ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ০৩ জুলাই ২০২৫, ১৯ আষাঢ় ১৪৩২

আলোচনার কেন্দ্রে এখন সংখ্যানুপাতিক নির্বাচন

জনকণ্ঠ রিপোর্ট

প্রকাশিত: ২৩:১৪, ২ জুলাই ২০২৫

আলোচনার কেন্দ্রে এখন সংখ্যানুপাতিক নির্বাচন

সারাদেশে আলোচনার কেন্দ্রে এখন প্রাপ্ত ভোটের অনুপাত

সারাদেশে আলোচনার কেন্দ্রে এখন প্রাপ্ত ভোটের অনুপাতে সংসদে আসন বণ্টনের পদ্ধতি তথা আনুপাতিক প্রতিনিধিত্ব (পিআর) নির্বাচন। হাটে-ঘাটে-মাঠে কিংবা চায়ের দোকানে দেশবাসীর মুখে মুখে আলোচিত বাংলাদেশের জন্য অনেকটা নতুন এই নির্বোচনী ব্যবস্থা। বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী, ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ, জাতীয় নাগরিক পার্টি-এনসিপি, আমার বাংলাদেশ (এবি) পার্টি, গণঅধিকার পরিষদ, বাংলাদেশ খেলাফত মজলিশ, ইসলামী ঐক্যজোট, খেলাফত মজলিশ, নেজামে ইসলাম পার্টি, হেফাজতে ইসলামসহ কিছু রাজনৈতিক দল আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচন পিআর পদ্ধতিতে অনুষ্ঠানের বিষয়ে সোচ্চার।

অপরদিকে পরিবর্তিত প্রেক্ষাপটে দেশের সর্ববৃহৎ রাজনৈতিক দল বিএনপিসহ ফ্যাসিস্টবিরোধী যুগপৎ আন্দোলনে তাদের শরিক ও সমমনা রাজনৈতিক দলগুলো এ পদ্ধতির ঘোর বিরোধী।
পিআর পদ্ধতি এমন একটি নির্বাচনী ব্যবস্থা, যেখানে নির্বাচনের ফলাফলের ভিত্তিতে রাজনৈতিক দলগুলোর আসন সংখ্যা নির্ধারণ করা হয়। এর মূল ধারণা হলো, নির্বাচনে দলগুলো যে পরিমাণ ভোট পায়, আইনসভায় তাদের আসন সংখ্যাও সেই আনুপাতিক হারে হবে। যদি কোনো দল নির্বাচনে ২০ শতাংশ ভোট পায়, তবে আইনসভায় তাদের আসনের সংখ্যাও হবে ২০ শতাংশ। ১৮৯৯ সালে প্রথমবারের মতো বেলজিয়ামে চালু হয় পিআর পদ্ধতি। বর্তমানে বিশ্বের ১৭০টি গণতান্ত্রিক দেশের মধ্যে ৯১টি, অর্থাৎ ৫৪% দেশে, পিআরভিত্তিক নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। উন্নত দেশগুলোর সংগঠন ওইসিডির ৩৬টি দেশের মধ্যে ২৫টি, অর্থাৎ প্রায় ৭০% দেশ এই পদ্ধতি অনুসরণ করে।
গণতন্ত্রের মূল ভিত্তি হলো জনগণের মতামতের যথাযথ প্রতিফলন উল্লেখ করে পিআর পদ্ধতির পক্ষের দলগুলো বলছে, প্রচলিত ভোট পদ্ধতিতে অনেক সময় দেখা যায়, একটি দল সীমিত ভোট পেয়েও অধিকাংশ আসনে জয়ী হয়ে যায়, আর অধিক ভোট পাওয়া দলের কোনো আসনই থাকে না। এমন বৈষম্য থেকে উত্তরণের উপায় হিসেবে বিশ্বের বহু দেশ গ্রহণ করেছে প্রপোরশনাল রিপ্রেজেন্টেশন (পিআর) বা আনুপাতিক প্রতিনিধিত্বভিত্তিক নির্বাচন ব্যবস্থা। এই পদ্ধতিতে রাজনৈতিক দল বা জোট যে পরিমাণ ভোট পায়, তার আনুপাতিক হারে সংসদে আসন পায়। ফলে গড়ে ওঠে একটি ভারসাম্যপূর্ণ ও ন্যায্য প্রতিনিধিত্বমূলক সংসদ।
অপরদিকে পিআর পদ্ধতির বিরোধিতাকারী দলগুলোর ব্যাখ্যা হলো, এই পদ্ধতিতে দলগুলো প্রাপ্ত ভোটের অনুপাতে আসন পায়, যার ফলে কিছু দল অল্পসংখ্যক ভোট পেয়েও সংসদে প্রবেশ করে এবং কখনো কখনো সরকার গঠনে সিদ্ধান্তমূলক ভূমিকা নেয়। এতে শক্তিশালী সরকার গঠনের সম্ভাবনা অনেকাংশেই ব্যাহত হতে পারে, যার ফলশ্রুতিতে রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা নষ্ট হয়, জোটভিত্তিক অস্থিরতা বৃদ্ধি পায় এবং জনগণের প্রত্যক্ষ রায় দুর্বল হয়ে পড়ে। বাংলাদেশের মতো রাজনৈতিকভাবে মেরুকরণকৃত ও সংঘাতপ্রবণ সমাজে এ পদ্ধতি আরও বিভাজন, প্রতিহিংসা ও সিদ্ধান্তহীনতা ডেকে আনতে পারে বলে তাদের আশঙ্কা। 
এ ছাড়া বর্তমান পদ্ধতিতে একজন প্রার্থী একটি নির্দিষ্ট আসনের হয়ে নির্বাচনে অংশ নেন এবং যিনি সবচেয়ে বেশি ভোট পান, তিনিই নির্বাচিত হন। এর ফলে একজন জনপ্রতিনিধি ও তার এলাকার ভোটারের মধ্যে একটি সরাসরি রাজনৈতিক সম্পর্ক গড়ে ওঠে। ফলে একজন সংসদ সদস্য শুধু দলীয় আদর্শ নয়, নিজ এলাকার ভোটারের ইচ্ছা ও চাহিদার প্রতিও জবাবদিহি হতে বাধ্য হন।

