ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৪ অক্টোবর ২০২৪, ৯ কার্তিক ১৪৩১

জনাকীর্ণ সংবাদ সম্মেলনে প্রধানমন্ত্রী

হাসিনা দেশ বিক্রি করে না

বিশেষ প্রতিনিধি

প্রকাশিত: ২৩:৫২, ২৫ জুন ২০২৪

হাসিনা দেশ বিক্রি করে না

গণভবনে ভারত সফর নিয়ে সংবাদ সম্মেলনে হাস্যোজ্জ্বল প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা

ভারতকে রেলপথে ট্রানজিট সুবিধা দেওয়া নিয়ে সমালোচনার জবাবে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, আমি জাতির পিতার কন্যা, অন্তত এই জায়গাটায় কেউ আসতে পারবে না। এটাই আমার বড় গর্ব। শেখ হাসিনা দেশ বিক্রি করে না, দেশের স্বার্থও বেচে না। বরং দেশের স্বার্থ রক্ষা করেই চলি। আমরা এদেশ স্বাধীন করেছি। এতে যে কষ্ট ভোগ করেছি, সেটা আমরা জানি। যারা বিক্রির কথা বলে, তারা একাত্তরে পাকিস্তানের দালালি করেছে। তারা নিজেরাই দেশ বিক্রি করতে চায়।
ভারত ও চীনের সঙ্গে সম্পর্ক নিয়ে সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে প্রধানমন্ত্রী বলেন, কেউ মনে করল এদিকে ঝুঁকলাম নাকি ওইদিকে ঝুঁকলাম। এই ঝোঁকাঝুঁকির ব্যাপার আমার নেই। আমার সকলের সঙ্গে বন্ধুত্ব, কারও সঙ্গে বৈরিতা নেই। আমাকে অনেকেই জিজ্ঞেস করে, এমনকি বিদেশেও অনেকেই বলে, আপনি কীভাবে ব্যালেন্স করেন? আমি বলি ব্যালেন্স কোনো কথা না। তাদের দুই দেশের (ভারত ও চীন) মধ্যে কী সম্পর্ক, সেটা তাদের ব্যাপার। আমি সেখানে নাক গলাই না। আমি সবার সঙ্গে বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক রেখে দেশের উন্নয়নে কাজ করে যাচ্ছি। এটা নিয়ে দুশ্চিন্তার কিছু নেই।

মঙ্গলবার তাঁর সরকারি বাসভবন গণভবনে সাম্প্রতিক দুদিনের ভারত সফর বিষয়ে আয়োজিত জনাকীর্ণ সংবাদ সম্মেলনে প্রধানমন্ত্রী এসব কথা বলেন। আলোচিত তিস্তা পরিকল্পনা নিয়ে এক প্রশ্নের জবাবে প্রধানমন্ত্রী বলেন, তিস্তা মহাপরিকল্পনা প্রকল্প বাস্তবায়নে দেশ ও জনগণের উন্নতির জন্য যে প্রস্তাব বেশি লাভজনক ও জনগণের জন্য কল্যাণকর হবে তা তিনি গ্রহণ করবেন। 
তিনি বলেন, আমরা তিস্তা প্রকল্প নিয়েছি। প্রকল্প বাস্তবায়নের জন্য চীন ও ভারত আলাদা আলাদা প্রস্তাব দিয়েছে। আমাদের দেশের জনগণের জন্য যে প্রস্তাবটি অধিক লাভজনক ও উপযোগী হবে সেটাই আমরা গ্রহণ করব। আর ভারত বাংলাদেশের কাছে খুবই গুরুত্বপূর্ণ কেননা একাত্তরে বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধে মুক্তিযোদ্ধাদের সঙ্গে তারাও বুকের তাজা রক্ত ঢেলে দিয়েছে। অন্যদিকে চীন কীভাবে তাদের দেশকে উন্নত করেছে সে সম্পর্কে তাদের কাছ থেকে শেখার আছে। আমরা সমস্ত দিক বিবেচনা করেই সম্পর্ক বজায় রাখি। 
ভারত সফর নিয়ে এ সংবাদ সম্মেলনের আয়োজন করা হলেও সাংবাদিকদের প্রশ্নোত্তর পর্বে দেশের সমসাময়িক রাজনীতি ও আর্থ-সামাজিক পরিস্থিতি, নোবেল বিজয়ী ড. মুহাম্মদ ইউনূসের বিরুদ্ধে মামলা এবং আন্তর্জাতিক বিভিন্ন প্রসঙ্গ উঠে আসে। প্রধানমন্ত্রী তাঁর স্বভাবসুলভ হাসিমুখে সব প্রশ্নের খোলামেলা জবাব  দেন। প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে এ সময় মূল মঞ্চে দলের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের, সংসদ উপনেতা বেগম মতিয়া চৌধুরী, সভাপতিম-লীর সদস্য কাজী জাফর উল্লাহ, প্রধানমন্ত্রীর বেসরকারি শিল্প ও বিনিয়োগ বিষয়ক উপদেষ্টা সালমান এফ রহমান, পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. হাছান মাহমুদ উপবিষ্ট ছিলেন। প্রধানমন্ত্রীর প্রেস সচিব নাঈমুল ইসলাম খান সংবাদ সম্মেলন সঞ্চালনা করেন। 
তিস্তা নিয়ে ভারত-চীনের প্রস্তাব ॥ তিস্তা মহাপরিকল্পনা বাস্তবায়নে ভারত ও চীন সহায়তার প্রস্তাব নিয়ে দেশে এক ধরনের আলোচনা আছে যে আপনি ভারত নাকি চীনের দিকে ঝুঁকে আছেন? চীনের দিকে ঝুঁকলে প্যাঁচে পড়বেন, আর ভারতের দিকে ঝুঁকলে চীন এগোতে দেবে নাÑ এরকম আলোচনা আছে। এটা কীভাবে মোকাবিলা সরকার করবেÑ সে বিষয়ে প্রধানমন্ত্রীর কাছে জানতে চান একজন সাংবাদিক।

