ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ০৯ মে ২০২৫, ২৬ বৈশাখ ১৪৩২

আপনার সন্তান কি নার্সিসিস্টি হয়ে উঠছে? আচরণে লক্ষ রাখুন এই বিপজ্জনক সংকেতগুলো

প্রকাশিত: ১২:৫০, ৯ মে ২০২৫; আপডেট: ১২:৫২, ৯ মে ২০২৫

আপনার সন্তান কি নার্সিসিস্টি হয়ে উঠছে? আচরণে লক্ষ রাখুন এই বিপজ্জনক সংকেতগুলো

শিশুদের ব্যক্তিত্ব গঠন হয় তাদের শৈশব থেকেই। এই সময়ে তাদের আচরণ, মনোভাব এবং আচরণগত প্রবণতাগুলি একে অপরকে প্রভাবিত করে এবং তাদের ভবিষ্যত জীবনে একটা দীর্ঘস্থায়ী প্রভাব সৃষ্টি করে। তবে কখনও কখনও, শিশুদের মধ্যে এমন কিছু আচরণ লক্ষ্য করা যায় যা ভবিষ্যতে তাদের Narcissistic Personality Disorder (NPD) বা ‘নার্সিসিস্টিক পার্সোনালিটি ডিসঅর্ডার’-এর লক্ষণ হতে পারে। এই মানসিক অবস্থা শিশুদের আস্থা ও আত্মবিশ্বাসের পরিবর্তে তাদের অহংকার এবং স্বার্থপরতা সৃষ্টি করতে পারে, যা তাদের সম্পর্ক এবং সামাজিক জীবনকে প্রভাবিত করতে পারে।


নার্সিসিস্টিক পার্সোনালিটি ডিসঅর্ডার কী?

Narcissistic Personality Disorder, বা NPD, একটি মানসিক অবস্থা যেখানে একটি ব্যক্তির অতিরিক্ত আত্মমর্যাদা, অন্যদের প্রতি উপেক্ষা এবং প্রশংসার জন্য তীব্র আকাঙ্ক্ষা থাকে। একজন নার্সিসিস্ট সাধারণত নিজের থেকে অন্যদের অনুভূতি বা চাহিদাকে অগ্রাহ্য করে এবং সবসময় তার নিজের প্রয়োজনের প্রতি বেশি মনোযোগী থাকে। তারা বিশ্বাস করে যে তারা বিশেষ, এক ধরনের উচ্চস্থান অধিকারী এবং তাদের সকল কার্যক্রমে তারা অন্যদের তুলনায় বেশি গুরুত্বপূর্ণ।

এটি শুধুমাত্র একজন প্রাপ্তবয়স্কের সমস্যা নয়, শিশুরাও এ ধরনের লক্ষণ দেখাতে পারে। নার্সিসিস্টিক পার্সোনালিটি শিশুরা সাধারণত শুরুতেই নিজেদের বিশেষ ভাবতে শুরু করে, যেখানে অন্যদের অনুভূতি বা চাহিদা তাদের কাছে অগুরুত্বপূর্ণ হয়ে দাঁড়ায়। সময়মতো এর চিকিৎসা এবং প্রতিকার না করা হলে, এটি তাদের ভবিষ্যত জীবনেও বড় ধরনের সমস্যা সৃষ্টি করতে পারে, বিশেষ করে সামাজিক সম্পর্ক এবং আত্মবিশ্বাসের ক্ষেত্রে।


শৈশব থেকেই লক্ষণগুলি দেখা দিতে পারে

শিশুর মধ্যে নার্সিসিস্টিক আচরণ শুরু হয় শৈশব থেকেই, এবং বাবা-মায়ের মধ্যে এটি লক্ষ্য করা অত্যন্ত জরুরি। শিশুর মধ্যে কিছু আচরণ যদি অনিয়ন্ত্রিত থাকে, তবে তার মানসিক বিকাশে অযাচিত পরিবর্তন ঘটতে পারে। প্রাথমিক কিছু লক্ষণ হলো নিজের প্রয়োজন বা চাহিদাকে সবসময় প্রথমে রাখা, অন্যান্য শিশুদের প্রতি সহানুভূতির অভাব, ভুল করলে দায় স্বীকার না করা, এবং নিজের জন্য সর্বোচ্চ গুরুত্ব চাওয়া। এমন শিশুরা প্রায়ই নিজেদের বিশেষ হিসেবে দেখাতে চায় এবং অন্যদের থেকে আলাদা থাকতে চায়।