অন্যদিকে পিআর পদ্ধতিতে প্রার্থীরা একটি নির্দিষ্ট এলাকার প্রতিনিধি নন, বরং তারা দলের তালিকা থেকে নির্ধারিত হন। ফলে তারা মূলত দলীয় নেতৃত্বের প্রতি দায়বদ্ধ থাকেন, জনগণের প্রতি নয়। এতে স্থানীয় সমস্যার প্রতি সংবেদনশীলতা কমে যায়, কারণ তাদের নির্বাচিত হওয়ার ভিত্তি ভোটারের সরাসরি সমর্থন নয়, বরং দলের সিদ্ধান্ত। 
এ যুক্তির বিরোধিতাকারীদের দাবি, বাংলাদেশসহ অনেক দেশে বর্তমানে প্রচলিত ‘ফার্স্ট পাস্ট দ্য পোস্ট’ (ইপিটিপি) পদ্ধতিতে যে দল বেশি আসনে জয় পায়, তারা সরকার গঠন করে, ভোটের মোট শতাংশ নয়। উদাহরণ হিসেবে তারা বলেন, ২০০১ সালের নির্বাচনে বিএনপি ৪০.৮৬% ভোট পেয়ে পেয়েছিল ১৯৩টি আসন, আর আওয়ামী লীগ ৪০.২২% ভোট পেয়ে মাত্র ৬২টি। ২০০৮ সালের নির্বাচনে আওয়ামী লীগ ৪৮.০৪% ভোট পেয়ে ২৩০টি আসন পেয়েছিল, আর বিএনপি ৩২.৫০শতাংশ ভোট পেয়ে পেয়েছিল মাত্র ৩০টি।