জবাবে বাংলাদেশের তিস্তা মহাপরিকল্পনা বাস্তবায়নে চীন ও ভারতের প্রস্তাব সম্পর্কে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, যে প্রস্তাব দেশের মানুষের কল্যাণে আসবে এবং প্রকল্প বাস্তবায়নের ঋণ নিলে তার রিটার্ন আসবে তাদের প্রস্তাব বিবেচনা করা হবে। তিনি বলেন, ভারতের সঙ্গে আমাদের অনেক দিনের তিস্তার পানি বণ্টন নিয়ে আলোচনা চলছে। তাই তারা যদি আমাদের প্রজেক্ট করে দেয় আমাদের সব সমস্যার সমাধানই হয়ে গেল।
চীন ও ভারতের সঙ্গে সম্পর্কের বিষয়ে সরকার প্রধান বলেন, এ পর্যন্ত জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের দেওয়া ‘সকলের সঙ্গে বন্ধুত্ব, কারও সঙ্গে বৈরিতা নয়’ এই পররাষ্ট্রনীতি নিয়ে একটানা চতুর্থবার এবং আগে ছিল একবার, এই পঞ্চমবার রাষ্ট্র পরিচালনা করছি। বিরোধী দলের নেতা হিসাবে সংসদে ছিলাম। এ নীতি মেনে চলে যাচ্ছি, এগিয়ে যাচ্ছি। কখনো প্রশ্ন আসেনি কোথায় ব্যালেন্স কম হলো? এটা আসেনি। সবার সঙ্গে বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক থাকায় যে সুযোগটা মিলছে সেটা হচ্ছে উন্নয়ন করার সুযোগ। আমার কাছে এটা সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ। দেশের মানুষের কল্যাণে, দেশের উন্নয়নে কার সঙ্গে কতটুকু বন্ধুত্ব দরকার সেটা করে যাচ্ছি। 
শেখ হাসিনা বলেন, তিস্তা নিয়ে অনেক প্রস্তাব আসে। যেখান থেকে যে প্রস্তাবই আসুক না কেন, সেটা কতটুকু দেশের জন্য প্রযোজ্য, যে টাকাটা ঋণ নেব তা শোধ দেওয়ার সক্ষমতা আছে কি না, যে প্রকল্প নেব তা সম্পন্ন হওয়ার পর রিটার্ন কী আসবে, সেখান থেকে দেশের মানুষের কল্যাণে কতটুকু কাজে লাগবেÑ এসব বিবেচনা করে প্রতিটি কাজ করি। ৫৪টি নদীর পানিবণ্টন নিয়ে ভারতের সঙ্গে দীর্ঘদিনের সমস্যা রয়ে গেছে। আবার চীনেরও পানি তুলে নেওয়ার ঘটনা আছে। হিমালয় রেঞ্জের নদীগুলো নিয়ে নানা ধরনের দ্বন্দ্ব আছে, সমস্যা আছে। আবার সমাধানও আছে। 
তিনি বলেন, তিস্তা প্রকল্পটি যদি আমরা করি, আমাদের চীন প্রস্তাব দিয়েছে। ভারতও প্রস্তাব দিয়েছে। অবশ্যই আমি বিবেচনা করব কোন প্রস্তাবটা দেশের মানুষের কল্যাণ আসবে, আমি সেটাই করব। সবকিছু বিবেচনা করে করতে হবে। সেক্ষেত্রে ভারত যখন বলছে তারা করতে চায় এবং টেকনিক্যাল গ্রুপ পাঠাবে, অবশ্যই তারা আসবে। আমরা যৌথভাবে সেটা দেখব। চীনও একটা সম্ভাব্যতা যাচাই করেছে। ভারতও একটা করবে।

যেটা আমাদের কাছে গ্রহণযোগ্য, লাভজনক সেটাই করব। আবার ভারত যদি আমাদের প্রজেক্ট করে দেয় আমাদের সমস্যার সমাধান হয়েই গেল। ভারতের সঙ্গে যদি তিস্তা প্রজেক্টটা করি তাহলে পানি নিয়ে প্রতিদিন চ্যাচামেচি করতে হবে না। আমরা সেই সুবিধাটা পাব। এখানে কোনো সমস্যা দেখি না।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি যখন শপথ অনুষ্ঠানে দাওয়াত দিলেন, গেলাম। এরপর রাষ্ট্রীয় সফরের আমন্ত্রণ জানালেন, আমি রাষ্ট্রীয় সফরও করে আসলাম। চীন আমাকে দাওয়াত দিয়েছে, আমি চীনে যাব। আমি যাব না কেন? বাংলাদেশ সার্বভৌম দেশ। সবার সঙ্গে বন্ধুত্ব নিয়েই চলব। কার সঙ্গে কার কী ঝগড়া সেটা তাদের থাক। আমার না। দেশের মানুষের কতটুকু উন্নতি করতে পারি, সেটাই আমার।  
মমতা ব্যানার্জির সঙ্গে যোগাযোগের চেষ্টা করেছি ॥ তিস্তার পানিবণ্টন চুক্তি ও গঙ্গা চুক্তি নবায়ন প্রশ্নে ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদিকে চিঠি লিখেছেন দেশটির পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। এ বিষয়ে এক প্রশ্নের জবাবে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, মমতা ব্যানার্জি চিঠি লিখেছেন তার দেশের প্রধানমন্ত্রীকে। এটা তাদের অভ্যন্তরীণ ব্যাপার। এখানে আমার তো কিছু বলার নেই। এ ব্যাপারে আমার নাক গলানোর দরকারও নেই। আমার সঙ্গে সবার সম্পর্ক ভালো। একটা কথা বলতে পারি, ভারতের দলমত নির্বিশেষে সকলের সঙ্গে আমার একটা সুসম্পর্ক আছে।

