ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২০ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

কে হচ্ছেন রাষ্ট্রপতি, অপেক্ষার  প্রহর বাড়ল

সংসদ রিপোর্টার

প্রকাশিত: ২৩:১৫, ৭ ফেব্রুয়ারি ২০২৩; আপডেট: ০২:৩১, ৮ ফেব্রুয়ারি ২০২৩

কে হচ্ছেন রাষ্ট্রপতি, অপেক্ষার  প্রহর বাড়ল

রাষ্ট্রপতির আসনে কে বসছেন বা বঙ্গভবনের পরবর্তী বাসিন্দা কে হচ্ছেন- তা জানতে অপেক্ষার প্রহর বাড়ল

রাষ্ট্রপতির আসনে কে বসছেন বা বঙ্গভবনের পরবর্তী বাসিন্দা কে হচ্ছেন- তা জানতে অপেক্ষার প্রহর বাড়ল। রাষ্ট্রপতি পদে আওয়ামী লীগের প্রার্থী মনোয়ন চূড়ান্ত করতে দলের সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে দায়িত্ব দিয়েছেন সংসদীয় দলের সদস্যরা। আওয়ামী লীগের সংসদীয় দলের সভা  থেকে তাকে এ দায়িত্ব দেওয়া হয়। আগামী ১২ ফেব্রুয়ারি রাষ্ট্রপতি পদে মনোয়নপত্র জমা দেওয়ার শেষ দিনে আওয়ামী লীগের প্রার্থী মনোনয়ন জমা দেবেন। এর আগে দলের প্রার্থী তা প্রকাশ করা হবে না বলে জানা গেছে।
মঙ্গলবার রাতে জাতীয় সংসদ ভবনের নবম তলাস্থ সরকারি দলের সভাকক্ষে অনুষ্ঠিত আওয়ামী লীগের সংসদীয় দলের সভায় সংসদ সদস্যরা রাষ্ট্রপতি কে হবেন তা ঠিক করতে প্রধানন্ত্রী শেখ হাসিনাকে দায়িত্ব দেওয়া হয়। সভা শেষে আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের সাংবাদিকদের এ তথ্য জানান। প্রধানমন্ত্রী ও আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনার সভাপতিত্বে বৈঠকটি অনুষ্ঠিত হয়। 
বৈঠক সূত্র জানায়, আগামী নির্বাচনকে সামনে রেখে আওয়ামী লীগের সংসদ সদস্যদের গণসংযোগ বৃদ্ধি, অন্তর্কলহ দূর করে ঐক্যবদ্ধভাবে দলের বিজয়ের ব্যাপারে কাজ করার নির্দেশ দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। আগামী নির্বাচন শতভাগ সুষ্ঠু হবে এবং আমাদের জন্য চ্যালেঞ্জিং হবে উল্লেখ করে বলেন, প্রত্যেক এমপিকে এখন থেকেই নির্বাচনমুখী হতে হবে। বর্তমান সরকারের গত ১৪ বছরের উন্নয়ন ও সাফল্যগুলো

ভোটারদের সামনে তুলে ধরার পাশাপাশি বিএনপি-জামায়াত জোটের অতীত দুঃশাসন, অগ্নিসন্ত্রাসসহ তাদের সকল অপকর্মগুলো তুলে ধরতে হবে। পাশাপাশি আগামী নির্বাচনকে কেন্দ্র করে ব্যাপক ষড়যন্ত্র হতে পারে উল্লেখ করে এ বিষয়ে নেতাকর্মীদের সতর্ক থাকারও নির্দেশ দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী।

