ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ১০ মে ২০২৪, ২৭ বৈশাখ ১৪৩১

এশিয়া-প্যাসিফিক ও জাতীয় স্কাউট জাম্বুরি সমাপ্ত

মাদ্রাসাতেও স্কাউট গঠনে কাজ করতে হবে ॥ প্রধানমন্ত্রী

বিশেষ প্রতিনিধি

প্রকাশিত: ২৩:৫০, ২৫ জানুয়ারি ২০২৩

মাদ্রাসাতেও স্কাউট গঠনে কাজ করতে হবে ॥ প্রধানমন্ত্রী

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা প্রতিটি শিক্ষার্থীকে সম্পৃক্ত করে স্কাউট আন্দোলন জোরদার করার প্রয়োজনীয়তার গুরুত্বারোপ

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা প্রতিটি শিক্ষার্থীকে সম্পৃক্ত করে স্কাউট আন্দোলন জোরদার করার প্রয়োজনীয়তার গুরুত্বারোপ করে বলেছেন, এটি ২০৪১ সালের মধ্যে বাংলাদেশকে একটি উন্নত, সমৃদ্ধ ও স্মার্ট বাংলাদেশের দিকে নিয়ে যাওয়ার যোগ্য করে শিশুদের গড়ে তুলতে সহায়তা করবে। আমি প্রতিটি শিশুকে দেশের একজন যোগ্য নাগরিক হিসেবে গড়ে তুলতে চাই। স্কাউটদের নৈতিক ও জীবনমুখী শিক্ষা দিয়ে, সেবা দেওয়ার মানসিকতা সম্পন্ন করে দেশপ্রেমিক ও সচেতন নাগরিক হিসেবে গড়ে তোলা হচ্ছে। তিনি বলেন, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে ছেলেদের পাশাপাশি গার্লস গাইড এবং মাদ্রাসাতেও স্কাউট গঠনে কাজ করতে হবে। 
বুধবার গাজীপুরের মৌচাকের জাতীয় স্কাউট প্রশিক্ষণ কেন্দ্রে ৩২তম এশিয়া-প্যাসিফিক এবং ১১তম জাতীয় স্কাউট জাম্বুরি ২০২৩-এর সমাপনী অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্য রাখতে গিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, আমি চাই আমাদের দেশটা আরও চমৎকারভাবে গড়ে উঠুক, যেখানে মাদক, সন্ত্রাস ও জঙ্গিবাদের কোনো স্থান হবে না। দেশ সাম্প্রদায়িকতা ও সন্ত্রাসবাদ থেকে মুক্ত থাকবে।

কাজেই আজকের বাংলাদেশে যে শিশুরা বড় হবে তারা উদার মন নিয়ে বড় হবে, দেশপ্রেমে উদ্বুদ্ধ হবে এবং দেশকে সুন্দরভাবে এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার জন্য তারা কাজ করবে। তিনি বলেন, সংঘাত, ক্ষমতা দখল, আগুন সন্ত্রাসসহ সব বাধা পেছনে ফেলে বাংলাদেশ এগিয়ে যাচ্ছে। আমাদের প্রচেষ্টা হচ্ছে ক্ষুধামুক্ত, দারিদ্র্যমুক্ত বাংলাদেশ গড়ে তোলা। ’৭৫ এর বিয়োগান্তক অধ্যায় স্মরণ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, আজকের শিশু-কিশোরদের মাঝে তিনি তার ১০ বছরের ছোট ভাই শেখ রাসেলকে খুঁজে ফেরেন, কেননা ঘাতকরা সেদিন তাকেও রেহাই দেয়নি।

সেই প্রেক্ষাপট স্মরণ করে তিনি বলেন, আমি চাই আমাদের দেশের আজকের শিশু-কিশোরদের জীবন নিরাপদ হোক, সুন্দর হোক, অর্থবহ হোক। কারণ আজকের শিশু-কিশোররাইতো আগামীর বাংলাদেশের কর্ণধার হবে। তাই আমি চাই আমাদের সকল শিশুরা সুনাগরিক হিসেবে গড়ে উঠুক।