মমতা ব্যানার্জির সঙ্গে ব্যক্তিগতভাবে যোগাযোগের চেষ্টা করেছিলেন জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, মমতা ব্যার্নাজির ক্ষোভ, তার সঙ্গে আলোচনা করে এটা করা হয়নি। তিনি তো ছিলেন না দিল্লিতে। আমি নিজেই তার সঙ্গে যোগাযোগ করার চেষ্টা করেছি। তিনি থাকলে নিশ্চয়ই তাকে নিয়েই আলোচনা করতাম। অন্তত আমি করতাম। আগে যে ফোন নম্বর ছিল (মমতার), তার একটা মোবাইল নম্বর ছিল। নির্বাচনে যখন বিজয়ী হয়েছিলেন তখনো চেষ্টা করেছিলাম, তখন শুনেছিলাম এখন আর তিনি মোবাইল ফোন ব্যবহার করেন না। 
প্রধানমন্ত্রী বলেন, আমার কথা হলো কাউকে বাদ দিয়ে হবে না। টেনকিন্যাল গ্রুপ আসবে। আলোচনা করবে। কথা বলবে। তারপর সমঝোতা হবে। আর মমতা ব্যানার্জির সঙ্গে আমি একমত, নদীগুলোর ডেজিং করা উচিত। আমরাও সেটা করছি। ফলে বন্যার পানি আসলেও ক্ষয়ক্ষতি তেমন হয় না এখন।
মমতা ব্যানার্জির চিঠির বিষয়ে শেখ হাসিনা বলেন, তিস্তার বিষয়ে আমরা প্রজেক্ট নিচ্ছি। নদীটাতে ড্রেজিং করা। পাড় বাঁধানো, পানি সংরক্ষণ এটা নিয়ে আলোচনা হয়েছে। গঙ্গা চুক্তির মেয়াদ ২০২৬ সালে শেষ হবে। ওই সময়ের মধ্যে ওই চুক্তি যদি নবায়ন নাও হয় তাহলেও চুক্তি কিন্তু অব্যাহত থাকবে। আমরা বলেছি একটি টেনকিন্যাল গ্রুপ করা হবে। প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদিও এটা বলেছেন।
তিনি বলেন, তিস্তা প্রকল্প করার জন্য ভারত সহযোগিতা করবে। আমাদের যৌথ কমিটি হবে। এটা পানি ভাগাভাগির বিষয় না শুধু। গোটা তিস্তা নদীটাকে পুনরুজ্জীবিত করে উত্তরাঞ্চলে সেচের ব্যবস্থা করা। অধিক ফসল যাতে হয়। নেভিগেশনের ব্যবস্থা করা সেটাই আমরা করব। এটাই সিদ্ধান্ত। গঙ্গা পানি চুক্তি নবায়নের জন্য আলোচনা হবে। তাদের টেকনিক্যাল গ্রুপ আসবে, দেখবে এবং এটা হবে। 
টাকা বিদেশে রাখতে গিয়ে দেশ ছেড়েই ভাগতে হয় ॥ দেশের ব্যাংকিং খাত নিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, কিছু মানুষ তো লোভী হয়ে যায়। টাকা পয়সার লোভ এত বেড়ে যায় যে, দেশ রেখে বিদেশে রাখতে গিয়ে শেষে দেশ ছেড়েই ভাগতে হয়। তা সেই অর্থ বানিয়ে লাভটা কী হলো? এতই অর্থ বানিয়ে ফেললো যে শেষে আর দেশেই থাকা যায় না। তাহলে অর্থ বানিয়ে লাভটা কী? এটা তো মানুষ চিন্তা করে না। বোধ হয় নেশার মতো পেয়ে বসে। 
তিনি বলেন, ব্যাংকিং সেক্টর কেউ ভালো চালাচ্ছে। কেউ খারাপ চালাচ্ছে। অনেকে ঠিকমতো চালাতে পারেন না। এটা চিরাচরিত নিয়ম যদি কোনো ব্যাংক দুর্বল হয়ে যায় তাহলে তাকে সহযোগিতা করা। একটা ব্যাংকের সঙ্গে আরেকটা ব্যাংককে মার্জ করে দেওয়া এটা যাতে চালু হয় ভালোভাবে। সেখানকার আমানতকারীদের স্বার্থ সংরক্ষণ সরকারের দায়িত্ব। সেটাই পালন করার চেষ্টা করা হচ্ছে।
ড. ইউনূস নিয়ে প্রধানমন্ত্রী যা বলেন ॥ ড. ইউনূসকে নিয়ে টাইম ম্যাগাজিনে প্রকাশিত এক নিবন্ধের বিষয়ে জানতে চাইলে শেখ হাসিনা বলেন, মামলা চলছে এজন্য কমেন্ট করতে চাই না। মামলা চলছে কথা বললে সাবজুডিস হবে কি না। কিন্তু যখন প্রশ্ন এসেছে দু’চারটা কথা না বললে মানুষ বোধহয় ভুল বুঝতে থাকবে। তবে একটা প্রশ্ন তাদের করতে পারেন, যে আমেরিকা হোক বা ইউরোপ হোক যে কোনোও দেশে কেউ যদি বছরের পর বছর ট্যাক্স ফাঁকি দেয় তার বিরুদ্ধে কী ব্যবস্থা সেই সরকার নেয়? তার উত্তরটা কিন্তু এরা দেয়নি। দ্বিতীয়ত শ্রমিকদের নিয়ে এত কথা হয় সেই শ্রমিকদের কল্যাণফান্ডের টাকা! সেই শ্রমিকদের টাকা যদি কেউ না দেয়, মেরে খায়, তার বিরুদ্ধে এরা কী ব্যবস্থা নেবে? কী ব্যবস্থা নিয়ে থাকে?
সরকারপ্রধান বলেন, ইউনূসের বিরুদ্ধে আমরা বা আমাদের গভর্নমেন্ট লাগেনি। বরং আপনাদের মনে আছে, গ্রামীণ ব্যাংকটা তৈরি হয়েছিল জেনারেল এরশাদ সাহেবের আমলে। একজন এমডি খোঁজা হচ্ছিল, তখন ড. ইউনূসকে এনে সেই ব্যাংকের এমডি করা হয়। এই ব্যাংক কিন্তু তার নিজের করা নয়। তিনি সেখানে এমডি হিসেবে চাকরি করতেন এবং বেতন তুলতেন। চাকরিরত অবস্থায় তিনি এমনভাবে প্রচার করেছেন যেন এটা তার নিজেরই করা।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, গ্রামীণ ব্যাংক সরকারের সংবিধিবদ্ধ সংস্থা। ওই টাকা, বেতন সব কিন্তু সরকারের পক্ষ থেকে দেওয়া হতো। তাদের কেউ বাইরে গেলে জিও নিয়ে যেতে হতো। ওই ব্যাংকের আইনেই ছিল ৬০ বছর বয়স পর্যন্ত একজন এমডি চাকরিতে থাকতে পারবেন। ৬০ বছরের পরেও আরও ১০ বছর তিনি আইন ভঙ্গ করে ছিলেন। বাংলাদেশ ব্যাংক এই বিষয়টি নজরে আনে। আমাদের অর্থমন্ত্রী মুহিত সাহেব ও পররাষ্ট্র উপদেষ্টা গওহর রিজভী তাকে অনুরোধ করেছিলেন আপনার তো বয়স হয়ে গেছে।

