ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২৭ জুলাই ২০২৪, ১২ শ্রাবণ ১৪৩১

সচিবালয়ে সালমান

সরকার বেনজীর ও আজিজকে প্রটেকশন দেবে না

বিশেষ প্রতিনিধি

প্রকাশিত: ০০:১৬, ৩০ মে ২০২৪

সরকার বেনজীর ও আজিজকে প্রটেকশন দেবে না

বেনজীর আহমেদ ও জেনারেল (অব.) আজিজ আহমেদ

পুলিশের সাবেক মহাপরিদর্শক বেনজীর আহমেদ ও সাবেক সেনাপ্রধান জেনারেল (অব.) আজিজ আহমেদকে সরকার কোনো ধরনের প্রটেকশন দেবে না বলে জানিয়েছেন প্রধানমন্ত্রীর বেসরকারি শিল্প ও বিনিয়োগবিষয়ক উপদেষ্টা সালমান ফজলুর রহমান। আইন সম্পূর্ণ তার নিজস্ব গতিতে চলবে। তিনি বলেন, বাংলাদেশ বিল্ডিং রেগুলেটরি অথরিটি দ্রুত বাস্তবায়ন করা হবে।
বুধবার সচিবালয়ে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সভাকক্ষে এক বৈঠক শেষে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে সালমান এফ রহমান এ কথা বলেন। এর আগে কল-কারখানা, শিল্প ও বাণিজ্যিক প্রতিষ্ঠানে দুর্ঘটনারোধ ও নিরাপদ কর্মপরিবেশ নিশ্চিতে গঠিত জাতীয় কমিটির তৃতীয় সভায় সভাপতিত্ব করেন তিনি। প্রধানমন্ত্রীর বেসরকারি শিল্প ও বিনিয়োগ বিষয়ক উপদেষ্টা সালমান এফ রহমান এ কমিটির সভাপতি।
সাবেক সেনাপ্রধান এবং পুলিশপ্রধানের অনিয়মের বিষয়টি আলোচিত হচ্ছে। এ বিষয় সরকার বিব্রত কি না- এমন প্রশ্নের জবাবে প্রধানমন্ত্রীর উপদেষ্টা বলেন, আমাদের আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক স্পষ্টভাবে বলেছেন, কেউ যদি আইন ভঙ্গ করে তাহলে আইন অনুযায়ী ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

এখানে সরকারের কোনো বিব্রতকর অবস্থা হবে বলে আমি বিশ্বাস করি না। আইন নিজের গতিতে চলবে। লোকটা যতই প্রভাবশালী হোক না কেন, সরকার কোনো রকম প্রটেকশন কাউকে দেবে না। আইন সম্পূর্ণ নিজের গতিতে চলবে।
ভারতে বাংলাদেশের একজন সংসদ সদস্য খুন হওয়ার বিষয় দৃষ্টি আকর্ষণ করলে উপদেষ্টা বলেন, আমরা সবাই কিন্তু এটা নিয়ে খুবই মর্মাহত হয়েছি। আপনারা জানেন ঘটনাটি তদন্তাধীন। তদন্ত শেষ না হওয়া পর্যন্ত আমার মনে হয় এ নিয়ে কোনো মন্তব্য করা ঠিক হবে না।

বাজেটের পরে দ্রব্যমূল্যের ক্ষেত্রে নতুন কোনো অস্বস্তি তৈরি হবে কি না- জানতে চাইলে সালমান এফ রহমান বলেন, এটা তো ‘হাইপোথেটিক্যাল কোশ্চেন’। বাজেট কী হবে, বাজেটের পরে কী হবে, আমরা সুস্থ থাকব নাকি অসুস্থ থাকব, সেটা তো বাজেট দেখার পর উত্তর দিতে পারব।

বাংলাদেশ বিল্ডিং রেগুলেটরি অথরিটি দ্রুত বাস্তবায়ন করা হবে বলে জানিয়েছেন প্রধানমন্ত্রীর বেসরকারি শিল্প ও বিনিয়োগ বিষয়ক উপদেষ্টা সালমান এফ রহমান। তিনি বলেন, এখন থেকে নতুন কারখানাগুলো ও বাণিজ্যিক ভবনের নকশা ও পরিকল্পনার যে অনুমোদন দেওয়া হবে, বিশেষ করে রাজধানী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের (রাজউক) বাইরে যেগুলো আছে, সেগুলোর অনুমোদন দেয় জেলপ্রশাসকদের (ডিসি) অধীনের কমিটি।

