ঢাকা, বাংলাদেশ   রোববার ০৫ মে ২০২৪, ২২ বৈশাখ ১৪৩১

সংসদে প্রধানমন্ত্রী

গত বছর ১১ লাখ লোকের কর্মসংস্থান হয়েছে বিদেশে

সংসদ রিপোর্টার

প্রকাশিত: ০০:০১, ২ ফেব্রুয়ারি ২০২৩

গত বছর ১১ লাখ লোকের কর্মসংস্থান হয়েছে বিদেশে

গত বছর ১১ লাখ লোকের কর্মসংস্থান

প্রধানমন্ত্রী ও সংসদ নেতা শেখ হাসিনা সাগরের পানি থেকে হাইড্রো বিদ্যুৎ উৎপাদনের বিষয়ে আলোচনা চলছে জানিয়ে বলেছেন, সাগরের পানি থেকে হাইড্রো বিদ্যুৎ উৎপাদন নতুন ধারণা। এ বিষয়ে যে সকল কোম্পানি প্রস্তাব দিয়েছে তাদের সঙ্গে আলোচনা চলছে। যদি সম্ভব হয় তাহলে মাতারবাড়ি, মহেষখালী বা বাঁশখালীতে হাইড্রো বিদ্যুৎ উৎপাদনের সম্ভাবতা যাচাই করা হবে।
স্পিকার ড. শিরীন শারমিন চৌধুরীর সভাপতিত্বে বুধবার জাতীয় সংসদ অধিবেশনে টেবিলে উত্থাপিত প্রশ্নোত্তরে সরকারদলীয় সংসদ সদস্য আনোয়ার হোসেন খানের প্রশ্নের লিখিত জবাবে প্রধানমন্ত্রী এ সব কথা বলেন।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, বিশ্বের কোনো কোনো দেশে সমুদ্রের জোয়ার-ভাটাকে কাজে লাগিয়ে বিদ্যুৎ উৎপাদন করা হয়, যা ব্যয়সাপেক্ষে এবং তা বাণিজ্যিকভাবে ফলপ্রসূ হয়নি। ব্যয়সাপেক্ষ হওয়ায় এ ধরনের বিদ্যুৎকেন্দ্র স্থাপনের কোনো পরিকল্পনা এই মুহূর্তে নেই।
প্রধানমন্ত্রী এ সময় সাগরের পানি থেকে হাইড্রো বিদ্যুৎ উৎপাদনের ধারণার কথা জানান। এটা খুবই ব্যয়সাপেক্ষ উল্লেখ করে তিনি বলেন, ভবিষ্যতে এই ধরনের বিদ্যুতকেন্দ্র নির্মাণের খরচ কমে এলে বঙ্গোপসাগরের জোয়ার-ভাটাকে কাজে লাগিয়ে বিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মাণের পরিকল্পনা গ্রহণ করা যেতে পারে।
সরকারের নেওয়া বেশকিছু পদক্ষেপের ফলে গত এক বছর অর্থাৎ ২০২২ সালে রেকর্ডসংখ্যক প্রায় ১১ লাখ ১৩ হাজার ৩৭৪ কর্মীর বিদেশে কর্মসংস্থান হয়েছে বলে জানিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। সরকারি দলের কাজিম উদ্দিন আহম্মেদের প্রশ্নের লিখিত জবাবে প্রধানমন্ত্রী জানান, এই ১১ লাখ ১৩ হাজার ৩৭৪ কর্মীর মধ্যে নারী কর্মীর সংখ্যা এক লাখ ৫ হাজার ৪৬৬ জন। 
তিনি জানান, সরকারি রিক্রুটিং এজেন্সি বাংলাদেশ ওভারসিজ এমপ্লয়মেন্ট অ্যান্ড সার্ভিসেস লিমিটেডের (বোয়েসেল) মাধ্যমে ২০২২ সালে ৬১৫ জন পেশাজীবী এবং ১৭ হাজার ৯৭৮ জন দক্ষ কর্মীসহ মোট ১৮ হাজার ৫৯৩ জন কর্মী  বিদেশে কর্মসংস্থান লাভ করেছে। বর্তমানে ১৬৮টি দেশে শ্রমশক্তি রপ্তানি করা হচ্ছে। কিন্তু সরকার মধ্যপ্রাচ্যকেন্দ্রিক শ্রম বাজার নির্ভরতা কমাতে চায়। সে জন্য পূর্বইউরোপ ও পূর্ব এশিয়ার নতুন কিছু দেশে শ্রমিক রপ্তানি চেষ্টা চলছে। তিনি জানান, আওয়ামী লীগের ২০১৮ সালের নির্বাচনী প্রতিশ্রুতি অনুযায়ী প্রতি উপজেলা থেকে গড়ে বছরে এক হাজার কর্মী পাঠানোর জন্য একটি কর্মপরিকল্পনা নেওয়া হয়েছে। 
সরকারি দলের সংসদ সদস্য বেনজির আহমদের প্রশ্নের লিখিত জবাবে প্রধানমন্ত্রী জানান, ২০০৮-০৯ অর্থবছরে যেখানে মোট খাদ্যশস্য উৎপন্ন হতো তিন কোটি ২৮ লাখ ৯৬ হাজার টন, ২০২১-২২ অর্থবছরে তা  বেড়ে দাঁড়িয়েছে চার কোটি ৫৮ লাখ ৯৬ হাজার টন। বর্তমানে ৭০টির বেশি দেশে সবজি ও ফল রপ্তানি হচ্ছে এবং কৃষি পণ্য রপ্তানিতে আমরা ১০০ কোটি ডলারের মাইলফলক ছাড়িয়ে গেছে। তিনি জানান, বর্তমান বাংলাদেশ বিশ্বে চাল উৎপাদনে তৃতীয় স্থানে, সবজি ও পেঁয়াজে তৃতীয় স্থান, পাট উৎপাদনে দ্বিতীয়, চা উৎপাদনে ৪র্থ এবং আলু ও আম উৎপাদনে ৭ম স্থানে উন্নীত হয়েছে।