এছাড়া, এই শিশুরা কখনও কখনও অতিরিক্ত প্রশংসা পাওয়ার জন্য সবকিছু করতে পারে। তারা চায়, অন্যরা তাদের সর্বোচ্চ মূল্যায়ন করুক এবং তাদের সম্পর্কে প্রশংসাসূচক মন্তব্য করুক। কিন্তু যখন তাদের সেই প্রশংসা বা মনোযোগ না পাওয়া যায়, তখন তারা হতাশ, ক্রুদ্ধ বা বিমুখ হয়ে যায়।


নার্সিসিস্টিক পার্সোনালিটি ডিসঅর্ডারের প্রভাব

শিশুর মধ্যে নার্সিসিস্টিক আচরণ যদি নিয়ন্ত্রণ না করা হয়, তবে তা তাদের মানসিক এবং সামাজিক জীবনে বিরূপ প্রভাব ফেলতে পারে। ভবিষ্যতে, এই শিশুরা বন্ধুদের সাথে সম্পর্ক গড়ে তুলতে অসুবিধা অনুভব করবে, কারণ তারা সবসময় নিজেদেরই সেরা মনে করবে এবং অন্যদের অনুভূতিতে আগ্রহী হবে না। পরিবারে, বন্ধুদের মাঝে, স্কুলে এবং কর্মজীবনে তাদের হতাশা এবং একাকীত্ব বাড়তে পারে।

এছাড়া, এমন শিশুরা যে কোনো ধরনের সমালোচনাকে অত্যন্ত নেতিবাচকভাবে গ্রহণ করতে পারে। তাদের মনে থাকে যে, তারা সেরা এবং অন্যদের তুলনায় শ্রেষ্ঠ, ফলে পরবর্তীতে বড় হওয়ার পর তারা সামাজিকভাবে একাকী হয়ে পড়তে পারে এবং সঠিক মূল্যায়ন বা সম্পর্ক স্থাপন করতে অসুবিধা হতে পারে।

কীভাবে সাহায্য করবেন?

আপনার সন্তানের মধ্যে যদি এমন আচরণের লক্ষণ দেখতে পান, তবে দ্রুত পদক্ষেপ নেওয়া অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। প্রথমত, তাকে সঠিক দিকনির্দেশনা দিয়ে তার ভুল আচরণ সংশোধন করার চেষ্টা করুন। তাকে বুঝিয়ে দিন যে, তার সাফল্য অন্যদের সাথে সহানুভূতির মাধ্যমে আরও বেশি প্রসারিত হতে পারে। তার ভালো আচরণে প্রশংসা করুন, তবে সেই প্রশংসা যেন সীমিত হয়, যাতে সে অহংকার না করতে শিখে।

এছাড়া, তার মধ্যে সহানুভূতি, দয়ার অনুভূতি এবং অন্যদের প্রতি সম্মান গড়ে তুলতে সাহায্য করুন। তার মাঝে এক ধরনের সুস্থ আত্মবিশ্বাস তৈরি করতে হবে, যাতে সে বুঝতে পারে যে, পৃথিবী তার চারপাশেই ঘুরে না, বরং এটি সবাইকে নিয়ে একটি সমষ্টিগত পৃথিবী।

উপসংহার:

শিশুর মধ্যে নার্সিসিস্টিক আচরণ অতি প্রাথমিকভাবে লক্ষ করা সম্ভব, এবং এটি তাদের ভবিষ্যত জীবনে প্রভাব ফেলতে পারে। তবে, যদি সময়মতো সচেতনতা এবং সহায়তা প্রদান করা হয়, তবে শিশুর মানসিক স্বাস্থ্য এবং সামাজিক সম্পর্ক সুন্দরভাবে বিকশিত হতে পারে। বাবা-মায়ের সচেতনতা এবং সঠিক দিকনির্দেশনা শিশুর জন্য সঠিক পথ দেখাতে পারে, যা তার জীবনে সুস্থ আত্মবিশ্বাস এবং সমৃদ্ধ সম্পর্ক গড়ে তুলতে সাহায্য করবে।

এটি একটি মানসিক অবস্থার সমস্যা, এবং কোনো শিশুর নার্সিসিস্টিক পার্সোনালিটি ডিসঅর্ডার হয়ে যাওয়া প্রতিরোধ করা সম্ভব যদি প্রতিটি বাবা-মা প্রাথমিকভাবে চিন্তা করেন এবং তাদের সন্তানদের প্রতি সম্যক দৃষ্টিভঙ্গি রাখেন।

 

 


সূত্র:https://tinyurl.com/ya938nua

আফরোজা

×