ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ১৪ জুন ২০২৫, ৩১ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩২

ড. ইউনূস-তারেক বৈঠকে ঐকমত্য

রমজানের আগেই হতে পারে নির্বাচন

জনকণ্ঠ রিপোর্ট

প্রকাশিত: ২৩:০২, ১৩ জুন ২০২৫

রমজানের আগেই হতে পারে নির্বাচন

প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূসের সঙ্গে শুক্রবার লন্ডনের হোটেল ডরচেস্টারে বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান বৈঠক করেন

অবশেষে জাতীয় সংসদ নির্বাচনের সময় নিয়ে অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের সঙ্গে বিএনপির টানাপোড়েনের অবসান হয়েছে। শুক্রবার লন্ডনের ডরচেস্টার হোটেলে সরকারের প্রধান উপদেষ্টা প্রফেসর ড. মুহাম্মদ ইউনূসের সঙ্গে বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের দেড় ঘণ্টাব্যাপী বৈঠকে এই ঐকমত্য হয়। তারেক রহমান আগামী বছরের রমজানের আগে নির্বাচন আয়োজনের প্রস্তাব করেন। এ সময় ড. ইউনূস বলেন, সকল প্রস্তুতি সম্পন্ন করা গেলে ২০২৬ সালের  রমজান শুরু হওয়ার আগের সপ্তাহেও নির্বাচন আয়োজন করা যেতে পারে। সেক্ষেত্রে সেই সময়ের মধ্যে সংস্কার ও বিচারের বিষয়ে পর্যাপ্ত অগ্রগতি অর্জন করা প্রয়োজন হবে। বৈঠকে জুলাই সনদ ঐকমত্যের ভিত্তিতে হবে বলেও উভয়পক্ষ সম্মত হয়। ফলে নির্বাচনের ট্রেনে এখন বাংলাদেশ এমনটাই মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা।
উল্লেখ্য, ঈদুল আজহার আগে জাতির উদ্দেশে দেওয়া ভাষণে প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস জানান,  ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন ২০২৬ সালের এপ্রিল মাসের প্রথমার্ধে অনুষ্ঠিত হতে পারে। প্রধান উপদেষ্টার মুখে এই ঘোষণা শুনে চরম ক্ষুব্ধ হয় বর্তমানে দেশের সবচেয়ে বড় রাজনৈতিক দল বিএনপি। কারণ বিএনপি আগে থেকেই চলতি বছর ডিসেম্বরের মধ্যেই নির্বাচনের দাবি জানিয়ে আসছে। এ পরিস্থিতিতে লন্ডনে প্রফেসর ড. মুহাম্মদ ইউনূস ও তারেক রহমানের মধ্যে অনুষ্ঠিত বৈঠকে নির্বাচনের সময় নিয়ে ঐকমত্যে আসে উভয়পক্ষ।
শুক্রবার লন্ডনের ডরচেস্টার হোটেলে অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের প্রধান উপদেষ্টা প্রফেসর ড. মুহাম্মদ ইউনূসের সঙ্গে বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের এক ঘণ্টাব্যাপী বৈঠক শুরু হয় স্থানীয় সময় সকাল ৯টায় (বাংলাদেশ সময় বেলা ২টায়)। আর বৈঠক শেষ হয় স্থানীয় সময় সকাল সাড়ে ১০টায় (বাংলাদেশ সময় বিকেল সাড়ে ৩টায়)। এর মধ্যে ড. ইউনূস ও তারেক রহমানের মধ্যে আধাঘণ্টা বৈঠক হয়। বৈঠকের পর দেওয়া যৌথ বিবৃতিতে ২০২৬ সালে রোজা শুরুর এক সপ্তাহ আগে ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন হতে পারে বলে আভাস দেওয়া হয়। যৌথ বিবৃতিতে জানানো হয়, শুক্রবার বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান লন্ডনে সফররত প্রধান উপদেষ্টা প্রফেসর ড. মুহাম্মদ ইউনূসের সঙ্গে সাক্ষাৎ করেন। অত্যন্ত সৌহার্দ্যমূলক পরিবেশে তাদের বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়। বৈঠকে আগামী জাতীয় নির্বাচন নিয়ে আলোচনা হয়েছে। তারেক রহমান প্রধান উপদেষ্টার  কাছে আগামী বছরের রমজানের আগে নির্বাচন আয়োজনের জন্য প্রস্তাব করেন। তিনি বলেন, দলের চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়াও মনে করেন ওই সময় নির্বাচন অনুষ্ঠিত হলে ভালো হয়। প্রধান উপদেষ্টা বলেন, তিনি আগামী বছরের এপ্রিলের প্রথমার্ধের মধ্যে নির্বাচন অনুষ্ঠানের ঘোষণা দিয়েছেন। সকল প্রস্তুতি সম্পন্ন করা গেলে ২০২৬ সালের রমজান শুরু হওয়ার আগের সপ্তাহেও নির্বাচন আয়োজন করা যেতে পারে। সেক্ষেত্রে সেই সময়ের মধ্যে সংস্কার ও বিচারের বিষয়ে পর্যাপ্ত অগ্রগতি অর্জন করা প্রয়োজন হবে। তারেক রহমান প্রধান উপদেষ্টার এই অবস্থানকে স্বাগত জানান এবং দলের পক্ষ থেকে তাকে ধন্যবাদ জ্ঞাপন করেন। প্রধান উপদেষ্টাও তারেক রহমানকে ফলপ্রসূ আলোচনার জন্য ধন্যবাদ জানান। ড. ইউনূসের সঙ্গে বৈঠক শেষে সকাল সাড়ে দশটায় সেন্ট্রাল লন্ডনের পার্ক লেনের ডরচেস্টার হোটেল থেকে হাস্যোজ্জ্বল মুখে বেরিয়ে আসেন তারেক রহমান। এ সময় হোটেলের বাইরে অপেক্ষমাণ বিপুল সংখ্যক বিএনপি নেতাকর্মী উচ্চৈঃস্বরে স্লোগান দিয়ে তারেক রহমানকে স্বাগত জানান। বৈঠক শেষে যৌথ বিবৃতি দেওয়ার পাশাপাশি যৌথ সংবাদ সম্মেলনও অনুষ্ঠিত হয়। এতে ড. উউনূস ও তারেক রহমানের সঙ্গে বৈঠকে থাকা জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা ড. খলিলুর রহমান এবং বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী বক্তব্য রাখেন। এ সময় আরও উপস্থিত ছিলেন বৈঠকে উপস্থিত থাকা প্রধান উপদেষ্টার প্রেস সচিব শফিকুল আলম ও বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যানের আন্তর্জাতিক বিষয়ক উপদেষ্টা হুমায়ুন কবির। বৈঠকে শুধু নির্বাচন নিয়ে আলাপ হয়েছে, নাকি রাজনৈতিক অন্যান্য বিষয়েও কথা হয়েছে জানতে চাইলে আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী বলেন, সব বিষয়ে আলোচনা হওয়া স্বাভাবিক। আমরা নতুন বাংলাদেশ গড়ার প্রত্যয় নিয়ে সামনের দিকে এগোচ্ছি। আমরা চাই দেশ গড়ার যে প্রত্যয় আমরা নিয়েছি আমরা ঐক্যবদ্ধভাবে সেই কাজটি করব। শুধু নির্বাচনের আগে নয়, নির্বাচনের পরেও বাংলাদেশ গড়ার যে প্রত্যয় নিয়ে আমরা সবাই ঐকমত্য হয়েছি তা সামনের দিকে এগিয়ে নিয়ে যেতে চাই। সংস্কার নিয়ে বর্তমান সরকার যে রূপরেখার তালিকা দিয়েছে সেটি নিয়ে বিএনপি কী ভাবছে জানতে চাইলে আমীর খসরু বলেন- এটা পরিষ্কার, এখানে না বোঝার কোনো কারণ নেই। সংস্কার নিয়ে প্রধান উপদেষ্টা সাহেব, তারেক রহমান সাহেব সবাই একই কথা বলছেন। যে বিষয়ে ঐকমত্য হবে সেগুলোতেই তো সংস্কার হবে। সংস্কারের বিষয়টি চলমান প্রক্রিয়া। এমন না যে, সব সংস্কার এখনই শেষ হয়ে যাবে। নির্বাচনের আগে কিছু সংস্কার হবে, নির্বাচনের পরেও কিছূ সংস্কার অব্যাহত থাকবে।