অবৈধভাবে ইতোমধ্যে ১০ বছরের বেশি আছেন। আপনি এখানে উপদেষ্টা হিসেবে থাকেন। কিন্তু তিনি এমডি পদ ছাড়বেন না। এমডি পদ তাকে রাখতেই হবে। ড. ইউনূস কিন্তু আমাদের সরকারের বিরুদ্ধে, অর্থমন্ত্রীর বিরুদ্ধে এবং বাংলাদেশ ব্যাংকের বিরুদ্ধে দুটি মামলা করেন। তার বিরুদ্ধে মামলা কিন্তু কখনো সরকার করেনি। সেই দুটি মামলাতেই উনি হেরে যান। এই কথাটা ওই পত্রিকাওয়ালারা লেখেনি।
লেবার কোর্টে শ্রমিকরা কল্যাণফান্ডের টাকা না পেয়ে ড. ইউনূসের বিরুদ্ধে মামলা করেছেন উল্লেখ করে শেখ হাসিনা বলেন, এখনো যে তার বিরুদ্ধে যে মামলা সেটাও সরকার করেনি। শ্রমিকদের কল্যাণফান্ডের টাকাটা, ২০০৬ সাল থেকে একটি পয়সা দেননি। তখন শ্রমিকরা মামলা করেছেন। শ্রমিকরা লেবার কোর্টে মামলা করেছেন এবং সেই মামলায় তিনি শাস্তি পেয়েছেন। এখানে আমার কী দোষ?
ব্যাংক বাঁচাতে ৪০০ কোটি টাকা দিয়েছি ॥ প্রধানমন্ত্রী বলেন, গ্রামীণ ফোন সেটা আমিই তাকে (ইউনূসকে) দিয়েছিলাম, এটাও মনে রাখা উচিত। গ্রামীণ ব্যাংক তার আমলে প্রায় কলাপস করে যাচ্ছিল। তখন আমার সরকার ও আমি নিজে প্রথমে ১০০ কোটি টাকা, পরে ২০০ কোটি টাকা ও পরে আরও ১০০ কোটি টাকা, এই ৪০০ কোটি টাকা সরকারের পক্ষ থেকে তাকে দিয়ে ব্যাংকটাকে চালু রাখতে সহায়তা করি।

