ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ১৮ এপ্রিল ২০২৪, ৫ বৈশাখ ১৪৩১

মিয়ানমার সীমান্তে অস্থিরতা

প্রকাশিত: ০৩:৫৭, ৪ মার্চ ২০১৮

মিয়ানমার সীমান্তে অস্থিরতা

শুক্রবার পুনরায় মিয়ানমার সীমান্তে উত্তেজনা বিরাজ করে। বাংলাদেশের নাইক্ষ্যংছড়ি এলাকার সীমান্তে মিয়ানমার হঠাৎ করেই ভারি অস্ত্রশস্ত্র ও সেনা মোতায়েন শুরু করে। সেখানে নোম্যানস ল্যান্ড বা শূন্যরেখায় থাকা সাত হাজার রোহিঙ্গাকে বাংলাদেশে ঢুকে যাওয়ার জন্য ভয়ভীতি দেখাতে থাকে। ফাঁকা গুলিও বর্ষণ করে। এ পরিস্থিতিতে বাংলাদেশের সীমান্তরক্ষী বাহিনী বর্ডার গার্ড বাংলাদেশ বা বিজিবিকে সতর্ক অবস্থানে রাখা হয়। যে কোন পরিস্থিতি মোকাবেলার জন্য তৈরি থাকতে নির্দেশ দেয়া হয়। ফলে সীমান্ত এলাকায় উত্তেজনা ছড়িয়ে পড়ে। এই উত্তেজনা ও অস্থিরতা এমন সময়ে মিয়ানমার সৃষ্টি করল যখন বাংলাদেশে পালিয়ে আসা রোহিঙ্গাদের ফিরিয়ে নেয়ার ব্যাপারে দুই দেশের মধ্যে চুক্তি হয়েছে, তালিকা হস্তান্তর করা হয়েছে এবং শীঘ্রই তাদের প্রত্যাবাসন প্রক্রিয়া শুরু হবে বলে আশা প্রকাশ করা হয়েছে। তাই এটা আর অস্পষ্ট নয় যে, ওই উত্তেজনা সৃষ্টির পেছনে সুনির্দিষ্ট অভিসন্ধি রয়েছে মিয়ানমারের। তারা রোহিঙ্গা ফেরত নেয়ার ব্যাপারে নানা টালবাহানা করবে। ওই ঘটনার পরিপ্রেক্ষিতে অবশ্য বাংলাদেশ মিয়ানমারের রাষ্ট্রদূতকে তলব করে কড়া প্রতিবাদ জানিয়েছে। বিজিবির আহ্বানে শুক্রবার বিকেলেই দুই দেশের সীমান্ত কর্তৃপক্ষের মধ্যে পতাকা বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়। বৈঠকে মিয়ানমার গুলিবর্ষণের কথা অস্বীকার করে। সীমান্তে সেনাসদস্য বৃদ্ধির ব্যাপারে অজুহাত দেয় যে, অভ্যন্তরীণ কাজে নিরাপত্তার প্রয়োজনে তারা বান্দরবানের তুমব্রু সীমান্তের ওপারে সামরিক শক্তি বৃদ্ধি করেছে। পতাকা বৈঠক শেষে বিজিবি প্রতিনিধি দলের প্রধান গণমাধ্যমের কাছে বলেন, ভবিষ্যতে সীমান্ত এলাকায় ফাঁকা গুলি ছোড়ার আগে বাংলাদেশকে অবহিত করার কথা বলেছে মিয়ানমার সীমান্ত কর্তৃপক্ষ। একই সঙ্গে শূন্যরেখায় অবস্থানকারী রোহিঙ্গাদের যে কোন সময় নিয়ে যাওয়ার ব্যাপারেও অঙ্গীকার করেছে। রোহিঙ্গাদের ওপর অমানবিক নির্যাতনের মাধ্যমে তাদের দেশছাড়া করার ফলস্বরূপ মিয়ানমার বিশ্বে নিন্দিত হচ্ছে। এ পরিস্থিতিতে তারা আবার নতুন করে কোন দুরভিসন্ধি আঁটছে যাতে বাংলাদেশে আশ্রয় গ্রহণকারী লাখ লাখ রোহিঙ্গা নিজ দেশে ফিরতে না পারে। বলাবাহুল্য, সীমান্তে উত্তেজনা তৈরির মাধ্যমে তারা উস্কানি দিচ্ছে। বাংলাদেশ সরকারও সম্পূর্ণ সচেতন, তাদের ফাঁদে পা দেয়ার কোন প্রশ্নই ওঠে না। সীমান্তে অবাঞ্ছিত ও আন্তর্জাতিক রীতিনীতিবিরুদ্ধ আচরণের মধ্য দিয়ে মিয়ানমার যে দৃষ্টান্ত রাখল গত শুক্রবার, পতাকা বৈঠকের মাধ্যমে সে উদ্বেগজনক অস্থির পরিস্থিতির আপাত প্রশমন ঘটলেও মিয়ানমারের ওপর কূটনৈতিক চাপ অব্যাহত রাখার কোন বিকল্প নেই। সেইসঙ্গে সীমান্তে বাংলাদেশকে আরও বেশি সতর্ক অবস্থানে থাকতে হবে। বাংলাদেশে বর্তমানে প্রায় ১১ লাখ রোহিঙ্গা অবস্থান করছে। বাংলাদেশের অর্থনীতির জন্য তা এক মারাত্মক আঘাতস্বরূপ। তা ছাড়া উদ্ভূত পরিস্থিতি স্থানীয় সামাজিক ও প্রাকৃতিক পরিবেশেরও ব্যাপক ক্ষতি করছে। এই অবস্থা যত দীর্ঘায়িত হবে ক্ষতির পরিমাণ তত বাড়বে। অন্যদিকে আসন্ন বর্ষায় রোহিঙ্গাদের জন্য যে বিপর্যয়কর অবস্থা নেমে আসবে, তাকে সামাল দেয়াও কঠিন হয়ে পড়বে। এ অবস্থায় যত দ্রুত সম্ভব রোহিঙ্গাদের প্রত্যাবাসন সম্পন্ন করতে হবে। মিয়ানমার সরকারকে স্পষ্ট ভাষায় জানিয়ে দিতে হবে, এ ধরনের পদক্ষেপ রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠীর সুষ্ঠু প্রত্যাবর্তন ছাড়াও সৎ প্রতিবেশীসুলভ সহাবস্থানের অন্তরায়। রোহিঙ্গা শরণার্থী আগমন প্রক্রিয়ার শুরু থেকেই বাংলাদেশ ধৈর্য ধরে আসছে। নিরাপত্তা, স্থিতিশীলতা ও সার্বভৌমত্বের প্রশ্নে বাংলাদেশ সব সময় দৃঢ় অবস্থানেই রয়েছে।
×