ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ১১ মে ২০২৪, ২৮ বৈশাখ ১৪৩১

হাজারো ভক্তদের উপস্থিতিতে মণ্ডপে মণ্ডপে কুমারী পূজা

বিশেষ প্রতিনিধি 

প্রকাশিত: ২০:৪৫, ৩ অক্টোবর ২০২২; আপডেট: ২১:০৪, ৩ অক্টোবর ২০২২

হাজারো ভক্তদের উপস্থিতিতে মণ্ডপে মণ্ডপে কুমারী পূজা

মণ্ডপে কুমারী পূজার অর্চনা

এখন পুজো উৎসব মানেই থিম। ট্রাডিশনের সঙ্গে ট্রেন্ড মিলিয়ে নতুন কিছু করার প্রতিযোগিতা। বাংলাদেশও এ প্রতিযোগিতা থেকে পিছিয়ে নেই। নানা থিম নিয়ে গড়ে তোলা হয়েছে দুর্গাপুজোর পূজোমন্ডপগুলো। 
বাঙালী সংস্কৃতির পাশাপাশি পাশ্চাত্যের অনেক কিছু মিলিয়ে বর্ণাঢ্য ও মনোলোভা সাজে সজ্জিত করা হয়েছে দেশের বড় বড় পুজোমন্ডপগুলো। ত্রিনয়নী মা দুর্গার মুর্তিও গড়ে তোলা হয়েছে নানা থিম নিয়ে। 

শারদীয় দুর্গোৎসবে সোমবার (৩ অক্টোবর) মহাষ্টমীর দিনে কুমারী পুজোয় মানুষের ঢল নেমেছিল। রাজধানীর গোপীবাগের রামকৃষ্ণ মিশন ও মঠ পুজোমন্ডপে আয়োজিত এ কুমারী পুজোয় ছিল উপচেপড়া ভিড়। হাজার হাজার ভক্ত-পূজারী এবং দর্শনার্থীর উপস্থিতিতে এই পুজো উদযাপিত হয়েছে মহাসাড়ম্বরে। গত দুই বছর ক‌রোনা মহামারির কার‌ণে সারা দে‌শে কুমারী পূজা করা হয়‌নি।

পাঁচদিনের দুর্গোৎসবের তৃতীয় দিন মহাষ্টমীতে গতকাল সকাল ৯টা ৫৭ মিনিটে দেবীর মহাষ্টমী কল্পপারম্ভ ও মহাষ্টমীবিহীত পুজো শুরু হয়। পুজো শেষে অঞ্জলি ও প্রসাদ বিতরণ অনুষ্ঠিত হয়। এরপর বিকেল ৪টা ৫ মিনিট থেকে ৪টা ৫৩ মিনিটের মধ্যে অনুষ্ঠিত হয় সন্ধি পুজো। রামকৃষ্ণ মিশন ও মঠসহ কয়েকটি পুজোমন্ডপে বিশুদ্ধ সিদ্ধান্ত পঞ্জিকামতে দুর্গা পুজো আয়োজনের কারণে এসব মণ্ডপে পুজোর সময়ের কিছুটা হেরফের ঘটে। সর্বত্র পুজো শেষে ভক্ত ও পূজারীরা মহাষ্টমীতে দুর্গতিনাশিনী দেবী দুর্গার পাদপদ্মে পুষ্পাঞ্জলী নিবেদন করেন তাঁর কৃপা ভিক্ষা করেন।

উৎসবের চতুর্থ দিনে আজ মঙ্গলবার মহানবমী। সকাল ৯টা ৫৭ মিনিটে দেবীর মহানবমী কল্পরারম্ভ ও মহানবমী বিহিত পুজো শুরু হবে। পুজো শেষে যথারীতি পুষ্পাঞ্জলী, প্রসাদ বিতরণ ও সন্ধ্যায় ভোগ আরতি থাকবে। এ উপলক্ষে ঢাকেশ্বরী জাতীয় মন্দির মেলাঙ্গনের পুজোমন্ডপে সন্ধ্যায় অনুষ্ঠিত হবে আরতি প্রতিযোগিতা।  