বৈঠক সূত্র জানায়, সভায় আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের রাষ্ট্রপতি পদে প্রার্থী মনোনয়ন চূড়ান্ত করার জন্য প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নাম প্রস্তাব করেন। এর পর দলের সব সংসদ সদস্য সর্বসম্মতিক্রমে শেখ হাসিনার ওপর দায়িত্ব দেওয়ার প্রস্তাবটি সমর্থন করেন। এর ফলে দেশের ২২তম রাষ্ট্রপ্রধান কে হচ্ছেন তা জানতে গোটা জাতিকে আগামী ১২ তারিখ পর্যন্ত অপেক্ষা করতে হবে। 
সূত্র জানায়, সভার শুরুতে রাষ্ট্রপতি নির্বাচন প্রসঙ্গ তোলেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। তিনি বলেন, এ ব্যাপারে আপনাদের মতামত নেওয়ার জন্য এই সভা আহ্বান করা হয়েছে। এ সময় দলের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের দাঁড়িয়ে বলেন, রাষ্ট্রপতি পদে মনোনয়নের জন্য আমরা দলের সভাপতি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে দায়িত্ব দেওয়ার প্রস্তাব করছি। তিনি রাষ্ট্রপতি পদে দলের প্রার্থী চূড়ান্ত করবেন। তিনি যাকে মনোনয়ন দেবেন আমরা সবাইকে তাকে ভোট দিয়ে নির্বচিত করব। এ সময় সব এমপি এই প্রস্তাবকে সমর্থন করে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে এ দায়িত্ব দেন। তখন প্রধানমন্ত্রী বলেন, আপনারা এই দায়িত্ব দিলেন, আমি চিন্তা-ভাবনা করে এ ব্যাপারে সিদ্ধান্ত নেব। 
 বৈঠক সূত্র জানায়, এর পর প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা আগামী দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন প্রসঙ্গে কথা বলেন। তিনি বলেন, আগামী নির্বাচন নিয়ে এখন থেকেই চিন্তা-ভাবনা করতে হবে। মনে রাখতে হবে আগামী নির্বাচন সহজ হবে না। এ নির্বাচন চ্যালেঞ্জিং হবে। সে অনুযায়ী নিজ নিজ এলাকায় দলের নেতাকর্মীদের নির্বাচনের জন্য উজ্জীবিত করতে হবে। ভোটারদের কাছে গিয়ে আওয়ামী লীগের টানা এই ১৪ বছরের সরকারের উন্নয়নগুলো তুলে ধরতে হবে। 
দলের এমপিদের উদ্দেশ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, সবাই মনে রাখবেন, এবারের নির্বাচনকে কেন্দ্র করে ব্যাপক ষড়যন্ত্র হতে পারে, অপপ্রচার হতে পারে। নির্বাচনের আগে দেশে এক ধরনের অরাজকতা তৈরির চেষ্টা হতে পারে। এসব বিষয়ে সবাইকে সতর্ক থাকতে হবে। যে কোনো ষড়যন্ত্র, অস্থিতিশীলতা তৈরির চেষ্টা প্রতিহত করতে হবে। এ জন্য দলের নেতাকর্মীদের প্রস্তুত থাকতে হবে। 
সূত্র জানায়, দলের সংসদ সদস্যদের উদ্দেশ্যে করে প্রধানমন্ত্রী আরও বলেন, মনে রাখতে হবে দলের মনোনয়ন বোর্ড আছে, এই সংসদীয় বোর্ড যাকে মনোনয়ন দেবে সেটাই চূড়ান্ত। সবাইকে সেই প্রার্থীর পক্ষে কাজ করতে হবে। উন্নয়ন কাজ চলছে, চলবে। কিন্তু সবাইকে মানুষের কাছে গিয়ে ভোট চাইতে হবে, তাদের মন জয় করতে হবে। নির্বাচনে বিএনপি আসবে, নির্বাচন প্রতিদ্বন্দ্বিতামূলক হবে। 
