
ছবি: সংগৃহীত
বিশ্বের প্রায় প্রতিটি দেশে সফট ড্রিংকের বাজারে কোকাকোলা একক আধিপত্য বজায় রাখলেও, দক্ষিণ আমেরিকার একটি দেশে আজও জনপ্রিয়তার শীর্ষে উঠতে পারেনি এই মার্কিন পানীয়। দেশটির নাম পেরু। আর যে পানীয় কোকাকোলাকে হারিয়ে দিয়ে সে দেশের মানুষের হৃদয়ে জায়গা করে নিয়েছে, তার নাম—ইনকাকোলা।
এই সোনালি রঙের পানীয় কেবল এক ধরনের নরম পানীয়ই নয়, বরং পেরুর জাতীয় সংস্কৃতি, ইতিহাস ও গর্বের প্রতীক। দেশটির নাগরিকদের কাছে এটি পরিচিত ‘El Sabor del Perú’ বা ‘পেরুর স্বাদ’ হিসেবে।
জন্ম এক শতাব্দী আগেই
ইনকাকোলার যাত্রা শুরু ১৯৩৫ সালে, কোকাকোলা চালু হওয়ার ঠিক এক বছর পর। ব্রিটিশ-পেরুভিয়ান উদ্যোক্তা জোসেফ রবিনসন লিন্ডলি পেরুতে তৈরি করেন এই বিশেষ পানীয়টি। বাবলগাম ও ভেসোজ নামের এক ধরনের চায়ের নির্যাসের সংমিশ্রণে তৈরি এই পানীয়ের রঙ উজ্জ্বল সোনালি এবং স্বাদ অন্যসব সফট ড্রিংকের চেয়ে সম্পূর্ণ আলাদা—অদ্ভুত জাদুকরী!
শুরু থেকেই ইনকাকোলা কেবল একটি বাণিজ্যিক পণ্য হিসেবে নয়, বরং পেরুর জাতীয় পরিচয়ের অংশ হিসেবেই বাজারজাত করা হয়। ফলে অল্প সময়েই এটি পেরুভিয়ান জনগণের আবেগের সঙ্গে মিশে যায়।
যুদ্ধকালীন সুযোগ কাজে লাগায় ইনকা
দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময় কোকাকোলা পেরুর জাপানি মালিকানাধীন দোকানগুলোতে তাদের পণ্য সরবরাহ বন্ধ করে দেয়। এই শূন্যতা পূরণে এগিয়ে আসে ইনকাকোলা। দ্রুত দখল করে নেয় বাজারের বড় একটি অংশ। কোকাকোলার থেকে আলাদা স্বাদ ও পরিচিতি হওয়ায় ইনকাকোলা নিজস্ব এক ভোক্তা শ্রেণি গড়ে তোলে।
পরবর্তী দুই দশকে ইনকাকোলা পেরুর শহর থেকে গ্রাম পর্যন্ত ছড়িয়ে পড়ে। স্থানীয় দোকানদারদের বিশেষ ছাড়, ফ্রিজ বিতরণ, সাইনবোর্ড ও বিজ্ঞাপনের মাধ্যমে তৈরি করা হয় বিশাল এক বিপণন কাঠামো। এসব কৌশলের কারণে ১৯৭০-এর দশকে কোকাকোলাকে পেছনে ফেলে জনপ্রিয়তার শীর্ষে উঠে আসে ইনকা।
পরাজয় মেনে নিয়ে শেয়ার কিনে কোকাকোলা
বারবার চেষ্টা করেও ইনকার বাজার ভাঙতে ব্যর্থ হয় কোকাকোলা। এক পর্যায়ে বাধ্য হয়ে ১৯৯৯ সালে প্রায় ২০০ মিলিয়ন ডলারে ইনকাকোলার আন্তর্জাতিক অংশীদারিত্বে ৫০ শতাংশ শেয়ার কিনে নেয় মার্কিন জায়ান্ট কোম্পানিটি। তবে গুরুত্বপূর্ণ শর্ত ছিল—পেরুর অভ্যন্তরীণ বাজারের নিয়ন্ত্রণ থাকবে লিন্ডলি পরিবারের হাতেই।
এই চুক্তিতে সম্মত হয় কোকাকোলা, তবে তাতেও ইনকার জনপ্রিয়তায় ভাটা পড়েনি। বরং সময়ের সঙ্গে সঙ্গে এটি আরও শক্তিশালী হয়েছে।
ইনকাকোলা: শুধু পানীয় নয়, প্রতিরোধের প্রতীক
আজও পেরুর বাজারে সফট ড্রিংকের রাজা ইনকাকোলা। কোকাকোলার বিশাল প্রচারণা, মূল্যে ছাড় কিংবা আন্তর্জাতিক সুনাম—কোনোটিই পেরুতে ইনকার আধিপত্য ভাঙতে পারেনি। এদেশের নাগরিকদের কাছে এটি শুধু একটি পানীয় নয়—এটি তাদের দেশপ্রেম, ঐতিহ্য, ইতিহাস এবং আন্তর্জাতিক কর্পোরেট আধিপত্যের বিরুদ্ধে প্রতিরোধের প্রতীক।
বিশ্ব যখন গ্লোবাল ব্র্যান্ডে গা ভাসাচ্ছে, তখন পেরু দেখিয়ে দিচ্ছে—যেখানে আবেগ আর ঐতিহ্য মিশে যায়, সেখানে বহুজাতিক কোম্পানির প্রভাবও হার মানে।
সূত্র: https://www.youtube.com/watch?v=fWjyqRkmbPk
রাকিব