তারেক রহমানের দেশে ফেরা নিয়ে বৈঠকে কোনো আলোচনা হয়েছে কি না জানতে চাইলে আমীর খসরু বলেন, তারেক রহমানের দেশে ফেরা নিয়ে প্রধান উপদেষ্টার সঙ্গে কথা বলার কোনো প্রয়োজনীয়তা আছে বলে তিনি মনে করেন না। তিনি বলেন, তারেক রহমান যে কোনো সময় দেশে ফিরতে পারেন। সুতরাং এটার সিদ্ধান্ত উনি নেবেন সময়মতো। জুলাই সনদ নিয়ে ড. ইউনূস ও তারেক রহমানের  বৈঠকে কোনো আলাপ হয়েছে কি না জানতে চাইলে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য আমীর খসরু বলেন, জুলাই সনদ নিয়ে ইতোমধ্যে আলোচনা চলছে দেশে। এ বিষয়ে আমাদের মধ্যে ইতোমধ্যে সিদ্ধান্ত হয়েছে ঐকমত্যের ভিত্তিতে জুলাই সনদ হবে এবং সংস্কারের বিষয়েও আমাকে একই উত্তর দিতে হয়, ঐকমত্যের ভিত্তিতে সংস্কার এবং জুলাই সনদ হবে। অল্প সময়ের মধ্যেই এটি হবে। এ সময় এক প্রশ্নের জবাবে ড. খলিলুর রহমান বলেন, নির্বাচনের তারিখ ঘোষণা করতে কোনো সমস্যা নেই। আমরা কোনো সমস্যা দেখি না। কেউ দেখলে ভুল দেখছেন। নির্বাচন সম্পর্কে যৌথ বিবৃতিতে আমরা বলে দিয়েছি এবং নির্বাচন কমিশনের (ইসি) কাছে আমরা আশা করব শীঘ্রই তারা একটা তারিখ ঘোষণা করবে। এপ্রিলের ঘোষিত নির্বাচনী রূপরেখা থেকে অন্তর্বর্তী সরকার সরে আসছে কি না জানতে চাইলে নিরাপত্তা উপদেষ্টা বলেন, যৌথ বিবৃতিতে এ বিষয়টা সুস্পষ্ট বলা আছে। যদি সব কাজ আমরা সময়মতো করতে পারি, বিচার ও সংস্কারের ব্যাপারে পর্যাপ্ত অগ্রগতি হয় তাহলে নিশ্চয় সেটা করা হবে। প্রধান উপদেষ্টা ড. মোহম্মদ ইউনূস এবং বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের মধ্যে অনুষ্ঠিত বৈঠক নিয়ে উভয়পক্ষই সন্তোষ প্রকাশ করেছে কি না জানতে চাইলে তিনি বলেন, নিশ্চয়ই সন্তুষ্ট। আমরা তো বলছি, নির্বাচনের আগেই না, নির্বাচনের পরেও দেশ গড়ার ক্ষেত্রে আমরা সবাই একসঙ্গে কাজ করব। আর সন্তুষ্ট না হলে যৌথ ঘোষণা আসত না। অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের প্রধান উপদেষ্টা প্রফেসর ড. মুহাম্মদ ইউনূসের সঙ্গে বৈঠক শুরুর আগে বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান প্রধান উপদেষ্টাকে ২টি বই ও একটি কলম উপহার দেন। প্রধান উপদেষ্টার প্রেস সচিব শফিকুল আলম সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকে দেওয়ার এক পোস্টে এ কথা জানিয়েছেন। শফিকুল আলমের পোস্ট করা ছবিতে দেখা গেছে উপহার দেওয়া ২টি বই হলো তরুণ পরিবেশকর্মী গ্রেটা থুনবার্গের লেখা ‘নো ওয়ান ইজ টু স্মল টু মেক এ ডিফারেন্স’ এবং মোনা আরশি ও ক্যারেন ম্যাকক্যার্থি উফ সম্পাদিত ‘ন্যাচার ম্যাটার্স’। এছাড়া ওয়াটারম্যান ব্র্যান্ডের এক্সপার্ট বলপয়েন্টও প্রধান উপদেষ্টাকে উপহার দিয়েছেন তারেক রহমান। এ সময় দুই নেতাকে হাস্যোজ্জ্বল দেখা যায়।

প্যানেল

আরো পড়ুন  

×