ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ১২ জুলাই ২০২৫, ২৮ আষাঢ় ১৪৩২

বিশ্ববিদ্যালয়ে পুলিশি হামলার প্রতিবাদে বিক্ষোভ মিছিল ও অবস্থান কর্মসূচ

আল জুবায়ের

প্রকাশিত: ০০:০১, ১২ জুলাই ২০২৫

বিশ্ববিদ্যালয়ে পুলিশি হামলার প্রতিবাদে বিক্ষোভ মিছিল ও অবস্থান কর্মসূচ

.

জুলাইয়ের দিনগুলো যত বাড়তে থাকে কোটাবিরোধী আন্দোলন ততই ছড়িয়ে পড়তে শুরু করে। দেশের শিক্ষার্থীদের আন্দোলনের মুখে ২০১৮ সালে কোটা প্রথা বাদ দিলেও দীর্ঘ ছয় বছর পর আবারও একটি কোটা আন্দোলন শুরু হয় ২০২৪ সালের জুলাই মাসে। এই আন্দোলনে দেশের লাখ লাখ শিক্ষার্থী অংশগ্রহণ করেন। কোটা বাতিলের দাবিতে জুলাইয়ের ১ তারিখ থেকে ১১ তারিখ পর্যন্ত অবরোধ, বিক্ষোভ, ক্লাস-পরীক্ষা বর্জন, সকাল-সন্ধ্যা বাংলা ব্লকেডসহ নানা কর্মসূচি পালন করেন দেশের বিভিন্ন পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়, সাত কলেজসহ জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা। শিক্ষার্থীদের ওপর পুলিশ ও ছাত্রলীগের যৌথ হামলার প্রতিবাদ জানিয়ে বিকেলে শাহবাগ মোড়ে বিক্ষোভ কর্মসূচি পালন করেন আন্দোলনকারীরা। এক দফা দাবিতে ‘বাংলা ব্লকেড’ কর্মসূচি পালন করেন শিক্ষার্থীরা। দাবিটি হলো- সরকারি চাকরির সব গ্রেডে অযৌক্তিক ও বৈষম্যমূলক কোটা বাতিল করে সংবিধানে উল্লেখিত অনগ্রসর গোষ্ঠীর জন্য কোটাকে ন্যুনতম (সর্বোচ্চ ৫ শতাংশ) পর্যায়ে এনে সংসদে আইন পাস করে কোটা পদ্ধতিকে সংস্কার করতে হবে। দেশের বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ে পুলিশের হামলার প্রতিবাদে ১২ জুলাই বিক্ষোভ মিছিল, অবস্থান কর্মসূচি ও মশাল মিছিল করেন শিক্ষার্থীরা। এদিন রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের সঙ্গে একাত্মতা পোষণ করে রাজশাহী প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় (রুয়েট), রাজশাহী মেডিক্যাল কলেজ (রামেক) ও রাজশাহী কলেজের শিক্ষার্থীরা ঢাকা-চাঁপাইনবাবগঞ্জ রেলপথ অবরোধ করে রাখেন।
আন্দোলনের অন্যতম সমন্বয়ক হাসনাত আবদুল্লাহ বলেন, হাইকোর্টের আংশিক রায়ে একটি বিষয় পরিষ্কার হয়েছে। হাইকোর্টের আংশিক রায়ে বলা হয়েছে, সরকার চাইলে কোটার সংস্কার করতে পারে। এ বিষয়টিই আজ স্পষ্ট হয়েছে। যদি তাই হয়, তাহলে শেকৃবিতে কেন লাঠিচার্জ করা হলো? শাবিপ্রবিতে হামলা করা হয়েছে, চবিতে নারী শিক্ষার্থীদের ওপর নারী পুলিশ হামলা করেছে, কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়ে হামলা হয়েছে, রাবিতে ভয়ভীতি দেখানো হয়েছে। মাভাবিপ্রবিসহ অনেক বিশ্ববিদ্যালয়ে হামলা করা হয়েছে। যারা হামলা করেছে তারা অতি উৎসাহী। সেই পুলিশদের বিচারের আওতায় আনতে হবে।  ২০১৮ সাল পর্যন্ত বাংলাদেশে সরকারি চাকরিতে ৫৬ শতাংশ কোটা প্রচলিত ছিল। এর মধ্যে ৩০ শতাংশ মুক্তিযোদ্ধা কোটা, ১০ শতাংশ নারী কোটা, অনগ্রসর জেলার বাসিন্দাদের জন্য ১০ শতাংশ কোটা, ক্ষুদ্র জাতিগোষ্ঠীর মানুষদের জন্য ৫ শতাংশ এবং প্রতিবন্ধীদের জন্য ১ শতাংশ আসন সংরক্ষিত ছিল। ওই বছর ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়সহ দেশের বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে কোটা সংস্কারের দাবিতে বড় বিক্ষোভ হয়। তখনও আন্দোলন দমাতে আন্দোলনকারীদের ওপর অমানবিক নির্যাতন চালায় শেখ হাসিনা সরকার, ছাত্রলীগ ও পুলিশ। এ সময় কোটা ব্যবস্থার সংস্কার করে ৫৬ শতাংশ কোটা থেকে ১০ শতাংশে নামিয়ে আনার দাবি জানিয়েছিলেন আন্দোলনকারীরা। পরে শিক্ষার্থীদের আন্দোলনের মুখে দাবি মানতে বাধ্য হয় সরকার। ফলে ওই বছরের ৪ অক্টোবর কোটা পদ্ধতি বাতিল বিষয়ক পরিপত্র জারি করে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়। এর মাধ্যমে ৪৬ বছর ধরে প্রথম ও দ্বিতীয় শ্রেণির সরকারি চাকরিতে যে কোটা ব্যবস্থার বৈষম্য ছিল, তা বাতিল হয়ে যায়। 
পরে ২০২১ সালে সেই পরিপত্রের মুক্তিযোদ্ধা কোটা বাতিলের অংশটিকে চ্যালেঞ্জ করে কয়েকজন মুক্তিযোদ্ধার সন্তান উচ্চ আদালতে রিট করেন। সেই রিটের রায়ে ২০২৪ সালের ৫ জুন পরিপত্রের ওই অংশ অবৈধ ঘোষণা করা হয়। এরপর থেকেই চাকরিপ্রত্যাশী সাধারণ শিক্ষার্থীরা ফুঁসে ওঠেন। কোটা বাতিলের দাবি জানিয়ে সঙ্গে আরও কয়েকটি দাবি যুক্ত করেন তারা। ‘বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন’ ব্যানারে ঐক্যবদ্ধ শিক্ষার্থী ও চাকরিপ্রত্যাশীরা পরিপত্র পুনর্বহালের পাশাপাশি মোট চার দফা দাবি জানান। 
দাবিগুলো হল- পরবর্তী সময়ে সরকার কোটাব্যবস্থা নিয়ে কোনো পদক্ষেপ নিতে চাইলে ২০১৮ সালের পরিপত্র বহাল সাপেক্ষে কমিশন গঠন করে দ্রুততম সময়ের মধ্যে সরকারি চাকরিতে সব গ্রেডে অযৌক্তিক ও বৈষম্যমূলক কোটা বাদ দেওয়া, সংবিধান অনুযায়ী অনগ্রসর জনগোষ্ঠীর কথা বিবেচনা করা, চাকরির নিয়োগের পরীক্ষায় কোটা সুবিধা একাধিকবার ব্যবহার করার সুযোগ বন্ধ করা ও কোটায় যোগ্য প্রার্থী না পাওয়া গেলে শূন্য পদগুলোয় মেধা অনুযায়ী নিয়োগ দেওয়া এবং দুর্নীতিমুক্ত, নিরপেক্ষ ও মেধাভিত্তিক আমলাতন্ত্র নিশ্চিত করতে কার্যকর ব্যবস্থা নেওয়া।

প্যানেল

×