
মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর
তড়িঘড়ি করে সরকারের ‘টেলিকম নেটওয়ার্ক ও লাইসেন্সিং রিফর্ম পলিসি (নীতিমালা)-২০২৫’ ঘোষণায় উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। বৃহস্পতিবার দুপুরে বিএনপি চেয়ারপারসনের গুলশান কার্যালয়ে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে তিনি দলের পক্ষ থেকে উদ্বেগ প্রকাশ করেন। এ সময় বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. আব্দুল মঈন খান বলেন, নীতিমালা প্রণয়নে সরকার কারো মতামত নেয়নি।
ফখরুল বলেন, এই নীতিমালায় স্পষ্টভাবে বড় কোম্পানির সুবিধা বজায় রাখা হয়েছে যা প্রতিযোগিতা নয় বরং আধিপত্য বাড়বে। বড় মোবাইল কোম্পানিকে এন্টারপ্রাইজ ব্রডব্যান্ড বাজারে প্রবেশ করতে দিলে ছোট কোম্পানিগুলো প্রতিযোগিতায় পিছিয়ে পড়বে এবং একচেটিয়া পরিবেশ তৈরি হবে, যা দেশের সার্বিক অর্থনীতির ওপরও বিরূপ প্রভাব ফেলবে।
ফখরুল বলেন, বড় বড় প্রতিষ্ঠানের স্বার্থে করা বাংলাদেশ টেলিযোগাযোগ নিয়ন্ত্রণ কমিশনের (বিটিআরসি) সাম্প্রতিক ‘টেলিকম নেটওয়ার্ক ও লাইসেন্সিং রিফর্ম পলিসি-২০২৫’ এর বিষয়টি বিএনপির দৃষ্টিগোচর হয়েছে। এই উদ্যোগ প্রশংসনীয় হলেও আমরা এই মুহূর্তে এই ধরনের একটি জাতীয় গুরুত্বপূর্ণ বিষয় তড়িঘড়ি করে সিদ্ধান্ত গ্রহণ করার বিষয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করছি। খসড়া নীতিমালাটি বিশ্লেষণ করে দেখা যায়, এতে কিছু গুরুতর সমস্যা রয়েছে, যা টেলিকম খাতে সমতাভিত্তিক ও টেকসই উন্নয়ন বাধা দিতে পারে।
এটা ছোট ও মাঝারি ব্যবসা প্রতিষ্ঠান এবং স্থানীয় উদ্যোক্তাদের ক্ষতিগ্রস্ত করবে। তাই সরকারের প্রতি আহ্বান জানাই, এই গুরুত্বপূর্ণ নীতি বাস্তবায়নের আগে তারা যেন পূর্ণাঙ্গ আর্থিক ও সামাজিক প্রভাব বিশ্লেষণ এবং সংশ্লিষ্ট সব পক্ষের সঙ্গে অংশগ্রহণমূলক আলোচনা করার পর নীতিমালা চূড়ান্ত করেন।
ফখরুল বলেন, সামনে জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে বিবেচনায় রেখে এ ধরনের একটি জাতীয় গুরুত্বপূর্ণ নীতিমালা এই সময়ে একতরফাভাবে প্রণয়ন করা সমীচীন হবে না বলে বিএনপি বিশ্বাস করে।
খসড়া নীতিমালার সম্ভাব্য সমস্যা ও চ্যালেঞ্জের দিক তুলে ধরে ফখরুল বলেন, একাধিক সেবাখাতে মালিকানা রাখার নিষেধাজ্ঞা তুলে নিলে বড় মোবাইল অপারেটররা একাধিক খাতে একচেটিয়া নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠা করতে পারে। এতে প্রতিযোগিতা কমে যাবে এবং ছোট প্রতিষ্ঠানগুলো পিছিয়ে পড়বে। এসএমই-আর্থিক সংকটে পড়ার আশঙ্কা দেখা দেবে। বিশেষ করে স্থানীয় আইএসপি বা ছোট টেলিকম অপারেটরদের সম্পদ ও দায়বদ্ধতা নিয়ে সুস্পষ্ট দিকনির্দেশনা না থাকায় তারা বড় ধরনের আর্থিক সংকটে পড়তে পারে।
