ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২৭ জুলাই ২০২৪, ১২ শ্রাবণ ১৪৩১

স্বতন্ত্র প্রার্থীদের বিষয়ে কোনো দায়িত্ব নিতে চায় না ক্ষমতাসীনরা

আওয়ামী লীগ ও জাপার আসন বণ্টনে জট খোলেনি

বিকাশ দত্ত

প্রকাশিত: ০০:২১, ১২ ডিসেম্বর ২০২৩

আওয়ামী লীগ ও জাপার আসন বণ্টনে জট খোলেনি

আসন ভাগাভাগি নিয়ে আওয়ামী লীগের সঙ্গে জাপার ধোঁয়াশা কাটেনি

দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে সামনে রেখে দফায় দফায় বৈঠকের পরও আসন ভাগাভাগি নিয়ে আওয়ামী লীগের সঙ্গে জাপার ধোঁয়াশা কাটেনি। জাতীয় পার্টি ৪০ আসনে ছাড়ের পাশাপাশি ছাড় দেওয়া আসনে কোনো স্বতন্ত্র প্রার্থী থাকতে পারবে নাÑএমন শর্ত দেওয়ায় জট খুলছে না। এখন পর্যন্ত সমঝোতায় পৌঁছাতে পারেনি দুই দল। জাপার একটা বড় চাওয়া হলো, আসন কম হলেও তাদের ছাড় দেওয়া আসনে আওয়ামী লীগের প্রার্থী থাকতে পারবে না। এমনকি সেসব আসনে আওয়ামী লীগের কোনো স্বতন্ত্র প্রার্থীও থাকতে পারবে না। এ নিয়ে ধোঁয়াশা থাকলেও আসন ভাগাভাগি নিয়ে দুই দলের মধ্যে শীঘ্রই সমঝোতা হবে বলে আশা করা হচ্ছে।

জাপার প্র্রথম শর্ত অনুযায়ী ছেড়ে দেওয়া আসন থেকে নৌকা সরাতে রাজি হয়েছে আওয়ামী লীগ। স্বতন্ত্র প্রার্থীর বিষয়ে তারা কোনো দায়িত্ব নেবে না। এবার নির্বাচনে সবচেয়ে বড় আতঙ্কের নাম স্বতন্ত্র প্রার্থী। জাতীয় পার্টির সঙ্গে আওয়ামী লীগের যে আসন ভাগাভাগির সমঝোতার বৈঠক চলছে, সেই সমঝোতার বৈঠকে প্রধান বাধা হয়ে দাঁড়িয়েছে স্বতন্ত্র প্রার্থীরা। জাতীয় সংসদ নির্বাচনের ৩০০ আসনে আওয়ামী লীগের প্রায় ৪৫০ জন স্বতন্ত্র প্রার্থী হয়েছেন। এর মধ্যে অন্তত ২৩ জন সাবেক সংসদ সদস্য।
জাতীয় পার্টির নেতারা বলছেন, জাতীয় পার্টিকে ছাড় দেওয়া আসনে নৌকার প্রার্থীকে বসিয়ে দেওয়া হলেও সেখানে যদি আওয়ামী লীগের স্বতন্ত্র প্রার্থী থাকে তাহলে নৌকার ভোট আমরা পাব না। নৌকার ভোট তখন স্বতন্ত্র প্রার্থীর পক্ষে চলে যাবে। সেখানে নির্বাচনে প্রভাব  বিস্তার করা হবে। তখন লাঙ্গল প্রতীকের প্রার্থী জয়ী হওয়া কঠিন হবে। এরকম সমঝোতার কোনো অর্থ নেই। আমরা নৌকা প্রতীকের প্রার্থীর পাশাপাশি আওয়ামী লীগের স্বতন্ত্র প্রার্থীও নির্বাচনে থাকবে না এমন শর্তে সমঝোতা চাই।
আওয়ামী লীগের বিদ্রোহী প্রার্থী হিসেবে যারা স্বতন্ত্র প্রার্থী হয়ে নির্বাচনে দাঁড়িয়েছেন, তারা এবার তেমন বাধা পাচ্ছেন না দলের পক্ষ থেকে। এ নিয়ে জাতীয় পার্টির অসন্তোষের সীমা নেই। জাতীয় পার্টির পক্ষ থেকে আসন সংখ্যা কমানোর ব্যাপারে আপত্তি নেই। কিন্তু আপত্তি স্বতন্ত্র প্রার্থীদের উপস্থিতিতে। কিন্তু জাপার দাবি, ছেড়ে দেওয়া আসনে নৌকা সরালেও স্বতন্ত্র প্রার্থী থাকতে পারবে না। এ বিষয় নিয়েই দুই দলের মধ্যে আলোচনা চলছে। জাপার পক্ষ থেকে দেওয়া তালিকা আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনার কাছে পাঠানো হয়েছে। ১৭ ডিসেম্বরের মধ্যেই জাপাকে কয়টি আসন দেওয়া হচ্ছে, তা স্পষ্ট হবে। গত বুধবারের বৈঠকে আওয়ামী লীগের কাছে ৬০টির বেশি আসনে ছাড় চেয়েছিল তারা। আওয়ামী লীগ ১০-১২টির বেশি আসন ছাড়তে রাজি ছিল না। তবে শনিবারের বৈঠকে আওয়ামী লীগ কমবেশি ৩০টি আসন ছাড়তে পারে। 
এদিকে আসন ভাগাভাগি না হলেও জাতীয় পার্টির হেভিওয়েট প্রার্থীরা পাচ্ছেন আওয়ামী লীগের নেতৃত্বাধীন জোটের মনোনয়ন। তবে আগামী দুই-একদিনের মধ্যে সিদ্ধান্তের কথা আনুষ্ঠানিকভাবে জানাবেন দল দুটির শীর্ষ নেতারা। চূড়ান্ত আসন ভাগাভাগির তালিকায় রয়েছেন জাপার হেভিওয়েট প্রার্থীরা। তারা বলেন, ২৫ থেকে ৩০টি আসন জাতীয় পার্টিকে ছাড় দিচ্ছে আওয়ামী লীগ।  
জাতীয় পার্টির মহাসচিব মো. মুজিবুল হক চুন্নু বলেছেন,  আওয়ামী লীগের সঙ্গে আসন সমঝোতার কোনো আলাপের বিষয়ে আমার জানা নেই। তবে রাজনীতিতে চূড়ান্ত বলে কিছু নেই, সময়ের প্রয়োজনে অনেককিছু ঘটতে পারে। তিনি আরও বলেন, নির্বাচন করার জন্য এসেছি সরে আসার জন্য নয়। তবে উদ্ভূত পরিস্থিতি তেমন হলে যে কোনো সিদ্ধান্ত আসতে পারে। 
এ বিষয়ে জাতীয় পার্র্টির কো-চেয়ারম্যান কাজী ফিরোজ রশীদ বলেন, আওয়ামী লীগের সঙ্গে বৈঠক হয়েছে। কিন্তু সমঝোতা হয়েছে এটা বলতে পারছি না। কারণ আওয়ামী লীগ আমাদের পরে জানাবে বলেছে। সেটা কখন হবে আমরা জানি না।  নির্বাচনে দাঁড়িয়েছি ঠিক কিন্তু সিদ্ধান্ত তো কিছু আসছে না। নির্বাচনে দাঁড়াতে বলেছে, দাঁড়িয়েছি। কী সিদ্ধান্ত আসে সেটার জন্য সবাই অপেক্ষায় আছি।

×