তখন তিনি প্রস্তাব দিলেন, একটি ফোন পেলে গ্রামের মেয়েদের ফোন দেবেন। এর থেকে যে লাভ হবে, তা গ্রামীণ ব্যাংকে জমা হবে। সেটা দিয়ে ব্যাংক চলবে। তাকে জিজ্ঞাসা করা উচিত, আজ পর্যন্ত ওই গ্রামীণ ফোনের একটি টাকাও গ্রামীণ ব্যাংককে দেওয়া হয়েছে কি না? দেওয়া কিন্তু হয়নি।
গ্রামীণ ব্যাংকের আর্থিক স্বচ্ছতা নিয়ে প্রশ্ন তুলে শেখ হাসিনা বলেন, গ্রামীণ ব্যাংকের জন্য অনেক সময় বিদেশ থেকে অনুদান এসেছে, তার কয়টা টাকা গ্রামীণ ব্যাংকে গেছে? প্রতিবারই সেটা নিয়ে নতুন একটি ব্যবসা খুলে ব্যবসা করেছেন। কিন্তু কোনো ট্যাক্স দেননি। তিনি যে ট্যাক্স ফাঁকি দিয়েছেন, এটা তো তিনি নিজেই প্রমাণ করেছেন। কারণ তার বিরুদ্ধে যখন মামলা হয়েছে তিনি কিছু টাকা শোধ দিয়ে বসে আছেন। যখন কিছু টাকা দিলেন এতে তো প্রমাণ হলো যে তিনি ট্যাক্স ফাঁকি দেন। এমনকি টেলিনর-গ্রামীণ ফোন থেকেও কয়েক দফায় এভাবে ট্যাক্স আদায় করা হয়েছে।
আমরা সবাই মিলে তাকে (ইউনূস) তুলেছি ॥ ড. ইউনূসের উত্থানের পেছনে সরকারের অবদান রয়েছে উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, এটা ঠিক তাকে আমরা সবাই মিলে ওপরে তুলেছি। আমরা তাকে প্রমোট করেছি। এটা ঠিক। এখন সব দোষ আমার! আমি তাকে সব থেকে বেশি দিলাম। এইটুকু কৃতজ্ঞতা তো থাকা দরকার। আজ তিনি যে উঠেছেন, সেখানে সব থেকে বেশি সহযোগিতা আমিই করেছিলাম। 
তিনি বলেন, তার (ড. ইউনূস) মাইক্রো ক্রেডিট সামিট- মাইক্রো ক্রেডিট আন্তর্জাতিকভাবে খুব বেশ গ্রহণযোগ্য ছিল না। আমি কো-চেয়ার হিসেবে অংশগ্রহণ করি। জাতিসংঘে প্রস্তাব আনি এবং আমি সবাইকে বোঝাই। কারণ আমিও ভাবতাম যে খুব ভালো, মানুষকে দারিদ্র্যমুক্ত করা যায়। কিন্তু ধীরে ধীরে পরবর্তীতে আমরা দেখলামÑ এটা দারিদ্র্যমুক্ত নয়, এটা দারিদ্র্য লালন-পালন করে। ওই মানুষগুলো দিনরাত কাজ করার পর যে উচ্চহারে সুদ দিতে হয়, বিভিন্নভাবে প্রায় ৪০/৪৫ ভাগ সুদ দিতে হতো। যশোরের যে এলাকায় হিলারি ক্লিনটনকে নিয়ে যেসমস্ত মানুষকে ক্ষুদ্রঋণ দিয়েছিল সেই পরিবারগুলো এখন কোথায়? খোঁজ করেন।
দারিদ্র্য বিমোচনে গ্রামীণ ব্যাংক তেমন কোনো ভূমিকা রাখেনি এমনটি জানিয়ে সরকারপ্রধান বলেন, গ্রামীন ব্যাংক থেকে যারা ঋণ নিয়েছে জমিজমা সব বেঁচে দিয়ে তারা ওখন থেকে পালিয়ে যেতে বাধ্য হয়। অনেকে আত্মহত্যা করেছে এই সুদের চাপে। আমি তাকে টাকা দিয়ে বলেছিলাম এত সুদ না নিয়ে মানুষের জন্য যেন একটু সহনশীল করে দেন। মানুষ সত্যিকার অর্থে যেন দারিদ্র্য থেকে উঠে আসতে পারে।

আমার প্রশ্ন, এতই যদি করে থাকেন তাহলে দারিদ্র্য বিমোচন হলো না কেন বাংলাদেশে? দারিদ্র্য বিমোচন তো করলাম আমি। আজ ৪১ দশমিক ৬ ভাগ থেকে ১৮ দশমিক ৭ ভাগে নামিয়ে এনেছি মাত্র এই ১৫ বছরে। তিনি সেই ক্রেডিটও নেন। সেটাও কোনো কোনো আন্তর্জাতিক সংস্থা লিখে ফেলে, ওই গ্রামীণ ব্যাংক, ব্র্যাক ওই অমুক-সমুক এটা করে ফেলেছে। আমার প্রশ্ন, শেখ হাসিনা ক্ষমতায় আসার আগে ওই দারিদ্র্যের হার কত শতাংশ ছিল? শেখ হাসিনা আসার পরে কতটা কমেছে। সেটা একটু হিসাব করে বলুন!
আমি কনটেস্ট করতে যাবো কেন? ॥ নোবেল পুরস্কার নিয়ে প্রধানমন্ত্রী নাকি জেলাস নিবন্ধে এমন কথাও উঠে এসেছে জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, অনেকে নাকি লিখেছে নোবেল প্রাইজের জন্য আমার সঙ্গে নাকি তার দ্বন্দ্ব! আমার সঙ্গে কারও দ্বন্দ্ব নেই। জীবনেও নোবেল প্রাইজের জন্য আমার কোনো আকাক্সক্ষাও নেই। কারণ আমার লবিস্ট রাখার মতো টাকাও নাই, পয়সাও নাই। আর আমি কখনো ওটা চাইওনি।

