ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০

হঠাৎ অস্থির ডিম মুরগির বাজার

অর্থনৈতিক রিপোর্টার

প্রকাশিত: ০১:১১, ৪ ফেব্রুয়ারি ২০২৩

হঠাৎ অস্থির ডিম মুরগির বাজার

.

মাত্র তিনদিনের ব্যবধানে অতিরিক্ত দাম বাড়ায় ডিম ও মুরগির বাজারে হঠাৎ করেই অস্থিরতা তৈরি হয়েছে। প্রতি ডজন ডিমে ১৫ টাকা দাম বেড়ে খুচরা বাজারে বিক্রি হচ্ছে ১৪০-১৪৫ টাকায়। ডিমের সঙ্গে পাল্লা দিয়ে বাড়ছে সব ধরনের মুরগির দামও।
প্রতিকেজি ব্রয়লার মুরগিতে ৩০-৩৫ টাকা পর্যন্ত দাম বেড়ে খুচরা বাজারে এখন ১৮৫-১৯০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। পাকিস্তানিখ্যাত সোনালি এবং কক জাতীয় লেয়ার মুরগির দামও চড়া। এসব মুরগি কিনতে ভোক্তাকে কেজিপ্রতি ৩১০-৩২০ টাকা পর্যন্ত গুনতে হচ্ছে। ব্রয়লার মুরগি ও ডিমের দাম বাড়ায় কষ্ট বেড়েছে নি¤œ আয়ের মানুষের। এ ছাড়া চাল, আটা, ডাল ও ভোজ্যতেল বিক্রি হচ্ছে আগের দামে। তবে কমেছে পেঁয়াজ ও আলুর দাম। সরকার নির্ধারিত মূল্যের  চেয়ে বেশি দামে বিক্রি চিনি। মাছ-মাংসের দাম স্থিতিশীল থাকলেও  কয়েকটি সবজির দাম বেড়েছে। আবার টমেটো ও শসার মতো সবজির দাম কমতির দিকে রয়েছে। নিত্যপণ্যের বাজার ঘুরে ও টিসিবি সূত্রে জানা গেছে এসব তথ্য।
শুক্রবার রাজধানীর কাওরান বাজার, ফার্মগেট কাঁচা বাজার, রায়ের বাজার সিটি করপোরেশন কাঁচা বাজার এবং মোহাম্মদপুর টাউন হল মার্কেটসহ আরও কয়েকটি নিত্যপণ্যের বাজারে চড়া দামে বিক্রি হচ্ছে সব ধরনের মুরগি ও ডিম। একই অবস্থা বিরাজ করছে অন্যান্য বাজারেও। যারা এক সপ্তাহ আগে মুরগি কিনেছেন, শুক্রবার বাজারে এসে মুরগির দাম শুনে চমকে গেছেন তারা। মাত্র তিনদিনের ব্যবধানে সচরাচর এভাবে দাম বাড়ার তেমন রেকর্ড নেই নিত্যপণ্যের বাজারে।
মোহাম্মদপুর টাউন হল মার্কেট থেকে মুরগি কিনছিলেন বাঁশবাড়ির বাসিন্দা বেসরকারি কর্মকর্তা আকতার হোসেন। তিনি অনেকটা ক্ষোভ প্রকাশ করেই জানালেন, গত সপ্তাহে ১৫০-১৫৫ টাকায় ব্রয়লার মুরগি বিক্রি হয়েছে। এখন সেই একই মুরগি ১৯০ টাকা দিয়ে কিনতে হলো। হঠাৎ করে কেন এত দাম বাড়ল?  এর পেছনে কোন সিন্ডিকেট জড়িত তাদের খুঁজে বের করতে হবে সরকারকেই। কাওরান বাজারের মুরগি বিক্রেতা আসলাম জানান, খামারিরা মুরগির দাম বাড়িয়ে দিচ্ছে। এ কারণে পাইকারি বাজার চড়া। তিনি জানান, পাইকারি মার্কেটে দাম বাড়লে খুচরা দাম বাড়বে এটাই স্বাভাবিক।
এদিকে, মুরগি ও ডিমের দাম বাড়া নিয়ে সিন্ডিকেট ব্যবসায়ীরা একে অপরের ঘারে দোষ চাপিয়ে দায়মুক্ত হতে চাচ্ছেন। খামারিদের সংগঠন পোল্ট্রি অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি মো. সুমন হাওলাদার জানান, মুরগির দাম বাড়ার জন্য কর্পোরেট খামার ব্যবসায়ীরা দায়ী। গত আগস্ট মাস থেকে বেশ কয়েকটি করপোরেট প্রতিষ্ঠান ইচ্ছেমতো মুরগির বাচ্চার দাম বাড়িয়ে যাচ্ছে। তিনি জানান, এতে ছোট খামারিদের অনেকেই এখন উৎপাদনে নেই। কিন্তু করপোরেটদের কাছে এখন প্রচুর পরিমাণ মুরগি রয়েছে। এসব মুরগি এখন বেশি দামে বিক্রি করা হচ্ছে।
