ঢাকা, বাংলাদেশ   বুধবার ১৬ জুলাই ২০২৫, ১ শ্রাবণ ১৪৩২

বাংলাদেশের ব্যাংক খাত নিয়ে যে দুঃসংবাদ দিল আন্তর্জাতিক রেটিং সংস্থা এসঅ্যান্ডপি

প্রকাশিত: ১৬:৪৭, ১৬ জুলাই ২০২৫; আপডেট: ১৬:৪৮, ১৬ জুলাই ২০২৫

বাংলাদেশের ব্যাংক খাত নিয়ে যে দুঃসংবাদ দিল আন্তর্জাতিক রেটিং সংস্থা এসঅ্যান্ডপি

ছবি:সংগৃহীত

বাংলাদেশের ব্যাংকিং খাত আগামী ২০২৬ সাল পর্যন্ত চাপের মুখে থাকবে বলে পূর্বাভাস দিয়েছে আন্তর্জাতিক রেটিং সংস্থা এসঅ্যান্ডপি গ্লোবাল রেটিংস। সংস্থার প্রধান ক্রেডিট বিশ্লেষক শিনয় ভার্গিজ বলেন, "বাংলাদেশের ব্যাংক খাত দীর্ঘদিন ধরে গঠনগত দুর্বলতা—বিশেষ করে দুর্বল ঋণ অনুমোদন নীতিমালা এবং অকার্যকর ফোরক্লোজার আইনের—কারণে ভুগছে।"

মূল দিকগুলো:

  • ২০২৬ সাল পর্যন্ত ব্যাংকিং খাতে চাপ অব্যাহত থাকবে
  • উচ্চ ঋণ ঝুঁকি ও দুর্বল পরিচালনা খাতের স্থিতিশীলতা ও বিশ্বাসযোগ্যতাকে করছে ক্ষতিগ্রস্ত
  • তারল্য সংকট ও মূলধন ঘাটতিতে সবচেয়ে বেশি ঝুঁকিতে ইসলামী ও রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাংক
  • কঠোর ঋণ শ্রেণিকরণে বেড়েছে অস্বাভাবিক ঋণের চিহ্নিতকরণ, বাড়ছে স্বচ্ছতাও
  • সুদের হার বৃদ্ধির মাধ্যমে আংশিকভাবে ব্যাংকের আয় পুনরুদ্ধার হতে পারে

এসঅ্যান্ডপি গ্লোবালের মধ্যবর্তী বছরের (২০২৫) পর্যালোচনায় বলা হয়েছে, ব্যাংক খাতের মূল সমস্যা হলো ক্রমবর্ধমান ঋণ ঝুঁকি, খণ্ডিত ব্যাংকিং ব্যবস্থা এবং দুর্বল শাসনব্যবস্থা—বিশেষ করে রাষ্ট্রায়ত্ত ও ইসলামী ব্যাংকগুলোর মধ্যে।

শিনয় ভার্গিজ বলেন, “রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাংকগুলো এখনো বড় অঙ্কের দুর্বল সম্পদ ধারণ করছে। পুরনো ঋণ লাইনের নবায়ন না হওয়া এবং পুনঃতালিকাভুক্ত ঋণে ডিফল্ট বেড়ে যাওয়ায় বোঝা যাচ্ছে, অনেক ঋণগ্রহীতার নগদ প্রবাহে রয়েছে গুরুতর দুর্বলতা।”

তবে পরিস্থিতির কিছুটা উন্নতির সম্ভাবনা রয়েছে। সম্প্রতি নিয়ন্ত্রক সংস্থার কিছু কড়া পদক্ষেপ যেমন—ঋণের শ্রেণিকরণ নীতিমালার কঠোরতা, নবায়নের কঠিন শর্ত এবং ইচ্ছাকৃত খেলাপির সংজ্ঞায় স্বচ্ছতা—এসবের ফলে অবৈধ ঋণ চিহ্নিত করা সম্ভব হচ্ছে বেশি পরিমাণে।

ভার্গিজ বলেন, “এই স্বল্পমেয়াদি কষ্ট ভবিষ্যতের জন্য স্বচ্ছতা বাড়াবে এবং আন্তর্জাতিক মানের সঙ্গে সঙ্গতিপূর্ণ করবে আমাদের ঋণ ব্যবস্থাপনা।”

যদিও এখন ঋণপ্রদান কড়াকড়ি এবং খেলাপি ঋণ বাড়ছে, তবুও উচ্চ সুদের হার ও বাজারভিত্তিক ঋণহার ব্যবস্থার কারণে ব্যাংকগুলোর নিট সুদের মুনাফা (NIM) কিছুটা বাড়তে পারে।

“২০২৬ সাল পর্যন্ত সুদের হার হয়তো উচ্চই থাকবে, যা ঋণগ্রহণের চাহিদা কমাবে। তবে, একইসঙ্গে ব্যাংকগুলোর আয় বাড়তেও পারে,”—বলেছেন তিনি।

মানবিক দৃষ্টিকোণ থেকে বললে:
এই সংকটে সবচেয়ে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন সাধারণ মানুষ ও ক্ষুদ্র উদ্যোক্তারা। ব্যাংকগুলো ঋণ দিতে অনিচ্ছুক হওয়ায় নতুন ব্যবসা শুরুর সুযোগ সীমিত হচ্ছে। আবার যারা পুরনো ঋণ নিয়েছেন, তারা পুনঃতালিকাভুক্তি বা নবায়নের সুযোগ হারিয়ে পড়ছেন আর্থিক বিপর্যয়ে।

এখন প্রয়োজন:

  • সুসংহত নীতিমালা
  • জবাবদিহিমূলক ব্যাংকিং ব্যবস্থা
  • এবং ঋণগ্রহীতার স্বার্থ রক্ষায় কার্যকর আইন প্রয়োগ

বাংলাদেশের আর্থিক ভবিষ্যৎ নির্ভর করছে এ সমস্যাগুলোর দ্রুত ও বাস্তবভিত্তিক সমাধানের ওপর।

তথ্যসূত্রঃ https://www.tbsnews.net/economy/banking/structural-flaws-weak-asset-quality-weigh-down-bangladeshs-banking-sector-through

 
 

মারিয়া

আরো পড়ুন  

×