মির্জা ফখরুল বলেন, বিদেশি মালিকানার সীমা নিয়ে অস্পষ্টতা আছে যা বিনিয়োগ নিরুৎসাহিত করতে পারে এবং খাতের স্থিতিশীলতা বিঘিœত করতে পারে। ক্রস-ওনারশিপের ফাঁকফোকরে বড় কোম্পানিগুলো আরও বাজার দখল করে নিতে পারে। তাই আমরা সরকারকে আহ্বান জানাই, এসএমই, প্রযুক্তি বিশেষজ্ঞ, গ্রাহক সংগঠনসহ সব পক্ষকে নিয়ে খোলামেলা আলোচনা করার পর যেন এই ধরনের একটি গুরুত্বপূর্ণ নীতিমালা চূড়ান্ত করার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। সেই সঙ্গে এই প্রস্তাবিত নীতিমালার একটি পূর্ণাঙ্গ আর্থিক ও সামাজিক পরিণামও বিশ্লেষণ করা হোক। বিশেষ করে এসএমই ও স্থানীয় ব্যবসায়ীদের সম্ভাব্য ক্ষতি, কর্মসংস্থান হ্রাস এবং অর্থনীতির ওপর প্রভাব বিবেচনায় রেখে তা করা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।
বিএনপি মহাসচিব বলেন, এ ধরনের জাতীয় পর্যায়ের টেলিকম নীতি প্রণয়নে অবশ্যই সতর্কতা, স্বচ্ছতা ও অংশগ্রহণ নিশ্চিত করে নিতে হবে। সামনে জাতীয় নির্বাচন থাকায়, তাড়াহুড়ো করে সিদ্ধান্ত নেওয়া উচিত নয়। আইএসপি লাউসেন্সে একীভূত করার ফলে বড় প্রতিষ্ঠানগুলো সুবিধা পাবে। এনএসপি লাইসেন্সের স্পেকট্রামের ওপর নির্ভরতা বড় কোম্পানিগুলোকে এগিয়ে রাখবে। ফিক্সড টেলিকম লাইসেন্স খোলা থাকলেও সারাদেশে সেবা দিতে হবে এবং উচ্চমান বজায় রাখতে হবে যা এসএমইদের জন্য চ্যালেঞ্জ হয়ে দাঁড়াবে।
ফখরুল বলেন, স্যাটেলাইট ব্রডব্যান্ড বা নতুন ডিজিটাল সেবা নিয়ে নীতিতে কোনো সুস্পষ্ট দিকনির্দেশনা নেই, যা বিনিয়োগকারীদের বিভ্রান্ত করতে পারে। এন্টারপ্রাইজ সার্ভিসের সীমা অস্পষ্ট। মোবাইল অপারেটরদের ফাইবার-ভিত্তিক ব্যবসা সংযোগ সেবা কোথায় সীমাবদ্ধ তা নীতিমালায় স্পষ্ট নয়। ফলে বিবাদ ও অসাম্য তৈরি হতে পারে। তিনি বলেন, বিএনপি বিশ্বাস করে, সবার জন্য উপকার বয়ে আনে এমন নীতিই গ্রহণযোগ্য। ডিজিটাল সংযুক্তির মাধ্যমে সমতাভিত্তিক উন্নয়ন এবং জাতীয় ডিজিটাল নিরাপত্তা ও সার্বভৌমত্ব রক্ষার অঙ্গীকারেই আমরা কাজ করে যাব।
সংবাদ সম্মেলনে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. আব্দুল মঈন খান বলেন, এই নীতিমালা প্রণয়নে সরকার কারো মতামত নেয়নি। নীতিমালায় গ্রামীণ মানুষের সুফল থাকতে হবে। সরকারের চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেবার আগেই কিন্তু আমরা দেশবাসী আমাদের মতামতটা জানাতে চাই। আমরা মডার্ন টেকনোলজির বিস্তার চাই। বিএনপি চায়, টেকনোলজি সামনের দিকে যাবে কিন্তু তার সুফলটা যেন জনগণ পায়।