সোমবার মহাষ্টমীর দিনে সকাল ১১টায় রামকৃষ্ণ মিশন পুজোমন্ডপে সব নারীতে মাতৃবুদ্ধি রূপ উপলব্ধি করতে আয়োজিত হয় কুমারী পুজো। এবার দেবীর প্রতীকীরূপে পুজো প্রদান করা হয় ১২ বয়সী কুমারী মেয়েকে। শাস্ত্রীয় ব্যাখ্যা অনুসারে তার নামকরণ করা হয়। শাস্ত্রমতে, এক বছর বয়সে সল্পব্দ্যা, দুইয়ে সরম্বতী, তিনে ত্রিধামূর্তি, চারে কলিকা, পাঁচে সুভগা, ছয়ে ঊমা, সাতে মালনী, আটে কুব্জিকা, নয়ে কালসন্দর্ভা, দশে অপরাজিতা, এগারোয় রুদ্রানী, বারোয় ভৈরবী, তেরই মহালক্ষ্মী, চৌদ্দয় পীঠনায়িকা, পনেরয় ক্ষেত্রজ্ঞা এবং ষোল বছরে অল্পুদা বলা হয়ে থাকে।  

ঢাকার গোপীবাগ এলাকার কুমারী এই মেয়েকে সকালে স্নান করিয়ে নতুন কাপড় পরানো হয়। ফুলের মালা, নানান অলঙ্কার ও প্রসাধনে নিপুণ সাজে সাজিয়ে পুজো দেওয়া হয় তাকে। দেবীর মঞ্চে তাকে অধিষ্ঠানের আগে মন্ত্রোচ্চারণ ও ফুল, বেলপাতার আশীর্বাদ পৌঁছে দেওয়া হয় সবার কাছে। এরপর শুরু হয় পুজোর আনুষ্ঠানিকতা। হাজারো হিন্দু নারীর উলুধ্বনি আর ধর্মপ্রাণ মানুষের বিনম্র শ্রদ্ধার মধ্য দিয়ে পুজো শেষ হয়।  

কুমারী পুজোকে ঘিরে রামকৃষ্ণ মিশনে সকাল থেকেই মানুষের ঢল নামে। নিরাপত্তা রক্ষায় পুলিশ, র‌্যাব,  আনসার ও গোয়েন্দা সংস্থার সদস্যদের মোতায়েন করা হয়। মিশন গেটে মেটাল ডিটেক্টর দিয়ে তল্লাশির পরই ভক্তদের ভেতরে প্রবেশের অনুমতি মিলেছে। গোপীবাগ মোড় থেকে গোপীবাগ মাজার পর্যন্ত সড়কে যানবাহন চলাচল সীমিত করে দেওয়া হয়। 

দর্শনার্থী ও পূজারীদের ব্যাপক ভিড়ে টিকাটুলী, ইত্তেফাক মোড়সহ ওই এলাকায় যানজট দেখা দেয়। মোড় থেকে হেঁটে মানুষ কড়া নিরাপত্তা বেষ্টনী অতিক্রম করে মণ্ডপে প্রবেশ করেছেন। কুমারীপুজো শেষে প্রায় ৩৫ হাজার ভক্তের মধ্যে প্রসাদ বিতরণ করা হয়। 

ঢাকা ছাড়াও রামকৃষ্ণ মিশনের নারায়ণগঞ্জ, রংপুর, বরিশাল ও দিনাজপুরসহ কয়েকটি মঠ এবং কয়েকটি ঐতিহ্যবাহী পুজোমন্ডপে সোমবার কুমারী পুজোর আয়োজন করা হয়। মহাষ্টমী পুজো শেষে ঢাকেশ্বরী জাতীয় মন্দির পুজোমন্ডপেও ১০ হাজার ভক্তের মধ্যে মহাপ্রসাদ বিতরণ করা হয়েছে। পুজো শেষে সন্ধ্যায় মণ্ডপে ভোগআরতির আয়োজন করা হয়।  

রাজধানীসহ সারাদেশের পুজোমণ্ডপগুলোতে সোমবার ভক্ত ও দর্শনার্থীদের ব্যাপক ভিড় হয়েছিল। বিশেষ করে সন্ধ্যার পর থেকে মণ্ডপে মণ্ডপে মানুষের ভিড় উপচে পড়ে। আজ মহানবমীতে এ ভিড় আরও বাড়বে বলে মনে করা হচ্ছে।  

এসআর

×