পার্বত্য শান্তি চুক্তি হওয়ার পরে শুধু আমার দেশ নয়, দেশে-বিদেশে অনেক নোবেল লোরিয়েটরা আমার জন্য লিখেছেন। কই আমি তো কখনো তদবির করতে যাইনি। কারও কাছে বলতেও যাইনি। কী পেলাম না পেলাম ওইগুলো আমার মাথার মধ্যেও নেই। যিনি অর্থনীতি নিয়ে কাজ করলেন, ব্যাংকের একজন এমডি। তিনি যখন নোবেল প্রাইজ পান তার সঙ্গে আমি কনটেস্ট করতে যাবো কেন?
তিনি বলেন, পার্বত্য চট্টগ্রাম শান্তিচুক্তি আমি করেছি। পৃথিবীতে যত শান্তিচুক্তি হয়েছে বের করুন! শান্তি চুক্তি হয়েছে কয়টা অন্ত্রধারী আত্মসমর্পণ করেছে? আমি পার্বত্য চট্টগ্রামে শুধু শান্তিচুক্তিই করিনি, এক হাজার ৮০০ জন অস্ত্রধারী ক্যাডার আমার কাছে অস্ত্র সারেন্ডার করেছে। আমি তাদের সকলকে সামাজিক ও আর্থিকভাবে পুনর্বাসন করেছি। ৬৪ হাজার শরণার্থী ছিল ভারতে, তাদের ফিরিয়ে এনে প্রতিষ্ঠিত করেছি। শান্তিচুক্তির ফলে শান্তি প্রতিষ্ঠায় আজ পার্বত্য এলাকায় ব্যাপক উন্নতি হয়েছে। এর আগ কী অবস্থা ছিল? শেখ হাসিনা ক্ষমতায় আসার আগে পার্বত্য চট্টগ্রামে কতজন যেতে পারতেন?
প্রধানমন্ত্রী বলেন, যদি কেউ বিদেশে আমার নামে প্রস্তাব দেয়, কই আমরা তো ছুটে যাইনি তাদের কাছে। আমার কাছে অনেকে আসছে। আমি বলেছি না আমার এ সমস্ত পুরস্কারের দরকার নেই। আর আমি দেখছি, এই পুরস্কার যারা পায় তাদের আন্তর্জাতিকভাবে কতটুকু অবদান, সেটা নয়। এখানে আলাদা একটি রাজনৈতিক উদ্দেশ্য থাকে। কাজেই ওর মধ্যে আমার কোনো আকাক্সক্ষা নেই। আর বলে দিল, এটা নিয়ে নাকি আমি তার ওপর জেলাস! 
দৃঢ়কণ্ঠে প্রধানমন্ত্রী বলেন, শেখ হাসিনা কারও সঙ্গে জেলাসি করে না। শেখ হাসিনা জাতির পিতার মেয়ে। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবের মেয়ে। অন্তত এই জায়গাটায় কেউ আসতে পারবে না। সেটাই আমার গর্ব। প্রধানমন্ত্রী এটা তো সাময়িক ব্যাপার। আমি শেখ মুজিবের মেয়ে। আমি দেশও বেঁচি না। দেশের স্বার্থও বেচি না। দেশের স্বার্থ রক্ষা করেই চলি। তার জন্য একবার আগে ক্ষমতায় আসতেও পারিনি। কিন্তু আমার কিচ্ছু আসে যায় না। আমি এর-ওর কাছে ধর্ণা দিয়ে বেড়াই না। সব থেকে বেশি যে করেছে তার বিরুদ্ধে অভিযোগ দিয়ে বেড়াচ্ছেন। তার (ইউনূস) সঙ্গে আমার জেলাসির কী আছে! তিনি আসুক না, মাঠে আসুক। চলুক আমার সঙ্গে। আমেরিকায় ডিবেট হয় না? আসুক কথা বলব।
নিবন্ধ প্রসঙ্গে প্রধানমন্ত্রী আরও বলেন, তিনি এখন মামলায় সাজাপ্রাপ্ত আসামি। একজন সাজাপ্রাপ্ত আসামির জন্য এত কথা লেখে কীভাবে একজন সাংবাদিক। ওই সাংবাদিককে জিজ্ঞাসা করুন। মামলা করেছেন তার লেবাররা। লেবাররা যখন দাবি করেছেন, প্রমোশন চেয়েছেন, সঙ্গে সঙ্গে চাকরিচ্যুত করে দিয়েছে। পরে তারা মামলা করেছেন।

