
.
ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন আয়োজনের জন্য ডিসেম্বরের মধ্যে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীকে সার্বিক প্রস্তুতি নেওয়ার জন্য নির্দেশ দিয়েছেন অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূস।
বুধবার নির্বাচন সংক্রান্ত এক বৈঠকে এই নির্দেশনা দেন প্রধান উপদেষ্টা। রাতে রাজধানীর বেইলি রোডের ফরেন সার্ভিস একাডেমিতে আয়োজিত এক প্রেস ব্রিফিংয়ে এ তথ্য জানান প্রধান উপদেষ্টার প্রেস সচিব শফিকুল আলম। তিনি জানান, সংস্কারসহ সব প্রস্তুতি সম্পন্ন হলে আগামী রোজার আগেই ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন হতে পারে।
সংবাদ সম্মেলনে প্রধান উপদেষ্টার উপ-প্রেস সচিব আবুল কালাম আজাদ মজুমদার, অপূর্ব জাহাঙ্গীর ও সিনিয়র সহকারী প্রেস সচিব ফয়েজ আহম্মদ উপস্থিত ছিলেন।
প্রেস সচিব বলেন, প্রধান উপদেষ্টা একটু আগে (বুধবার) গুরুত্বপূর্ণ মিটিং করেছেন। সেখানে স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা, জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা, আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বিভিন্ন বাহিনীর প্রধানরা ছিলেন। তিনি বলেন, নির্বাচনের দুটি সম্ভাব্য তারিখের কথা বলা হয়েছিল। প্রধান উপদেষ্টা বলেছিলেন এপ্রিলের প্রথমার্ধে, আবার বলা হয়েছিল সব প্রস্তুতি সম্পন্ন হলে, সংস্কার হয়ে গেলে রোজার আগেই নির্বাচন হতে পারে।
শফিকুল আলম বলেন, আজকে (বুধবার) প্রায় ২ ঘণ্টার বৈঠকে নির্বাচন সংক্রান্ত আইনশৃঙ্খলা নিয়ে রিভিউ করা হয়েছে। বৈঠকে অনেক গুরুত্বপূর্ণ নির্দেশনা দিয়েছেন প্রধান উপদেষ্টা। প্রথম নির্দেশনা হচ্ছে নির্বাচনকে ঘিরে আইনশৃঙ্খলা বিষয়ক যত প্রস্তুতি আছে, ডিসেম্বরের মধ্যে সব প্রস্তুতি নিতে বলেছেন। ডিসেম্বরের মধ্যে সব প্রস্তুতি শেষ করতে বলেছেন।
শফিকুল আলম বলেন, এই প্রস্তুতির মধ্যে অনেক বিষয় আছে। যেমন-আইনশৃঙ্খলাবাহিনীতে ১৭ হাজার নতুন সদস্য নিয়োগ করা হবে। এর মধ্যে আছে পুলিশ, বিজিবি, কোস্ট গার্ড। নির্বাচনকে সামনে রেখে এই নিয়োগ দেওয়া হবে। তাদের নিয়োগ এবং প্রশিক্ষণ যাতে এই সময়ের মধ্যে শেষ হয়, সে বিষয়ে উনি (প্রধান উপদেষ্টা) নির্দেশ দিয়েছেন।
প্রেস সচিব বলেন, নির্বাচনকে সামনে রেখে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি অবনতি করার অনেক ধরনের পাঁয়তারা হয়। প্রধান উপদেষ্টা বুধবারের বৈঠকে নির্দেশ দিয়েছেন, নির্বাচনকে কেন্দ্র করে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী যাতে কঠোরভাবে আইন প্রয়োগ করে আগামী মাসগুলোতে।
শফিকুল আলম বলেন, ভোটের আগে যে কোনো ধরনের ভায়োলেন্সকে (সহিংসতা) যেন প্রতিহত করা যায় এবং ভোটের পরেও আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি যাতে ঠিক থাকে সেটা নিয়েও যথেষ্ট আলোচনা হয়েছে। নির্বাচনের আগে ডিসি, এসপি, ওসি, ইউএনওদের রদবদল করার কথা বলা হয়েছে। রিশাফলটা কীভাবে করা হবে, এটা একটা র্যান্ডম ওয়েতে করা হবে।
নির্বাচনকে কেন্দ্র করে আট লাখ আইনশৃঙ্খলা বাহিনী নিয়োজিত থাকবে জানিয়ে প্রেস সচিব বলেন, সুষ্ঠু নির্বাচনের জন্য আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সকল সদস্যকে আগামী ডিসেম্বরের মধ্যে প্রশিক্ষণ সম্পন্ন করতে হবে। তিনি জানান, নির্বাচনের সময় ১৮-৩২ বছর বয়সী ভোটারদের আলাদা বুথ রাখা যায় কি না সে বিষয় নিয়েও আলোচনা হয়েছে।
প্রেস সচিব বলেন, নির্বাচনকালীন আইনশৃঙ্খলা বাহিনী কীভাবে নামানো হবে এটা একটা ইস্যু। কোথায় কোথায় ডেপ্লয়েড হবে, আপনারা জানেন যে বর্ডার এরিয়াতে কীভাবে ডেপ্লয়মেন্ট হবে, সারা দেশের বিভিন্ন রকম ঝুঁকিপূর্ণ কেন্দ্রে কীভাবে ডেপ্লয়মেন্ট হবে, কতজন আনসার থাকবেন, কতজন পুলিশ সদস্য থাকবেন, বিজিবি বা সেনাবাহিনী কীভাবে থাকবেন, স্ট্রাইক ফোর্স হিসেবে কীভাবে থাকবেন, সেগুলো নিয়ে বৈঠকে বিস্তারিত আলোচনা হয়েছে।
তিনি আরও বলেন, অনেকে আবার নতুন ভোট দেবেন। শেখ হাসিনা আমলের তিন নির্বাচনে (২০১৪, ২০১৮, ২০২৪) তরুণরা ভোট দিতে পারেনি। ১৮ থেকে ৩২ বছর বয়সীদের জন্য পৃথক ভোটার তালিকা করা এবং তাদের জন্য নির্বাচনী কেন্দ্রগুলোতে আলাদা ভোটিং বুথ রাখার যায় কি না তা দেখতে বলেছেন প্র্রধান উপদেষ্টা। এটা অবশ্যই লজিস্টিক্যাল একটা বিষয়, সেটা যাতে তারা খতিয়ে দেখেন, এটা কীভাবে এনশিওর করা যায় তা দেখতে বলেছেন। একই সঙ্গে প্রত্যেকটি ভোটকেন্দ্র যেন সিসিটিভির আওতাভুক্ত থাকে তাও নিশ্চিত করতে বলেছেন প্রধান উপদেষ্টা।
প্যানেল মজি