আমরা সিদ্ধান্ত নিয়েছি, পেশাদার সংগঠন যেগুলো আছে, যেমন ‘ইনস্টিটিউট অব আর্কিটেকচার, ইনস্টিটিউট অব ইঞ্জিনিয়ার’ এসব সংগঠন তাদের অথরাইজড করার মতো কারা আছেন, তাদের একটা তালিকা দেবে। যেমন ‘স্ট্রাকচারাল ইঞ্জিনিয়ার, মেকানিক্যাল ইঞ্জিনিয়ার, প্লাম্বিং, এমইপি, মেকানিক্যাল, ইলেকট্রিক্যাল’ তাদের তালিকা দিয়ে দেবে।

তালিকায় যাদের নাম আছে, ভবনের নকশায় তাদের সই আছে কিনা; সেটা দেখবে কমিটি। অনেক সময় সই নকল হতে পারে। সেক্ষেত্রে প্রথম তালিকাভুক্তদের সইয়ে প্ল্যানিং বা নকশা জমা দেওয়া হয়েছে কি না, সেটি দেখা। সঙ্গে পেশাগত সংগঠনকে সঙ্গে নিয়ে সই সঠিক কি না; সেটির সত্যতা যাচাই করা হবে।
আমাদের একটা আইন হয়েছে, বাংলাদেশ জাতীয় বিল্ডিং কোড (বিএনবিসি)। এই আইনে একটি অথরিটি (কর্তৃপক্ষ) করার কথা রয়েছে বাংলাদেশ বিল্ডিং রেগুলেটরি অথরিটি। যত দ্রুত সম্ভব এটা যাতে পূর্ত মন্ত্রণালয় বাস্তবায়ন করে, আমরা সেই সিদ্ধান্ত নিয়েছি। তিনি বলেন, এরইমধ্যে তিন পর্যায়ে আমরা সারা দেশের কলকারখানা পরিদর্শন করেছি। প্রথম পাঁচ হাজারে ফল অনেক ভালো পেয়েছি।

পরিদর্শনের পর কারেক্টিভ অ্যাকশন প্ল্যান করে তাদের জানানো হয়েছে যে এই এই ত্রুটি আছে, এগুলো ঠিক করতে হবে। সে অনুসারে তাদের সময় দেওয়া হয়েছে। আমরা দেখেছি, আমরা যেভাবে অনুরোধ করেছিলাম, অন্তত পঞ্চাশ শতাংশ সেটি বাস্তবায়ন করেছে। বাকিদের আরও সময় দেওয়া হয়েছে, তারা সবাই কাজ করছেন। সবার সঙ্গে ব্যক্তিগতভাবে কথা বলে কাজ এগিয়ে নিচ্ছি।
তিনি আরও বলেন, প্রথম পর্যায়ে আমরা যেভাবে দ্রুত পরিদর্শন করেছি, দ্বিতীয় পর্যায়েও সেটি চালু থাকবে। তৃতীয় পর্যায়ে সারাদেশে পাঁচ হাজার ভবন পরিদর্শনের কথা ছিল। আমরা সিদ্ধান্ত নিয়েছি, সারা বাংলাদেশে পরিদর্শন না করে ১৬টি জেলা যেখানে শ্রমঘন এলাকা বেশি, সেগুলো আমরা পরিদর্শন করব।

বাংলাদেশ বিনিয়োগ উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ (বিডা) একটা ওয়ান স্টপ সার্ভিসের উদ্যোগ নিয়েছে জানিয়ে প্রধানমন্ত্রীর এই উপদেষ্টা বলেন, সেখানে আমাদের প্ল্যানিং, ফায়ার সার্ভিসও থাকবে। গত বৈঠকে সিদ্ধান্ত নিয়েছিলাম ঢাকা শহরের দুটো বাণিজ্যিক মার্কেট আমরা চিহ্নিত করেছিলাম, একটা গুলশানের শপিং কমপ্লেক্স, আরেকটা হচ্ছে মৌচাক।

