ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ০৫ জুলাই ২০২৫, ২০ আষাঢ় ১৪৩২

তুরস্কে ঐতিহ্যবাহী খেলায় বাংলাদেশ এথনোস্পোর্টস ইউনিয়নের সমঝোতা চুক্তি

প্রকাশিত: ২১:৪৬, ৪ জুলাই ২০২৫

তুরস্কে ঐতিহ্যবাহী খেলায় বাংলাদেশ এথনোস্পোর্টস ইউনিয়নের সমঝোতা চুক্তি

তুরস্কের ইস্তানবুলে অবস্থিত ওয়ার্ল্ড এথনোস্পোর্টস ইউনিয়নের সদর দপ্তরে ৪ জুলাই ২০২৫ তারিখে বাংলাদেশের যুব ও ক্রীড়া মন্ত্রণালয় এবং ওয়ার্ল্ড এথনোস্পোর্টস ইউনিয়নের মধ্যে একটি সমঝোতা স্মারক (MoU) স্বাক্ষরিত হয়েছে। ঐতিহ্যবাহী খেলাধুলার উন্নয়ন ও আন্তর্জাতিকীকরণের লক্ষ্যে গৃহীত এই চুক্তিতে বাংলাদেশের পক্ষে স্বাক্ষর করেন অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের মাননীয় যুব ও ক্রীড়া উপদেষ্টা জনাব আসিফ মাহমুদ সজীব ভূঁইয়া এবং ইউনিয়নের পক্ষে স্বাক্ষর করেন সংস্থাটির প্রেসিডেন্ট জনাব নেজমুদ্দিন বিলাল এরদোয়ান।

সমঝোতা স্বাক্ষরের আগে দুই নেতার মধ্যে এক ঘনিষ্ঠ দ্বিপাক্ষিক বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়। সেখানে তাঁরা দুই দেশের সভ্যতা ও সংস্কৃতির বিকাশে ঐতিহ্যবাহী খেলাধুলার তাৎপর্য নিয়ে মতবিনিময় করেন এবং এসব লোকজ খেলাধুলা প্রসারে যৌথভাবে কাজ করার প্রত্যয় ব্যক্ত করেন।

বৈঠকে জনাব বিলাল এরদোয়ান বাংলাদেশের লোকজ ও ঐতিহ্যবাহী খেলাগুলোর—বিশেষ করে কাবাডি, কুস্তি, বলিখেলা ও নৌকা বাইচ—আন্তর্জাতিক অঙ্গনে তুলে ধরতে একযোগে কাজ করার আগ্রহ প্রকাশ করেন। তিনি এসব খেলা নিয়ে কাজ করা ফেডারেশনগুলোকে ওয়ার্ল্ড এথনোস্পোর্টস ইউনিয়নের সদস্য করার আগ্রহ জানান।

তিনি তাঁর শিক্ষা কার্যক্রমে তুরস্কের ভূমিকার কথা উল্লেখ করে বাংলাদেশের শিক্ষার্থীদের জন্য তুরস্কে শিক্ষাবৃত্তি, এক্সচেঞ্জ প্রোগ্রাম এবং বিভিন্ন বিষয়ভিত্তিক আন্তর্জাতিক প্রতিযোগিতায় অংশগ্রহণের সুযোগের প্রস্তাব দেন। একই সঙ্গে বাংলাদেশে তাঁর সংস্থার পরিচালিত স্কুলের একটি শাখা চালু করার আগ্রহ প্রকাশ করেন। ব্যক্তিগত স্মৃতিচারণে তিনি তাঁর কক্সবাজার সফরের অভিজ্ঞতার কথা তুলে ধরেন এবং রোহিঙ্গা শরণার্থী শিবিরে ঐতিহ্যবাহী খেলাধুলা প্রসারে সহায়তার আগ্রহ জানান।

তিনি আরও বলেন, প্রেসিডেন্ট রিসেপ তাইয়্যেপ এরদোয়ানের নেতৃত্বে তুরস্ক বর্তমানে নিজেদের আত্মপরিচয়, সংস্কৃতি ও জাতীয় সাফল্যের পুনরুদ্ধারে কাজ করছে এবং বাংলাদেশের জনগণের পাশে থাকার অঙ্গীকার পুনর্ব্যক্ত করেন। এ সময় তিনি ২০২৪ সালের জুলাই গণঅভ্যুত্থানে অংশগ্রহণকারী ছাত্র-জনতাকে অভিনন্দন জানান।

বৈঠকে মাননীয় উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদ বলেন, “গত বছরের গণ-অভ্যুত্থানের পর বাংলাদেশ প্রকৃত ও বিশ্বস্ত বন্ধুদের সঙ্গে সম্পর্কোন্নয়নে বিশেষ গুরুত্ব দিচ্ছে, যেখানে তুরস্ক গুরুত্বপূর্ণ অংশীদার। শতাব্দীর পর শতাব্দী ধরে সংকটকালে তুরস্ক বঙ্গীয় বদ্বীপের মানুষের পাশে দাঁড়িয়েছে।” তিনি জানান, গণ-অভ্যুত্থানের পর বাংলাদেশের তরুণদের মধ্যে রাজনীতি সচেতনতা বৃদ্ধি পেয়েছে এবং এখন তারা সভ্যতা ও সংস্কৃতির পুনর্জাগরণে আগ্রহী। তুরস্কের আদলে বাংলাদেশের অতীত ঐতিহ্য ও গৌরবকে পুনর্জীবিত করাও সময়ের দাবি বলেও উল্লেখ করেন তিনি।

তিনি গাজায় চলমান গণহত্যাসহ বিশ্বের নিপীড়িত মুসলিম জনগোষ্ঠীর পাশে দাঁড়ানোর জন্য একটি শক্তিশালী ও কার্যকর আন্তর্জাতিক জোট গঠনের আহ্বান জানান এবং জানান, এ লক্ষ্যে বাংলাদেশের সক্রিয় সমর্থন ও অংশগ্রহণ থাকবে।

বাংলাদেশের ঐতিহ্যবাহী খেলাগুলোর আন্তর্জাতিকীকরণের জন্য তিনি ওয়ার্ল্ড এথনোস্পোর্টস ইউনিয়নের সহযোগিতা কামনা করেন। উপদেষ্টা দাড়িয়াবান্ধা, কাবাডি, বলিখেলা, কুস্তি ও নৌকা বাইচের মতো খেলার প্রসারে যৌথ কর্মপরিকল্পনা গঠনের প্রস্তাব দেন।

এছাড়াও তিনি আসন্ন “গ্লোবাল ইয়ুথ সামিট ২০২৫”-এ জনাব নেজমুদ্দিন বিলাল এরদোয়ানকে বাংলাদেশ সফরের জন্য আনুষ্ঠানিক আমন্ত্রণ জানান। তিনি আশাবাদ ব্যক্ত করেন, এই সফর দুই দেশের মধ্যে যুব, ক্রীড়া ও রাজনৈতিক সহযোগিতার বন্ধন আরও সুদৃঢ় করবে।

Jahan

×