এমন পরিস্থিতিতে পিআর পদ্ধতি চালু থাকলে দলগুলোর প্রতিনিধিত্ব আরও ভারসাম্যপূর্ণ হতো বলে তাদের দাবি। উদাহরণ হিসেবে তারা বলছেন, উদাহরণ ধরা যাক, একটি আসনে চারটি দলের চারজন প্রার্থী প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন। একজন প্রার্থী ৩০% ভোট পেয়েছেন। বাকি তিনজন পেয়েছেন যথাক্রমে ২৮%, ২৫% এবং ২২%। এমতাবস্থায় বাকি তিনজন মিলে ৭০% ভোট পেলেও, প্রচলিত পদ্ধতিতে সেই ৩০% ভোটপ্রাপ্ত প্রার্থীই জয়ী হবে। অর্থাৎ ৭০% ভোটের কোনো কার্যকর প্রতিনিধিত্ব থাকবে না। এটা কোনোভাবেই যুক্তিযুক্ত হতে পারে না।
এদিকে পিআর পদ্ধতিতে নির্বাচন অনুষ্ঠানের দাবিতে মাঠে-ময়দানে সোচ্চার রয়েছে বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী ও ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ। জামায়াত ইতোমধ্যে নির্বাচন ভবনে প্রতিনিধি পাঠিয়ে প্রধান নির্বাচন কমিশনারের (সিইসি) সঙ্গে বৈঠক করে বলেছে, দলগতভাবে তারা জাতীয় সংসদ নির্বাচনে সংখ্যানুপাতিক পদ্ধতি চায়। পিআর পদ্ধতিতে নির্বাচনের পক্ষে জনমত সৃষ্টির জোর তৎপরতার অংশ হিসেবে সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে মহাসমাবেশ করেছে ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ।

এনসিপি স্পষ্ট ঘোষণা দিয়েছে, পিআর পদ্ধতি ছাড়া দেশে কোনো নির্বাচন করতে দেওয়া হবে না। ইসলামী আন্দোলনের মহাসমাবেশে পিআর পদ্ধতির বিরোধিতাকারী বিএনপি ও তাদের সমমনা দলগুলো ছাড়া বাকি সব দলকে বাদ দিয়ে আমন্ত্রণ জানানো হয়েছিল। এক মঞ্চে ওঠা অন্য দলগুলো হলো : বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী, জাতীয় নাগরিক পার্টি-এনসিপি, আমার বাংলাদেশ (এবি) পার্টি, গণঅধিকার পরিষদ, বাংলাদেশ খেলাফত মজলিশ, ইসলামী ঐক্যজোট, খেলাফত মজলিশ, নেজামে ইসলাম পার্টি, হেফাজতে ইসলাম, জাতীয় হিন্দু মহাজোট ও বাংলাদেশ খ্রিস্টান অ্যাসোসিয়েশন।
সংখ্যানুপাতিক প্রতিনিধিত্ব (পিআর) পদ্ধতি ছাড়া জনগণ কোনো নির্বাচন মেনে নেবে না বলে মন্তব্য করেছেন বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর সেক্রেটারি জেনারেল মিয়া গোলাম পরওয়ার। তিনি বলেন, যেনতেনভাবে একটি নির্বাচন অনুষ্ঠান করলেই গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠা পায় না, বরং সমস্যার গভীরতা আরও বাড়ে। নির্বাচনের আগে প্রশাসনিক ব্যবস্থা ঢেলে সাজাতে হবে, লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড নিশ্চিত করতে হবে এবং আওয়ামী লীগের বিচার করতে হবে। জুলাই সনদ জুলাই মাসেই ঘোষণা করতে হবে।