সিদ্ধান্ত অনুসারে গুলশানেরটা ভেঙে ফেলা হয়েছে। আর মৌচাকের বেলায় হাইকোর্ট থেকে একটি স্থগিতাদেশ এসেছে, তাতে বলা হয়েছে, এটা না ভেঙে রেট্রোফিট করার জন্য। আমরা সিদ্ধান্ত নিয়েছি, রাজউক ও ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশন দেখবে যে এটা রেট্রোফিট করা যায় কি না। যদি করা সম্ভব হয়, তাহলে করা হবে। সম্ভব না হলে আবার আদালতে গিয়ে স্টে অর্ডার ভেকেট করার জন্য বলব।
ঢাকা শহরের অনেক ভবনের পার্কিংয়ের জায়গায় দোকানপাট ও অন্যান্য কাজ করা হচ্ছে। ঢাকার দুই সিটি করপোরেশনকে আমরা বলেছি যে, পার্কিংয়ের জায়গা যাতে পার্কিংয়ের কাজে ব্যবহার হয়।
বেইলি রোডের অগ্নিকা-ের পরে একটি ওয়ান স্টপ সার্ভিস করার জন্য স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়কে বলা হয়েছিল, যে সব সিদ্ধান্তগুলো এক জায়গায় থেকে হবে। এ বিষয়ে জানতে চাইলে সালমান এফ রহমান বলেন, হ্যাঁ, সেটিই তো বললাম আমি। বিডা যে ওয়ান স্টপ সার্ভিস করছে, এরপর সবকিছু এই মাধ্যমেই হয়ে যাবে।

আগে ১৬ কিংবা ১৭টি প্রতিষ্ঠান থেকে সিদ্ধান্ত আসত। এখন কি বিডা থেকেই সেটি হবে, জানতে চাইলে তিনি বলেন, নাহ, ১৬টি প্রতিষ্ঠান থেকে যেটা নিতে হবে, সেটি আপনার নিতেই হবে। সেটি তো বিডা দিতে পারে না।
যে প্রতিষ্ঠানটি অনুমতি দিত, সেটির জন্য তো তার সেই সক্ষমতা আছে, কিন্তু সেটি তো বিডার নেই। বিডা সমন্বয় করবে। এতে এক জায়গায় থেকে অনুমতিটা পাওয়া যাবে। আপনি এক জায়গায় আবেদন করবেন, স্বয়ংক্রিয়ভাবে সেটি সেই জায়গায় চলে যাবে। সেখানে অনুমোদন মিললে আপনার কাছেই চলে যাবে। আপনাকে চৌদ্দ জায়গায় দৌড়াতে হবে না।

ঢাকার দুই সিটি করপোরেশনে অনেক জরাজীর্ণ ভবন আছে। মাঝে মাঝে আওয়াজ দেওয়া হলেও এসব ভবন নিয়ে কোনো সিদ্ধান্ত নেওয়া হয় না। এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, বাড়িঘরে ঝুঁকিটা অনেক কম। বাড়িঘরে যারা থাকেন, কেবল তারা ঝুঁকিতে থাকেন। কিন্তু বাণিজ্যিক ভবনগুলোতে অনেক লোকজন যায়, যে কারণে ঝুঁকি বেশি। তবে পর্যায়ক্রমে সবগুলো দেখব। আর আমাদের কমিটির মূল নিরাপত্তা কলকারখানা ও বাণিজ্যিক ভবনের।
সালমান এফ রহমানের সভাপতিত্বে সভায় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল, স্থানীয় সরকার, পল্লী উন্নয়ন ও সমবায়মন্ত্রী মো. তাজুল ইসলাম, শিল্পমন্ত্রী নূরুল মজিদ মাহমুদ হুমায়ুন, বাণিজ্য প্রতিমন্ত্রী আহসানুল ইসলাম টিটু, ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের মেয়র মো. আতিকুল ইসলামসহ সংশ্লিষ্ট ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।

×