ঢাকা, বাংলাদেশ   মঙ্গলবার ১৩ মে ২০২৫, ৩০ বৈশাখ ১৪৩২

আমার ভাইয়ের রক্তে রাঙানো...

মনোয়ার হোসেন

প্রকাশিত: ২৩:০৯, ৩১ জানুয়ারি ২০২৩

আমার ভাইয়ের রক্তে রাঙানো...

আমার ভাইয়ের রক্তে রাঙানো একুশে ফেব্রুয়ারি

আমার ভাইয়ের রক্তে রাঙানো একুশে ফেব্রুয়ারি/আমি কি ভুলিতে পারি/ছেলেহারা শত মায়ের অশ্রু গড়া- ফেব্রুয়ারি ... বছর পেরিয়ে আবার ফিরে এসেছে ভাষার মাস ফেব্রুয়ারি। ১৯৫২ সালের মাসেই মাতৃভাষার অধিকার আদায়ে আত্মবিসর্জন দিয়েছিলেন ভাষাশহীদরা। মাতৃভাষার মর্যাদা রক্ষায় মৃত্যুকে আলিঙ্গন করেছিলেন সালাম, বরকত, রফিক, জব্বার, শফিউরসহ নাম না জানা শহীদরা। তাঁদের প্রাণের বিনিময়েই চূড়ান্ত পরিণতি পেয়েছিল ভাষা আন্দোলন। বায়ান্নর একুশে ফেব্রুয়ারি বাঙালি সৃষ্টি করেছিল মায়ের ভাষায় কথা বলার নতুন ইতিহাস। ইতিহাসের বাঁক ফেরানো সেই রক্তঝরা পথরেখাতেই একে একে এসেছে ছেষট্টির ছয় দফা, ঊনসত্তরের গণঅভ্যুত্থান, সত্তরের নির্বাচনে বিজয় অর্জন এবং একাত্তরের স্বাধীনতা সংগ্রাম। এমনকি নব্বইয়ের স্বৈরাচারবিরোধী আন্দোলনেও অনুপ্রেরণা জুগিয়েছে মাতৃভাষার সংগ্রাম। আজো বাঙালির সংকটে, সংগ্রামে আলোকরেখা হয়ে সামনে আসে একুশে ফেব্রুয়ারি। 

ফেব্রুয়ারি মানেই অঙ্গীকারের মাস, প্রত্যয়বদ্ধ হবার মাস। ভাষা আন্দোলনের চেতনাকে সমাজে, রাষ্ট্রে ছড়িয়ে দেওয়ার জন্য শপথ নেওয়ার মাস ফেব্রুয়ারি। তবে আক্ষেপের বিষয় হচ্ছে ভাষা আন্দোলনের ৭০ বছর পেরোলেও অফিস-আদালত, শিক্ষাক্ষেত্র, বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের সাইনবোর্ডসহ সর্বস্তরে বাংলাকে ছড়িয়ে দেওয়ার প্রয়াসটি পূরণ হয়নি। তাই এবারও শপথ নিতে হবে জীবনের সর্বক্ষেত্রে বাংলা প্রতিষ্ঠার।

প্রতিবছরই ভাষার মাসকে ঘিরে থাকে নানা আয়োজন। তেমনই এক আয়োজন বাঙালির মননে উৎকর্ষের প্রতীক অমর একুশে বইমেলা। এবারের বইমেলার প্রতিপাদ্যপড়ো বই গড়ো দেশ, বঙ্গবন্ধুর বাংলাদেশ।ভাষা শহীদদের স্মৃতিতে নিবেদিত দেশের সবচেয়ে বড় প্রাণবন্ত সাংস্কৃতিক উৎসবটি এবার কাটিয়ে উঠেছে মহামারির ধকল। সেই সুবাদে আজ বুধবার বিকেলের পর থেকে খুলে যাচ্ছে বইপ্রেমীদের মননকে রাঙিয়ে দেওয়া এই মেলা। এবারের বইমেলার বিন্যাসে নান্দনিকতার সঙ্গে যুক্ত হয়েছে পরিচ্ছন্নতার বিষয়টি। সেইসঙ্গে বাড়ছে মেলার পরিসর। পূর্বের যে কোনো মেলার তুলনায় এবার বেড়েছে বিস্তৃতি। নতুন করে যুক্ত হয়েছে কালী মন্দিরের ডানপাশের ফাঁকা স্থানটি। মেলার দুই ক্যানভাস বাংলা একাডেমি সোহরাওয়ার্দী উদ্যান অংশ মিলিয়ে ১১ লাখ ৫০ হাজার বর্গফুট জায়গাজুড়ে সেজেছে বইমেলা। পুরো মেলা বিন্যস্ত হয়েছে চারজনের নামাঙ্কিত চারটি চত্বরে। উদ্যান অংশে রয়েছে বঙ্গবন্ধু চত্বর, বঙ্গমাতা চত্বর এবং শিশুতোষ গ্রন্থে সজ্জিত শিশু কর্নারটি পরিণত হয়েছে শেখ রাসেল শিশু চত্বরে। অন্যদিকে একাডেমি অংশ পরিণত হয়েছে চিত্তরঞ্জন সাহা চত্বরে।

মূলত বায়ান্নর একুশে ফেব্রুয়ারির সূচনাটা হয়েছিল ১৯৪৭ সালে। সাতচল্লিশের ১৭ মে হায়দারাবাদে এক উর্দু সম্মেলনে মুসলিম লীগ নেতা চৌধুরী খালিকুজ্জামান ঘোষণা দেন, ‘পাকিস্তানের জাতীয় ভাষা হবে উর্দু।তার সঙ্গে সুর মেলান আলীগড় মুসলিম বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য . জিয়াউদ্দিন। প্রতিবাদে ২৯ জুলাই . মুহম্মদ শহীদুল্লাহআজাদপত্রিকায় বলেন, বাংলাই হওয়া উচিত পাকিস্তানের রাষ্ট্রভাষা, তবে দুটি রাষ্ট্রভাষা করা গেলে উর্দুর কথা বিবেচনা করা যায়।

এমন বাস্তবতায় পাকিস্তান গঠনের পর রাষ্ট্রভাষা আন্দোলন আরও জোরদার হতে থাকে। ওই বছরের ২৭ নভেম্বর করাচিতে পাকিস্তান শিক্ষা সম্মেলনে পাকিস্তান গণপরিষদের কাছে উর্দুকে পাকিস্তানের রাষ্ট্রভাষা প্রাদেশিক সরকারের কাজ চালাবার মাধ্যম রূপে মেনে নেওয়ার সুপারিশ করা হয়। একইসঙ্গে সমগ্র পাকিস্তানে প্রাথমিক শিক্ষায় উর্দুকে এক বছরের জন্য বাধ্যতামূলক করার প্রস্তাবও করা হয়। ঘটনাকে কেন্দ্র করে বাংলাকে রাষ্ট্রভাষা করার দাবিতে ডিসেম্বর ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় প্রাঙ্গণে প্রথম সভা অনুষ্ঠিত হয়। এতে সভাপতিত্ব করেন তমদ্দুন মজলিশের সম্পাদক আবুল কাসেম। বক্তৃতা করেন মুনীর চৌধুরী, আব্দুর রহমান, কল্যাণ দাশগুপ্ত, কে এম আহসান, এস আহমদ প্রমুখ। রাষ্ট্রভাষা সংক্রান্ত প্রস্তাবগুলো উত্থাপন করেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র ইউনিয়নের ভাইস প্রেসিডেন্ট ফরিদ আহমদ।

×