ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ১২ জুলাই ২০২৫, ২৮ আষাঢ় ১৪৩২

জুলাইয়ের দিনগুলি: ১১ জুলাই

মুহাম্মদ ওমর ফারুক

প্রকাশিত: ১৮:০০, ১১ জুলাই ২০২৫

জুলাইয়ের দিনগুলি: ১১ জুলাই

ছবি: সংগৃহীত

কোটা সংস্কার আন্দোলনে অংশ নেওয়া শিক্ষার্থীদের ওপর ১১ জুলাই প্রথমবারের মতো সরাসরি সহিংসতা চালায় পুলিশ এবং নিষিদ্ধঘোষিত আওয়ামী লীগ ও ছাত্রলীগের কর্মীরা। এখন পর্যন্ত ছায়া থেকে হুমকি দিলেও, এদিন তা প্রকাশ্য সহিংসতায় রূপ নেয়।

আন্দোলন দমনে সরকারি অবস্থানও স্পষ্ট হয়ে ওঠে। সরকারের একাধিক মন্ত্রী, যেমন ওবায়দুল কাদের, আনিসুল হক, আসাদুজ্জামান খান কামাল এবং ফরহাদ আহমেদের বক্তব্যে কঠোর মনোভাব উঠে আসে। ডিএমপির অতিরিক্ত কমিশনার ড. খ. মহিদ উদ্দিন সাংবাদিক সম্মেলনে হুঁশিয়ারি দিয়ে বলেন, শিক্ষার্থীরা আন্দোলনে অংশ নিলে আইন অনুযায়ী ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

এদিন, কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়ে কোটা সংস্কার আন্দোলনে অংশ নেওয়া শিক্ষার্থীদের ওপর পুলিশ ও ছাত্রলীগের নেতা-কর্মীরা হামলা চালায়। এতে সাংবাদিকসহ অন্তত ২০ জন আহত হন। ঢাকার আগারগাঁওয়ে শেরেবাংলা কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের ওপর পুলিশের হামলায় আহত হন আরও অন্তত ১০ জন। চট্টগ্রামেও শিক্ষার্থীদের ওপর লাঠিচার্জ করে পুলিশ।

এই সহিংসতার বিরুদ্ধে প্রতিক্রিয়ায় রাজশাহীতে রেলপথ অবরোধ করে প্রতিবাদ জানায় শিক্ষার্থীরা।

শিক্ষার্থীদের ওপর হামলার প্রতিবাদে রাত ৯টার দিকে রাজধানীর শাহবাগে জরুরি সমন্বয় সভায় আন্দোলনের অন্যতম নেতা নাহিদ ইসলাম শুক্রবার (১২ জুলাই) বিকেল ৪টায় দেশের সব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে বিক্ষোভ ও সমাবেশের ঘোষণা দেন।

তিনি বলেন, “জরুরি সংসদ অধিবেশন ডেকে কোটা বাতিলের আইন পাস না করা পর্যন্ত রাজপথ ছাড়বো না।”

এর আগে বিকেল ৫টায় বৃষ্টি উপেক্ষা করে শিক্ষার্থীরা শাহবাগে জড়ো হন। পুলিশের ব্যারিকেড ভেঙে ইন্টারকন্টিনেন্টাল মোড় পর্যন্ত পৌঁছান তারা। পরে শাহবাগ মোড়ে ফিরে ‘বাংলা ব্লকেড’ কর্মসূচি চালিয়ে যান।

বিভিন্ন স্থানে অবরোধ কর্মসূচি:
সায়েন্স ল্যাব মোড়: অবরোধ করেন ঢাকা কলেজ ও ইডেন মহিলা কলেজের শিক্ষার্থীরা।

ফার্মগেট-মিরপুর সড়ক: পুলিশের বাধা উপেক্ষা করে অবরোধ, এতে পুলিশের হামলায় আহত হন শেরেবাংলা কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা।

ঢাকা-আরিচা মহাসড়ক: অবরোধ করেন জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা।

পাবনা-ঈশ্বরদী মহাসড়ক: বিক্ষোভে নামে সরকারি এডওয়ার্ড কলেজের শিক্ষার্থীরা।

সিলেট-সুনামগঞ্জ মহাসড়ক: শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের অবরোধ।

বরিশাল-কুয়াকাটা মহাসড়ক: বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের বিক্ষোভ।

খুলনা: খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা নগরীর জিরো পয়েন্টে অবস্থান কর্মসূচি পালন করেন।

এদিন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে এক প্রতিবাদ কর্মসূচিতে ছাত্রলীগ নিজেদের মধ্যে হাতাহাতিতে জড়িয়ে পড়ে, যা সামাজিক মাধ্যমে হাস্যরসে পরিণত হয়। পরে মধুর ক্যান্টিনে সংবাদ সম্মেলনে ছাত্রলীগ সভাপতি সাদ্দাম হোসেন চলমান আন্দোলনকে 'রাজনৈতিক' বলে আখ্যা দেন।

১১ জুলাই কোটা সংস্কার আন্দোলন এক নতুন মোড়ে প্রবেশ করে, যেখানে শিক্ষার্থীদের শান্তিপূর্ণ কর্মসূচির বিপরীতে সরকার ও শাসক দলের বিরুদ্ধে সহিংস দমন অভিযানের অভিযোগ স্পষ্ট হয়ে ওঠে। দেশের বিভিন্ন প্রান্তে ছড়িয়ে পড়ে শিক্ষার্থীদের প্রতিরোধ, আর দাবি একটাই—বৈষম্যহীন, যৌক্তিক কোটা সংস্কার।

 

 

 

ফারুক

×