ঢাকা, বাংলাদেশ   মঙ্গলবার ১৯ মার্চ ২০২৪, ৫ চৈত্র ১৪৩০

তীব্রতর লোডশেডিং পরিস্থিতি 

অসহায় আত্মসমর্পন বিদ্যুৎ বিভাগের

প্রকাশিত: ১৫:২৯, ৪ জুন ২০২৩; আপডেট: ১৮:২৩, ৪ জুন ২০২৩

অসহায় আত্মসমর্পন বিদ্যুৎ বিভাগের

প্রতিমন্ত্রী নসরুল হামিদ।

উচ্চ তাপমাত্রায় নগরজীবনে যখন হাঁসফাঁস অবস্থা তখন যেনো আগুনে ঘি ঢালছে ঘন্টার পর ঘন্টা লোডশেডিং।

শতভাগ বিদ্যুতায়িত দেশে বিদ্যুতের এমন পরিস্থিতিতে যখন সমালোচনা সব জায়গায় তখন যেনো অসহায় আত্মসমর্পণ ছাড়া আরও কোনো উপায় নেই বিদ্যুৎ বিভাগের কাছে। আপাতত: জনগণের কাছে বর্তমান পরিস্থিতির জন্য দুঃখপ্রকাশ করা ছাড়া কিছুর নেই উল্লেখ করে খোদ বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ প্রতিমন্ত্রী নসরুল হামিদ বিদ্যুৎ বিভাগের পক্ষ থেকে দুঃখ প্রকাশ করেন। তিনি বলেছেন, লোডশেডিং পরিস্থিতি আসলে একটু বড় পর্যায়ে চলে গেছে। পরিস্থিতি অনেকটা অসহনীয় হয়ে গেছে। বিদ্যুৎ বিভাগ থেকে আমরা দুঃখ প্রকাশ করছি। আমরা চেষ্টা করছি অচিরেই এ অবস্থা থেকে কীভাবে পরিত্রাণ পাওয়া যায়। আশায় করছি আগামী ১০ থেকে ১৫ দিনের মধ্যে পরিস্থিতি স্বাভাবিক হবে।

রবিবার সচিবালয়ে সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপকালে নসরুল হামিদ বলেন, বেশ কিছুদিন ধরে গ্রাহকরা লক্ষ্য করছে যে, লোডশেডিংয়ের জায়গাটা বেড়ে গেছে। আমরা বার বার বলে আসছি কয়লা ও তেল এগুলোর যোগান দিতে আমাদের দীর্ঘ সময় লাগছে। এজন্য আমাদের লোডশেডিংয়ের মাত্রা ধীরে ধীরে বাড়ছে। পরিস্থিতি অসহনীয় হয়ে গেছে আমরাও বুঝতে পারছি। আমাদের কয়লার জোগান দিতে হচ্ছে, তেলের জোগান দিতে হচ্ছে, গ্যাসের জোগান দিতে হচ্ছে। আবার শিল্পে গ্যাস দিতে হচ্ছে। সব পরিস্থিতি একসঙ্গে এসেছে।

তিনি বলেন, বিদ্যুৎ বিভাগ থেকে আমরা চেষ্টা করছি, এটা কত দ্রুত সমাধান করা যায়। সরকারের পক্ষ থেকে চেষ্টা করা হচ্ছে, কত দ্রুত পায়রাতে কয়লা আনা যায়। ওখানে আমাদের পাওয়ার প্ল্যান্টটি অর্ধেক ক্যাপাসিটিতে চলছে। বড় পুকুরিয়াতেও আমাদের বিদ্যুৎ কেন্দ্রটি অর্ধেক ক্যাপাসিটিতে চলছে। আমাদের লিকুইড ফুয়েল নির্ভর যে পাওয়ার প্ল্যান্টগুলো ছিল, সেগুলোর প্রায় অর্ধেক ক্যাপাসিটিতে চলছে। সেজন্য আমাদের লোডশেডিংয়ের মাত্রাটা অনেক বেড়ে গেছে, বিশেষ করে ঢাকা শহরের আশপাশেসহ গ্রাম অঞ্চলে বিভিন্ন জায়গাতে। আমরা সকাল থেকে এটা মনিটর করছি।