আমি তো জানতামও না এটা। আর লেবার কোর্টের মামলায় শাস্তি পেয়েছেন। তো লেবারদের কী কোনো অধিকার নেই? যারা লেবার নিয়ে এত কথা বলেন, মানবাধিকারের কথা বলেন, এতকিছু বলেন তারা কোথায় এখন? তারা চুপ কেন? তারা এই লেবারদের পাশে কি দাঁড়িয়েছেন? দাঁড়ায়নি। লেবারদের ন্যায্য পাওনা এখন মেরে খাচ্ছে। চুরি করে খাচ্ছে। সেটা বলেছে কখনো?
তিনি বলেন, আমেরিকা, ইংল্যান্ড, ইউরোপে যে কেউ যদি ট্যাক্স ফাঁকি দেয়, সঙ্গে সঙ্গে তাকে অ্যারেস্ট করবে। তার সমস্ত সম্পত্তি বাজেয়াপ্ত করে বিক্রি করে দেবে। এটাই তাদের নিয়ম। সেটা তারা দেখে না। সমানে ট্যাক্সি ফাঁকি দিয়ে যাচ্ছে। প্রতিবার তার বিরুদ্ধে মামলা দিয়ে আদায় করতে হচ্ছে। যারা লিখেছে, তারা এই অনুসন্ধানটা একটু করুক।
রাজনৈতিক দল করতে গেল, ব্যর্থ হলো কেন? ॥ ওয়ান-ইলেভেনের পর ড. ইউনূসের রাজনৈতিক দল চালুর প্রসঙ্গ তুলে আওয়ামী লীগ সভাপতি বলেন, পলিটিক্যাল পার্টি করতে চেয়েছিলেন সেটাও লিখেছেন। ২০০৭ সালে রাজনৈতিক দল করতে গেলেন। তাহলে ব্যর্থ হলেন কেন? রাজনৈতিক দল করতে পারলেন না কেন? তিনি যদি গ্রামের মানুষকে এতই দিয়ে থাকেন, তাহলে সেই মানুষ তো তার জন্য ঝাঁপিয়ে পড়বে।

তারা আসেনি কেন? কারণ সুদের চাপে তা মৃতপ্রায় ছিল। সেজন্য তার ডাকে কেউ সাড়া দেয়নি। সেখানে তিনি ব্যর্থ হয়েছেন। সে দায়িত্বও কি আমার? আমি তো তখন জেলে। 
বিদেশে ড. ইউনূসের ব্যবসার মূলধন নিয়ে প্রশ্ন রেখে সরকারপ্রধান বলেন, আমার প্রশ্ন এই যে বিদেশে এত বিনিয়োগের টাকা কোত্থেকে আসছে? কার টাকা? কীভাবে কামাই করেছেন এই টাকা? এটা কাদের টাকা? সেই জবাবটা দিক। সংবিধিবদ্ধ প্রতিষ্ঠানে চাকরি করা অবস্থায় বাইরে ব্যবসা করে। আমাদের আইন কী বলে? তার পয়সা আছে উনি লেখাচ্ছেন। তিনি যদি এতই জনপ্রিয় হন, তাহলে বিজ্ঞাপন দিয়ে বিবৃতি দিতে হবে কেন? 
ভারতের সঙ্গে রেলপথ ট্রানজিট নিয়ে যা বলেন প্রধানমন্ত্রী ॥ ভারতকে রেলপথ ট্রানজিটের সুবিধা দেওয়ার সমালোচনার বিষয়ে জানতে চাইলে প্রধানমন্ত্রী বলেন, রেল যোগাযোগ চালুর সমালোচনা হচ্ছে কেন? জবাবে প্রশ্নকর্তা বলেন, বলা হচ্ছে ভারতের কাছে বাংলাদেশের বিক্রির ষড়যন্ত্র চলছে। যারা অপপ্রচার চালায় তাদের মুখরোচক গল্প।
জবাবে প্রধানমন্ত্রী বলেন, আমার একটা প্রশ্ন আছে। বিক্রির ওজনটা কীভাবে করা হয়েছে? কোনও কিছু বিক্রি হলেতো ওজন মেপে হয় না? এখন তো ইলেকট্রনিক মেশিন আছে। আগে দাঁড়িপাল্লায় মাপা হতো। তো কিসে মেপে বিক্রি হচ্ছে? আর বিক্রিটা হয় কীভাবে? বাংলাদেশ স্বাধীন দেশ। মুক্তিযুদ্ধ করে আমরা স্বাধীনতা অর্জন করেছি। যাদের সমালোচনা করে তাদের জানা উচিত, একটি মাত্র মিত্র শক্তি যারা আমাদের সঙ্গে কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে নিজেদের রক্ত ঢেলে এই দেশ স্বাধীন করে দিয়েছে। আমাদের মুক্তিযোদ্ধারা সেখানে প্রশিক্ষণ পেয়েছে।
তিনি বলেন, পৃথিবীর যেখানে মিত্র শক্তি হিসেবে সাহায্য করেছে তারা কিন্তু সেই দেশ থেকে ফেরত যায়নি। এখনো জাপানে আমেরিকান সৈন্য, জার্মানিতে রাশান সৈন্য, এরকম বিভিন্ন দেশ দেখলে দৃষ্টান্ত পাওয়া যাবে। এখানে ভারত ব্যতিক্রম। তারা মিত্র শক্তি হিসেবে আমাদের সঙ্গে যুদ্ধ করে এসেছে। যখনই জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব চেয়েছেন তারা বিদেশে ফেরত যান, তাদের প্রধানমন্ত্রী ইন্দিরা গান্ধী সঙ্গে সঙ্গে রাজি হয়েছেন। ফেরত নিয়ে গেছেন, যুদ্ধের সরঞ্জাম নিয়ে। তাদের কাছে পাকিস্তান হানাদার বাহিনী আত্মসমর্পণ করে। আমরা কিন্তু স্বাধীন, সার্বভৌম রাষ্ট্র পেয়েছি। ভারত কিন্তু সেনাবাহিনী প্রত্যাহার করেছে।
সরকারপ্রধান বলেন, এরপরে যারা বলে বিক্রি হয়ে যাবে। তাতে বিক্রিটা হয় কীভাবে? যারা এটা বলে তাদের মাথাই ভারতের কাছে বিক্রি করা। সামরিক শাসক জিয়া, এরশাদ ও খালেদা জিয়া ওপরে ওপরে ভারতবিরোধী কথা বলেছেন, আর ভেতর দিয়ে তাদের পা ধরে বসে ছিল। এগুলো আমাদের নিজের দেখা ও জানা। 
বঙ্গবন্ধুকন্যা বলেন, আমাদের স্বাধীন, সার্বভৌম দেশ। যত ছোট হোক, এটা আমাদের সার্বভৌম দেশ। সেই সার্বভৌম রক্ষা ও স্বকীয়তা বজায় রেখে বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক রেখে কাজ করছি। এই যে আমরা সমস্ত যোগাযোগ ব্যবস্থা খুলে দিলাম, তাতে সবচেয়ে বেশি লাভবান আমাদের দেশের মানুষ। তারা চিকিৎসা, পড়াশোনার জন্যই যায় বা অন্যান্য কাজে যায়, হাটবাজার করতে যায়, আজমির শরিফে যায়, আবার বিভিন্ন জায়গায় যায়।