তিনি বলেন, বাজারে কর্পোরেট কোম্পানিগুলোর শক্ত সিন্ডিকেট রয়েছে। তারা ১০ দিনে ১০ টাকার বাচ্চা ৪৩ টাকা করেছে। গত বছরের আগস্টের পর থেকে দফায় দফায় ফিডের দাম বাড়িয়েছে। যার প্রভাবে টিকতে না পেরে অনেক ছোট খামারি খামার বন্ধ করে দিয়েছেন। এখন তারাই (করপোরেট কোম্পানি) বাজার নিয়ন্ত্রণ করছেন।
অন্যদিকে বড়  খামারিরা এ ব্যাপারে কোনো কথা না বললেও সংশ্লিষ্ট সূত্র বলছে, আফতাব, প্যারাগনসহ বড় বড় প্রতিষ্ঠানে বিভিন্ন ইস্যুতে মুরগি ও ডিমের দাম বাড়িয়ে দিচ্ছে। সম্প্রতি বিদ্যুৎ ও গ্যাসের দাম বাড়ানোর সুযোগ নিয়েছে বড় প্রতিষ্ঠানগুলো। এ ছাড়া ছোট খামারিদেরও একটি পৃথক সিন্ডিকেট রয়েছে দেশে। গত বছরের আগস্টে  জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরের অভিযানে এসব খামার চিহ্নিত করা হয়। কিন্তু সেইসব খামারিদের সতর্ক করা ছাড়া আর কোনো শাস্তি দেওয়া হয়নি।
বাজার ঘুরে দেখা গেছে, খুচরা বাজারে প্রতি ডজন ডিম ১৪০-১৪৫ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। অর্থাৎ ফের ডিমের দাম আবার প্রতি ডজন ১৫০ টাকা হওয়ার দ্বারপ্রান্তে। বাংলাদেশে ডিমের দাম বাড়লেও প্রতিবেশী রাষ্ট্র ভারতে ডিমের দাম সেভাবে বাড়েনি। সেখানে (ভারতের কলকাতায়) প্রতি ডজন ডিম বিক্রি হচ্ছে ৭৫-৭৮ রুপিতে।
ডিমের দাম নিয়ন্ত্রণে সম্প্রতি বাংলাদেশের পক্ষ থেকে বেশ ক’জন উদ্যোক্তা ডিম আমদানির জন্য সরকারের কাছে আবেদন করলেও দেশীয় শিল্প রক্ষায় তাতে সাড়া দেয়নি বাণিজ্য মন্ত্রণালয়। দেশীয় খামার মালিকদের দাবির প্রেক্ষিতে ডিম আমদানির সুযোগ দেওয়া হচ্ছে না। আর এই সুযোগের অপব্যবহার করা হচ্ছে বলে অভিযোগ রয়েছে। সংশ্লিষ্টরা বলছেন, দেশে ডিমের দাম নাগালের মধ্যে আমদানির সুযোগ দেওয়া উচিত। এতে করে সিন্ডিকেট ব্যবসায়ীদের কারসাজি বন্ধ হবে। এ ছাড়া এর ফলে বড় কোম্পানিগুলোর মনোপলি ব্যবসার কৌশল ভেঙে যাবে বলে মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা।
সরকারি বাজার নিয়ন্ত্রণকারী সংস্থা ট্রেডিং করপোরেশন অব বাংলাদেশের (টিসিবি) তথ্যমতে, খুচরা বাজারে দাম বেড়ে প্রতিহালি ডিম ৪৩-৪৭ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। আর এতে গত এক মাসে দাম বৃদ্ধি পেয়েছে প্রায় ২৪ শতাংশ। সংস্থাটির মতে, ব্রয়লার মুরগি ১৭০-১৮৫ টাকায় অর্থাৎ এক মাসের ব্যবধানে ২১ শতাংশ পর্যন্ত দাম বেড়েছে। এ ছাড়া মুদিপণ্যের বাজারে প্রতিকেজি চিনি বিক্রি হচ্ছে ১১৫-১২০ টাকায়, যা সরকার নির্ধারিত মূল্যের চেয়ে বেশি। মাছ-মাংস বিক্রি হচ্ছে আগের দামে। সবজির বাজারে দাম কমে প্রতিকেজি টমেটো ৩০-৪০ এবং শসা ৪০-৫০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।

 

×