ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ১৭ জুলাই ২০২৫, ১ শ্রাবণ ১৪৩২

ভারতে ৭ বছরের ছোট শিশুকে হত্যা করে ক্লাবিংয়ে মত্ত মা!

প্রকাশিত: ২১:২০, ১৬ জুলাই ২০২৫; আপডেট: ২১:২২, ১৬ জুলাই ২০২৫

ভারতে ৭ বছরের ছোট শিশুকে হত্যা করে ক্লাবিংয়ে মত্ত মা!

ছবিঃ সংগৃহীত

একটি হৃদয়বিদারক ঘটনা সম্প্রতি উত্তরপ্রদেশের লখনউ শহরে প্রকাশ্যে এসেছে, যেখানে এক মা তাঁর সাত বছরের ছোট মেয়েকে নির্মমভাবে হত্যা করেছেন। খুন্দারি বাজার এলাকায় বসবাসকারী রোশনি খান ও তাঁর সঙ্গী উদিত জয়স্বালকে পুলিশ গ্রেফতার করেছে।

পুলিশ সূত্রে জানা গেছে, শিশুটি মায়ের অনৈতিক সম্পর্ক মেনে নিতে পারছিল না এবং বাবার কাছে ফিরে যেতে চাইছিল। এই ছোট্ট ইচ্ছাই যেন তার প্রাণ কেড়ে নিল।

ঘটনার ধারাবাহিকতা
১৩ জুলাই রাত: সোনা নামের শিশুটি তার বাবার কাছে যাওয়ার বায়না ধরলে, রোশনি ও উদিত মিলে প্রথমে তাকে মারধর করে এবং পরে মুখ চেপে শ্বাসরোধ করে হত্যা করে।

দেহ গোপন: মেয়ের নিথর দেহটি একটি খাটের ভিতরে লুকিয়ে রাখে দু'জনে।

১৪ জুলাই সারাদিন: তারা শহরের বিভিন্ন জায়গায় মদ্যপান ও আনন্দে মত্ত থাকেন।

১৫ জুলাই ভোর: ঘরে ফিরে এসে দেহের দুর্গন্ধ আড়াল করতে এয়ার ফ্রেশনার ও এসি চালিয়ে রাখেন। এরপর পুলিশে ফোন করে অভিযোগ করেন, তার স্বামী শারুখ খান এসে মেয়েকে মেরে পালিয়েছে।

সত্য উদঘাটন
পুলিশ তদন্তে রোশনি ও উদিতের বক্তব্যে অসঙ্গতি ধরা পড়ে। বাড়ির সিসিটিভি ফুটেজ, কল রেকর্ড ও প্রতিবেশীদের সাক্ষ্য থেকে স্পষ্ট হয়, ঘটনার দিন শারুখ ঘটনাস্থলে ছিলেন না। তিনি তখন তাঁর বোনের বাড়িতে ছিলেন।

অবশেষে পুলিশের জেরা চলাকালীন উদিত ভেঙে পড়ে এবং পুরো ঘটনা স্বীকার করে নেয়।

মেয়েটি ছিল প্রতিবাদী
পুলিশ জানিয়েছে, ছোট্ট সোনা তার মায়ের সম্পর্ক নিয়ে প্রতিবাদ করত এবং বাবার কাছে ফিরে যেতে চাইত। তার এই স্পষ্টবাদিতাই যেন তার জন্য কাল হয়ে দাঁড়ায়।

মায়ের আসক্তি ও উদ্দেশ্য
রোশনি আগে দিল্লির বিভিন্ন ক্লাবে নৃত্যশিল্পী হিসেবে কাজ করতেন। বিয়ের পরও তিনি লখনউর নাইটলাইফে আকৃষ্ট হয়ে পড়েন। প্রতিবেশীরা জানান, রোশনি প্রায়ই মেয়েকে বাড়িতে একা রেখে মদ্যপান ও পার্টিতে যেতেন।

রোশনি অতীতে স্বামীর ও শ্বশুরবাড়ির বিরুদ্ধে মামলাও করেছিলেন এবং স্বামীর মালিকানাধীন বাড়িটিও নিজের নিয়ন্ত্রণে রাখতে চাইতেন। পুলিশের মতে, এই হত্যাকাণ্ডের অন্যতম উদ্দেশ্য ছিল স্বামীকে ফাঁসিয়ে দেওয়া এবং সম্পত্তির উপর একচ্ছত্র অধিকার প্রতিষ্ঠা করা।

পরিণতি
১৬ জুলাই পুলিশের তদন্তে সত্য উদঘাটিত হওয়ার পর রোশনি ও উদিতকে গ্রেফতার করা হয়। পোস্টমর্টেম রিপোর্ট অনুযায়ী, শিশুটির মৃত্যু শ্বাসরোধের ফলে হয়েছে এবং মৃত্যুর সময় অন্তত ৩৬-৪৮ ঘণ্টা অতিক্রান্ত হয়েছিল।

এই ঘটনাটি আমাদের সমাজে মায়ের ভূমিকা, পারিবারিক অশান্তি এবং শিশুদের নিরাপত্তা নিয়ে গভীর প্রশ্ন তোলে। একজন মা যে এমন পাষাণ মনোভাব নিতে পারেন, তা শুধু ভয়ানক নয় — এক গভীর সামাজিক ও মানসিক বিপর্যয়ের ইঙ্গিতও বটে।

সোনার আত্মা যেন শান্তি পায়। সমাজের দায়িত্ব এমন নিষ্ঠুরতার বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়ানো।

 
 

মারিয়া

×