আসন্ন নির্বাচন শুধু একটি নির্বাচন নয়; এটি একটি বিপ্লব-পরবর্তী জনআকাক্সক্ষার প্রতিফলনের সুযোগ মন্তব্য করে তিনি বলেন, জুলাই বিপ্লবকে কোনোভাবেই ব্যর্থ হতে দেওয়া যাবে না। প্রচলিত পদ্ধতিতে নির্বাচন হলে দল ও জনগণের প্রকৃত প্রতিনিধিত্ব নিশ্চিত হবে না দাবি করে তিনি বলেন, দেশের পরিবর্তিত রাজনৈতিক প্রেক্ষাপটে নির্বাচনে কালো টাকার প্রভাব, ভোট ডাকাতি ও সন্ত্রাসমুক্ত ফ্রি-ফেয়ার নির্বাচনের স্বার্থেই এই পিআর সিস্টেমে জাতীয় নির্বাচনের প্রয়োজনীয়তা দেখা দিয়েছে।
পিআর পদ্ধতিতে নির্বাচন আয়োজন করার কোনো বিকল্প নেই মন্তব্য করে ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের আমির মুফতি সৈয়দ মুহাম্মদ রেজাউল করিম (চরমোনাই পীর) বলেন,  দেশের সব মানুষের ভোটের দাম সমান। কারও ভোট যাতে অবমূল্যায়ন না হয়, সেই ব্যবস্থা করতে হবে। তাই আগামী নির্বাচনে সংসদের উভয় কক্ষে অবশ্যই পিআর পদ্ধতিতে নির্বাচন দিতে হবে। যে দল যত শতাংশ ভোট পাবে, সংসদে তাদের সেই অনুপাতে আসন থাকবে। এই পদ্ধতিতে রাষ্ট্র পরিচালনায় সবার মতের প্রতিফলন ঘটবে। কোনো দল জালেম হওয়ার সুযোগ পাবে না। এটা জেন-জির দাবি। এটা এখন জনগণের দাবি। দেশের অধিকাংশ রাজনৈতিক দলের দাবি।  
এদিকে সংখ্যানুপাতিক হার (পিআর) পদ্ধতিতে নির্বাচনের ঘোরবিরোধী দেশের সর্ববৃহৎ রাজনৈতিক দল বিএনপিসহ ফ্যাসিস্টবিরোধী যুগপৎ আন্দোলনে তাদের শরিক ও সমমনা রাজনৈতিক দলগুলো। তাদের মতে, যেসব দলের জনপ্রিয়তা খুবই কম এবং জনগণের সরাসরি ভোটে নির্বাচনে পাস করে আসার সম্ভাবনা নেই, তারাই ছলনার আশ্রয়ে সংসদে যাওয়ার জন্য এই সংখ্যানুপাতিক হারে নির্বাচনের দাবি তুলছে; যা বাংলাদেশের নির্বাচন, ভোট ও রাজনৈতিক সংস্কৃতিতে একেবারেই অবাস্তব।
বিএনপি স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. আবদুল মঈন খান বলেছেন, যদি পিআর পদ্ধতি হয়, সেখানে জনগণ দলকে ভোট দেবে। কিন্তু তারা জানবে না যে তাদের প্রার্থী কে, কে এমপি হবেন। তা হলে তারা কীভাবে সঠিকভাবে ভোট দেবে? ভোট পাওয়ার পর দল সিলেকশন করবে কাকে এমপি বানাবে। তা হলে সেখানে জনগণের প্রতিনিধিত্ব কীভাবে হলো? পিআর ইস্যু নিয়ে দ্বন্দ্ব সৃষ্টিকারীরা দেশের আদর্শে বিশ্বাসী নয় মন্তব্য করে তিনি বলেন, তারা নিজের আদর্শে বিশ্বাস করে, তাদের নিজেদের দলীয় আদর্শে বিশ্বাস করে। 
বাংলাদেশে সংখ্যানুপাতিক প্রতিনিধিত্ব পদ্ধতিতে নির্বাচনের ইতিহাস নেই উল্লেখ করে সালাহউদ্দিন আহমদ বলেন, আনুপাতিক নির্বাচন এ দেশের জন্য প্রযোজ্য নয়। যেখানে প্রযোজ্য, সেখানেও অনেক জটিল অবস্থা। এমন নির্বাচনের ক্ষেত্রে সংশ্লিষ্ট আসনের ভোটাররা জানবেন না, কে তাঁদের এমপি হবেন। এমপিদের কাছে তারা যে যাবেন, নির্ধারিত কোনো ব্যক্তিকে খুঁজে পাবেন না। তিনি বলেন, যারা সংখ্যানুপাতিক প্রতিনিধিত্ব (পিআর) পদ্ধতিতে জাতীয় সংসদ নির্বাচনের কথা বলছেন, তারা একটি উদ্দেশ্য সামনে রেখেই এমনটি বলছেন। হয় নির্বাচন বিলম্বিত করা, না হয় বাংলাদেশে নির্বাচন না হওয়া। এটা তাদের উদ্দেশ্য হতে পারে। 
