ঢাকা, বাংলাদেশ   বুধবার ০১ মে ২০২৪, ১৭ বৈশাখ ১৪৩১

জরুরী সেবায় ৯৯৯

প্রকাশিত: ০৯:০৭, ২ ডিসেম্বর ২০১৯

জরুরী সেবায় ৯৯৯

শুক্রবার পুলিশ প্রধান জরুরী সেবা ৯৯৯ সম্পর্কে অত্যন্ত আশাব্যাঞ্জক তথ্য দিয়েছেন। তার বক্তব্য থেকে জানা গেল ৯৯৯ চালুর পর এখন পর্যন্ত প্রায় দুই কোটি কল পুলিশ পেয়েছে। এর মধ্যে ৪০ শতাংশ কলই করেছেন নারীরা। এসব কলের ভিত্তিতে প্রায় ৫৮ লাখ নাগরিককে বিভিন্ন ধরনের সেবা দেয়া হয়েছে। সেবা গ্রহীতার মধ্যে বেশিরভাগই নারী। বিশেষ করে বাল্যবিয়ে প্রতিরোধে উল্লেখযোগ্য সাফল্য আছে এই সংস্থার। পুলিশের এই পদক্ষেপ ও তৎপরতা সাধারণ মানুষের মাঝে যে স্বস্তি ও আস্থার জায়গা তৈরি করবে তাতে কোন সন্দেহ নেই। যুক্তরাজ্য ন্যাশনাল হেল্প ডেস্ক চালু করেছিল ১৯৩৭ সালে। যুক্তরাষ্ট্র চালু করে ১৯৬৮ সালে। আর বাংলাদেশ করেছে ২০১৬ সালে। দেরিতে হলেও এটা দেশের একটি অগ্রযাত্রা। এই সেবা দেয়ার জন্য অনেক দেশ বড় শহরগুলোতে আলাদা পুলিশ বাহিনীসহ বিভিন্ন সুবিধা যোগ করে এটিকে প্রাতিষ্ঠানিক রূপ দেয়ার কাজটি করেছে। বিলম্বে হলেও নাগরিকদের জরুরী সেবা প্রাপ্তির গুরুত্ব ও প্রয়োজনীয়তা বিবেচনা করেই বর্তমান সরকার টোল ফ্রি ‘৯৯৯’ নম্বরটি চালু করেছে। এর সুফল ইতোমধ্যেই দেখা যাচ্ছে। তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি বিভাগ পরিচালিত কর্মসূচীর আওতায় নাগরিকদের জরুরী প্রয়োজনে পুলিশ, ফায়ার সার্ভিস ও এ্যাম্বুলেন্স সার্ভিস প্রদানের জন্য এই কার্যক্রম চালু হয়েছে। বাংলাদেশ পুলিশ, ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্স অধিদফতর এবং বেসরকারী একটি প্রতিষ্ঠানের সমন্বয়ে এ কার্যক্রম পরিচালিত হচ্ছে। সম্প্রতি চলন্ত ট্রেনে এক প্রান্তিক নারীর সন্তান প্রসবের পর খবর পেয়ে প্রসূতির স্বাস্থ্যসেবায় সক্রিয় অবদানের জন্য আলোচিত হয়েছে ৯৯৯ সেবা কার্যক্রম। এর আগে পদ্মা নদীতে দুর্ঘটনাকবলিত একটি ফেরি উদ্ধার করে ৩০০ মানুষের প্রাণ বাঁচিয়েছে এই জরুরী সেবা ‘৯৯৯’। ৯৯৯ নম্বরে ফোন পেয়ে ছিনতাই হওয়া ট্রাক ও ট্রাকভর্তি ২২ হাজার ৫৩০টি মুরগির ডিম কুমিল্লার চৌদ্দগ্রাম থেকে উদ্ধার করেছে পুলিশ। উল্লেখ করা দরকার, ৯৯৯-এর মতো বাংলাদেশে নারী ও শিশুদের সুরক্ষার জন্য ইতোমধ্যে ১০৯ সেবাটিও চালু হয়েছে। বিশ্বের প্রায় সব দেশেই বিপদ থেকে উদ্ধারের আশায় ইমার্জেন্সি ফোনকল করার জন্য একটি নম্বর নির্দিষ্ট থাকে। বলাবাহুল্য, সমাজে নারী ও মেয়ে শিশুরা নানা ধরনের নির্যাতনের শিকার। সম্ভাব্য নির্যাতনের আগে কিংবা নির্যাতনের শিকার হওয়ার পর জরুরী ভিত্তিতে নারী বা মেয়ে শিশু প্রতিকার পেলে কিংবা তার ভেতরে নিরাপত্তার বোধ তৈরি করা সম্ভব হলে একটি বড় কাজ হয়। দেশের পল্লী এলাকায় বাল্যবিয়ে রুখে দেয়ার ব্যাপারে এই হেল্পলাইন ইতোমধ্যে যথাযথ হেল্প তথা সাহায্যে সক্রিয় ভূমিকা রাখার দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছে। বাল্যবিয়েই শুধু নয়, নারী ও শিশু নির্যাতন প্রতিরোধ, যৌন হয়রানি প্রতিরোধ, নির্যাতনের শিকার নারী ও শিশুকে উদ্ধারের ক্ষেত্রে এ হেল্পলাইন কার্যকর ভূমিকা রাখতে শুরু করেছে। মহিলা ও শিশুবিষয়ক মন্ত্রণালয়ের এই কল সেন্টার বা হেল্পলাইন চালু হয় পাঁচ বছর আগে। তবে ব্যাপক প্রচারণার অভাবে এখনও নারীসমাজ এই সেবা সম্পর্কে তেমন অবহিত নন। যদিও দিনে দিনে এর পরিধি বাড়ছে। তবে লক্ষ্য করার বিষয় হলো, শুধু নারী সমস্যাতেই নয়, সার্বিকভাবে বিবিধ সঙ্কট ও সমস্যায় এই জরুরী সেবা কার্যক্রম সফলতার পরিচয় দিচ্ছে। নিঃসন্দেহে এটি সরকারের জনবান্ধব নীতি বাস্তবায়নের একটি উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত। এই সেবার ওপর সাধারণ নাগরিকদের মধ্যে যে আস্থা তৈরি হয়েছে তাকে ধরে রাখাকেই এখন সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ হিসেবে নেয়া দরকার। একই সঙ্গে ৯৯৯-এর প্রযুক্তিগত যাবতীয় সীমাবদ্ধতা দূর করতে সর্বাত্মক পদক্ষেপ নেওয়াও জরুরী। কার্যকরভাবে এই সেবা জরুরী প্রয়োজনে বিপদাপন্ন মানুষের দোরগোড়ায় পৌঁছে দিতে হলে এই কার্যক্রমে লোকবল বাড়ানোর বিকল্প নেই।
×