তিনি বলেন, তাপপ্রবাহও বেড়ে গেছে। তাপমাত্রা কোথাও ৪১ ডিগ্রি সেলসিয়াস হয়ে গেছে। এজন্য আমাদের পিক আওয়ারে ডিমান্ডও বেড়ে গেছে। আমাদের হাতে যে পাওয়ার প্ল্যান্ট মজুত ছিল বিদ্যুৎ সরবরাহ নিরবচ্ছিন্ন রাখার জন্য প্রস্তুত রাখছিলাম, সেটাও আমরা জ্বালানির কারণে দিতে পারছি না।
পরিস্থিতি উন্নতির জন্য এখন কেন চেষ্টা করা হচ্ছে, আগে কেন করা হয়নি জানতে চাইলে নসরুল হামিদ বলেন, আমরা দুই মাস আগে থেকে চেষ্টা করছিলাম। আমরা জানতাম যে এ রকম একটা পরিস্থিতির দিকে যেতে পারে। সেটার সমাধান নিয়ে আমরা চেষ্টা করছিলাম।

প্রতিমন্ত্রী আরও বলেন, তবে আমাদের অনেক কিছু দেখতে হয়। আমাদের অর্থনৈতিক বিষয় আছে, সময়মতো এলসি খোলার বিষয়ে আছে, সময় মতো জ্বালানি পাওয়ার বিষয় আছে। সেই বিষয়গুলোকে আমাদের একসঙ্গে সমন্বয় করে নিতে হয়। তবে আশার কথা হলো, সামাল দেওয়ার একটা ব্যবস্থা অন্তত হয়ে গেছে। সেজন্য আমাদের ১/২ সপ্তাহ সময় দিতে হবে। সে সময় পর্যন্ত সবাইকে কিছুটা কষ্ট ভোগ করতে হবে।

এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, আমরা দেখছি আমাদের আড়াই হাজার মেগাওয়াটের মতো লোডশেড হচ্ছে, এটা থেকে বেরিয়ে আমরা ধীরে ধীরে তা কমিয়ে আনবো। মনে হচ্ছে সেটা আমরা করতে পারবো।
এরমধ্যে গুজব ছড়ানো হচ্ছে পেট্রোল পাম্পে অকটেন দিতে পারছে না- এ বিষয়ে দৃষ্টি আকর্ষণ করলে জ্বালানি প্রতিমন্ত্রী বলেন, পেট্রোলের তো অভাব নেই। আমরা যেটা আনার চেষ্টা করছি সেটা হেভি ফুয়েল, সেটা দিয়ে তো গাড়ি চলে না। আমরা প্রচুর পরিমাণ গ্যাস পাওয়ার চেষ্টা করছি।
প্রতিমন্ত্রী বলেন, আমরা সর্বোচ্চ পরিমাণ গ্যাস উৎপাদন করতে যাচ্ছি এর অধিকাংশই আমরা বিদ্যুৎ এবং ইন্ডাস্ট্রিতে দিচ্ছি। গরমের কারণে চাহিদা বেড়ে গেছে। জনগণের উদ্দেশে প্রতিমন্ত্রী বলেন, শঙ্কিত হবেন না, এখনো বিদ্যুৎ পরিস্থিতি আমাদের নিয়ন্ত্রণে রয়েছে। 

পায়রা বিদ্যুৎ কেন্দ্রে কতদ্রুত কয়লা নিয়ে আসা যায় সেই চেষ্টা চলছে জানিয়ে প্রতিমন্ত্রী বলেন, ১০ থেকে ১৫ দিনের মধ্যে আমরা এই অবস্থা থেকে বের হয়ে আসতে পারবো। সারা দেশে আড়াই হাজার মেগাওয়াটের মতো  লোডশেডিং হচ্ছে। ফুয়েলের জোগান দিতে সমস্যা হচ্ছে। পরিস্থিতি অসহনীয় হয়েছে, সরকার সেটা জানে। কিছু প্ল্যান্ট অর্ধেক জ্বালানি দিয়ে চলছে।মূলত জ্বালানি সংকটের কারণেই বিদ্যুৎ সংকট হচ্ছে। এগুলো গত ২ মাস ধরেই সমাধানের চেষ্টা হচ্ছে। আর্থিক কারণসহ নানা কারণে এখনও সমাধান করা যায়নি। প্রতিমন্ত্রীর এই বক্তব্যকেই সংকটকালীন সময়ে বিদ্যুৎ বিভাগের অসহায় আত্মসমর্পন হিসেবে দেখছেন সংশ্লিষ্টরা।

 

স্বপ্না

×