ডাক্তার মালিক
দেশে হৃদরোগ চিকিৎসার পথিকৃৎ জাতীয় অধ্যাপক ব্রিগেডিয়ার (অব.) ডা. আব্দুল মালিক মারা গেছেন (ইন্না লিল্লাহি ওয়া ইন্না ইলাইহি রাজিউন)। তিনি ছিলেন ন্যাশনাল হার্ট ফাউন্ডেশনের প্রতিষ্ঠাতাও। তাঁর মৃত্যুতে শোক জানিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
মঙ্গলবার সকাল ৯টা ৪০ মিনিটে নিজের প্রতিষ্ঠিত ন্যাশনাল হার্ট ফাউন্ডেশনেই চিকিৎসাধীন অবস্থায় শেষ নিশ্বাস ত্যাগ করেন তিনি। তাঁর বয়স ছিল ৯৪ বছর।
ঢাকায় তাঁর তিনটি জানাজা অনুষ্ঠিত হয়। রাজধানীর শ্যামলী কলেজ গেটের জাতীয় হৃদরোগ ইনস্টিটিউট ও হাসপাতালে বাদ জোহর তার প্রথম জানাজা অনুষ্ঠিত হয়। বাদ আছর শ্যামলী শাহী জামে মসজিদে অনুষ্ঠিত হয় এই মহীরুহের দ্বিতীয় জানাজা। বাদ মাগরিব তৃতীয় জানাজা অনুষ্ঠিত হয় মিরপুর-২ নম্বরে হার্ট ফাউন্ডেশন অব বাংলাদেশে। আজ (বুধবার) সিলেটের পশ্চিমবাগে পারিবারিক কবরস্থানে তাঁকে দাফন করা হবে।
এক শোকবার্তায় প্রধানমন্ত্রী বলেন, ডা. মালিক বাংলাদেশের হৃদরোগ চিকিৎসায় পথিকৃৎ ছিলেন। একাধারে তিনি ছিলেন একজন সফল চিকিৎসক, খ্যাতনামা শিক্ষক এবং সমাজসেবক। মানবহিতৈষী কর্মকাণ্ডের জন্য তিনি নানাভাবে পুরস্কৃত এবং প্রশংসিত হয়েছেন। বাংলাদেশে হৃদরোগ চিকিৎসার ক্ষেত্রে তার অবদান চিরস্মরণীয় হয়ে থাকবে। প্রধানমন্ত্রী ডা. আব্দুল মালিকের বিদেহী আত্মার মাগফিরাত কামনা করেন এবং তার শোকসন্তপ্ত পরিবারের সদস্যদের প্রতি গভীর সমবেদনা জ্ঞাপন করেন।
এছাড়া ডা. আব্দুল মালিকের মৃত্যুতে গভীর শোক ও দুঃখ প্রকাশ করেছেন স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণমন্ত্রী জাহিদ মালেক। শোকবার্তায় স্বাস্থ্যমন্ত্রী বলেন, অধ্যাপক মালিক কেবল বাংলাদেশের চিকিৎসা ক্ষেত্রেই নয় বরং উপমহাদেশের চিকিৎসা ক্ষেত্রে এক বর্ষীয়ান উজ্জ্বল নক্ষত্র হিসেবে কাজ করে গেছেন। বাংলাদেশে চিকিৎসা ক্ষেত্রে তাঁর অবদান বলে শেষ করা যাবে না। এই মহান ব্যক্তিত্বের মৃত্যুজনিত ক্ষতি কখনোই পূরণ হওয়ার নয়। তিনি ছিলেন আমাদের সবার জন্য জাতীয় সম্পদ। স্বাস্থ্যমন্ত্রী অধ্যাপক মালিকের আত্মার শান্তি কামনা করেন এবং শোকসন্তপ্ত পরিবারের প্রতি গভীর সমবেদনা জ্ঞাপন করেন।
হৃদরোগ বিশেষজ্ঞ অধ্যাপক ডা. আব্দুল মালিক ২০০৪ সালে স্বাধীনতা পদক পুরস্কার ও ২০০৬ সালে জাতীয় অধ্যাপক হিসেবে নির্বাচিত হন। হৃদরোগ চিকিৎসার এই পথিকৃৎ ১৯২৯ সালের ১ ডিসেম্বর সিলেটের দক্ষিণ সুরমা উপজেলার কুচাই ইউনিয়নের পশ্চিমভাগ গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন।
তিনি ১৯৪৯ সালে ঢাকা মেডিক্যাল কলেজে ভর্তি হন। সেখান থেকে ১৯৫৪ সালে নভেম্বর মাসে উত্তীর্ণ হন। ১৯৫৮ সালে তাকে সিএমএইচ (সম্মিলিত সামরিক হাসপাতাল) পেশোয়ারে কর্নেল আজমিরের কাছে মেডিক্যাল স্পেশালিস্টের যোগ্যতা পরীক্ষার জন্য পাঠানো হয়। এতে প্রশিক্ষণের জন্য নির্বাচিত হন। ১৯৬৩ সালে সরকার তাকে বিদেশে উচ্চশিক্ষার জন্য পাঠায়। এরপর ১৯৬৪ সালে তিনি এমআরসিপি পাস করেন এবং হ্যামার স্মিথ হসপিটাল অ্যান্ড পোস্টগ্র্যাজুয়েট মেডিক্যাল স্কুল, লন্ডন থেকে কার্ডিওলজিতে উচ্চতর প্রশিক্ষণ নেন।
আবদুল মালিকের স্ত্রী আশরাফুন্নেসা খাতুন। তিনি দুই ছেলে ও এক মেয়ের জনক ছিলেন। তার মেয়ে ডা. ফজিলাতুন্নেছা মালিক ন্যাশনাল হার্ট ফাউন্ডেশন হাসপাতাল অ্যান্ড রিসার্চ ইনস্টিটিউট, ঢাকার কার্ডিওলজি বিভাগের অধ্যাপক। তার ছেলে মো. মাসুদ মালিক একজন ব্যবসায়ী এবং অপর ছেলে মো. মনজুর মালিক বর্তমানে কানাডায় কর্মরত।