পিআর পদ্ধতিতে নির্বাচন চাওয়া দলগুলোর সমালোচনা করে বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান ড. আসাদুজ্জামান রিপন বলেন, তাদের মাথায় কী আছে আল্লাহ জানেন। তারা পুরো পরিস্থিতি নিয়ে হ-য-ব-র-ল করার তালে আছে। তারা নির্বাচন বিলম্বিত করতে ষড়যন্ত্র করছে। কারণ, অনেক রাজনৈতিক দলের ৩০০ আসনে মনোনয়ন দেওয়ার লোক নেই। 
নাগরিক ঐক্যের সভাপতি মাহমুদুর রহমান মান্না বলেন, আমরা আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনে পিআর পদ্ধতি চাই না। বিশেষ করে নি¤œকক্ষের নির্বাচনে পিআর বাস্তবতার সঙ্গে মানায় না।
পিআর পদ্ধতি ছাড়া নির্বাচন হতে দেওয়া হবে না জানিয়ে এনসিপির সদস্য সচিব আখতার হোসেন বলেন, উচ্চকক্ষে সংখ্যানুপাতিক পদ্ধতিতে প্রতিনিধিত্ব নির্বাচনের প্রস্তাবে ইতোমধ্যে প্রায় সব দল একমত হয়েছে; কিন্তু দুয়েকটি দলের কারণে এটি করা সম্ভব হচ্ছে না। তার দাবি বাংলাদেশকে নতুন কাঠামোতে পরিচালিত করতে হলে অবশ্যই পিআর পদ্ধতি নিয়ে ভাবতে হবে। তিনি বলেন, নির্বাচনের আগের কাঠামো অবশ্যই পরিবর্তন করতে হবে। নতুন বাংলাদেশ নতুন সিস্টেম পরিচালিত হবে। মুজিববাদ আর চলতে পারে না। দখলদার ও চাঁদাবাজদের জায়গা বাংলাদেশে আর হবে না। 
গণঅধিকার পরিষদের সভাপতি নুরুল হক নূর বলেন, সংখ্যানুপাতিক হারে নির্বাচনের দাবিতে কয়েকটি দল ব্যতীত আজকে সব দল একত্র হয়েছে। সবেমাত্র পিআর পদ্ধতিতে নির্বাচনের দাবিতে সমাবেশ শুরু হয়েছে। এরপর অন্য দল রাজপথে নামবে। দু-একটি দলের কথায় সংস্কার নকশায় পরিবর্তন আনা যাবে না। সংস্কার কমিশনের প্রতি আহ্বান জানাব, তারা যেন একটি দলকে প্রধান্য না দেয়।
এবি পার্টির চেয়ারম্যান মজিবুর রহমান মঞ্জু বলেন, রাষ্ট্রক্ষমতা ও শাসন পদ্ধতির ভারসাম্য আনার লক্ষ্যেই আমরা পিআর পদ্ধতিতে নির্বাচন দাবি দাবি করছি। বাংলাদেশে ভবিষ্যতে যাতে আর কোনো স্বৈরশাসনের উৎপত্তি না ঘটে, সেটিও নিশ্চিত হবে এই পদ্ধতির নির্বাচনে।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক কাজী মোহাম্মদ মাহবুবুর রহমান বলেন, কে কী চাচ্ছে বা না চাচ্ছে তার চেয়ে বড় বিষয় হচ্ছে বাংলাদেশের কনটেকস্ট। আমাদের দেখতে হবে আনুপাতিক পদ্ধতি বাংলাদেশের প্রেক্ষাপটে যায় কি না। কেননা, যেসব দেশে পিআর পদ্ধতি চালু আছে, সেখানে মূলত যুক্তরাষ্ট্রীয় শাসন ব্যবস্থা। বাংলাদেশে এককেন্দ্রিক শাসন ব্যবস্থা বিদ্যমান। এখানে আঞ্চলিক রাজনীতির কোনো প্রভাব নেই। আঞ্চলিক দলও নেই। এ অবস্থায় পিআর পদ্ধতিতে কী লাভ হবে?

এদিকে, পিআর পদ্ধতিতে নির্বাচন ব্যবস্থা চালুর বিষয়ে ঐকমত্য তৈরির বিষয়ে এখনো হাল ছাড়েনি রাষ্ট্রপক্ষ। জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের সহসভাপতি আলী রীয়াজ এ বিষয়ে  বলেন, জাতীয় সংসদ নির্বাচনে সংখ্যানুপাতিক প্রতিনিধিত্ব (পিআর) পদ্ধতি চালুর বিষয়ে অধিকাংশ রাজনৈতিক দল একমত হয়েছে। তবে কয়েকটি দল এ নিয়ে সুস্পষ্ট আপত্তি জানিয়েছে। যেসব দল এখনো সম্মতি দেয়নি, আমরা তাদের পুনর্বিবেচনার অনুরোধ করেছি। আশা করছি, তারা বিষয়গুলো আরও একবার ভাববেন এবং শেষ পর্যন্ত আমরা জাতীয় ঐকমত্যে পৌঁছতে পারব।

×