চলতি অর্থবছরে ১০ মিলিয়ন ডলার রেমিটেন্স অর্জিত ॥ বিরোধী দল জাতীয় পার্টির সংসদ সদস্য ডা. রুস্তম আলী ফরাজীর প্রশ্নের লিখিত জবাবে প্রধানমন্ত্রী জানান, চলতি ২০২২-২৩ অর্থবছরে ডিসেম্বর পর্যন্ত ১০ হাজার মিলিয়ন ডলারের বেশি রেমিট্যান্স অর্জিত হয়েছে। তিনি বলেন, বাংলাদেশ একটি উচ্চ রেমিটেন্সপ্রাপ্ত দেশ। বিশ্বব্যাপী কোভিড-১৯ মহামারির পরও ২০২০-২০২১ এবং ২০২১-২০২২ অর্থবছরে প্রাপ্ত রেমিটেন্স যথাক্রমে ২৪ দশমিক ৭৭ এবং ২১ দশমিক ০৩ বিলিয়ন মার্কিন ডলার। এ ছাড়া ২০২২-২৩ অর্থবছরের ডিসেম্বর পর্যন্ত প্রায় ১০ হাজার ৪৯৩ দশমিক ২৬ মিলিয়ন ডলার রেমিটেন্স অর্জিত হয়েছে।
রেমিটেন্সের প্রবাহ বৃদ্ধির লক্ষ্যে গত কয়েক বছরে গৃহীত নানা পদক্ষেপের কথা তুলে ধরে প্রধানমন্ত্রী বলেন, বৈধভাবে ব্যাংকের মাধ্যমে রেমিটেন্স পাঠাতে কর্মীদের উৎসাহিত করা; অধিক কর্মী পাঠানের মাধ্যমে রেমিটেন্সের প্রবাহ বৃদ্ধি করা; অধিক রেমিটেন্স পাঠাতে উৎসাহিত করার লক্ষ্যে অনিবাসী/প্রবাসী বাংলাদেশী ওয়েজ আর্নারদের জন্য সরকার কর্তৃক বাণিজ্যিক গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তি এবং বিশেষ নাগরিক সুবিধা প্রদানের ব্যবস্থা অব্যাহত রাখা উল্লেখযোগ্য।
তিনি জানান, প্রবাসীদের মাঝে রেমিটেন্স প্রেরণকারী বিভিন্ন ক্যাটাগরিতে ৫৭ জন এবং বিদেশে বাংলাদেশী পণ্যের আমদানিকারক ক্যাটাগরিতে ১০ জনসহ মোট ৬৭ জনকে সিআইপি (এনআরবি)-২০২০ ঘোষণাপূর্বক সম্মাননা হিসেবে ক্রেস্ট, সার্টিফিকেট ও সিআইপি কার্ড প্রদান করা হয়েছে।
সংসদ নেতা আরও জানান, প্রবাসী কর্মীদের অর্জিত অর্থ বৈধ পথে ও ব্যাংকিং চ্যানেলে বাংলাদেশে পাঠানোর জন্য দূতাবাসসমূহ অব্যাহত প্রচার চালিয়ে আসছে। প্রতিবছর ‘আন্তর্জাতিক অভিবাসী দিবস’সহ দূতাবাসের সব অনুষ্ঠানে প্রবাসী বাংলাদেশীদের বৈধ পথে রেমিটেন্স পাঠানোর জন্য উদ্বুদ্ধ করা হচ্ছে। এ বিষয়ে দূতাবাসের ওয়েবসাইট ও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে নিয়মিত প্রচার চালানো হচ্ছে। ২০৪১ সালের মধ্যে উন্নত রাষ্ট্রে পরিণত করতে রেমিটেন্সের কোনো বিকল্প নেই এবং তা আনতে হবে বৈধ পথে।  

×