই নামটি ট্রেডমার্ক নিবন্ধিত। প্রচলিত স্কুলের মতো করেই স্কুল গড়ে তোলার কথা ভাবতে হবে। অন্যদিকে বিদ্যমান সরকারী-বেসরকারী স্কুলকেও ডিজিটাল স্কুল বা মাল্টিমিডিয়া স্কুলে রূপান্তর করা যাবে। সকল ক্ষেত্রেই ইতোপূর্বে বর্ণিত বিষয়গুলো মনে রাখতে হবে।
শিশুশ্রেণী থেকে কম্পিউটার শিক্ষা বাধ্যতামূলক করতে হবে। ক্লাসরুমগুলো পর্যায়ক্রমে ডিজিটাল ক্লাসরুমে রূপান্তরিত করতে হবে। ডিজিটাল কনটেন্ট ব্যবহার করতে হবে। স্কুলের হাজিরা থেকে ব্যবস্থাপনা এবং ক্লাসরুম শিক্ষা ডিজিটাল করতে হবে। ডিজিটাল কনটেন্ট বা বিজয় এর ডিজিটাল শিক্ষামূলক সফটওয়্যার দিয়ে পড়াতে হবে।
প্লে-নার্সারি-কেজি, প্রথম, দ্বিতীয়, তৃতীয়, চতুর্থ ও পঞ্চম শ্রেণীর ডিজিটাল কনটেন্ট তৈরি আছে বলে এই ক্লাসগুলো দিয়েই শুরু করা যায়। প্রচলিত স্কুলের পাঠক্রমে শিশুশ্রেণী থেকে ডিজিটাল প্রযুক্তি শিক্ষা বাধ্যতামূলক করতে হবে। এদের জন্য বাজারে আমার লেখা বইও রয়েছে। এখন কেবল একটি স্মার্ট টিভি যাতে এন্ড্রয়েড অপারেটিং সিস্টেম চলে সেটা দিয়ে ডিজিটাল ক্লাসরুম চালু করা যেতে পারে। আমরা পরীক্ষা করে দেখেছি যে মাত্র হাজার চল্লিশেক টাকায় একটি ক্লাসে ডিজিটাল শিক্ষা দেবার জন্য ৫০ ইঞ্চি স্মার্ট টিভি সংগ্রহ করা যেতে পারে। আমাদের মতো উন্নয়নশীল দেশের শিক্ষাকে ডিজিটাল করার জন্য এই ধরনের সমাধান ব্যাপকভাবে সহায়ক হতে পারে। এর বাইরে ডিজিটাল ক্লাসরুম তৈরির জন্য অন্য উপায়ও গ্রহণ করা যায়। একটি ল্যাপটপ কম্পিউটার ও একটি ৫০ ইঞ্চি পর্দার টিভি যোগ করলেই ডিজিটাল পদ্ধতিতে শিক্ষাদান শুরু করা সম্ভব। আমি এখন আর প্রজেক্টর ব্যবহার করার পক্ষে নই। যেসব সফটওয়্যার তৈরি হয়েছে সেগুলো চালানোর দক্ষতা অর্জন করাও সহজ। যে কোন কম্পিউটার জানা মানুষ ২/৩ ঘণ্টায় পুরো সফটওয়্যারটি চালাতে পারবে। ১ম থেকে ৫ম শ্রেণীর জন্য সরকারী বই এবং তার আগের ক্লাসগুলোর জন্য বিজয় ডিজিটালের ডিজিটাল কনটেন্ট পাঠ্য হতে হবে। এর সঙ্গে শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে থাকতে হবে ব্রডব্যান্ড ইন্টারনেট। ডিজিটাল পাঠ্য উপকরণ সরাসরি ডিভাইস থেকে না চালিয়ে ইন্টারনেটের মাধ্যমেও চালানো যেতে পারে। তবে নির্ভরযোগ্যতার জন্য উভয় পদ্ধতি একই সঙ্গে চালু রাখা যেতে পারে। ক্লাসরুম ও স্কুল ব্যবস্থাপনা সফটওয়্যারও ব্যবহার করা যেতে পারে।
ঢাকা ॥ ৮ মে ২০২০ ॥
লেখক : তথ্যপ্রযুক্তিবিদ, কলামিস্ট, দেশের প্রথম ডিজিটাল নিউজ সার্ভিস আবাস-এর চেয়ারম্যান- সাংবাদিক, বিজয় কীবোর্ড ও সফটওয়্যার-এর জনক
[email protected],www.bijoyekushe.net,www.bijoydigital.com