আমাদের ব্যবসা-বাণিজ্যের ক্ষেত্রতো আরও উন্মুক্ত হবে। বিক্রি আমরা করি না। যারা বিক্রির কথা বলে তারা বেচার জন্য অথবা ‘ব্যবহার করুন আমাকে’ এ কথা নিয়ে বসে থাকে। এটা হলো বাস্তবতা। শেখ হাসিনা এ দেশকে বিক্রি করে না। কারণ আমরা এ দেশ স্বাধীন করেছি। যারা বিক্রির কথা বলে তারা একাত্তর সালে পাকিস্তানের দালালি করেছিল। 
শেখ হাসিনা বলেন, একটা দেশের মধ্যে ট্রানজিট দিলে ক্ষতিটা কী? রেল যেগুলো বন্ধ ছিল তা আমরা আস্তে আস্তে খুলে দিয়েছি। যাতে আমাদের ব্যবসা-বাণিজ্য সহজ হচ্ছে। ওই অঞ্চলের মানুষ উপকৃত হচ্ছে, তাদের উৎপাদিত পণ্য বিক্রি হচ্ছে। যে সমস্ত জিনিস আমাদের দেশে নেই তা আনার সুযোগ হচ্ছে। অর্থনীতিতে এটা সুবিধা হচ্ছে। আমরা কি চারদিকে দরজা বন্ধ করে বসে থাকব? সেটা হয় না। 
তিনি বলেন, বলেন, ইউরোপের দিকে তাকান সেখানে কোনো বর্ডারই নেই, কিছুই নেই। তাহলে একটা দেশ আরেকটা দেশের কাছে বিক্রি করে দিয়েছে? একসময় সেখানে নো-ম্যানস ল্যান্ড ছিল। এখন কিন্তু সেসব কিচ্ছু নেই। এখন সেসব উঠে গেছে। কাউকে বাদ দিয়ে নয়, সব দেশ স্বাধীন দেশ। কোনো দেশ কারও কাছে বিক্রি করেনি। দক্ষিণ এশিয়ায় কেন বাধা দিয়ে রাখব? দেশের মানুষের কথা চিন্তা করতে হবে, তাদের ভাগ্য পরিবর্তন সব থেকে বেশি প্রয়োজন।
কংগ্রেসনেত্রী সোনিয়া গান্ধীর সঙ্গে সাক্ষাৎ প্রসঙ্গে ॥ ভারত সফরে দেশটির কংগ্রেসনেত্রী সোনিয়া গান্ধীর সঙ্গে সাক্ষাৎ সৌজন্যমূলক নাকি আপনাদের মধ্যে অন্য কোনো অর্থপূর্ণ আলাপ-আলোচনা হয়েছে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার কাছে এ প্রসঙ্গে জানতে চান এক সাংবাদিক। এর জবাবে হেসে হেসে তিনি বলেন, ‘আমি তো বলেছি, আমার সঙ্গে ভারতের প্রত্যেকটা দল, সকলের সঙ্গে একটা বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক আছে।

তাদের সঙ্গে সম্পর্ক সব রাজনীতি, সব কিছুর ঊর্ধ্বে। এটা নিয়ে এত চিন্তার কিছু নেই।’
এ সময় বিশেষ করে সোনিয়া গান্ধী ও তাঁর ছেলেমেয়ে এবং প্রণব মুখার্জী ও তাঁর ছেলে-মেয়ের সঙ্গে পারিবারিক সম্পর্ক থাকার কথাও উল্লেখ করেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। তিনি বলেন, ‘ইন্দিরা গান্ধীর পরিবারের সঙ্গে আমাদের পরিবারের একটা পারিবারিক বন্ধন আছে। সেটা সব রাজনীতি, সব কিছুর ঊর্ধ্বে।
চন্দ্রবোড়া (রাসেলস ভাইপার) সাপের প্রাদুর্ভাব বেড়ে যাওয়া সম্পর্কে এক প্রশ্নের জবাবে প্রধানমন্ত্রী সকলকে সতর্ক থাকার পরামর্শ দেন। যুক্তরাজ্যে সুপ্রিম কোর্টের যুদ্ধাপরাধী চৌধুরী মইনুদ্দিনের বন্দি বিনিময়ের ক্ষেত্রে প্রদত্ত রায়ের বিষয়ে তাঁর দৃষ্টি আকর্ষণ করা হলে শেখ হাসিনা বলেন, এ ব্যাপারে কথা হয়েছে, আইনমন্ত্রীর সঙ্গেও কথা হয়েছে। এ ব্যাপারে যা যা ব্যবস্থা নেওয়ার দরকার আমরা তা নিচ্ছি।

×