অনুষ্ঠানে বক্তব্য রাখেন, বাংলাদেশ স্কাউটসের সভাপতি মো. আবুল কালাম আজাদ এবং জাম্বুরি সাংগঠনিক কমিটির সভাপতি ও বাংলাদেশ স্কাউটসের প্রধান জাতীয় কমিশনার ড. মো. মোজাম্মেল হক খান। অনুষ্ঠানে প্রধানমন্ত্রী কাব স্কাউটসদের সর্বোচ্চ স্বীকৃতি ‘শাপলা কাব অ্যাওয়ার্ড’ বিতরণ করেন। তিনি প্রতীকী হিসেবে ১২ জনের হাতে সম্মাননা তুলে দেন। পরে স্কাউটদের পরিবেশনায় বর্ণাঢ্য সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানও উপভোগ করেন প্রধানমন্ত্রী।
প্রধানমন্ত্রী আঞ্চলিক ও জাতীয় স্কাউটদের জাম্বুরি চিহ্নিত করে একটি স্মারক ডাকটিকিটও প্রকাশ করেন। এ সময় ডাক ও টেলিযোগাযোগ বিভাগের সচিব আবু হেনা মোরশেদ জামান ও ডাক অধিদপ্তরের মহাপরিচালক হারুনুর রশীদ উপস্থিত ছিলেন। নয় দিনব্যাপী জাম্বুরিতে ভারত, নেপাল, মালদ্বীপ, ফিলিপিন্স, চায়না (তাইওয়ান), থাইল্যান্ড, দক্ষিণ কোরিয়া, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র, জার্মানি এবং কানাডা থেকে ৮ হাজার স্কাউট, ১ হাজার ইউনিট নেতা এবং আন্তর্জাতিক পরিষেবা দলের সদস্যসহ মোট ১১ হাজার অংশগ্রহণকারী অংশগ্রহণ করে।
প্রধান অতিথির বক্তব্যে প্রধানমন্ত্রী দেশের সব শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের প্রতিটি শিক্ষার্থী যেন স্কাউট প্রশিক্ষণ পায় সে ব্যবস্থা গ্রহণের নির্দেশ নিয়ে বলেন, স্কাউটিং নতুন প্রজন্মকে নৈতিক ও জীবনধর্মী প্রশিক্ষণ দিয়ে থাকে। আর তরুণদের মধ্যে আধুনিক, প্রগতিশীল ও সৃজনশীল গুণাবলী বিকশিত হয়। ফলে স্কাউট সদস্যরা সেবার মন্ত্রে দীক্ষিত হচ্ছে এবং সচেতন দেশপ্রেমিক নাগরিক হিসেবে নিজেদেরকে গড়ে তুলছে। 
দেশে স্কাউট আন্দোলন জোরদার করতে তার সরকারের উদ্যোগের সংক্ষিপ্ত বর্ণনা দিয়ে সরকারপ্রধান বলেন, তার সরকার প্রতিটি উপজেলা ও জেলায় স্কাউট ভবন ও প্রশিক্ষণ কেন্দ্র নির্মাণ করবে। প্রধানমন্ত্রী বিশ্ব স্কাউটস জা¤ু^রি ভবিষ্যতে বাংলাদেশে অনুষ্ঠিত হবে বলে আশাবাদ ব্যক্ত করেন এবং এ লক্ষ্যে প্রস্তুতি নিতে সংশ্লিষ্ট সকলকে নির্দেশ দেন। তিনি বলেন, আমাদের স্কাউটের সঙ্গে যারা জড়িত, আমাদের শিক্ষা মন্ত্রণালয় ও শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোতে প্রতিটি শিক্ষার্থী যেন এই স্কাউট প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত হয় সেই ব্যবস্থাটা নিতে হবে। তাহলে আমি বিশ্বাস করি আমাদের দেশকে সোনার বাংলা বা স্মার্ট বাংলাদেশ হিসেবে গড়ার উপযুক্ত নাগরিক তৈরি হবে।
প্রধানমন্ত্রী জানান, দেশের সকল শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে দুটি করে স্কাউট দল বা রোভার স্কাউট করার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। ছেলেদের পাশাপাশি গার্ল স্কাউট বা মাদ্রাসা সমূহে স্কাউট যেন গঠন করা হয় সে বিষয়ে কাজ করতে হবে সকলকে। তিনি বলেন, আমাদের লক্ষ্য হচ্ছে বাংলাদেশকে আমরা এগিয়ে নিয়ে যাব। আর সেই লক্ষ্য নিয়েই আমরা কিন্তু কাজ করে যাচ্ছি। আমি চাই আমাদের প্রত্যেক শিক্ষার্থী এখানে শুধু বাছা বাছা কয়েকজন নয়, প্রাইমারি স্কুল থেকে শুরু করে যে পর্যন্ত স্কাউটিং করা যায়, এখন যদিও আমাদের ২২ লাখ সদস্য আছে কিন্তু ২০৩০ সালের মধ্যে ত্রিশ লাখ স্কাউট করা হবে। আমার লক্ষ্যটা হবে প্রতিটি শিক্ষার্থী যেন স্কাউট প্রশিক্ষণ পায়। 
গাজীপুর থেকে স্টাফ রিপোর্টার জানান, প্রধানমন্ত্রী  বলেন, শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের আওতায় ১৪০ কোটি টাকা ব্যয়ে বাংলাদেশ স্কাউটি শতাব্দী ভবন নির্মাণ প্রকল্প, ৪৮ কোটি ২৩ লাখ টাকা ব্যয়ে সিলেট অঞ্চলে মৌলভীবাজার জেলায় স্কাউট ভবন নির্মাণ প্রকল্প, ৪৮ কোটি ৫৩ লাখ টাকা ব্যয়ে আঞ্চলিক স্কাউট প্রশিক্ষণ কেন্দ্র লালমাই প্রকল্প বাস্তবায়ন করা হচ্ছে। 

×