
ছবি:সংগৃহীত
ফরিদপুরের মাঠেঘাটে এবারের ঈদুল আজহাকে ঘিরে শুরু হয়েছে আলোচনা-আড্ডা। জেলার তিনটি বিশালাকার গরু রাজাবাবু, রাজা ও বাদশাহ নিয়ে স্থানীয় মানুষের মধ্যে তৈরি হয়েছে ব্যাপক কৌতূহল। নগরকান্দা থানার দেবীনগর গ্রামের আদিলউদ্দিন মোড়লের বাড়ির ফ্লাক বি জাতের গরু রাজাবাবুর ওজন প্রায় ২৭ মণ।
আদিলউদ্দিন গরুটিকে সাত-আট মাস ধরে লালন-পালন করেছেন বিশেষ যত্নে। প্রতিদিন ফলমূল খাওয়ানোসহ নানা ধরনের পরিচর্যা করেছেন তিনি। এখন গরুটির দাম হাঁকিয়েছেন ১৫ লাখ টাকা। সদর উপজেলার বিল মাহমুদপুর গ্রামের মায়েশা এগ্রো ফার্মের হলস্টাইন ফ্রিজিয়ান জাতের দুই গরু রাজা ও বাদশা আরও বেশি আলোড়ন সৃষ্টি করেছে। ৪২ মাস ও ৩২ মাস বয়সী এই গরু দুটির ওজন যথাক্রমে ৩০ মণ ও ২৮ মণ। ফার্মের মালিক গরু দুটির জন্য ১৫ লাখ ও ১৩ লাখ টাকা দাম চেয়েছেন।
এসব গরু পালনে খামারিরা নিয়েছেন অনন্য সব ব্যবস্থা। সম্পূর্ণ প্রাকৃতিক উপায়ে মোটাতাজা করা হয়েছে গরুগুলো। কোনো ধরনের স্টেরয়েড বা অ্যান্টিবায়োটিক ব্যবহার করা হয়নি। রাজা ও বাদশাকে প্রতিদিন সকালে ৩০০ থেকে ৩৫০ গ্রাম করে বিভিন্ন ফলমূল যেমন আঙ্গুর, আপেল, কমলা খাওয়ানো হয়। গরুগুলোর থাকার জায়গা পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন রাখা হয় নিয়মিত। রাজা ও বাদশার জন্য খামারে স্থাপন করা হয়েছে দুটি ইলেকট্রিক ফ্যান, যা চব্বিশ ঘণ্টা চলতে থাকে। গরুগুলোর সুস্বাস্থ্য ও আকর্ষণীয় চেহারা দেখতে প্রতিদিনই লোকজনের ভিড় জমে খামারে। স্থানীয় বাসিন্দা দেলোয়ার হোসেন বলেন, "এত বড় গরু আমরা আগে কখনো দেখিনি। আশেপাশের গ্রাম থেকেও মানুষ দেখতে আসছে।"
গরু বিক্রির প্রস্তুতিও চলছে জোরেশোরে। তবে বিশাল আকারের কারণে কিছু চ্যালেঞ্জও মোকাবেলা করতে হচ্ছে খামারিদের। রাজার মতো বিশাল গরুকে হাটে নিয়ে যাওয়া সহজ কাজ নয়। চার বছর আট মাস বয়সী এই গরুটিকে বাড়ির পাকা দেয়াল ভেঙে বের করতে হবে, কারণ দরজা দিয়ে তাকে বের করা সম্ভব হবে না। জেলা পশুসম্পদ কর্মকর্তা নূরুল্লা মো. আহসান মনে করেন, ফরিদপুরে এত বড় গরুর ক্রেতা পাওয়া কঠিন হতে পারে। তার মতে ঢাকা বা চট্টগ্রামের মতো বড় শহরে নিয়ে গেলেই গরুটির সঠিক মূল্যায়ন সম্ভব।
ফরিদপুর জেলায় এবারের ঈদুল আজহার প্রস্তুতি চলছে পুরোদমে। জেলার নয়টি উপজেলায় মোট ৩৭টি গবাদি পশুর হাট বসবে। এসব হাট তদারকির জন্য গঠন করা হয়েছে ১৭টি মেডিকেল টিম, যারা পালাক্রমে সব হাট পরিদর্শন করবে। জেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তার তথ্য অনুযায়ী, এবার জেলায় চাহিদার তুলনায় ২০০০ বেশি কোরবানির পশু রয়েছে। খামারিদের মুখে এখন একটাই আশা - তাদের অক্লান্ত পরিশ্রম ও যত্নের ফলস্বরূপ তারা যেন তাদের গরুগুলোর ন্যায্য মূল্য পান। গরুগুলোর প্রতি তাদের গভীর মমত্ববোধও প্রকাশ পায় কথায়। শিরিন বেগম নামে এক খামারি বলেন, "গরুটার প্রতি মায়া জমে গেছে। ওকে বিক্রি করে দেওয়া হবে এ সিদ্ধান্ত জানার পর থেকে মনে শান্তি নাই।" আদিলউদ্দিন মোড়ল তার রাজাবাবু সম্পর্কে বলেন, "আদর করে ওর নামটা রাখছি নগরখান্ডা থানা রাজাবাবু... যেখালে আমার সাধ্য পরিমাণে যা কুলাইছে আমি ফল খাওয়াইছি।" ঈদের হাটে এই বিশালাকার গরুগুলো যে প্রধান আকর্ষণ হয়ে উঠবে, সে বিষয়ে কারও কোনো সন্দেহ নেই।
আঁখি