এ সময় প্রধানমন্ত্রী দলের নেতাকর্মীদের বিএনপির অতীত কুকর্মগুলো জনগণের সামনে ভালোভাবে তুলে ধরার নির্দেশ দিয়ে বলেন, জিয়াউর রহমান সংবিধান লংঘন করে অবৈধভাবে রাষ্ট্রক্ষমতা দখল করে বিএনপি গঠন করেছিল। যেহেতু জিয়ার ক্ষমতা দখল অবৈধ, তাই তার হাতে তৈরি রাজনৈতিক দল বিএনপিও অবৈধ। এ বিষয়গুলো মানুষের কাছে তুলে ধরতে হবে। 
বৈঠক শেষে সাংবাদিকদের কাছে আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের বলেন, সংসদীয় দলের বৈঠকে দলের পক্ষে রাষ্ট্রপতি পদে প্রার্থিতা চূড়ান্ত করতে আওয়ামী লীগের সংসদীয় দলের নেত ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার হাতে ক্ষমতা অর্পণের প্রস্তাব করা হয়েছে। সেটি সর্বসম্মতভাবে গৃহীত হয়েছে। এখন ঐক্যের প্রতীক শেখ হাসিনা সব জল্পনা-কল্পনার অবসান ঘটাবেন। বৈঠকে ওবায়দুল কাদের ছাড়াও সংসদ উপনেতা বেগম মতিয়া চৌধুরী ও চিফ হুইপ নূর-ই-আলম চৌধুরী বক্তব্য রাখেন। 
উল্লেখ্য, আগামী ২৪ এপ্রিল দ্বিতীয় মেয়াদ পূর্ণ হচ্ছে রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদের। পরপর দুই মেয়াদে রাষ্ট্রপতি হয়েছেন তিনি। দেশের সংবিধান অনুযায়ী, তার আর রাষ্ট্রপতি হওয়ার সুযোগ নেই। সে কারণে নতুন কাউকে দেখা যাবে তার জায়গায়। সাংবিধানিক বাধ্যবাধকতা অনুযায়ী, বর্তমান রাষ্ট্রপতির মেয়াদ শেষ হওয়ার আগের ৯০ থেকে ৬০ দিনের মধ্যে নতুন রাষ্ট্রপতি নির্বাচন শেষ করতে হবে। সে হিসেবে, নির্বাচন কমিশন তফসিলও ঘোষণা করেছে।
তফসিল অনুযায়ী, রাষ্ট্রপতি পদে ভোট গ্রহণ করা হবে ১৯ ফেব্রুয়ারি। এখানে ভোটার খোদ সংসদ সদস্যরা। আগ্রহী প্রার্থীরা ১২ ফেব্রুয়ারি মনোনয়নপত্র জমা দিতে পারবেন। ১৩ ফেব্রুয়ারি যাচাই-বাছাইয়ের পর ১৪ ফেব্রুয়ারি মনোনয়নপত্র প্রত্যাহার করা যাবে।
নিয়ম অনুযায়ী, রাষ্ট্রপতি পদে রাজনৈতিক দলের পক্ষ থেকে মনোনয়ন দেওয়া হয় এবং সংসদ সদস্যদের ভোটে রাষ্ট্রপতি নির্বাচিত হন। সংবিধানের ৪৮(১) অনুচ্ছেদে বলা হয়েছে, ‘বাংলাদেশের একজন রাষ্ট্রপতি থাকিবেন, যিনি আইন অনুযায়ী সংসদ-সদস্যগণ কর্তৃক নির্বাচিত হইবেন।’
যেহেতু জাতীয় সংসদে সংখ্যাগরিষ্ঠ রাজনৈতিক দল আওয়ামী লীগ, তাই ধরে নেওয়া হয়, তারা যাকেই এ পদে প্রার্থী করবে, সে প্রার্থীই বিনাপ্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিত হবেন। আনুষ্ঠানিকতা শেষে আওয়ামী লীগ মনোনীত প্রার্থীই হবেন দেশের ২২তম রাষ্ট্রপতি। সেক্ষেত্রে রাষ্ট্রপতি পদে একক প্রার্থিতার কারণে ভোট গ্রহণের প্রয়োজন পড়বে না। ১৪ ফেব্রুয়ারি রাষ্ট্রপতি প্রার্থিতা প্রত্যাহারের দিনেই একক প্রার্থীকে বেসরকারিভাবে বিজয়ী ঘোষণা করা হবে। 
উল্লেখ্য, ১৯৯১ সালে দেশে সংসদীয় গণতন্ত্র প্রবর্তনের পর একাধিক প্রার্থী থাকায় একবার মাত্র রাষ্ট্রপতি পদে নির্বাচনের প্রয়োজন হয়েছে। এ ছাড়া প্রতিবারই একক প্রার্থীকে বিজয়ী ঘোষণা করা হয়েছে। ১৯৯১ সালে ক্ষমতাসীন বিএনপির পাশাপাশি তৎকালীন বিরোধী দল আওয়মী লীগের পক্ষ থেকে রাষ্ট্রপতি পদে দলীয় প্রার্থী মনোনয়ন দেওয়ায় সেবার রাষ্ট্রপতি পদে নির্বাচনের আয়োজন হয়েছিল।

×